ইসলামী বিবাহের অপকার


 

        বিবাহের অপকারঃ বিবাহের অপকার তিনটি। তন্মধ্যে প্রথম অপকারটিই বেশী গুরুতর। বিবাহের ফলে হালাল জীবিকা সংগ্রহ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এটা প্রত্যেকের পক্ষে সহজ কার্য নয়। বিশেষতঃ এ যুগে সাংসারিক লোকদের পক্ষে হালাল জীবিকা উপার্জন করা অত্যধিক কঠিন হয়ে পড়েছে। বিবাহের পরে জীবিকার্জনের চেষ্টা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং প্রায়শঃ হারাম খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। যার ফলে ঐ হারাম খাদ্য তার জন্য ও তার পরিবারবর্গের জন্য ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অবিবাহিত ব্যক্তি সাধারণতঃ এই বিপদ থেকে নিরাপদ থাকে। বিবাহিত ব্যক্তির অধিকাংশ ক্ষেত্রে হারাম ব্যবসায় নিয়োজিত হতে হয়। তাছাড়া স্ত্রীর প্রবৃত্তির খাহেশ সে পুরা করে চলে এবং দুনিয়ার বদলে আখেরাত বিক্রয় করে ফেলে। হাদীস শরীফে আছে, কোন ব্যক্তির নেকী পাহাড় সমান হলেও তাকে মীযানের নিকট নিশ্চয়ই অপেক্ষা করতে হবে। কেননা তার পরিবারবর্গের তত্ত্বাবধান ও ভরণ-পোষণের কথা, সে কোথা থেকে সম্পদ অর্জন করেছে এবং কিভাবে ব্যয় করেছে, তা' জিজেস করা হবে। এমন কি তখন তার সমস্ত নেকী ঐ সকল প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তলিয়ে যাবে। কোন মেকাই তার স্বরূপে বাকী থাকবে না। তখন ফিরেশতাগণ বলবে, এ লোকের পরিবারবর্গ এর নেকীসমূহ দুনিয়াতেই খেয়ে ফেলেছে। আজ এ ব্যক্তি তার নিজ আমলের দ্বারাই ধ্বংস হয়ে গেল।

        রোজ কিয়ামতে সন্তান-সন্ততিই পিতা-মাতার সহিত সংলগ্ন থাকবে এবং তারা আল্লাহর নিকট অর্থেক্ষা করে থাকবে এবং বলবে, হে আমাদের প্রস্তু। এব্যক্তির নিকট থেকে আমাদের কর্তব্য বুঝে নীও। কেননা আমরা যা জানতাম না, সে আমাদেরকে তা' জানায় নি। আমাদেরকে আমাদের অজ্ঞাতে হারাম খাইয়েছে। তার থেকে এর ক্ষতিপূরণ গ্রহণ কর। কোন বুযর্গ বলেছেন, যখন আল্লাহতায়ালা কোন বান্দার অমঙ্গলের ইচ্ছে করেন, তার উপর দুনিয়ার বিপদ বৃদ্ধি করে দেন, যেন সে ধ্বংস হয়ে যায়। বিপদ-আপদের অর্থ এখানে পরিবারবর্গ। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজন মূর্খ রাখার গুনাহর চেয়ে অধিক গুনাহসহ আল্লাহর সহিত সাক্ষাত করবে না। এ এক সাধারণ বিপদ। খুব অল্প লোকই এ থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত হয়। যার ওয়ারিস সূত্রে প্রীপ্ত ধন-সম্পদ আছে অথবা অর্জিত এমন হালাল রুজী আছে, যদ্বারা তার ও তার পরিবারবর্গের বেশ করে ভরণ-পোষণ হয় এবং অধিক আয় না করে তাতেই খুশী থাকে, সে এই বিপদ থেকে মুক্ত থাকে। অথবা যে ব্যবসায়ী ব্যক্তি বা হালাল উপার্জনে সক্ষম অথবা যে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করে বা শিকার করে জীবিকা অর্জন করে অথবা এমন শিল্পী, যার সাথে বাদশাহর কোন সম্পর্ক নেই, যে ব্যক্তি লোকদেরকে সৎকার্যে নিযুক্ত করতে সক্ষম, যার উপর নিরাপত্তা প্রকাশ পায় এবং হালাল মাল প্রবল হয়, সে ব্যক্তি এই বিপদ থেকে মুক্ত হয়। কোন ব্যক্তি ইবনে সালাম (রহঃ) এর নিকট বিবাহের ইচ্ছে প্রকাশ করায় তিনি বললেন, এ যুগে যে ব্যক্তির কামোত্তেজনা গর্ধভের মত প্রবল, তারই বিবাহ করা উচিত। যদি পুরুষ গর্ধভ কোন স্ত্রী গর্ধভকে দেখে, তবে তাকে প্রহার করলেও সে পিছপা হয় না। মোট কথা, যে ব্যক্তি নফসকে আয়ত্ত রাখতে পারে, তার জন্য বিবাহ না করাই উত্তম।

        বিবাহের দ্বিতীয় অপকার: পরিবারবর্গের প্রতি কৃর্তব্য পালনে ত্রুটি, তাদের স্বভাব-চরিত্র ও ব্যবহারে ধৈর্য ধারণ, তাদের প্রদত্ত কষ্ট-ক্লেশ সহ্য প্রভৃতি ব্যাপারগুলো অবশ্য প্রথমোক্ত বিপদগুলো অপেক্ষা কিছুটা সহজ। নারীদের সহিত উত্তম ব্যবহার ও তাদের সুখ-সুবিধের প্রতি লক্ষ্য রাখা হালাল রুজী অন্বেষণ থেকে অল্প কঠিন। এর মধ্যেও অবশ্য দোষ-ত্রুটি আছে। স্বামী প্রভু, সুতরাং তার অধীনস্থ (প্রজা)দের সম্বন্ধে তার খোঁজ খবর নিতে হবে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যার উপর যার ভরণ-পোষণের ভার, সে তা' যথাযথরূপে পালন না করাই তার গুনাহর জন্য যথেষ্ট। তিনি আরও বলেছেন, পরিবারবর্গ থেকে কারও পলায়ন করা মুনিবের কাছ থেকে ভূত্যের পলায়নের ন্যায়। যে পর্যন্ত না সে ফিরে আসে, তার নামায, রোযা কবুল হয় না। যে ব্যক্তি তার প্রতি কর্তব্য পালনে ত্রুটি করে, সে উপস্থিত থাকলেও তা' পলাতকের মতই হয়। আল্লাহ বলেন, নিজেদেরকে ও পরিবারবর্গকে দোযখের আগুন থেকে বাঁচিয়ে রাখ। যেরূপ নিজেদেরকে রক্ষা কর, সেরূপ তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। পরিবারবর্গের কারণে মানুষ নিজের কর্তব্য পালনে অসমর্থ হয়। বিবাহ দ্বারা মানুষের কর্তব্য বৃদ্ধি পায়। কেননা তার সাথে অন্য আর একটি মানুষ যুক্ত হয়ে যায়। যখন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে মানুষ মন্দ কাজ করতে চায়, তখন তার মন্দ কাজও সাধারণ ভাবেই বৃদ্ধি পায়। এজন্যই পূর্বযুগের জনৈক বুযর্গ বিবাহের প্রতি অনাসক্ত ছিলেন। তিনি বলতেন, আমি নিজে ব্যস্ত, এমতাবস্থায় কিরূপে অন্যজনকে অভ্যর্থনা করব? এ ব্যাপারে জনৈক কবির দুটো পংক্তি প্রণিধানযোগ্য।

চতুর ইঁদুর এই কারণেই গর্তকে ছোট রাখে

শত্রু বিড়াল ঢুকে পড়ে যেন ধরতে না পারে তাকে।

        এজন্যই হযরত ইব্রাহীম বিন আদহাম (রহঃ) বিবাহ করতে অসম্মত ছিলেন এবং বলেছিলেন, আমি কোন স্ত্রীলোককে দোষলিপ্ত করতে চাই না এবং আমার কোন স্ত্রীলোকের প্রয়োজনও নেই। অর্থাৎ তাদের প্রতি কর্তব্য পালন থেকে মুক্ত থাকাই আমার কাম্য। তাদের কোন উপকার করার আমার সামর্থ্য নেই। হযরত বাশার হাফী (রহঃ)ও এরূপ বিবাহে অমত ছিলেন। তিনি বলতেন, আল্লাহর এই বাণীই আমাকে বিবাহ করতে বারণ করেছে। যথাঃ "নারীদের উপর তোমাদের যেরূপ হক, তোমাদের উপরও তাদের তদ্রুপ হক।" তিনি বলতেন, একটি মুরগী পালন করতেও আমার ভয় হয়, কি জানি পুলছিরাতের উপর আমি আবদ্ধ হয়ে যাই নাকি। হযরত সুফিয়ান ইবনে আইনিয়া (রহঃ) কে বাদশাহর দ্বারে দেখা গেল। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি এখানে বসে আছেন কেন? তিনি বললেন, তোমরা কি কোন চারদিক থেকে পরিবেষ্টিত লোককে কখনও সফলকাম হতে দেখেছ? হযরত সুফিয়ান (রহঃ) বলেছিলেনঃ 

একাই আমি ঘরের মালিক

তাইত আছি সুখে 

করছি নাক চিন্তা কোন

 ভাঙ্গা ঘরের দুঃখে

 হোক না এ ঘর জীর্ণ যতই 

শান্ত পরিবেশ 

নাই কোলাহল, নাই জনরব, 

উপদ্রবের লেশ।


        এ এক সাধারণ বিপদ। প্রথমোক্ত বিপদাপেক্ষা এ বিপদের ব্যাপকতা কম। তবুও জ্ঞানী- বুদ্ধিমান, উত্তম চরিত্রবান, স্ত্রীলোকদের স্বভাব সম্পর্কে অভিজ্ঞ, তাদের রসনার আপদেধৈর্যশীল, তাদের খাহেশে সতর্ক, তাদের সম্পর্কে কর্তব্য পালনে আগ্রহশীল, তাদের দোষত্রুটির ব্যাপারে উদাসীন এবং স্বীয় বুদ্ধিদ্বারা তাদের স্বভাব অনুসন্ধানকারী লোক ব্যতীত অন্য কোন লোক এ বিপদ থেকে নিরাপদ নয়। সাধারণতঃ কম বুদ্ধি, রুক্ষ ব্যবহার, মন্দ স্বভাব, বিচার শক্তিহীনতা, সুবিচারে অক্ষমতা প্রভৃতি মানুষের উপর প্রবল থাকে এবং এ সকল দোষ নিঃসন্দেহে বিবাহ দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়; সুতরাং এদের জন্য বিবাহ না করে একাকী থাকাই নিরাপদ।

Post a Comment

0 Comments