মক্কায় প্রবেশের পর তাওয়াফ পর্যন্ত ছয়টি কর্তব্য কাজ (তৃতীয় কর্তব্য)
মক্কায় প্রবেশ কালে (যি-তুয়ায়) গোসল করা সুন্নত। করে নেবে। হজ্ব আদায় কালে নয়টি স্থানে গোসল করা সুন্নত (১) মীকাতে এহরামের জন্য। (২) মক্কায় প্রবেশের জন্য (৩) তাওয়াফে কুদুমের জন্য (৪) আরাফাতে অবস্থানের জন্য, (৫) মুযদালেফায় অবস্থানের জন্য (৬) তাওয়াফে যিয়ারাতের জন্য। (৭-৮) দু' জমরায় কংকর নিক্ষেপের জন্য দু' গোসল। (জমরায় আকাবায় কংকর নিক্ষেপের জন্য গোসল নেই)। (৯) বিদায়ী তাওয়াফের জন্য।
(২) মক্কার বাইরে যখন হরমের সীমায় প্রবেশ করবে তখন এই দোয়াটি পাঠ করবেঃ "আল্লাহুম্মা হাযা হারামুকা অআমানুকা ফা হাররিম লাহমী অদামী অশা'রী অবাশারী আলান্নারি অ আমিনী মিন আযাবিকা ইয়াওমা তাবআছু ইবাদাকা অজআ'লনী মিন আউলিয়ায়িকা অ আহলি ত্বাআতিকা"
অর্থাৎ হে মাবুদ! এটা তোমার হরম এবং আশ্রয় স্থল। সুতরাং আমার মাংস, রক্ত এবং চর্মকে দোযখের জন্য হারাম কর। পুনরুত্থানের দিন আমাকে আযাব থেকে নিরাপদ রাখ এবং আমাকে তোমার বাধ্য ও আনুগত্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর।
(৩) মক্কা মুয়ায্যমায় 'ছানিয়াতে কুদা' অর্থাৎ কুদা গিরিপথ দিয়ে প্রবেশ করবে। কেননা হুযুরে পাক (দঃ) সে পথ দিয়েই যেতেন; সুতরাং এ পথ দিয়ে প্রবেশ করাই উত্তম। মক্কা থেকে বের হওয়ার সময়ও ঐ পথ দিয়ে বের হবে। এ পথটি কিছুটা নীচু ও প্রশস্ত।
৪) মক্কায় প্রবেশ করে বনি জুমাহের নিকটবর্তী হলে কা'বা গৃহ নজরে আসবে। তখন এ ( দোয়াটি পাঠ করবেঃ "লা ইলাহা ইল্লা হুয়া অল্লাহু আকবারু আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু অ মিনকাস্ সালামু অদারুকা দারুস্ সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল-জালালি অল ইকরাম। আল্লাহুম্মা ইন্না হাযাবাইতুকা আজজামতাহু অ কাররামতাহু অ শাররাফতাহু আল্লাহুম্মা ফাযিদহু তাজীমাও অ যিদহু তাশরীফাও অ তাকরীমাও অ যিদহু মুহাব্বাতাও অযিদহু মিনহাজ্জিহি বিররাও অ কারামাতান আল্লাহুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা আদখিলনী জান্নাতাকা অ আইযনী মিনাশ শাইত্বোয়ানির রাজীম" অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ মহান। হে মাবুদ। তুমি শান্তি এবং তোমা থেকেই শান্তি। তোমার গৃহ শান্তির গৃহ। তুমি বরকতময়। হে গৌরবময়, সম্মানিত, হে মাবুদ। ঐ তোমার গৃহ। ত্রি ঘরকে তুমি মহত্ব দিয়েছ। সম্মানিত করেছ, গৌরব দিয়েছ। তুমি তার মহত্ব, সম্মান ও গৌরব বৃদ্ধি কর। আর বৃদ্ধি কর ভয়-ভীতি, যে এ গৃহের হজ্জ্ব করেছে, তার সততা ও সম্মান বৃদ্ধি কর। হে মাবুদ! তোমার রহমতের দরজা আমার জন্য উন্মুক্ত কর। আমাকে তোমার বেহেশতে প্রবেশ করাও আর আমাকে তোমার বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় দান কর।
(৫) যখন খানায় কা'বার মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে, বনি শায়বার দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তখন এ দোয়াটি পড়বেঃ "বিসমিল্লাহি অ বিল্লাহি আমিনাল্লাহি অ ইলাল্লাহি অফী সাবীলিল্লাহি অ আ'লা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম"
অর্থাৎ আল্লাহর নামে, আল্লাহর সাথে, আল্লাহ থেকে, আল্লাহর দিকে এবং আল্লাহর পথে হুযুরে পাক (দঃ)এর নীতি অনুযায়ী
যখন কা'বার নিকটবর্তী হবে, তখন এ দোয়াটি পড়বেঃ "আলহামদ অ সালামুন আলা ইবাদিহিল্লাযীনাছতাফা আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা অ রাসূলিকা অ আলা ইব্রাহীমা খালীলিকা অআলা জামীই আমবিয়ায়িকা অ রুসুলিকা"
অর্থৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, সালাম তাঁর মনোনীত বান্দার প্রতি। হে মাবুদ! তুমি রহমত প্রেরণ কর হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর প্রতি, যিনি তোমার বান্দা ও রাসূল এবং হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রতি, যিনি তোমার খলীল; এবং তোমার সমস্ত নবী ও রাসূলের প্রতি।অতঃপর দু' হাত তুলে এ দোয়াটি পড়বেঃ
"আল্লাহুম্মা ইন্নী আসয়ালুকা ফী মাক্বামী হায। ফী আউয়্যালি মানাসিকি আইয়্যাতাকুব্বালা তাওবাতী অআন নাস্তাতাজাওয়ায আন খাত্মীয়াতী অ তাদ্বাআ আন্নী বিয়ী আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী ইয়া বাল্লাগানী বাইতিল হারামাল্লাযী জাআলাহু মাছ্যবাতাল্লিন্নাস অ আমনাও অ জাআ'লাহু মুবারাকাও অ হুদাল্লিল আ'লামীন আল্লাহুম্মা ইন্নী আবদুকা অল বালাদু বালাদুকা অল হারামু হারামুকা অলবাইতু বাইতুকা জিতুকা আত্মপুবু রাহমাতাকা অ আসয়ালুকা মাসয়ালাতাল মুজতাররিল খায়িফি মিন উকুবাতিকার রাজী লিরাহমাতিকা ত্বালিবি মারদ্বাতিকা"
অর্থাৎ হে মাবুদ! আমি তোমার নিকট এইস্থানে আমার হজ্জ্বের প্রথম অনুষ্ঠানে এই প্রার্থনা করছি যে, তুমি আমার তাওবাহ কবুল কর, আমার ত্রুটি মার্জনা কর, আমার গুনাহর বোঝা লাঘব কর। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর পবিত্র গৃহে আমাকে পৌছে দিয়েছেন, যে ঘরকে তিনি মানুষের জন্য করেছেন আশ্রয় স্থল, প্রত্যাবর্তন কেন্দ্র, আরও করেছেন এ ঘরকে বরকতময় ও সারা বিশ্ববাসীর জন্য পথ প্রদর্শক।
হে মাবুদ। আমি তোমার বান্দা, এ শহর তোমার শহর, এ হরম তোমার হরম, এ গৃহ তোমার গৃহ। আমি তোমার রহমত তলবের আশায় উপস্থিত হয়েছি। আমি একান্ত অক্ষমের ন্যায় তোমার শাস্তির ভয়ে ভীত ব্যক্তির ন্যায়, তোমার করুণাপ্রার্থীর ন্যায়, তোমার সন্তুষ্টি কামনাকারীর ন্যায় তোমার সকাশে প্রার্থনা করছি।
(৬) অতঃপর কাল পাথরের (হাজরে আসওয়াদ) নিকট গিয়ে ডানহাত দিয়ে তা' স্পর্শ করবে ও তা' চুম্বন করবে। এসময় এ দোয়াটি পাঠ করবে। "আল্লাহুম্মা আমানাতী আদ্দাইত্বহা অমীছাক্বী ওয়াফফাইতুহু অ আশহাদ লী বিল মুওয়াফাতি" অর্থাৎ হে মাবুদ। আমি আমার আমানত প্রত্যর্পণ করলাম ও আমার ওয়াদাহ পূরণ করলাম তুমি আমার এ ওয়াদাহ পূরণ করণের সাক্ষী থাক। চুম্বন করা সম্ভব না হলে পাথরের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়াটিই পাঠ করবে। তারপর তাওয়াক ব্যতীত অন্য কোন কিছুর দিকে মনোনিবেশ করবে না। এ হল তাওয়াফে কুদুম বা প্রাথমিক তাওয়াফ। এসময় ফরজ নামাযের জামাত হতে থাকলে নিজেও নামাযে শরীক হবে। নামায শেষে তাওয়াফ করবে।
0 Comments