ওমরাহ ও তার পরবর্তী কর্তব্য সমূহ (অষ্টম কর্তব্য)
যেব্যক্তি হজ্জের আগে অথবা পরে ওমরা করতে চায়, তার উচিত গোসল করে ওমরার কাপড় পরিধান করা এবং ওমরার মীকাত থেকে এহরাম বাঁধা। তার জন্যে উত্তম মীকাত হচ্ছে জেয়েররানা। এটা মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী এক জায়গার নাম, এর পরে তানয়ীম ও এর পরে হুদায়বিয়া। এহরাম করার সময় ওমরার নিয়ত করে লাব্বায়কা বলবে এবং মসজিদে আয়েশায় গিয়ে দু'রাকআত নামায পড়বে। এখানে যা মনে চায় দোয়া করবে। এর পর লাব্বায়কা বলতে বলতে মক্কায় আসবে এবং মসজিদে হারামের অভ্যন্তরে ঢুকে লাব্বায়কা বলা বন্ধ করবে। অতঃপর সাত চক্কর তওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মধ্যে সাত বার সায়ী করবে। সায়ী শেষে মাথা মুণ্ডন করবে। এখন ওমরা পূর্ণ হয়ে গেল। যেব্যক্তি মক্কায় অবস্থান করে, তার উচিত ওমরা ও তওয়াফ বেশী করে করা এবং কাবা গৃহের পানে বেশী পরিমাণে তাকানো। কাবা গৃহের অভ্যন্তরে নগ্নপদে গাম্ভীর্য সহকারে প্রবেশ করবে। যমযম কূপের পানি অধিক পরিমাণে পান করবে। সম্ভব হলে অন্যের সাহায্য না নিয়ে নিজ হাতে পানি তুলে পান করবে। এত বেশী পান করবে যেন উদর ভর্তি হয়ে যায়। এ সময় এই দোয়া পাঠ করবে-
اللهُمَّ اجْعَلْهُ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاء وَسَلَّمَ وَارْزُقْ دَاء الإِخْلَاصَ وَالْيَقِينَ وَالْمُعَافَاةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ.
হে আল্লাহ! এ পানিকে প্রত্যেক অসুখ বিসুখের প্রতিষেধক কর এবং আমাকে আন্তরিকতা, বিশ্বাস ও দুনিয়া আখেরাতের নিরাপত্তা নসীব কর। রসূলে করীম (সাঃ) বলেন-
ماء زمزم لما شرب له
অর্থাৎ, যমযমের পানি যে মকসূদে পান করা হয়, তা হাসিল হয়। তাই দোয়া করা উচিত।
বিদায়ী তওয়াফ
হজ্জ ও ওমরার পর যখন দেশে ফিরতে মনে চায়, তখন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে কা'বা থেকে বিদায় নেবে। এই বিদায় নেয়ার নিয়ম হচ্ছে, পূর্ববর্ণিত পন্থায় সাত চক্করের তওয়াফ করবে। এতে রমল ও এস্তেবাগ করবে না। তওয়াফ শেষে মকামে ইবরাহীমের পেছনে দু'রাকআত নামায পড়বে এবং যমযমের পানি পান করে মুলতাযামে আসবে। অতঃপর দোয়া ও কাকুতি মিনতি করবে। বলবে-
"হে আল্লাহ! নিশ্চয় এ গৃহ তোমার গৃহ, এ বান্দা তোমার বান্দা- তোমার গোলামের ও তোমার বাঁদীর পুত্র। আমার জন্য নিয়োজিত বস্তুতে তুমি আমাকে সওয়ার করিয়েছ, তোমার শহরসমূহ পরিভ্রমণ করিয়েছ এবং আপন নেয়ামত আমাকে পৌঁছিয়েছ, এমনকি হজ্জের ক্রিয়াকর্ম আদায় করতে আমাকে সাহায্য করেছ। সুতরাং আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকলে তুমি আমাকে আরও বেশী সন্তুষ্টি দাও। নতুবা এখন তোমার গৃহ থেকে দূরে যাওয়ার পূর্বে আমার প্রতি অনুগ্রহ কর। এটা আমার দেশে ফেরার সময়, যদি তুমি অনুমতি দাও- এমতাবস্থায় যে, আমি যেন তোমার বদলে অন্য কাউকে অবলম্বন না করি, তোমার গৃহের পরিবর্তে অন্য গৃহ পছন্দ না করি, যেন তোমার প্রতি বিরূপ এবং তোমার গৃহের প্রতি অসন্তুষ্ট না হই। হে আল্লাহ! দৈহিক সুস্থতা ও ধর্মীয় হেফাযতকে আমার সঙ্গী কর। আমার প্রত্যাবর্তন সুন্দর কর। জীবিত থাকা পর্যন্ত আমাকে তোমার আনুগত্য দান কর। আমার জন্যে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ একত্রিত কর। তুমি সবকিছু করার ক্ষমতা রাখ। হে আল্লাহ! একে তোমার গৃহে আমার সর্বশেষ উপস্থিতি করো না। যদি সর্বশেষ উপস্থিতি কর, তবে এর বিনিময়ে আমাকে জান্নাত দান কর।"
এর পর দৃষ্টির আড়ালে চলে যাওয়া পর্যন্ত কা'বা গৃহ থেকে চক্ষু না ফেরানো উত্তম।
0 Comments