বিবাহ সম্পকে ইসলামী বিধান

 বিবাহের উপকার ও অপকার

        প্রিয় পাঠক-পাঠিকা। জেনে রাখ, বিবাহের ফজীলত সম্বন্ধে ওলামাদের মতভেদ রয়েছে। কোন কোন আলিম এ পর্যন্ত বলেছেন যে, আল্লাহর ইবাদাতের জন্য একাকী থাকার চেয়ে বিবাহ করা অনেক শুনে উত্তম। আবার কেউ কেউ বিবাহের ফজীলতকে স্বীকার করেছেন ঠিকই কিন্তু বিবাহিত হওয়ার চেয়ে ইবাদাতের জন্য অবিবাহিত থাকাকে অগ্রগণ্য করেছেন। তবে তাঁরা শর্তারোপ করেছেন যে, যদি মন বিবাহের দিকে না যায় এবং মনে সঙ্গমের আকাংক্ষা না জন্মে। কেউ কেউ বলেন যে, আমাদের এই যুগে বিবাহ না করাই উত্তম এবং এর ফজীলত প্রথম যুগে বিদ্যমান ছিল। কেননা তাদের উপার্জনের পথ হারাম ছিল না এবং তাদের যুগের স্ত্রীলোকদের অভ্যাস মন্দ ছিল না। উল্লিখিত মতামত সমূহ থেকে বুঝা যায় যে, বিবাহের প্রকৃত তত্ত্ব কুরআন হাদীস থেকেই পাওয়া যায়। বিবাহের উপকার ও অপকার সম্বন্ধে আমি কিছু পরেই বর্ণনা করব।

বিবাহে উৎসাহ দানঃ

        কুরআনের বাণী: আল্লাহতায়ালা বলেন, "ওয়ানকিহুল আইয়ামা মিনকুম" অর্থাৎ তোমাদের বিধবাদেরকে বিবাহ কর। এ পবিত্র কুরআনের আদেশ। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, "ফালা তা'দ্বিলু হুন্না আইয়াইয়ানকিহনা আযওয়াজাহুল্লা" অর্থাৎ তাদেরকে স্বামী গ্রহণে কখনও বাধা দিও না। এতে বিবাহে বাধা দেয়া বা বিবাহ না দেয়ায় নিষেধ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলদেরকে প্রশংসা করে বলেন, "তোমার পূর্বে আমি রাসূলগণকে প্রেরণ করেছিলাম; এবং তাদের জন্য নারী ও সন্তান সন্ততির ব্যবস্থা করেছিলাম"। এতে আল্লাহতায়ালা তাঁর অনুগ্রহ এবং ফজীলতের বিষয় প্রকাশ করেছেন ও তাঁর বন্ধুগণের বিবাহ কার্যের জন্য প্রশংসা করেছেন। নবী-রাসূলগণও বংশধরদের জন্য এই প্রার্থনা করেছিলেন। কুরআনে রয়েছে, "তারা বলেন, হে আমাদের প্রভু! আমাদের স্ত্রীগণ ও বংশধরগণের মধ্য হইতে এমন লোক দাও যারা আমাদের চক্ষু তৃপ্ত করে এবং তন্মধ্যে খোদাভীরুগণকে নেতা বানাও।” কেউ কেউ বলেন, যে সকল নবী বিবাহ করেছেন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকেই এই আয়াতে সম্বোধন করেছেন, অন্যকে নয়। তারা বলেন যে, হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) বিবাহ করেছিলেন। কিন্তু স্ত্রীসঙ্গম করেন নি। কেউ কেউ বলেন, তিনি ফজীলত লাভের জন্য, সুন্নত প্রতিষ্ঠার জন্য এবং দৃষ্টি বন্ধ রাখার জন্য এরূপ করেছিলেন। হযরত ঈসা (আঃ) দুনিয়ায় পুনরাগমন করার পর বিবাহ করবেন এবং তাঁর সন্তান হবে।

        হাদীসের বাণী: হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, "আন্নিকাহু সুন্নাতী ফামান রাখিবা আন সুন্নাতী ফালাইসা মিন্নী" অর্থাৎ বিবাহ আমার সুন্নত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিরত থাকে সে আমার দলের নয়। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, বিবাহ আমার সুন্নত। যে আমার স্বভাবকে ভালবাসে সে যেন আমার সুন্নতকে অবলম্বন করে। তিনি আরও বলেছেন, তোমরা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হও। তাতে তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আমি রোজ কিয়ামতে অন্যান্য নবীদের উম্মতের তুলনায় তোমাদের সংখ্যা দেখে গৌরব করব। তিনি আরও বলেছেন, যে আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হয় সে আমার দলভুক্ত নয়, বিবাহ আমার সুন্নত। যে আমার কথায় সাড়া দেয়, সে যেন আমার সুন্নত অবলম্বন করে। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি দারিদ্র্যের ভয় করে বিবাহ থেকে বিরত থাকে, সে আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিবাহ হতে বিরত থাকার কারণে এই তিরস্কার। কিন্তু বিবাহ ত্যাগের মূলকে তিরস্কার করা হয় নি। তিনি আরও বলেছেন, যার সঙ্গতি আছে সে যেন বিবাহ করে। যার শক্তি আছে সে যেন বিবাহ করে। কেননা, বিবাহ দৃষ্টিকে সংযত করে, গুপ্তাঙ্গকে রক্ষা করে। যার সংগতি নেই সে যেন রোযা রাখে। কেননা, রোযা তার জন্য কামরিপু দমনকারী। এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, বিবাহের জন্য উৎসাহ দেয়ার কারণ দৃষ্টি এবং গুপ্তাঙ্গ নষ্ট হওয়ার ভয়। খাসি করার অর্থ অণ্ডকোষ বের করে ফেলে দেয়া যেন কামরিপু দমন হয়। কামশক্তি দূর হয়। তজ্জন্য রোযা দ্বারা দুর্বলতা আনয়ন করা হয়। তিনি আরও বলেছেন, যখন এমন কেউ তোমাদের নিকট আসে যার দ্বীন এবং আমানতের দ্বারা তোমরা সন্তুষ্ট হও, তার নিকট কন্যা বিবাহ দাও। যদি এরূপ না কর, দুনিয়ায় বিপদাপদ এবং ঝগড়া কলহ শুরু হবে। অশান্তির ভয় করে বিবাহের জন্য এই উৎসাহ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিবাহ করে এবং বিবাহ দেয়, সে আল্লাহর তত্ত্বাবধানের হকদার হয়ে যায়। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি বিবাহ করে, সে তার অর্ধেক দ্বীন পালন করে। দ্বিতীয় অর্ধেকের জন্য সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।

        বিবাদ-বিসম্বাদ হতে রক্ষা পাওয়া এবং মতবিরোধ হতে সতর্ক হওয়ার জন্য এই ফজীলত। কেননা সাধারণতঃ গুপ্তাঙ্গ এবং উদরই মানুষের মনে অশান্তি সৃষ্টি করে। বিবাহ এই বিপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। তিনি আরও বলেছেন, তিনটি আমল ব্যতীত বনি আদমের জন্য অন্যান্য আমল নিঃশেষ হয়ে যায়। যথাঃ ধার্মিক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। ছদকায়ে জারিয়াহ এবং দ্বীনি পুস্তক। বলা বাহুল্য যে, বিবাহ ব্যতীত ধার্মিক সন্তান আশা করা সম্পূর্ণ অবান্তর।

        বুযর্গদের বাণী: হযরত ওমর (রাঃ) বলেছেন, দুটি কারণ বিবাহের প্রতিবন্ধক। একটি অসমর্থ হওয়া এবং দ্বিতীয়টি গুনাহগার হওয়া। বুঝা গেল যে ধর্ম বিবাহকে নিষেধ করে না। উক্ত বিষয় দুটো কারও মধ্যে থাকলে সে বিবাহ নাও করতে পারে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, কোন আবেদের ইবাদাতই বিবাহ ব্যতীত পূর্ণ হয় না। অতএব বুঝা গেল যে, তিনি বিবাহকে ধর্মের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তার কারণ হল, বিবাহ ধর্মের পূর্ণতা সাধন করে। বাহ্যতঃ দেখা যায় যে, কামরিপুর তাড়নায় অন্তর আল্লাহর প্রতি বিবাহ ব্যতীত সমর্পিত হয় না; এবং অন্তরের অবসর ব্যতীতও ইবাদাত সম্পূর্ণ হয় না। এজনাই হযরত আকরামা, কারীব এবং অন্যান্য ছাহাবীগণ তাদের গোলামগণ বয়স্ক হলে তাদের প্রত্যেককেই বলতেন, যদি তোমরা বিবাহ করতে ইচ্ছে কর, আমি তোমাদের বিবাহ করাব। কেননা যদি কোন বান্দা ব্যভিচার করে তবে ঈমান তাদের অন্তর হতে স্খলিত হয়ে যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, আমি আমাদের জীবনের মাত্র দশ দিন বাকী থাকলেও বিবাহ করার ইচ্ছে করতাম যাতে করে আমার আল্লাহর সহিত একাকী সাক্ষাত করতে না হয়। হযরত মুআয বিন জাবাল (রাঃ)এর দু'স্ত্রীর কলেরা রোগে মৃত্যু হলে তিনিও সে রোগে আক্রান্ত হয়ে বললেন, আমাকে বিবাহ করিয়ে দেয়া হোক, আমি আল্লাহর সহিত একাকী সাক্ষাত করতে চাই না। উক্ত মনীষীদ্বয় বিবাহ করাকে উত্তম এবং প্রয়োজন মনে করেছেন। কিন্তু তা' কামরিপুর প্রাবল্যে নয়। হযরত ওমর (রাঃ) বহু বিবাহ করেছিলেন।

        তিনি বলতেন, আমি সন্তান কামনায়ই বিবাহ করি। জনৈক ছাহাবী সংসারত্যাগী হয়ে হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট থাকতেন, তাঁর খেদমত করতেন এবং তাঁরই পার্শ্বে রাত্র কাটাতেন। একদা তিনি তাঁকে বললেন, তুমি কি বিবাহ করবে না? ছাহাবী জবাব দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি অভাবগ্রস্ত, আমার কিছুই নেই। আপনি কি আমাকে আপনার খেদমত থেকে বঞ্চিত হতে বলেন? তার কথা শুনে হুযুরে পাক (দঃ) নীরব থাকলেন। কিন্তু পুনরায় তাকে বললেন, তুমি কি বিবাহ করবে না? ছাহাবী একই ভাবে পূর্বোক্ত জবাব দিলেন। অতঃপর ছাহাবী চিন্তা করে মনে মনে বললেন, আল্লাহর কসম, আমাদের ইহ পারলৌকিক মঙ্গল সম্বন্ধে এবং কোন জিনিস আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করবে সে সম্পর্কে আল্লাহর রাসূলই অবগত আছেন; সুতরাং তিনি যা বলেন তাঁর কথা মতই আমি কাজ করব। এরপর তৃতীয় বার হুযুরে পাক (দঃ) তাকে বললেন, তুমি কি বিবাহ করবে না? এবার ছাহাবী জবাব দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমার বিবাহ করিয়ে দিন। হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, তুমি অমুক লোকের নিকট গিয়ে বল, আল্লাহর রাসূল (দঃ) আমার নিকট তোমাদের যে কোন একটি মেয়েকে আমার সহিত বিবাহ দেয়ার জন্য তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। হুযুরে পাক (দঃ)এর একথা শুনে ছাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার যে কিছুই নেই। তখন রাসূলুল্লাহ (দঃ) স্বীয় ছাহাবীদেরকে নির্দেশ করলেন, তোমরা তোমাদের এক ভ্রাতার জন্য পাঁচ দেরহাম ওযনের স্বর্ণ সংগ্রহ কর। তারা তা' সংগ্রহ করে এক কাওমের নিকট গিয়ে উক্ত ছাহাবীকে বিবাহ করিয়ে দিলেন। এবার হুযুরে পাক (দঃ) তাকে বললেন, বিবাহভোজের অনুষ্ঠান কর। তখন ছাহাবীবৃন্দ একটি বকরী সংগ্রহ করে বিবাহভোজের আয়োজন করলেন। অত্র হাদীস দ্বারা বিবাহের আবশ্যকতা সম্যকরূপে উপলব্ধি করা যায়।

        কথিত আছে যে, প্রাচীন যুগের জনৈক তাপস সমসাময়িক লোকদের ভিতর ইবাদাতে অগ্রণী ছিলেন। তার এরূপ ইবাদাতের কথা উক্ত যুগের নবীর নিকট উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, লোকটি কি উত্তম। কিন্তু একটি সুন্নত সে ত্যাগ করেছে। উক্ত আবেদ একথা শুনে অত্যন্ত দুঃখিত ভাবে নবীর নিকট সেই সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। নবী তাকে বললেন, তুমি বিবাহ কর নি। আবেদ বললেন, বিবাহ আমি আমার জন্য হারাম করি নি। তবে আমি অত্যন্ত দরিদ্র লোক, অন্য লোকেরা আমার যাবতীয় ব্যয় বহন করে। আবেদের কথা শুনে নবী বললেন, আমি আমার কন্যাকে তোমার নিকট বিবাহ দেব। অতঃপর নবীকন্যার সাথেই তার বিবাহ হয়ে গেল।

        বাশার বিন হারেছ (রহঃ) বলেছেন, তিনটি বিষয়ে আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) আমার উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছেন। যথাঃ (১) তিনি তার নিজের জন্য এবং অন্যান্যের জন্য হালাল রুজি অন্বেষণ করেন। আমি শুধু তা' আমার একার জন্যই করে থাকি। (২) তার বিবাহের জন্য স্বচ্ছলতা রয়েছে কিন্তু আমার তা' নেই। (৩) তিনি সব লোকের জন্য ইমাম কিন্তু আমি তা' নই। কথিত আছে যে ইমাম আহমদ (রহঃ) তাঁর পুত্র আবদুল্লাহর মাতার মৃত্যুর দ্বিতীয় দিনেই বিবাহ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, আমি একটি রাত্রিও একা থাকা পছন্দ করি না। হযরত বাশার (রহঃ) কে যখন জিজ্ঞেস করা হল, লোকজন আপনার বিবাহ ত্যাগ করা সম্বন্ধে সমালোচনা করে এবং বলে, তিনি সুন্নত ত্যাগ করেছেন। বাশার (রহঃ) একথা শুনে বললেন, যারা আমার সমালোচনা করে তাদেরকে বলবে, তিনি সুন্নত ত্যাগ করে ফরজে লিপ্ত আছেন। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে অপবাদের প্রেক্ষিতে আরও বলেছিলেন, আমাকে আল্লাহর নিম্নোক্ত আয়াত ব্যতীত কি অন্য কোন বস্তু বিবাহ করতে নিষেধ করেছে? উক্ত আয়াতটি এইঃ "ওয়া লাহুন্না মিছলুল্লাযী আলাইহিমা বিল 'মা'রুফি"। ইমাম আহমদ (রহঃ) এর নিকট একথার উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, বাশারের তুলনা কোথায়? তিনি একটি নূরের স্তবকের উপর সমাসীন। তা' সত্ত্বেও এরূপ বর্ণিত আছে যে, বাশার (রহঃ) এর মৃত্যুর পর এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হল, আল্লাহতায়ালা আপনার মৃত্যুর পর আপনার সাথে কিরূপ ব্যবহার করলেন? তিনি জবাব দিলেন, বেহেশতে আমি উচ্চ মর্যাদা লাভ করেছি। এমন কি নবীদের মাকাম পর্যন্ত আমাকে তুলে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এতদসত্ত্বেও আমি বিবাহকারীদের মর্যাদা পাই নি। অন্য বর্ণনায় আছে, হুযুরে পাক (দঃ) আমাকে বললেন, আল্লাহর সহিত তোমার একাকী সাক্ষাত করাকে আমি ভালবাসি নি। তিনি বললেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আবু নছর তাম্মামের অবস্থা কি? তিনি জবাব দিলেন, তাকে আমার উপরও সত্তর গুণ মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এমনটা হল কিসের জন্য? তিনি জবাব দিলেন, তার সন্তান-সন্ততি এবং পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের কষ্ট সহ্য করার জন্য। হযরত সুফিয়ান বিন আইনাতা (রহঃ) বলেছেন, অধিক স্ত্রী থাকা দুনিয়াদারীর লক্ষণ নয়। কেননা, হযরত আলী (রাঃ) ছাহাবায়ে কিরামদের মধ্যে সর্বাধিক সংসার বিরাগী ছিলেন। অথচ তাঁর চারজন স্ত্রী ছিলেন। মোটকথা বিবাহ একটি প্রাচীন সুন্নাত ও নবীদের নীতী । জনৈক ব্যক্তি হযরত ইব্রাহীম বিন আদহাম (রহঃ)কে বলল,  আপনি একাকী থাকার কারণে সদান সর্বদা ইবাদাতে লিপ্ত থাকেন। তিনি বসবাস।রিয়ারবার্গের মধ্যে থেকে তোমার একটি প্রার্থনাহ আমার সমস্ত ইবাদাত থেকে উত্তমাললেন, পরিবারেকেরল, তাহলে কেন আপনি বিবাহ করছেন না? তিনি বললেন, স্ত্রীলোক লোক আমার  প্রয়োজন নেই। কোন স্ত্রীলোকের সহিত আমি কোন সম্পর্ক রাখতেও ইচ্ছা ক্রি না।কেউ কেউ বলেছেন যে, অবিবাহিত ব্যক্তির তুলনায় বিবাহিত ব্যক্তির মর্যাদা গৃহে বসে ইবাদাতকারীর খুলনায় জনৈক মুজাহিদের মর্যাদার সমান। বিবাহিত ব্যক্তির এক রাকাত নামায অবিবাহিত ব্যক্তির সত্তর রাকাত নামাযের চেয়েও উত্তম।

        বিবাহ হতে বিরত থাকার কারণ: হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, দুশ' বছর পর ঐ ব্যক্তি উত্তম হবে, যার পরিবার ও সন্তান সন্ততি থাকবে না। তিনি আরও বলেছেন, মানুষের উপর এমন এক সময় আসবে যখন তার স্ত্রী, পিতা মাতা ও সন্তান-সন্ততির হস্তে তাকে ধ্বংস হতে হবে। তারা তাকে এমন কষ্ট দেবে যা তার সহ্য-শক্তির বহির্ভূত। এজন্য সে এমন পথ অবলম্বন করবে যার ফলে তার দ্বীন নষ্ট হবে এবং সে ধ্বংস হবে। তিনি আরও বলেছেন, পরিবারের জনসংখ্যা স্বল্প হওয়া অভাবহীনতার দুটো কারণের অন্যতম। অনুরূপভাবে পরিবারের জনসংখ্যা অধিক হওয়া অভাবগ্রস্ত হওয়ার দুটো কারণের অন্যতম। হযরত আবু সোলায়মান দারানী (রহঃ)কে বিবাহ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, স্ত্রী না থাকার কারণে ধৈর্য রক্ষা করা মানুষের প্রতি কর্তব্যের ধৈর্যের চেয়ে উত্তম এবং তাদের প্রতি কর্তব্যের ধৈর্য রক্ষা করা নরকাগ্নির উপর ধৈর্যের চেয়ে উত্তম। তিনি আরও বললেন, অবিবাহিত লোক আমলের যে স্বাদ এবং মনের যে প্রশস্ততা লাভ করে তা' বিবাহিত লোক লাভ করে না, তিনি আরও বললেন, আমি আমার বন্ধুদের ভিতর এমন কাউকে পেলাম না যে, সে বিবাহ করে তার পূর্ব মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। তিনি আরও বললেন, যে ব্যক্তি তিনটি বিষয় অন্বেষণ করে সে দুনিয়ার প্রতি অনুরক্ত। যথাঃ যে ব্যক্তি জীবিকা অন্বেষণ করে। যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীলোককে বিবাহ করে অথবা যে ব্যক্তি গ্রন্থ রচনা করে। হযরত হাসান (রাঃ) বলেছেন, যখন আল্লাহতায়ালা কোন বান্দার মঙ্গল ইচ্ছে করেন তিনি তাকে পরিবারবর্গ এবং ধন-সম্পত্তিতে ব্যস্ত রাখেন না। হযরত ইবনে আবি হাওয়ারী (রহঃ) বলেছেন, একদল লোক এই হাদীস সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করার পর এরূপ স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, হাদীসের অর্থ এই নয় যে, ঐ ব্যক্তির কোন পরিবার এবং ধন-সম্পদ থাকবে না; বরং তা' থাকলেও তাতে সে মগ্ন হয় না। হযরত আবু সোলায়মান দারানীর বাণী থেকে বুঝা যায়, আল্লাহ থেকে তোমাকে পরিবার, সন্তান-সন্ততি ও ধন-দৌলত ফিরিয়ে রাখে তাই তা' তোমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের চিহ্ন। সার কথা হল, যারা বিবাহ থেকে বিরত থাকার জন্য বলেছেন, তারা তার সঙ্গে একটি শর্ত আরোপ করেছেন। আর যারা বিবাহের জন্য উৎসাহ দিয়েছেন তারাও একটি শর্ত আরোপ করেছেন। এ বিষয়ই আমি এখন পরিষ্কার করে তুলব এবং বিবাহের উপকার ও অপকার সম্পর্কে আলোচনা করব।

Post a Comment

0 Comments