প্রমাণের বৈষম্য কারণের মধ্যে বৈষম্যের অনুরূপ। কেননা কারণ হালাল ও হারাম নির্ধারণ করার জন্য। হালাল ও হারাম চিনবার কারণকেই প্রমাণ বলা হয়। প্রমাণ প্রকৃত সত্য চিনবার কারণ। প্রমাণের বৈষম্য তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। পরস্পর বিরোধী শরীয়তের প্রমাণ, পরস্পর বিরোধী চিহ্ন বা আলামত এবং পরস্পর বিরোধী সন্দেহ।
প্রথম শ্রেণী: পরস্পর বিরোধী শরীয়তের প্রমাণ কুরআনের দু'আয়াত পরস্পর বিরোধী হওয়া। এ পরস্পর বিরোধী আয়াতসমূহ, সুন্নত বা কিয়াস সন্দেহের সৃষ্টি করে। আর এই সন্দেহের স্থলে প্রবলটাই কার্যকরী হয়। যদি কোন প্রমাণই প্রবল না হয়, তাহলে তার পূর্ব মূল বিধান কার্যকরী হয়। হারাম প্রবল হলে তা-ই গ্রহণ করা ওয়াজিব। যদি হালাল প্রবল হয়, তবে তার উপর আমল করা জায়েয। আর সন্দেহের স্থল হলে তা' ত্যাগ করা পরহেজগারী; এবং বিরুদ্ধমত হতে সতর্কতা অবলম্বন করা চাই। মেলার চরে সাভা
বিশেষতঃ কোন বিষয়ের উপর ফতোয়াদাতাদের এবং বিভিন্ন মাযহাবীদের মধ্যে মতভেদ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলে শহরে যে মুফতী উত্তম এবং শ্রেষ্ঠ, তাঁর মত এবং ফতোয়া অনুযায়ী চলবে এবং তার শ্রেষ্ঠত্ব ও উত্তম হওয়ার ব্যাপারটি লোকমুখের প্রচার এবং তাঁর খ্যাতির দ্বারাই নির্ধারণ করবে। যেমন লোকগণ কোন চিকিৎসক উত্তম তার সুনাম শুনেই অনুমান করে নেয়। উক্ত চিকিৎসকের চিকিৎসায় ক্ষেত্র বিশেষে ফল না হলে যেমন তার সুনাম চলে যায় না, ঠিক তেমনি কোন মুফতীর ফতোয়ায় ফতোয়াপ্রার্থী খুশী না হলে তখনই তার মাযহাব থেকে চলে গিয়ে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা চাই না। যদি কারও ইমাম তার মতের খেলাফ কোন ফতোয়া দান করে ও তা' স্বীকার করে নিতে মন না চায়, তখন এজমা এবং সম্মিলিতভাবে গৃহীত স্নতের অনুসরণ করবে। এটাই হবে সতর্কতা অবলম্বন। তদ্রূপ কোন মুজতাহিদের কাছে কোন প্রমাণ তার মতরিরোধী হলে এবং অনুমান ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান দ্বারা হালাল হওয়া প্রবল না হলে তা' ত্যাগ করাই তার জন্য সতর্কতা। আমরা এ বিষয়টিকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করব। প্রথম স্তরঃ যে বিষয়ের প্রমাণ প্রবল বা অধিক শক্তিমান তার খেলাপ বিষয় হতে বিরত থাকা
উত্তম এবং ন্যায়সঙ্গত। যেমন, যদি শিক্ষাপ্রাপ্ত শিকারী কুকুর নিজেই শিকার ধরে ভক্ষণ করতে শুরু করে, তাহলে ঐ শিকারের প্রাণী ভক্ষণ করা থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরী। ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন যে, তা' ভক্ষণ করা হারাম। যদি মুফতী অন্যরূপ ফতোয়া দেয় তা' ত্যাগ করা ঐ প্রাণী ত্যাগ করার ন্যায় হবে, যার যবেহকালে বিসমিল্লাহ বলা হয় নি। কেননা তা' প্রকাশ্য আয়াতসম্মত এবং এর সমর্থনে বেশ কিছুসংখ্যক হাদীসও রয়েছে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যখন তোমরা শিক্ষাপ্রাপ্ত কুকুর শিকারের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দাও এবং তাতে 'বিসমিল্লাহ বল, তা' ভক্ষণ কর। বহুবার বলা হয়েছে, ভক্ষণ করার সময় বিসমিল্লাহ বলা আবশ্যক। অবশ্য হুযুরে পাক (দঃ) আবার অন্য হাদীসে বলেছেন, আল্লাহর নাম উচ্চারণ করুক কি না করুক মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর নামেই যবেহ করে। এ হাদীসটি আয়াতের ও অনেক হাদীসেরও পরিপন্থী। তবে এটা সর্বসাধারণের জন্য বলা হয়েছে কিনা সে সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ আছে। কে ভুল করে বসে ও কথাটা তার সম্বন্ধেই বলা হয়েছে বলে মনে হয়। সুতরাং উক্ত হাদীস থেকে পরহেজ করা কর্তব্য।
দ্বিতীয় স্তরঃ এটা কুমন্ত্রণার স্তর বা অমূলক ধারণার কাছাকাছি। যেমন, প্রাণীর বাচ্চা ভক্ষণ করা হতে বিরত থাকা। যা যবেহ করা প্রাণীর উদরে পাওয়া যায়।
বিশুদ্ধ হাদীসে আছে, মাতার যবেহ দ্বারা বাচ্চার যবেহও আদায় হয়ে যায়। এর বিষয়বস্তুতে কোন সন্দেহ নেই এবং এর প্রমাণেও কোন দুর্বলতা নেই। এ-ও বিশুদ্ধ হাদীসে আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) এর দস্তরখানায় টিকটিকি ভক্ষণ করা হয়েছিল। সুতরাং এই সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করা একেবারেই অমূলক।
তৃতীয় স্তরঃ মূল মাসয়ালার মধ্যে কোন মতভেদ না থাকা, যদিও তার হালাল হওয়া শুধু একটি হাদীস দ্বারা 'ছাবেত' হয়। একই হাদীসের মধ্যে লোকের মতভেদ থাকে কিন্তু কেউ কেউ একই হাদীস দ্বারা ফতোয়া গ্রহণ করা স্বীকার করে না, তা' থেকে পরহেজ করা উত্তম। কেননা এরূপ হাদীস বর্ণনাকারী ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি হলেও সে ভুল করতে পারে। কোন প্রয়োজনবশতঃ মিথ্যে কথা বলাও তার পক্ষে অসম্ভব নয়। অন্য কারণ এই যে, তার বুঝের ব্যাপারেও ভুল হতে পারে। কেননা বর্ণনাকারী একরূপ বলে এবং শ্রোতা অন্যরূপ অর্থ করে। ছাহাবীগণ ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তির নিকট যা শুনতেন, তাদের আত্মা তাতে সন্তুষ্ট হত। যদি কোন বর্ণনাকারীর ক্ষেত্রে কোন বিশেষ কারণ থাকত বা নির্দিষ্ট প্রমাণ থেকে সন্দেহ উদ্ভূত হত তার বাক্য গ্রহণে সন্দেহ করা হত। কিন্তু কোন কারণ না থাকলে একই হাদীসের বিরোধিতা করা যুক্তিযুক্ত নয়। যদি তা' যুক্তিযুক্ত বলে মেনে নেয়া হয়, তাহলে মানুষ পিতামহ থেকে মীরাস গ্রহণ করতে পারে না। কেননা পবিত্র কুরআনে পৌত্রের ওয়ারিস হওয়ার কোন উল্লেখ নেই এবং তয়ারা উক্ত বিষয়সমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। হৃদয়গুলোর মধ্যে এরূপ হৃদয় কত সম্মানিত তা' ভেবে দেখার বিষয়। যে ব্যক্তির স্ব-হৃদয়ের প্রতি বিশ্বাস নেই, উল্লিখিত গুণসম্পন্ন হৃদয়ের দু'টি গুন অন্বেষণ করা তার জন্য অপরিহার্য।
জাবুর কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহতায়ালা হযরত দাউদ (আঃ) এর উপর অহী পাঠালেন যে, তুমি বনু ইসরাঈলদেরকে বল, আমি নিশ্চয়ই তোমাদের নামায ও তোমাদের রোয়ার দিকে লক্ষ্য করি না। আমি লক্ষ্য করি শুধু ঐ ব্যক্তির দিকে, যার কোন বিষয়ে সন্দেহ হলে, সে তা' আমার জন্য বর্জন করে। এজন্যই আমি তার দিকে নজর করি এবং আমার সাহায্য দ্বারা তাকে সহায়তা করি এবং তাকে নিয়ে আমার ফিরেশতাদের সামনে আমি গৌরব করি।
0 Comments