ছাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে সায়ী (দৌড়াদৌড়ি):
কার্য সমাধা করার পর বাবে ছাফা অর্থাৎ ছাফার দরজা দিয়ে বের হয়ে আসবে। রুকনে ইয়ামনী ও কাল পাথরের মাঝখানে একটি দরজা রয়েছে। এটাই বাবে ছাফা নামে পরিচিত। এ দরজা দিয়েই বের হয়ে ছাফা পাহাড়ে আসবে। ধীরে ধীরে এর উপর কিছু দূর উঠলেই কা'বাগৃহ দেখা যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত কা'বাগৃহ দৃষ্টিগোচর না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত হুযুরে পাক (দঃ) ছাফার উপরে উঠতে থাকতেন। ছাফা পাহাড়ের পাদদেশ থেকেই সায়ী করা যথেষ্ট। তবে পাহাড় বেয়ে উপরে আরোহণ করা মুস্তাহাব। নতুন কতগুলো সিঁড়ি তৈরী হয়েছে, সেগুলোও অতিক্রম করবে। কেননা তা' বাকী থাকলে সায়ী পূর্ণ হবে না। ছাফা থেকে দৌড় শুরু করে ছাফা ও মারওয়ার মাঝখানে সাতবার সায়ী করবে। ছাফায় আরোহণ করে কিবলামুখী হয়ে এ দোয়াটি পড়বেঃ "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লাশারীকা লাহু লাহুল মুলকু অ লাহুল হামদু ইয়ুহয়ী অ ইয়ুমীতু অহুয়াল হাইয্যল্লাইয়ামৃত বিইয়াদিহিল খাইরু অ হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু অ ছাদ্দাক্বা অ আদ্দাহু অ নাছারা আবদাহু অআয্যা জুনদাহু অ হাযামাল আহযাবা অহদাহু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিছীনা লাহুদ্দীনা অলাও কারিহাল কাফিরুন" অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোন অংশীদার নেই। হুকুমত তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্যই। তিনি জীবিত করেন, মৃত্যু ঘটান, তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই। তাঁর হাতেই সর্বপ্রকার কল্যাণ। তিনি সবকিছুর উপরই ক্ষমতাবান। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য, তিনি তাঁর বান্দার সহায়ক, তিনি তাঁর সেনাদের সম্মান দাতা, তিনি সম্মিলিত দলকে ধ্বংস করেন। তিনি ছাড়া উপাস্য নেই। সত্যনিষ্ঠার সাথে তাঁর উপাসনা করা হয়, যদিও মুশরিকদের কাছে তা' অপছন্দনীয়। এ দোয়া পাঠ করার পর নিজের আবশ্যকীয় বস্তুর জন্য প্রার্থনা করবে। তারপর পাহাড় থেকে নেমে সায়ী শুরু করবে এবং এ সময়ে পড়বে: "রাব্বিগফির অরহাম অ তাজাওয়্যায আম্মা তা'লাম ইন্নাকা আনতাল আআযযুল আকরামু আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও অফিল আখিরাতি হাসনাতাও অন্ত্বিনা আযাবান্নার।" অর্থাৎ হে প্রতিপালক! তুমি ক্ষমা কর। তুমি রহম কর। তুমি আমার যে গুনাহর কথা জান, তা' মার্জনা কর। নিশ্চয় তুমি সম্মানিত দানশীল। হে মাবুদ! দুনিয়ায় আমাদেরকে কল্যাণ দান কর। আখেরাতেও কল্যাণ দান কর। দোযখের আগুন থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর। দোয়া পড়বে আর ধীরে ধীরে চলে সবুজ বর্ণের স্তম্ভ পর্যন্ত পৌঁছবে। এটি একটি পথ নির্দেশিকা, ছাফা থেকে নেমে কিছু এগুলেই এটি সামনে পড়ে। এটি পবিত্র মসজিদের এক কোণায় অবস্থিত। এর থেকে ছ' গজ দূরে আর একটি স্তম্ভ আছে। স্তম্ভ দুটির মধ্যবর্তী ছ' গজ স্থান খুব তাড়াতড়ি অতিক্রম করবে। তারপর আবার ধীরে ধীরে চলবে। এভাবে মারওয়া পাহাড় পর্যন্ত পৌছে ছাফা পাহাড়ের ন্যায় এর উপর আরোহণ করবে। তারপর ছাফা পাহাড়ের দিকে মুখ করে ছাফা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে যে দোয়াটি পড়েছিলে, তাই পড়বে। এই পর্যন্ত এক সায়ী হয়ে গেল। এরপর যখন আবার ছাফাতে ফিরে যাবে, তখন ছ'বার সায়ী হয়ে যাবে। এইভাবে সাতবার সায়ী করবে। প্রত্যেকবারই একই নিয়মে সায়ীগুলো আদায় করবে। প্রত্যেক বারই ছাফা ও মারওয়ায় আরোহণ করবে। এইভাবে তাওয়াফে কুদুম এবং সায়ী সমাধা হয়ে যাবে। এ কাজ দুটোই সুন্নত। তাওয়াফে যেমন পবিত্রতা ওয়াজিব, সায়ীতে ওয়াজিব নহে; বরং মুস্তাহাব। আরাফাতে অবস্থানের পূর্বে সায়ী করা হলে রুকন হিসেবে এটা আদায় হয়ে যাবে। কেননা সায়ী আরাফাতে অবস্থানের পরে করা শর্ত নয়, বরং তাওয়াফে যিয়ারাতের জন্য শর্ত। অবশ্য সায়ী তাওয়াফের পর করতে হবে।
0 Comments