হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, "আল হালালু বাইয়্যিনুন ওয়াল হারামু বাইয়্যনুন ওয়া বাইনাহুমা উমুরুল মুসতাবিহাতুন" অর্থাৎ হালাল সুস্পষ্টই এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এতদুভয়ের মধ্যে সন্দেহের বিষয় আছে। কিন্তু মানুষ তা' জানে না। যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে সে তার সম্মান, মর্যাদা এবং দ্বীনকে পবিত্র করে। যে ব্যক্তি সন্দেহের বিষয়ের মধ্যে লিপ্ত হয়, সে হারামের মধ্যে ঐ মেষপালকের ন্যায় পতিত হয়, যে চারণ ভূমির চারদিকে তার মেষপালকে চরাতে থাকে। কিন্তু নির্দিষ্ট চারণভূমির মধ্যে তার প্রবিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। হালাল ও হারামের মধ্যে এই তিন শ্রেণী প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে উপরোক্ত হাদীস উক্ত হয়েছে। উক্ত বিষয় তিনটির মধ্যে যা কষ্টকর এবং অধিকাংশ লোকের অজ্ঞাত তা' সন্দেহজনক বিষয়গুলো। সুতরাং তা' বর্ণনা করা ও বর্ণনার মাধ্যমে তার যবনিকা উন্মোচন করা অত্যাবশ্যক।
হালাল বস্তু: হারাম হওয়ার দোষ বা কারণ হতে স্বাভাবতঃই যে বস্তু মুক্ত এবং যার মধ্যে হারাম বা মাকরূহর কোন উপাদানই নেই তা' হালাল। যেমন বৃষ্টি বা আকাশের পানি। তা' অন্যের অধিকারে যাওয়ার পূর্বেই মানুষ নিজের দখলে নেয় বা তাদের নিজেদের হালাল যমিনে সংগ্রহ করে রাখে। হারাম ঐ বস্তু যা তার নিজস্ব দোষের জন্যই হারাম। এটা হারাম হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। যেমন নেশা সৃষ্টিকারী মাদক দ্রব্য। মল-মূত্রের অপবিত্রতা অথবা হারাম ঐ জিনিসও যা' নিষিদ্ধ বস্তুর মাধ্যমে অর্জন করা হয়। যেমন জুলুম বা অত্যাচারের পন্থায় উপার্জন যথাঃ সুদ ইত্যাদি। হালাল ও হারাম এ দুটো জিনিসের সীমা প্রকাশ্য, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। হালাল ও হারামের হুকুম বা বিধানও প্রকাশ্য। এ দুটো জিনিসের মধ্যে সন্দেহজনক জিনিস আছে, যা' উক্ত হালাল ও হারামের অবস্থা পরিবর্তন করে। কোন বন্ধু হালাল হলেও তা' অন্যের অধিকারে থাকলে হারাম হয়ে যায়। এজন্য অনেক ক্ষেত্রে সন্দেহের উদ্রেক হয়। যেমন জলে-স্থলে শিকার করা হালাল। কিন্তু যে ব্যক্তি কোন হরিণকে পেয়ে মনে করে যে, হয়ত সে হরিণ কোন শিকারীর অধিকারে ছিল এবং সে শিকারীর নিকট হতে পালিয়ে এসেছে। এভাবে তার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। তদ্রুপ কোন মৎস্য পেয়ে শিকারী যদি মনে করে যে, এ মৎস্য অন্যের অধিকার হতে চলে এসেছে, তাহলে তার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এরূপ সন্দেহ শূন্যমন্ডল থেকে পতিত পানি গ্রহণের মধ্যে নেই। তবে এরূপ স্থলেও অযথা সন্দেহ করে ঐ পানি পান না করলে তা' অমূলক ধারণা বলতে হয় বা একে কুমন্ত্রণাকারীদের পরহেজগারী বলতে হয়। কেবলমাত্র ধারণা ব্যতীত এই সন্দেহের কোন প্রমাণ নেই। তবে যদি তার ধারণার পক্ষে কোন অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় যথাঃ মৎস্যের কর্ণের ভিতর যদি ছিদ্র দেখা যায় বা হরিণের শরীরে কোন ক্ষত লক্ষ্য করা যায়, তাহলে নিশ্চয় সেক্ষেত্রে সন্দেহের কারণ থাকে এবং এমতাবস্থায় তা' ভক্ষণ করা থেকে বিরত থাকা চাই। কিন্তু এরূপভাবে যদি কোন প্রমাণ বা চিহ্ন না পাওয়া যায় তখন সন্দেহের কোন কারণ থাকতে পারেনা। তারপরও যদি কেউ তাতে সন্দেহ করে তাহলে তাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা বা অলীক ধারণা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। তদ্রূপ যদি কোন সন্দিগ্ধ ব্যক্তি মালিকের নিকট থেকে কোন ঘর ভাড়া না করে তার অনুমতিক্রমে তাতে বসবাস করে এবং হঠাৎ যদি উক্ত মালিক অজ্ঞাতভাবে দূরদেশে চলে যায় বা যে কোন কারণে অদৃশ্য হয়ে যায় তখন সে ব্যক্তি ঐ ঘর থেকে বের হয়ে যায় এবং বলে, হয়ত মালিকের মৃত্যু হয়েছে এবং ঐ ঘরের স্বত্ব তার ওয়ারিসদের কাছে চলে গিয়েছে। এরূপ মনের ধারণা অলীক বা অমূলক ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা নিছক কুমন্ত্রণা এবং শয়তানের ধোকা। এরূপ ধারণা বা কল্পনা করা নিঃসন্দেহে হারাম।
দুটো পরস্পর বিরোধী বিশ্বাস থেকে সন্দেহের জন্য হয় এবং দুটো কারণ থেকে দুটো বিশ্বাস জন্যে। তবে যে বিষয়ের কোন কারণই থাকে না, তার বিশ্বাস মনের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় না। কোন বিষয়ের দুটো বিশ্বাস পরস্পর বিরোধী হয়ে দাঁড়ালে সে দুটোর সংঘর্ষে সন্দেহের উৎপত্তি হয়। এজন্যই আমরা বলি যে, নামায চার রাকাত পড়া হল, না তিন রাকাত পড়া হল তা' নিয়ে সন্দেহ হলে তিন রাকাত নামায পড়া হয়েছে ধরে নিতে হবে। কেননা চতুর্থ রাকাত নামাযের কোন মূল নেই। যদি কোন লোককে বলা হয়, তুমি জোহরের নামায দশ বছর পূর্বে অমুক দিন তিন রাকাত পড়েছ না চার রাকাত পড়েছ? তবে নিশ্চয়ই সে তা' স্মরণ করে বলতে পারবে না। যখন এ বিষয়ে তার কোন নিশ্চিত বিশ্বাস নেই এবং এরূপ বিশ্বাসের কারণও নেই তখন এটা একান্তই অমূলক ধারণা। এটা সন্দেহের পর্যায়ে পড়ে না। কেননা তিন রাকাত নামায পড়ার কোন কারণই নেই।
সারকথা হল, সন্দেহ ও অমূলক ধারণার অর্থের সূক্ষ্মতত্ত্ব বুঝে লওয়া দরকার। কোনক্রমেই যেন সন্দেহ অমূলক ধারণার সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে না যায়। সন্দেহের কোন কারণ না থাকলে তা' সাধারণতঃ হালালের সাথে জড়িত। আর যদি কোন বিশ্বাস কারও মনের মধ্যে উপস্থিত হয়। কিন্তু তার কোন কারণ না দেখা যায় তবে তা' অমূলক ধারণা। কোন ব্যক্তির হাতে যদি কারও ওয়ারিসী কোন খাদ্যদ্রব্য গচ্ছিত থাকে এবং তার যদি অন্য কোন ওয়ারিস না থাকে আর যদি গচ্ছিতকারী ব্যক্তিকে ন্য দেখা যায় এবং যার কাছে গচ্ছিত রাখা হয়েছে সে বাড়ি বলতে থাকে, হয়ত লোকটির মৃত্যু হয়েছে এবং এ খাদ্যদ্রব্য আমার দখলে এসে গেছে। এরপ অমূলক ধারণার ফলে যদি সে উক্ত খাদ্যদ্রব্য নিজে খেয়ে ফেলে বা কোনরূপ তার অপচয় করে, তাহলে সেটা তার অকাট্য হারাম কাজ হবে। কারণ তার এরূপ অমূলক ধারণা করার কোনই কারণ নেই। পূর্বেই বলেছি যে, অমূলক ধারণা সন্দেহের আওতায় পড়ে না। যে বস্তুকে সন্দেহ বলা হয় তা' দুটো কারণ থেকে উদ্ভূত হয় এবং তা' দুটে। বিশ্বাস উৎপাদন করে। কিন্তু কোন বিশ্বাসেরই প্রাধান্য থাকে না; বরং এক সমান থাকে। পাঁচটি স্থান থেকে এই সন্দেহ জন্মে। অর্থাৎ হারাম এবং সন্দেহজনক দ্রব্য থেকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে মুসলমানগণ পাঁচটি শ্রেণীতে বিভক্ত।
আরও পড়ুন
0 Comments