পাত্রীর কী কী গুন দেখে বীবাহ করতে হয় ?

বিবাহের পূর্বে কন্যার যে গুণগুলো অনুসন্ধান করা সুন্নতঃ 

        বিবাহের জন্য কন্যার যে সব গুণ ও স্বভাব চরিত্র অন্বেষণ করতে হয় তা' কয়েকটি। যথাঃ কন্যার ধর্ম, চরিত্র, সৌন্দর্য, অল্প মহরানা, বংশ, কুমারীত্ব, যে সব কারণে বিবাহের জন্য অযোগ্য প্রমাণিত হয় তা' থেকে মুক্ত।

        (১) ধর্মঃ কন্যা ধার্মিকা এবং সৎস্বভাববিশিষ্টা হবে। এটাই প্রধান গুণ এবং অত্যাবশ্যকীয়। যদি কন্যা তার শরীর, গুপ্তাঙ্গ এবং ধর্মের দিক দিয়ে দুর্বল হয় তাহলে সে স্বামীর মুখকে লোকের সামনে মলিন এবং মস্তককে নীচু করে দেবে। স্বামীর মন সর্বদা নাখোশ এবং পেরেশান থাকবে। যার ফলে তাদের দাম্পত্য জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। এমতাবস্থায় স্বামী যদি কোন অসন্তুষ্টিমূলক বা অবাঞ্ছিত পথ অবলম্বন করে তবুও সে বিপদ থেকে মুক্তি পাবে না। আর যদি সে ঐভাবে কঠিন না হয়ে সহজ পথে চলে তাহলে তার ধর্ম ও সম্মানের হানি ঘটবে। উভয়ের মধ্যে প্রেম-প্রীতি ও সুসম্পর্ক ত কোনক্রমেই অক্ষুণ্ণ থাকবে না। এরূপ অবস্থায় নারী যদি সুন্দরী হয় তবে বিপদ আরও বড় হয়ে দেখা দেবে। কেননা নারী তার স্বামীকে তখন তালাক দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকবে। স্বামী এমতাবস্থায় ভীষণ দুর্বিপাকে পড়ে যাবে। একদিকে সে স্ত্রীর বিচ্ছেদ যাতনায় অস্থির হয়ে পড়বে, অন্যদিকে ঐ স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করাও তার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তার অবস্থা ঠিক ঐ ব্যক্তির মত, যে একদা হুযুরে পাক (দঃ) এর দরবারে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার স্ত্রী কোন স্পর্শকারীর হস্তই ফিরিয়ে দেয় না। হুযুর (দঃ) তাকে বললেন, তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। সে বলল, আমি তাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, তাহলে তাকে রেখে দাও। হুযুরে পাক (দঃ) তাকে তা' এ কারণে বললেন যে, যদি সে তাকে তালাক দেয় তবে সর্বদা তার মন স্ত্রীর জন্য উদ্বিগ্ন ও অশান্তিপূর্ণ থাকবে যার ফলে তার ঘোরতর অনিষ্ট হবে। বিবাহ স্থির থাকা পর্যন্ত স্ত্রীর মনের সংকীর্ণতা থাকলে তার অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যদি স্ত্রী তার ধন-সম্পদ নষ্ট করার পদক্ষেপ নেয় বা যে কোন ভাবে তার ধর্ম নষ্ট করতে উদ্যোগী হয় যাতে করে তার সাথে বসবাস করা স্বামীর পক্ষে অত্যন্ত কষ্টকর এবং দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, এমতাবস্থায় স্বামী যদি নীরবতা অবলম্বন করে, অসন্তোষ প্রকাশ না করে, তাহলে সে স্ত্রীর গুনাহর অংশীদার হবে আর সে আল্লাহ তায়ালার নিম্নোক্ত আয়াতের বিরোধিতা করবে। উক্ত আয়াত এইঃ "কু আনফুসাকুম ওয়া আহলীকুম নারা" অর্থাৎ তোমাদেরকে ও তোমাদের পরিবারবর্গকে দোযখের অগ্নি থেকে বাঁচাও। যদি স্ত্রীকে সুপথে আনার জন্য চেষ্টা করা হয় আর সে তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করে বা প্রতিবাদ করে তাহলে স্বামীর জন্য জীবন ধারণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এজন্যই হযরত রাসূলে করীম (দঃ) পাত্রীর ধর্মের দিকে লক্ষ্য করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এজন্যই তিনি ধার্মিকা নারীকে বিবাহ করার জন্য উৎসাহ দান করেছেন। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, কোন পাত্রীকে তার অর্থ, রূপ, গুণাবলী এবং তার ধর্মের জন্য বিবাহ করবে। ধর্মের গুণই তোমার লক্ষ্যণীয় বিষয় হওয়া বাঞ্ছনীয়।

        অপর এক হাদীস আছে, যে ব্যক্তি কোন নারীকে রূপ এবং অর্থের মোহে বিবাহ করে সে রূপ ও অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়। আর যে ব্যক্তি ধর্মরক্ষার জন্য বিবাহ করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে রূপ ও অর্থের মঙ্গল দান করেন। হুযুরে পাক (দঃ) আরও বলেছেন, কোন স্ত্রীলোককে শুধু তার রূপের জন্য বিবাহ করবে না। কেননা হয়ত তার রূপই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। শুধু সম্পত্তির জন্যও তাকে বিবাহ করবে না। হয়ত তার সম্পত্তিই তাকে তোমার বিরুদ্ধ করে তুলবে। শুধু তার ধর্মের জন্যই তাকে বিবাহ করবে। হযরত রাসূলে করীম (দঃ) এভাবে শুধু ধর্মের প্রতিই জোর দিয়েছেন এবং শুধু ধর্মের প্রতিই গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কেননা এরূপ স্ত্রী স্বামীর ধর্মে সাহায্যকারিণী হয়। যদি স্ত্রী ধার্মিকা না হয় তাহলে সে নিজে যেমন ধর্ম থেকে দূরে থাকে স্বামীকেও তদ্রূপ ধর্ম থেকে দূরে রাখে।

        ২) গুণঃ সংস্বভাবঃ ইবাদাতের অবসর পাওয়ার জন্য এবং ধর্মের সাহায্যের জন্য এ গুণটি ( অতি আবশ্যকীয়। যদি স্ত্রী কর্কশভাষিণী হয় এবং রুক্ষ স্বভাবা ও কৃতঘ্ন প্রকৃতির হয় তবে তার পক্ষ থেকে উপকার অপেক্ষা অপকার অধিক হয় এরূপ স্ত্রীলোকের রসনা থেকে ধৈর্য ধারণ করা অলী-আল্লাহদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। জনৈক আরববাসী বলেছেন, ছয় প্রকার নারীকে বিবাহ করো না। তারা হলঃ (ক) আনানাহ, (খ) মানানাহ, (গ) হানানাহ্, (ঘ) হাদাকাহ (ঙ) বাবাকাহ এবং (চ) সাদাকাহ। (১) আনানাহ ঐ নারীকে বলে, যে কেবল সদাসর্বদা দুঃখ প্রকাশ করে ও নানা বিষয়ে অনুযোগ অভিযোগ করতে থাকে। সর্বদা সে তার মস্তকের বেদনা প্রদর্শনার্থে মাথা বেঁধে রাখে। যার সকল সময় কোন না কোন রোগ থাকে বা সে রোগ থাকার ভাণ করে। এরূপ নারীকে বিবাহ করে কল্যাণ ও মঙ্গল লাভের আশা করা বৃথা।

        (২) মানানাহ ঐ নারী, যে বারবার তার স্বামীকে প্রদত্ত জিনিসের খোটা দেয় এবং বলে, আমি তোমার জন্য আমার পিতার বাড়ী থেকে এ জিনিস এনেছি, ও জিনিস এনেছি। আমি তোমার জন্য এ কাজ করেছি, ও কাজ করেছি। এই শ্রেণীর নারীকে বিবাহ করেও কোন পুরুষ কখনও শান্তি লাভ করে না।

        (৩) হানানাহ ঐ নারী, যে কেবল সর্বদা প্রথম স্বামী বা তার ঔরসজাত সন্তানের কথা বারবার উল্লেখ করে; এবং তাদের দিকেই তার মন পড়ে থাকে। এই শ্রেণীর নারীকে বিবাহ না করা উত্তম। আর যদি করে ফেলে, তাহলে তাকে পরিত্যাগ করবে।

        (৪) হাদাকাহ ঐ নারী, যার প্রত্যেক জিনিসের প্রতিই অধিক লিলা হয়, এবং তা' পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। স্বামীকে তা' যেভাবে হোক সংগ্রহ করে আনার জন্য ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। এজন্য স্বামীকে সে নানারূপ দুঃখ-কষ্ট প্রদান করে (এই শ্রেণীর নারীকেও বিবাহ করা যায় না)।

        (৫) বাবাকাহর দুটি অর্থ আছে। এক অর্থে ঐ নারী, যে দিবানিশি নিজের চেহারাকে সুন্দর করে রাখে, সারাদিন অতিমাত্রায় সেজেগুজে থাকে। দ্বিতীয় অর্থে ঐ নারী, যে কখনও পানাহারে সন্তুষ্ট হয় না। একাকিনী আহার করতে ভালবাসে। আর প্রত্যেক জিনিসের মধ্যে নিজের প্রাপ্ত অংশকে সে পৃথক করে রাখে। কোন কিছুতেই তার তৃপ্তির লক্ষণ দেখা যায় না (এ প্রকৃতির নারীকে বিবাহ করে কোন পুরুষই শান্তির মুখ দেখতে পায় না)।

        (৬) সাদাকাহ ঐ নারী যে অনর্থক বহু কথা বলে। বাঁচালতা যার অভ্যাস। এদের সম্পর্কে হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা অতিরিক্ত বাক্যকারিণীকে ঘৃণা করেন।

        কথিত আছে যে, সায়হুল আজদী (রহঃ) তার সফরকালে হযরত ইলিয়াস (আঃ)এর সহিত সাক্ষাত করলেন। তিনি আজদীকে বিবাহ করতে আদেশ দিলেন এবং বৈরাগ্য অবলম্বনে নিষেধ করলেন। তিনি তাকে আরও বললেন যে, তোমাকে বিবাহ করতে বললাম কিন্তু চার প্রকার নারী বিবাহ করো না। তারা হলঃ (ক) মুফতালিহা, (খ) মুবারিয়াহ (গ) আহিরাহ এবং (ঘ) নাজিশাহ।

    (১) মুফতালিহা ঐ নারী, যে প্রত্যেক সময় অনাহুত পোশাক-পরিচ্ছদে ভূষিত থাকা ভালবাসে।

    (২) মুবারিয়াহ ঐ নারী, যে অন্য নারীদের কাছে তার পার্থিব ধন দৌলতের গৌরব করে।

    (৩) আহিরাহ ঐ নারী, যে অত্যন্ত অসতী এবং গুপ্ত বন্ধুর জন্য লালায়িত থাকে। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যারা গোপনে বন্ধু তালাশ করে, তাদেরকে বিবাহ করো না।

    (৪) নাজিশাহ ঐ নারী, যে তার স্বামীর নিকট নিজের আভিজাত্য দেখিয়ে এবং বড় বড় কথা বলে অহংকার প্রকাশ করে। এরূপ নাবীরা জগতে কু-নারী বলে খ্যাত।

         আলী (রাঃ) বলেছেন, কতগুলো স্বভাব পুরুষের জন্য মন্দ কিন্তু নারীদের জন্য উত্তম। যথাঃ কৃপণতা কৃপণতা, অহংকার এবং ভীরুতা, যখন কোন নারী কৃপণ হয়, সে তার নিজের ধন-সম্পদ ও মাল-আমান রক্ষা করে। যখন কোন স্ত্রীলোক অহংকারী হয়, তখন সে কোমল হলেও খনি পুরুষ তার আথে অসৌজন্যমূলক এবং সন্ত্রমবিরোধী কোন কথা বলে তাহলে সে জ্যাখ্যান তা ঘৃণাভরে প্রত বন্ধু-বান্ধব এ করে। যখন কোন নারীর মধ্যে ভীরুতা স্বভাব থাকে, তখন। সে সমস্ত ব থেকে পৃথক হয় এবং নিজের গৃহকর্মে রত থাকে। বিশেষতঃ সে স্বামীর নিন্দার ভয়ে অবাঞ্ছিত স্থানে যাতায়াত করে না (নারীর মধ্যে উল্লিখিত স্বভাবগুলো বর্তমান থাকলে কোন অন তাদেরকে বিবাহ করা উত্তম)।

        (৩) রূপসী বা সুন্দরী হওয়াঃ পাত্রীর মধ্যে রূপও অন্বেষণ করা চাই। কেননা তাতে মনের  কুমন্ত্রণা এবং ব্যভিচার হতে রক্ষা পাওয়া যায়। স্ত্রীর রূপ-লাবণ্য না থাকলে সাধারণতঃ স্বামীর মন ভরে না। অনেক সময় নারীর আকৃতি ও প্রকৃতি দুটোই মন্দ হয়। মিত ক্ষেত্রে স্বামীর জন্য দুঃখের সীমা থাকে না। আবার অনেক সময় এর দুটোই উত্তম হয়। এমত এমতক্ষেত্রে স্বামীর আবার সুখেরও অন্ত থাকে না। তবে সারকথা হল, স্ত্রীলোককে কখনও শুধু রূপ দেখে বিবাহ করবে না। অবশ্য শুধু রূপ দেখে নারীকে বিবাহ করা হারাম বা নিষিদ্ধ নয়। রূপের প্রতি মন ধাবিত হয় বটে, কিন্তু তা' ধর্মের বন্ধন শিথিল করে দিতে পারে বলে সর্বদা ভয় থাকে। অবশ্য ভালবাসা ও প্রেমকে নিবিড় এবং গাঢ় করার জন্য রূপের গুরুত্ব আছে এবং শরীয়তও ভালবাসার বৃদ্ধিকারক কারণগুলোকে গুরুত্ব দিতে উপদেশ দিয়েছে। আর এজন্যই বিবাহের পূর্বে পাত্রীকে দেখে নেয়া মুস্তাহাব বলা হয়েছে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যদি তোমাদের কারো মনে কোন স্ত্রীলোককে বিবাহ করার ইচ্ছে হয় তবে সে যেন তার দিকে দৃষ্টিপাত করে। এর দ্বারা পরস্পরের মধ্যে প্রীতির সঞ্চার হয়। তিনি আরও বলেছেন, নিশ্চয়ই আনছারদের চোখে এমন কোন বস্তু রয়েছে যদি তোমাদের কারো তাদের কোন স্ত্রীলোককে বিবাহ করতে ইচ্ছে হয় সে যেন তাকে দেখে নেয়। বলা হয়ে থাকে যে, তারা ক্ষীণ দৃষ্টি- বিশিষ্টা বা হলুদ চক্ষুবিশিষ্টা। পূর্বকালের কোন কোন ধার্মিক ব্যক্তি প্রবঞ্চনা থেকে বাঁচার জন্য অভিজাত বংশীয়া স্ত্রীলোকগণকে না দেখে বিবাহ করতেন না। হযরত আ'মাশ (রাঃ) বলেছেন, যে বিবাহ পাত্র পাত্রীর দেখা সাক্ষাৎ ব্যতিরেকে হয় তার শেষফল হয় দুঃখ-ক্লেশ ও চিন্তা-ভাবনা। একথা সত্যিই যে, প্রথম দৃষ্টিতেই নারীর চরিত্র, ধর্ম ও ধনদৌলত সম্পর্কে জানা যায় না। শুধু সে রূপবতী না কদাকৃতি তাই দেখা যায়। কথিত আছে যে, এক ব্যক্তি দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রাঃ) এর যমানায় স্বীয় চুল ও দাড়িতে খেজাব ব্যবহার করে বিবাহ করেছিলেন। যখন তার খেজাবের রং উঠে গেল পাত্রীপক্ষীয় লোকগণ এসে হযরত ওমর (রাঃ) এর দরবারে অভিযোগ পেশ করল, আমরা তাকে যুবক মনে করেছিলাম। তখন হযরত ওমর (রাঃ) তাকে বেত্রাঘাত করে বললেন, তুমি এদের সাথে প্রতারণা করেছ। কথিত আছে যে, হযরত বেলাল (রাঃ) ও সোহাইব (রাঃ) মরুবাসীদের এক পরিবারের নিকট এলে তারা জিজ্ঞেস করল, তোমরা কে? হযরত বেলাল (রাঃ) বললেন, আমি বেলাল এবং ইনি আমার ভ্রাতা সোহাইব। আমরা পথভ্রষ্ট ছিলাম। আল্লাহ আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন। আমরা যা (গোলাম) ছিলাম আল্লাহ আমাদেরকে মুক্ত করেছেন। আমরা দরিদ্র ছিলাম আল্লাহ আমাদেরকে স্বচ্ছল করেছেন। যদি আমাদের নিকট তোমাদের কন্যা বিবাহ দাও তাহলে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আর যদি আমাদেরকে ফিরিয়ে দাও তবে আল্লাহ পবিত্র। তারা বলল; বরং আপনারা বিবাহ করুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তখন সোহাইব (রাঃ) হযরত বেলালকে বললেন, যদি তুমি হুযুরে পাক (দঃ) এর সহিত আমাদের সাক্ষাৎ ও খেদমতের কথা উল্লেখ করতে, তাহলে উত্তম হত। হযরত বেলাল (রাঃ) বললেন, তুমি চুপ থাক। আমি সত্য কথাই বলেছি। রূপের প্রবঞ্চনা দেখে নিয়ে দূর করা উত্তম এবং স্বভাবের প্রবঞ্চনা গুণ দেকে দূর করা চাই। এজন্যই বিবাহের পূর্বে দেখে শুনে লওয়া দরকার।

        পাত্রীর রূপ ও স্বভাব-চরিত্র এমন লোকের নিকট অনুসন্ধান করা উচিত, যে সূক্ষ্ম দৃষ্টিসম্পন্ন, সত্যবাদী এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত বিষয়ে জ্ঞাত এবং যে তার প্রতি অনুরক্ত নয়, যে তার অতিরিক্ত প্রশংসা করবে না। আবার হিংসার বশবর্তী হয়েতার গুণ হ্রাসও করবে না। বহুলোক বিবাহ সংঘটনের উদ্দেশ্যে পাত্রীর অনুরক্ত থাকার কারণে তার অতিরিক্ত প্রশংসা করে থাকে। এদের কথায় সত্য অল্পই থাকে। বরং অসত্য ও প্রবঞ্চনাই অধিক থাকে। যে ব্যক্তি স্ত্রী দ্বারা শুধু সুন্নত পালনের ইচ্ছা করে বা সন্তান লাভ বা গৃহকর্ম সম্পাদনের ইচ্ছে করে, তার অবশ্য রূপের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করাই সৌভাগ্যের অধিক নিকটবর্তী। মূলতঃ রূপ একটি পার্থিব বস্তু, যদিও তা' কোন কোন ব্যক্তির পক্ষে ধর্মেরও সহায়ক। হযরত আবু সোলায়মান দারানী (রহঃ) বলেছেন, বৈরাগ্য প্রত্যেক কাজের মধ্যেই রয়েছে। এমনকি বৃদ্ধা স্ত্রীলোকের বিবাহের মধ্যেও নিহিত আছি। হযরত মালেক ইবনে দীনার (রহঃ) বলেন, মানুষ কোন ইয়াতিম কন্যাকে বিবাহে রাজী নয়। অথচ তাকে খাদ্য ও বস্ত্র প্রদানে ছওয়াব হয়। সে স্বল্পে সন্তুষ্ট থাকে। তার জন্য খরচও কম হয়। তবু সেদিক লক্ষ্য না করে বরং মানুষ দুনিয়াদারের কন্যা বিবাহ করে। যার ফল এই হয় যে, ঐ কন্যা তার নিজেরই খেয়াল খুশীমত স্বামীর নিকট আবদার করে যে, আমাকে এরূপ পরিচ্ছদ দিতে হবে, ওরূপ গহনা দিতে হবে।

        ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) জনৈকা কানা নারীকে বিবাহ করেছিলেন। অথচ তার এক চাচাত ভগ্নি খুবই সুন্দরী ছিল। আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) শুধু জানতে চেয়েছিলেন, কে বেশী বুদ্ধিমতী! তাকে বলা হল, কানা নারীটি বেশী বুদ্ধিমতী। একথা শুনে তিনি বললেন, তাহলে কানা নারীর সহিত-ই আমার বিবাহ করিয়ে দাও।

        যারা পার্থিব আমোদ-প্রমোদ পছন্দ করে না, তাদের রীতিই এরূপ, তবে যাদের আমোদ-প্রমোদ ব্যতীত ধর্ম নিরাপদ নয়, তাদের নারীর রূপ অনুসন্ধান করা উচিত। কেননা, আমোদ-প্রমোদ তাদের ধর্মের জন্য বর্ম স্বরূপ। কেউ কেউ বলে যে, স্ত্রীলোক সুন্দরী, উত্তম স্বভাববিশিষ্টা, কৃষ্ণকেশধারিণী, আয়তলোচনবিশিষ্টা, গৌরবর্ণের অধিকারিণী, স্বামী সোহাগিনী, তার প্রতি প্রেম কটাক্ষকারিণী ও কৃষ্ণ নয়নবিশিষ্টা হবে। সে হুর আকৃতিবিশিষ্টা হবে। কেননা আল্লাহতায়ালা বেহেশতবাসিনী রমণীদের এরূপই রূপ গুণ বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেছেনঃ "খাইরাতুন হাসান" অর্থাৎ সুন্দরী ও উত্তম। খাইরাতের দ্বারা সুন্দর স্বভাববিশিষ্ট অর্থ করা হয়েছে। আল্লাহ আরও বলেছেনঃ "কাছিরাতুত তারফি” অর্থাৎ কোন দৃষ্টি নিক্ষেপকারিণী (কটাক্ষকারিণী) যার অর্থ স্বামীর প্রতি প্রণয়িনী ও তার সঙ্গলাভে আগ্রহিনী। তারই দ্বারা আনন্দ উপভোগ করা যায়। হুর-এর অর্থ গৌরবর্ণ বিশিষ্টা রমণী। "হাওয়া"-এর অর্থ অত্যন্ত শ্বেতবর্ণ চক্ষু এবং অত্যন্ত কৃষ্ণবর্ণ কেশ। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ঐ নারী, যার প্রতি তার স্বামী দৃষ্টিপাত করলে তার মন খুশী হয়ে যায়। যখন তাকে যে আদেশ করে, তা' সে পালন করে। যখন সে অনুপস্থিত থাকে, তার সমস্ত মাল সামান সে হেফাজত করে রাখে। স্বামী স্ত্রীর এ ভালবাসা মিশ্রিত দায়িত্ব পালন দেখে তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে।

        ৪) চতুর্থ গুণঃ অল্প মহরানাঃ হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, 'খাইরুন নিসায়ি আহসানু হুন্না উজ্জাহান অ আরখাছু হুন্না মুহুরান" অর্থাৎ সর্বাধিক উত্তম ঐ নারী যার চেহারা সুন্দর ও যার মহরানা স্বল্প। মহরানা সীমাতিরিক্ত নির্ধারণ করা তিনি নিষেধ করেছেন। হুযুরে পাক (দঃ) তার কোন কোন স্ত্রীর মহরানা মাত্র দশ দেরহাম এবং কারও কারও মহরানা মাত্র সামান্য গৃহ সরঞ্জাম দিয়েছিলেন। গৃহ সরঞ্জাম অর্থ একটি যাঁতার চাক্কি, একটি কলসী, খুরমার ছাল পূর্ণ চর্ম নির্মিত একটি বালিশ। তিনি তার কোন কোন স্ত্রীর বিবাহের সময়ে দু'মোদ আটা অথবা দু'মোদ খেজুর অথবা দু'মোদ ছাতু দ্বারা অলীমাহ করেছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ)ও অধিক মহরানা ধার্য করতে নিষেধ করতেন এবং বলতেন, হুযুরে পাক (দঃ) চার হাজার দেরহামের অধিক মহরানায় নিজে কোন বিবাহ করেন নি। যদি অধিক মহরানা সম্মানের ব্যাপার হত, তাহলে তিনি তা' নিশ্চয় করতেন। তাঁর কোন কোন ছাহাবী মাত্র স্বর্ণের একটি টুকরোর মহরানায় বিবাহ করেছেন। বলা হয়ে থাকে যে, তার মূল্য পাঁচ দেরহাম ছিল। হযরত সাইয়্যিদ বিন মুসাইয়্যিব (রাঃ) হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) এর নিকট তাঁর কন্যাকে মাত্র দু' দেরহামের বিনিময়ে বিবাহ দিয়েছিলেন। তারপর তিনি তাঁর কন্যাকে রাত্রে নিজেই হযরত আবু হোরায়রার গৃহে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে বিদায় হয়েছিলেন। তার সাতদিন পর আবার এসে স্বীয় কন্যাকে সালাম জানিয়েছিলেন

        যদি মহরানা ওলামাদের মতের বিরুদ্ধে দশ দেরহামের কম নির্দ্ধারণ করা হয়, তবে তাতে কোন দোষ নেই; এবং হাদীস শরীফে আছে, সেই নারীর জন্য মঙ্গল, যাকে শীঘ্র বিবাহ দেয়া হয়, বিলম্ব করা না হয়, যার সন্তান হয় এবং যার স্বল্প মহরানা ধার্য করা হয়। যে নারীর মহরানা যত অল্প, সেই নারী তত বেশী মঙ্গলকারিণী। স্ত্রীর পক্ষ হতে যেরূপ খুব বেশী মহরানা দাবী করা নিন্দনীয়, পুরুষের পক্ষ হতে তদ্রুপ পাত্রীর নিকট মাল সামান তলব করা মন্দ। নারীর তরফ হতে ধন মাল পাওয়ার লোভে বিবাহ করা উচিত নয়। হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, যখন কেউ বিবাহ করতে ইচ্ছে করে, তখন যদি পাত্রীর মাল সামানের কথা জিজ্ঞেস করে, তবে মনে'করবে যে সে চোর। যখন পাত্রের নিকট পাত্রী কিছু উপহার পাঠিয়ে দেয়, তা' থেকে আরও বেশী আদায় করার আশায় তাকে যেন কষ্ট না দেয়া হয়। তদ্রুপ যখন স্বামী স্ত্রীর নিকট কিছু উপহার পাঠায়, তখন তার বেশী আরও দাবী করা অনিষ্টকর। পরস্পর পরস্পরকে উপহার লেন দেন করা মুস্তাহাব এবং পরস্পরের ভালবাসার চিহ্ন। হযরত রাসূলে করীম (দঃ) বলেছেন, উপহার দাও, তাতে পরস্পরের মধ্যে ভালবাসার সৃষ্টি হবে। পরস্পর অতিরিক্ত উপহার অন্বেষণ করবে না। এদের সম্বন্ধে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, "অলা তামুদ্দুনা তাততাকছির" অর্থাৎ অতিরিক্ত পাওয়ার আশায় উপহার দেবে না, মোট কথা বিবাহের সময় অতিরিক্ত মাল তালাশ করা মাকরূহ এবং বেদআত। এটা একটি জুয়া খেলার মত এবং এটা বিবাহের মূল উদ্দেশ্য নষ্ট করে দেয়।

        ৫। পঞ্চম গুণঃ পাত্রীর বন্ধ্যা না হওয়া। যদি তার বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে তুমি অবহিত থাক, তাহলে তাকে বিবাহ করো না। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, "আ'লাইকুম বিল উলূদিল ওয়াদুদ" 'অর্থাৎ স্বাস্থ্যবতী ও যুবতী দেখে বিবাহ করবে। কেননা সাধারণতঃ এই দুটো গুণবিশিষ্টা নারী সন্তানবতী হওয়ার আশা করা যায়।

        ৬। ষষ্ঠ গুণঃ পাত্রী কুমারী হওয়া। হুযুরে পাক (দঃ) হযরত জাবের (রাঃ) কে বলেছিলেন, তুমি কুমারী বিবাহ করলে না কেন? তাহলে ত তুমি কৌতুক ও রসালাপে অধিক আনন্দ পেতে এবং সেও ঐভাবে বেশী আনন্দ লাভ করত। বলাবাহুল্য যে হযরত জাবের (রাঃ) জনৈকা বিবাহিতা নারীকে বিবাহ করেছিলেন। কুমারী বিবাহ করলে তিনটি উপকার হয়। যথাঃ কুমারী নারী স্বামীকে অধিক ভালবাসে এবং স্বামীর সহিত তার গভীর প্রেম-প্রীতি জন্মে এবং কুমারী নারীকে বিবাহ দ্বারা হুযুরে পাক (দঃ) এর উপরোক্ত হাদীস (আ'লাইকুম বিল উলূদিল ওয়াদূদ)টি পালন করা হয়। বলাবাহুল্য যে, কুমারী নারীর সহিত বিবাহ হলে স্বামী স্ত্রী দুজনই দুজনের প্রতি বেশী আকৃষ্ট হয়। উভয়ের মধ্যে গাঢ় প্রণয় ও অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি হয়, যা অন্য ক্ষেত্রে আশা করা যায় না। তারপর যে স্ত্রীলোক ইতিপূর্বে অন্য স্বামীর সঙ্গলাভ করেছে এবং তার সাথে প্রেম-প্রীতির বিনিময় হয়েছে। প্রায়শঃ এরূপ স্ত্রীলোকের মনে পূর্বস্বামীর ভালবাসা ও প্রণয়ের স্মৃতি জাগরুক থাকে। যার ফলে পরবর্তী স্বামীর সাথে প্রণয় ও প্রীতির সৃষ্টি হলেও তা' নিরঙ্কুশ হয় না। যাতে করে পরবর্তী স্বামীর মন পুরোপুরিভাবে উক্ত স্ত্রীর দ্বারা তৃপ্তি লাভ করে না। কোন কোন ক্ষেত্রে অবস্থা এরূপও হয়ে থাকে যে, পূর্ববর্তী স্বামী অধিক রূপবান, স্বাস্থ্যবান এবং গুণবান হওয়ার ফলে পরবর্তী স্বামীর দ্বারা স্ত্রী সন্তুষ্ট হতে পারে না। যার ফলে স্ত্রী স্বামীকে অবজ্ঞা এবং অবহেলা করে থাকে। কুমারী নারী বিবাহ করলে স্বামীর প্রেম-প্রীতি ঐ নারী সম্পূর্ণরূপে লাভ করতে পারে। পক্ষান্তরে যে নারী অন্য স্বামীর সঙ্গলাভ করেছে তার প্রতি দ্বিতীয় স্বামীর কিছুটা অবজ্ঞা ও ঘৃণা স্বভাবতঃই হয়ে থাকে। যদি স্বামী স্বভাবতঃ উদার এবং ত্যাগী প্রকৃতির হয় তাহলে হয়ত কোন গুরুতর অবস্থা দেখা দেয় না। কিন্তু যদি স্বামীর প্রকৃতি তার বিপরীত হয় তাহলে স্ত্রীর প্রতি তার অবজ্ঞা ও ঘৃণা ক্রম-বৃদ্ধি লাভ করে।

        কুমারী নারী স্বাভাবিক ভাবেই মনের দিক থেকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও নিখুঁত থাকে। কেননা যেহেতু তার পূর্বে কোন স্বামী ছিল না, কোন পুরুষের সাথে কোন দিন তার সম্পর্ক হয় নি। তাই পূর্ববর্তী স্বামীর স্মৃতি মনে এনে তার জন্য দুঃখ বা হা-হুতাশ করার প্রশ্নই আসে না। একথা অবশ্য সত্যি যে, নারীর প্রথম স্বামীর সংগে যে প্রেম ও ভালবাসা জন্মে তা' সাধারণতঃ স্বাভাবিকভাবেই অধিকতর গাঢ় এবং সুগভীর হয়।

        সপ্তম গুণঃ নারী সম্রান্ত বংশস্তুত হওয়া। অর্থাৎ পাত্রীকে ধার্মিক এবং সৎ পরিবারের কর্তার হতে হবে। কেননা অচিরেই তাকে পুত্রকন্যাদের প্রাথমিক শিক্ষা-দীক্ষা ও তত্ত্বাবধানের থাকে গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে যদি পাত্রীর নিজেরই আদব এবং শিষ্টাচারিতার অভাব থাকে (মহলে সন্তানদেরকে ভদ্রতা, শিষ্টাচারিতা ইত্যাদি কি ভাবে শিক্ষা দেবে? এজন্যই হুযুরে পাক মুদঃ) বলেছেন, "মুআরাউদ্দাওয়ামান' হতে সর্তক হবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, বুজারাউদ্দাওয়ামান-এর অর্থ কি? মতিনি বললেন, কুবংশের সুন্দরী রমণী। তিনি আরও বলেছেন, তোমাদের বিয়ের জন্য নারী পছন্দ করে নাও।

        ৮। অষ্টম গুণঃ পাত্রী নিকটআত্মীয় না হওয়া। নিকটআত্মীয় সম্পর্কিত নারী বিবাহ করলে কামোত্তেজনা হ্রাস পায়। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, নিকটআত্মীয় নারীকে বিবাহ করো না। কেননা তাতে সন্তান দুর্বল হয়। তার কারণ হল, কামশক্তির দুর্বলতা। জেনে রাখ, কামশক্তি দৃষ্টি ও স্পর্শ দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। যদি নারী অপরিচিতা এবং নতুন হয় তাহলে কামশক্তি সবল হয়ে থাকে। যে নারীকে দীর্ঘদিন ধরে দেখাশুনা হয় তাকে স্পর্শ করলে কামোত্তেজনা বৃদ্ধি পায় না।; বরং তা' নিস্তেজ ও দুর্বল থাকে। কামভাব প্রবল হয়ে উঠে না।

Post a Comment

0 Comments