হালাল রুজি তালাসের ফজীলত, হারাম রুজীর জঘন্যতা
পাঠক-পাঠিকা। জেনে নাও, আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন, 'কুলু মিনাতাইয়্যিবাতি ওয়া যালু ছালিয়ান। অর্থাৎ উত্তম খাদ্য ভক্ষণ কর এবং নেক আমল কর। আল্লাহ নেক আমল করার পূর্বেই উত্তম খাদ্য অক্ষণের জন্য আদেশ দিয়েছেন। এর উদ্দেশ্য পবিত্র এবং হালাল দ্রব্য ভক্ষণ করা। আল্লাহ আরও বলেছেনঃ "তোমরা ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ অন্যায়ভাবে করো না। তিনি আরও বলেন, "যারা ইয়াতীমের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, অগ্নি ব্যতীত তাদের উদর অন্য কিছুই এক্ষণ করবে না।' তিনি আরও বলেন, "হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা বাকী রয়েছে তা ত্যাগ কর, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। তারপর আল্লাহ বলেন, "ফাইল্লায় তাফআলু ফা'যানু বিহারবিয়িনাল্লাহি ওয়া রাসূলিহী। অর্থাৎ যদি তা' কর তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। তারপর আল্লাহ বলেন, "যদি তোমরা তাওবাহ কর, তাহলে তোমাদের জন্য শুধু মূলধনই প্রাপ্য"। তারপর তিনি বলেন, "যারা তা' থেকে ফিরে যায় তারা দোযখবাসী। তথায় তারা বসবাস করবে।" সর্বপ্রথম সুদ ভক্ষণের কথ্য, তারপর আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ প্রস্তুতির কথা এবং সবশেষে দোযখে বসবাসের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। হালাল ও হারাম সম্পর্কে বহুসংখ্যক আয়াত নাজিল হয়েছে।
হুযুরে পাক (সঃ) এরশাদ করেছেন, "জ্বালাবুল হালালি ফারীদ্বাতুন আলা কুল্লি মুসলিমীন" অর্থাৎ হালাল রুজী অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ অর্থাৎ অবশ্য কর্তব্য। যেহেতু হুযুরে পাক (দঃ) "তালাবুল ইলমি ফারীদ্বাতুন আলা কুল্লি মুসলিমীন" অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলমানের উপর ইলম বা বিদ্যা অর্জন করা ফরজ বলেছেন। তজ্জন্য কোন কোন আলিম এ মত পোষণ করেন যে, উপরোক্ত হাদীসের মর্ম, হালাল ও হারাম বিষয়ক বিদ্যার অন্বেষণ। পরবর্তী হাদীসটির মর্মের সাথে পূর্ববর্তী হাদীসটির মর্মকে তারা একীভূত করেছেন। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল রুজী দ্বারা তার পরিবার প্রতিপালনের চেষ্টা করে, সে আল্লাহর পথে মুজাহিদ সদৃশ এবং যে ব্যক্তি নিজেকে সংযত রেখে দুনিয়ায় হালাল রুজী অন্বেষণ করে, সে শহীদদের পদমর্যাদায় সমৃদ্ধ। হুযুরে পাক (দঃ)এর উক্ত হাদীসটি এই, "মান সাজা আলা ইয়ালিহী মিন হিল্লিহী হুওয়া কাল মুজাহিদি ফী সাবীলিল্লাহি।" হযরত রাসূলে করীম (সঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি একাধারে চল্লিশ দিন পর্যন্ত হালাল খাদ্য ভক্ষণ করে, তার হৃদয়কে আল্লাহতায়ালা জ্যোতির্ময় করে দেন এবং তার হৃদয় থেকে রসনার মাধ্যমে হিকমতের ফোয়ারা উৎসারিত করেন। অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহতায়ালা দুনিয়ায় তাকে বৈরাগ্যের নিয়ামত দান করেন। এক বর্ণনায় আছে, হযরত সা'দ (রাঃ) হুযুরে পাক (দঃ) কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমার দোয়া কবুল হওয়ার জন্য আপনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি হালাল খাদ্য ভক্ষণ কর, তাহলেই তোমার দোয়া কবুল হবে।
হুযুরে পাক (দঃ) দুনিয়াদার লোকদের কথা উল্লেখ করে বললেন, এমন বহু লোক কয়েছে, জামের এলোমেলো বেশ, ধূলি ধূসরিত কেশ, সফরে পরিশ্রান্ত কিন্তু খাদ্য হারাম, পরিচ্ছদ হারাম তংতা যদি দুহাত তুলে হে প্রভু! যে প্রভু। এরূপ সম্বোধন করতে থাকে, তবে তাদের দোয়া কিরূপে কবুল হবে? হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, হুযুরে নাক(দঃ) বলেন, বাইতুল মুকাদ্দাসে আল্লাহর নিযুক্ত একজন ফিরেশতা আছে। সে প্রত্যেক রাজে ঘোষণা করে, যে ব্যক্তি হারাম খাদ্য খায় তার নিকট হতে 'ছরফ' বা আদল কবুল করা হবে না। স্বরফের অর্থ নফল ও সুন্নত এবং আমলের অর্থ ফরজ কাজ। অর্থাৎ নফল, সুন্নাত এবং ফরজ কার্য কোনটাই তার থেকে কবুল হবে না, যার খাদ্য হারাম। তিনি আরও বলেছেন, যে বাক্তি দশ দেরহাম মূল্যে একটি বস্ত্র ক্রয় করে এবং তন্মধ্যে যদি একটি দেরহাম মাত্র হারাম হয়, সেই বস্ত্রের কোন অংশ তার শরীরে থাকা পর্যন্ত ঐ ব্যক্তির নামায কবুল হবে না। তিনি আরও বলেছেন, যে মাংস হারাম রুজীর দ্বারা গঠিত ও বর্ধিত সে মাংসের জন্য দোযখের অগ্নিই উত্তম। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ কোন পথে আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখা তেমন প্রয়োজন বোধ করে না, সে ব্যক্তি কোন পথ দিয়ে দোযখে প্রবেশ করবে আল্লাহ ও সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করবেন না। তিনি আরও বলেছেন, ইবাদাতের দশটি অংশ আছে। তন্মধ্যে নয়টি অংশ হল, হালাল রুজী অন্বেষণ করা। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল রুজীর ভালাসে সন্ধ্যা পর্যন্ত অতিবাহিত করে, সে তার গুনাহ মার্জিত হওয়া অবস্থায় রাত্র কাটিয়ে দেয় এবং প্রত্যুষে আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট থাকা অবস্থায় গাত্রোত্থান করে। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি পাপ কাজ দ্বারা বা অন্যায় পথে ধন উপার্জন করে তা' দয়া ও দান-ছদকাহর কাজে ব্যয় করে বা আল্লাহর পথে অন্য কোন কাজে খরচ করে, আল্লাহ ঐ সমস্ত তার সাথে একত্র করে সবকিছু দোযখে নিক্ষেপ করবেন। তিনি আরও বলেছেন, "খাইরু দ্বীনিকুমুল ওয়ারউ অর্থাৎ হারাম ভক্ষণ থেকে বিরত থাকাই তোমাদের উত্তম ধর্ম। হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সহিত হারাম ভক্ষণ থেকে বিরত থেকে সাক্ষাত করে, আল্লাহ তাকে ইসলামের সমস্ত বিধান মান্যকারীর পুরস্কার দিবেন। এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহতায়ালা তাঁর কোন কিতাবে এরশাদ করেছেন, হারাম খাদ্য থেকে বিরতকারীগণকে হিসাবের জন্য দাঁড় করাতে আমার লজ্জা বোধ হয়। অন্য হাদীসে আছে, সুদের একটি দেরহাম ত্রিশটি ব্যভিচার থেকেও মারাত্মক। আর এক হাদীসে আছে, পাকস্থলী শরীরের মূল উৎস এবং গ্রন্থিসমূহ তা' থেকে আগত, পাকস্থলী সুস্থ থাকলে ঐ গ্রন্থিসমূহ সুস্বাস্থ্য নিয়ে তথা থেকে বের হয়। আর পাকস্থলী অসুস্থ থাকলে গ্রন্থিসমূহ ব্যাধিগ্রস্তরূপে নির্গত হয়। ধর্মের মধ্যে খাদ্যের উপমা, দালানের মধ্যে ভিত্তির অনুরূপ। ভিত্তি দৃঢ় ও মজবুত হলে দালান সুস্থির এবং সোজা থাকে এবং তা' যত ইচ্ছে উঁচু করা যায়। আর যদি ভিত্তি দুর্বল এবং বক্র হয় তাহলে দালান এদিকে সেদিকে হেলে পড়ে, এমন কি তা' বিধ্বস্ত হবারও সম্ভাবনা থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয় আল্লাহর সন্তুষ্টিকে ধর্মের ভিত্তিরূপে প্রতিষ্ঠা করে সে কি ঐ ব্যক্তির তুলনায় উত্তম নয়, যে দোযখের অগ্নির পার্শ্বে ভিত্তি স্থাপন করে? হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি হারাম উপার্জন করে, তা' দান করে দিলেও তা' গ্রহণযোগ্য নয়। যদি সে তার মৃত্যুর পর ঐ হারাম মাল রেখে যায়, সে শুধু তার দ্বারা দোযখের আগুন বিস্তার করে।
আমি উপার্জনের নিয়ম-কানুন বর্ণনা প্রসঙ্গে বহু হাদীস উল্লেখ করেছি। সে হাদীসসমূ হালাল কাজীর ফজীলত সমূহ প্রকাশ পেয়েছে।
হালাদ রুজী সম্বন্ধে বুযর্গদের বাণী: বর্ণিত আছে যে, হযরত এত আবুবকর (রাঃ) একদা তাঁর দুগ্ধ তুমি কোথায় যা বলেছিলাম। ক্রীতদাসের হাত থেকে কিছু মুগ্ধ পান করে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ সে বলল, আমি একটি কবিলার কাছে তাদের ভবিষ্যৎ ভাল-মন্দের কথা। তজ্জন্য তারা আমাকে এই দুগ্ধ দিয়েছে। তখন হযরত আবুন হাবুবকর (রাঃ) তাঁর হস্তাপুলির অগ্রভাগ নিজ গলদেশে প্রবেশ করিয়ে এমনভাবে যাবে বমি এ করলেন যে, তাতে ড তাঁর প্রাণ কণ্ঠাগত হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, হে মাবুদ! আমার গলদেশের মাংসের সাথে যা সংলগ্ন হয়ে আছে তজ্জন্য আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এ ঘটনা হুযুরে পাক (সঃ)এর কর্ণগোচর হলে তিনি বললেন, তোমরা কি জান না যে, আবুবকর কোন হালাল জিনিস ব্যতীত অন্য কিছু কখনও তার গলায় প্রবেশ করায় না? একইভাবে হযরত ওমর (রাঃ) একদা যাকাতের উটের দুগ্ধ পান করে ফেলেছিলেন। তারপর তিনি তার অঙ্গুলিগুলো কণ্ঠনালীর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে ঐ দুগ্ধ বমি করে ফেললেন।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, তোমরা সর্বাপেক্ষা উত্তম ইবাদাত হতে উদাসীন রয়েছ। তাহল হারাম খাদ্য ভক্ষণ করা থেকে রক্ষা পাওয়া। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, যদি তোমরা নামায় আদায় করতে করতে ধনুকের ন্যায় কৃশ হয়ে যাও এবং রোযা রাখতে রাখতে যদি শুকনো কাষ্ঠখন্ডের মত ক্ষীণ হয়ে যাও, তবু যে পর্যন্ত না তোমরা হারাম খাদ্য বর্জন কর তোমাদের সে ইবাদাত ও দোয়া আল্লাহর দরবারে মকবুল হবে না। হযরত ইব্রাহীম বিন আদহাম (রহঃ) বলেছেন, তোমরা যে যা' নিয়ামতরূপে অর্জন করেছ তা' তোমাদের হালাল ভক্ষণ। তা' ব্যতীত অন্য কোন মূল্যবান নিয়ামত কেউই লাভ কর নি। হযরত ফোজায়ল (রহঃ) বলেছেন, যে কোন জিনিস তার উদরে প্রবেশ করল যদি সেদিকে লক্ষ্য রাখে তাহলে তাকে আল্লাহতায়ালা সিদ্দীকিনদের দপ্তরভুক্ত করেন। অতএব, তোমরা কে কোন জিনিস দ্বারা ইফতার কর অবশ্যই তা' লক্ষ্য রেখ। হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীনের কাজ মনে করে হারাম উপার্জিত মাল থেকে দান-খয়রাত করে, সে ঠিক ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে অপবিত্র বস্তু প্রস্রাব দ্বারা ধৌত করে। অপবিত্র বস্ত্র পবিত্র পানি ব্যতীত পবিত্র হয় না; এবং হালাল জিনিস ব্যতীত গুনাহর কাফফারা হয় না। হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মুআয (রহঃ) বলেছেন, দ্বীন-ধর্ম পালন করা আল্লাহর গুপ্ত ধনভান্ডার, দোয়া তার কুঞ্জি এবং হালাল লোকমা তার দন্ত সদৃশ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যার উদরে হারাম খাদ্য থাকে আল্লাহ তার নামায কবুল করেন না। হযরত হহল তশতরী (রহঃ) বলেছেন, যার মধ্যে চারটি গুণ না আছে তার কাছে ঈমানের মূল হাকীকত কখনও পৌঁছে না। যথাঃ (১) সুন্নত অনুযায়ী ফরজ আদায় করা। (২) সতর্কতার সাথে খাদ্য ভক্ষণ করা। (৩) প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যে কোন রকম নিষিদ্ধ খাদ্য ও কার্য বর্জন করা। (৪) মৃত্যু পর্যন্ত ধৈর্যের সাথে উপরোক্ত নীতিসমূহ পালন করা। হযরত ছহল তশতরী (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সিদ্দীকীনদের লক্ষণসমূহ নিজের মধ্যে দেখতে চায় সে যেন হালাল খাদ্য ব্যতীত ভক্ষণ না করে এবং সুন্নত ব্যতীত আমল না করে।
বণিত আছে যে, যে ব্যক্তি একাধারে চল্লিশ দিন পর্যন্ত সন্দেহযুক্ত খাদ্য খায়, তার হৃদয় মরা হয়ে যায়। এই প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালার নিমোক্ত আয়াত উদ্ধৃত করা যায়। 'কাল্লা বাল রানা আলা জুনুবিহিম মা কানু ইয়াকসিবুন।" অর্থাৎ তখনই নয়, বরং যা তারা অর্জন প্রারাহ তজ্জন্য তাদের হৃদয়ে মরিচা পড়ে গেছে। হযরত ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেছেন, সন্দেহযুক্ত একটি কপর্দক মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেয়া আমার একলক্ষ দেরহাম দান করা অপেক্ষা আমি উত্তম মনে করি। বর্ণনান্তরে তিনি ছয় লক্ষ দেরহাম পর্যন্ত দান করার কথা জলেছিলেন। পূর্বকালের জনৈক বুযর্গ বলেছেন, তিনি কখনও সন্দেহযুক্ত একটি লোকমা ভক্ষণ করলে ব্যঞ্জন যেরূপ কড়াইর মধ্যে টগবগ করতে থাকে, তদ্রুপ তার অন্তরও উল্টিতে পাল্টিতে থাকে। আর তার হৃদয়ের পূর্বাবস্থা কিছুতেই ফিরে আসে না। হযরত ছহল তশতরী (রহঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি হারাম খাদ্য ভক্ষণ করে, স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, জানা মতে বা অজানা মতে যে ভাবেই হোক না কেন, তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবাধ্য হয়ে যায়। যার খাদ্য হালাল তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাধ্যগত হয়ে যায় এবং সৎকার্য করবার জন্য তাকে সহায়তা করে। পূর্বকালের জনৈক বুযর্গ বলেছেন, হালাল খাদ্যের প্রথম লোকমা ভক্ষণের কারণেই বান্দার অতীত গুনাহসমূহ মার্জিত হয়ে যায়। যে ব্যক্তি হালাল রুজী অন্বেষণের জন্য কোন অপমানকর তার স্থানে গমন করে বা অবস্থান করে। থেকে গুনাহসমূহ বৃক্ষ থেকে শুকনো পত্রসমূহ ঝরে পড়ার ন্যায় পতিত হয়। অন্য একজন বুযর্গ বলেছেন, যখন কোন বক্তা তোমাদের মধ্যে আসন খন তার সম্পর্কে দুটি বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করবে। যথাঃ (১) যদি সে কোন গ্রহণ করে, তখন স্বাসী হয় তবে তার নিব বেদআতে তে বিশ্বাসী যদি তার জ্ঞান-বুদ্ধি গ হবে। (২) যদি রবে না। কেননা তার কথাবার্তা শয়া বসবে নিকট গভীর তার দ্বারা উপকারের চেয়ে অনেক না হয় তবে তার বক্তৃতা। বেশী। শয়তানের ন্যায় যদ্বারা সে যে অনিষ্ট করে, তা ।। (৩) সুতরাং তার নিকটে অবস্থান করবে না। হাদীস শরীফে আছে, "ইল্লাদ দুনইয়া হালালুহা হিসাবুন ওয়া হারামুহা আযাবুন" অর্থাৎ দুনিয়ার হালাল জিনিসের হিসাব আছে এবং হারাম জিনিসের শাস্তি আছে। অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ এর সঙ্গে আরও এক কথা সংযোগ করে বলেছেন," আর এর সন্দেহজনক জিনিসে ভর্ৎসনা আছে।" জনৈক ধার্মিক ব্যক্তি একজন আবদালের সম্মুখে খাদ্যদ্রব্য হাজির করলে তিনি তা' ভক্ষণ না করে বললেন, হালাল খাদ্য ব্যতীত আমরা ভক্ষণ করি না। এজন্য আমাদের হৃদয়ের অবস্থা ঠিক থাকে এবং আমাদের স্বাভাবিক অবস্থা স্থায়ী হয়। আসমানী ব্যাপারগুলো আমাদের কাছে প্রকাশ পায় এবং আমাদের চোখের সামনে আখেরাতের দৃশ্যগুলো ভেসে উঠে। তোমরা যে খাদ্য প্রায়শঃ ভক্ষণ কর তা' যদি আমরা পর পর তিনদিন আহার করি তবে আমাদের ইলমুল ইয়াকীন অর্থাৎ প্রকৃত তত্ত্বজ্ঞান আমাদের থেকে বিলুপ্ত হবে। আল্লাহভীতি এবং অন্তর্দৃষ্টি আমাদের থেকে চলে যাবে। তখন সে ধার্মিক লোকটি বলল, দেখুন জনাব। আমি বছর ভরে রোযা রাখি, প্রত্যেক মাসে ত্রিশবার করে কুরআন খতম করি। তার কথা শুনে আবদাল বললেন, আমি রাত্রে যে পানীয় পান করি যা তুমি সম্মুখে দেখছ তা' তোমার তিন শ' রাকাত নামাযের মধ্যে ত্রিশবার কুরআন খতম অপেক্ষা আমার নিকট অধিক প্রিয়। কথিত আছে যে, উক্ত আবদাল হরিণের দুগ্ধ পান করতেন এবং তখন তাই তার সামনে রক্ষিত ছিল।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ) এবং হযরত ইয়াহইয়া বিন মুয়াইয়্যিন দীর্ঘদিন একত্রে বসবাস করতেন। তারপর ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) হযরত ইয়াহয়া (রহঃ)কে ত্যাগ করে চলে গেলেন। কারণ তিনি একদা তাকে বলতে শুনলেন যে. ৫. আমি কারও নিকট কোন জিনিসের প্রার্থী নই কিন্তু তুমি গ্রহণ করব। চান আমাকে কোন জিনিস দিলে তা' আমি স্বয়ং সুলতান এর পর থেকেই তিনি তার তার থেকে সম্প সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করলেন। কথিত আসে মাছে যে, ইয়াহইয়া বিদ )কে নিকটে পেয়ে বললেন, মুয়াইয়্যিন (রহঃ) এরপর একদিন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)সে জনাব। সেদিন আমি আপনার সাথে এতটুকু কৌতুক করেছিলাম।। একথা শুনে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) বললেন, তুমি দ্বীনের ব্যাপার নিয়ে কৌতুক কর। কর? তুমি কি জান না যে, গ্রহণ, ভক্ষণ ধর্মের অন্তর্গত? আল্লাহতায়ালা এদুটো বিষয়কে নেক আমলের অগ্রণী করেছেন। আল্লাহ বলেছেন, "উত্তম জিনিস ভক্ষণ কর এবং নেক আমল কর।" তাৎ তাওরাত কিতাবে উল্লেখ আছে যে, কোথা হতে খাদ্য ভক্ষণ করা হয়, যে ব্যক্তি তার পরোয়া করে না আল্লাহতায়ালাও তাকে দোযখের কোন দরজা দিয়ে তাতে নিক্ষেপ করবেন তার পরোয়া করবেন না।
হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত ওসমান মান (রাঃ) এর শাহাদাতপ্রাপ্তির পর তিনি বাইরে আহার করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং সন্দেহ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জন্য গৃহেও মহর করা খাদ্য ব্যতীত ভক্ষণ করতেন না। হযরত ফোজায়ল। (রহঃ), হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) এবং হযরত ইবনুল মুবারক (রহঃ) মক্কায় হযরত ওয়াহহাব বিন ওয়াফ (রাঃ) এর নিকট সমবেত হয়ে তাকে খেজুর আনাতে বললেন। তিনি বললেন, খেজুর আমার অতি প্রিয়। খাদ্য হলেও আমি তা' ভক্ষণ করব না। কেননা জোবায়দা এবং মক্কায় অবস্থিত বিভিন্ন খেজুর। মিশ্রিত থাকে। তাই তা' থেকে পরহেজ করা চাই। তার কথা শুনে হযরত ইবনুল মুবারক (রহঃ) তাঁকে বললেন, খাদ্যের ব্যাপারে এতটা লক্ষ্য করলে তোমার পক্ষে যে আহার করা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি বললেন, তার কারণ কি? হযরত ইবনুল মুবারক (রহঃ) বললেন, বিনষ্টের মূল ত সব উত্তম খেজুরের সাথেই মিশ্রিত হয়ে গেছে। কোনখানেই তুমি উত্তম খেজুর পাবে না। একথা শুনে হযরত ওয়াহহাব (রহঃ) বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন। তা' দেখে হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বললেন, তুমি যে এ লোকটিকে হত্যা করে ফেললে। অতঃপর যখন হযরত ওয়াহহাব (রহঃ) এর হুঁশ ফিরে এলো তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, এরপর থেকে যতদিনে আমার আল্লাহর সাথে সাক্ষাত না হবে ততদিনে আমি আর কোনদিন রুটিও ভক্ষণ করব না। এরপর থেকে তিনি শুধু দুগ্ধ পান করতেন। একদিন তাঁর মাতা দুগ্ধ নিয়ে তার সামনে উপস্থিত হলে তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, এ দুগ্ধ কোথা থেকে এল? মাতা বললেন, অমুকের পুত্রের বকরীর দুগ্ধ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কার থেকে এ দুগ্ধ ক্রয় করা হয়েছে? কোথা থেকে এর মূল্য দেয়া হয়েছে? মাতা এসব প্রশ্নের উত্তর দিলেন। তারপর তিনি নিজের হাতেই দুগ্ধ পুত্রের মুখের নিকট ধরলেন। এসময় তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বকরী কোথায় বিচরণ করত? এবার মাতা কোন উত্তর না দেয়ায় তিনি আর সে দুগ্ধ পান করলেন না। কেননা ঐ বকরী এমন স্থানে বিচরণ করত যাতে সব মুসলমানের স্বত্ব ছিল। মাতা তাকে অনুরোধ করলেন, বৎস। তুমি দুগ্ধ পান কর, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন। তিনি বললেন, আমাকে ক্ষমা করা হোক তা' আমি ভালবাসি না। আমি এ দুগ্ধ পান করে তার গুনাহ মার্জনা পাব এটা আমি পছন্দ করি না। হযরত বাশার হাজী (রহঃ) খাদ্য অক্ষণের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক হিপেদ। একবার তাকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি খাষ্য কোথা থেকে ভক্ষণ করেন। তিনি বললেন, আপনারা যেখান থেকে ভক্ষণ করেন আমিও সেখান থেকেই ভক্ষণ করি। তবে যে রক্ষণ করে এবং ক্রন্দন করে আর যে ভক্ষণ করে ও হাস্য করে তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। তিনি আরও বললেন, একহাত অন্য হাত থেকে ছোট এবং এক লোকমা অন্য লোকমা হতে কম। এর অর্থ অত্যাচারের হস্ত প্রসার না করা এবং অল্লাহারে পরিতুষ্ট থাকা। বলা বাহুল্য যে, এজন্যই তারা সন্দেহের খাদ্য থেকেও সতর্কতা অবলম্বন করতেন।
0 Comments