হালাল ও হারামের স্তরসমূহের বর্ণনা


 হালাল ও হারামের স্তরসমূহের বর্ণনা:

        পাঠক-পাঠিকা! জেনে রাখ, হারামের সবই মন্দ ও নিন্দনীয়। তবু তার মধ্যে স্তর বৈষম্য এবং কম-বেশী বর্তমান। একইভাবে হালালের সবই উত্তম। তবে তার মধ্যেও বিভিন্ন স্তর রয়েছে। অর্থাৎ একটি থেকে অপরটি কিছুটা উত্তম বা নিকৃষ্ট। মিষ্টিদ্রব্য প্রস্তুতকারী সুমিষ্ট দ্রব্যকে মাত্রা বিভেদে তৈয়ার করে। কোন দ্রব্যের মিষ্টির মাত্রা কম এবং কোন দ্রব্যের বেশী। যেমন চিনির মিষ্টির মাত্রা মিছরীর মিষ্টির মাত্রা থেকে অপেক্ষাকৃত কম এবং মিছরীর মিষ্টির মাত্রা চিনির মিষ্টির মাত্রা থেকে অপেক্ষাকৃত বেশী। আবার মধুর মিষ্টির মাত্রা সর্বাপেক্ষা বেশী। তদ্রূপ, হারাম জিনিসেরও বিভিন্ন স্তর বা মাত্রা বিভেদ রয়েছে। যেমন কোনটি প্রথম স্তরের হারাম, কোনটি দ্বিতীয় স্তরের, কোনটি তৃতীয় স্তরের আবার কোনটি চতুর্থ স্তরের হারাম। অনুরূপভাবে হালালের মধ্যেও স্তর বিভিন্নতা বর্তমান, একটি স্তরের অন্য স্তরের সাথে স্বাভাবিকভাবেই পার্থক্য রয়েছে। তবে আমাদের লক্ষ্য হল, হালাল যে স্তরেরই হোক না কেন, তা' গ্রহণ করা এবং হারাম যে স্তরেরই হোক না কেন তা' থেকে বেঁচে থাকা।

হালালের স্তর বৈষম্য

        (১) প্রথম স্তরঃ ন্যায়পরায়ণ সাধারণ মুসলমানের সতর্কতা। এটাই হালালের সর্বনিম্নস্তর। এটা ন্যায়পরায়ণ লোকদের হারাম থেকে আত্মরক্ষা সদৃশ। এ স্তরের লোকগণ বলে যে, যদি লোক হারামে পতিত হয়, তারা গুনাহগার হয়ে যায়। তখন আর তাদেরকে ন্যায়পরায়ণ লোক বলা যায় না। এরূপ লোক দোযখের অগ্নির সম্মুখে উপস্থিত হবে। ফকীহদের ফতোয়া দ্বারা যা' হারাম বলে সাব্যস্ত হয়েছে তা' থেকে আত্মরক্ষা করা এই হালালের অন্তর্গত। উল্লেখ্য যে, হারাম থেকে বেঁচে থাকা সর্বনিম্ন শ্রেণীর সতর্কতা বা পরহেজগারী।

        (২) দ্বিতীয় স্তরঃ এটা হল নেককারদের সতর্কতা। এই সতর্কতা হারামের নিকটবর্তী যে হালাল তা' থেকে বিরত থাকা। ফকীহগণ অবশ্য একে হালাল হওয়ার অনুমতি দেয়। কেননা বাহ্যতঃ তা' সন্দেহের বিষয়ীভূত। নেককার লোকেরা এই প্রকার সন্দেহজনক বিষয়বস্তু থেকেও বেশ দূরে থাকেন। এটা হল দ্বিতীয় শ্রেণীর সতর্কতা।

        (৩) তৃতীয় স্তরঃ এটা হ'ল, আল্লাহভীরুদের সতর্কতা। আল্লাহভীরুগণ এমন বিষয় থেকেও বিরত থাকেন, যা' ধর্ম বিধানমতে হালাল ও সন্দেহের অতীত। কিন্তু তা' গ্রহণ করলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়। যার ফলে সন্দেহজনক বিষয়ে লিপ্ত হওয়ার আশংকা থাকে। এটাই তৃতীয় স্তরের সতর্কতা বা পরহেজগারী। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে পর্যন্ত মানুষ সন্দেহযুক্ত জিনিসে লিপ্ত হওয়ার ভয়ে উক্ত জিনিস বর্জন না করে, সে পর্যন্ত সে খোদাভীরু বা পরহেজগারদের স্তরে পৌঁছতে পারে না। 

        (৪) চতুর্থ স্তর : এটা হ'ল ছিদ্দীকীনদের সতর্কতা। মূলতঃ যা' সন্দেহের অতীত এবং যাতে সন্দেহযুক্ত জিনিসে লিপ্ত হওয়ার আশংকাও নেই তা' থেকেও সতর্কতা অবলম্বন করা বা বিরত থাকা এই স্তরের পরহেজগারদের কর্তব্য। যদি কোন দ্রব্য আল্লাহর জন্য না হয়, আল্লাহর ওয়াজের নিয়তের শক্তি তার মধ্যে না থাকে বা তার মধ্যে কোন প্রকারের মাকরূহ জিনিস থাকার সম্ভাবনা থাকে, তা' থেকেও ছিদ্দীকগণ সতর্কতা অবলম্বন করেন। উল্লিখিত বিষয়গুলোই হালালের বিভিন্ন স্তর। এ বিষয়টি আমি ইনশাআল্লাহ দৃষ্টান্ত ও প্রমাণসহ উল্লেখ করব।

হারামের স্তর বৈষম্য

        (১) প্রথম স্তরে যে হারামের বিষয় বর্ণনা করেছি, তা' থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিচারালয় আছে। গুনাহর চিহ্ন দূর করা মন্দের বিভিন্ন স্তরের উপর প্রতিষ্ঠিত। বাতিল চুক্তির মাধ্যমে যা গ্রহণ করা হয় তা' অশুদ্ধ ক্রয়-বিক্রয়ের ন্যায় নাজায়েয এবং তা' ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম। কিন্তু তা' জোরপূর্বক কোন জিনিস গ্রহণ করার স্তরে পড়ে না।

         (২) মালিকের বিনানুমতিতে কোন বস্তু জবরদস্তি কেড়ে নেয়া অত্যাচার এবং কঠিন হারাম। কেননা উপার্জনের জন্য এবং অন্যকে কষ্ট দেয়ার জন্য এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধানের বিপরীত করা হয়। কিন্তু প্রথম স্তরের ক্রয়-বিক্রয় দ্বারা কাউকে কষ্ট দেয়া হয় না; বরং তাতে কেবল যথাযথ নিয়মের ব্যতিক্রম করা হয়। ক্রয়-বিক্রয় দ্বারা নিয়মের ব্যতিক্রম করা সুদঘটিত ব্যাপারে নিয়মের ব্যতিক্রম করা অপেক্ষা অধিকতর হাল্কা। কোন নিষিদ্ধ বিষয়ের এই বৈষম্যের জন্য শরীয়তেরও কঠিন নির্দেশ এবং সতর্কতা রয়েছে। এ বিষয় আমি তাওবাহর অনুচ্ছেদে বর্ণনা করব। এজন্যই গুনাহকে ছগীরাহ ও কবীরায় বিভক্ত করা হয়েছে।

        (৩) কোন শক্তিশালী বা ধনবান অথবা গুনাহগার থেকে কোন হারাম জিনিস গ্রহণ করা অপেক্ষা কোন ধার্মিক বা দরিদ্র বা ইয়াতীম ব্যক্তি থেকে গ্রহণ করা জঘন্যতম হারাম এবং মারাত্মক দোষনীয়। কেননা নিপীড়িত লোকের বিভিন্ন স্তরের তারতম্যে নিপীড়নের স্তরেরও তারতম্য হয়। হারাম বা মন্দ কার্যের বিশ্লেষণের মধ্যে এ একটি এমন সূক্ষ্ম তত্ত্ব যা' অগ্রাহ্য করা যায় না। যদি গুনাহ্ বা অন্যায়ের শ্রেণী-তারতম্য না হত তা'হলে দোযখের স্তরের তারতম্য হত না। যাই হোক মন্দ কাজের মধ্যে হারামের বিভিন্নস্তরের পার্থক্যের বর্ণনা আমি শীঘ্রই যথাস্থানে পেশ করব।

Post a Comment

0 Comments