দ্বিতীয় উপকার: বিবাহের দ্বিতীয় উপকার শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়া। রিপুর খাহেশ দমন হওয়া, কাম রিপুর তাড়না প্রশমিত হওয়া, চোখের কুদৃষ্টি বন্ধ হওয়া ও যৌনাঙ্গ রক্ষা পাওয়া। এজন্যই হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, মান নাকাহা ফাক্বাদ হাসসানা নিছফা দ্বীনাহু, অর্থাৎ যে বিবাহ করে, তার অর্দ্ধেক দ্বীন সুরক্ষিত থাকে। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি বিবাহ করতে অসমর্থ, সে যেন রোযা রাখে। কেননা তার জন্য প্রবৃত্তি দমনের একমাত্র উপায় হল রোযা।
এতক্ষণ কুরআন ও হাদীস থেকে যে সকল বাণী উল্লেখ করা হল তা' সকলই বিবাহের উল্লিখিত উদ্দেশ্যের কথা প্রকাশ করে। এটা বিবাহের প্রথম উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে আর একটি উদ্দেশ্য। তবে কামরিপুর সৃষ্টিও সন্তান অর্জনের আবশ্যকতার জন্য হয়েছে। কামরিপু বিশেষ দৃষ্টিতে আল্লাহর প্রতিনিধি। উক্ত প্রতিনিধির সাহায্যে সন্তান জন্ম আল্লাহতায়ালার কাম্য এবং মূল উদ্দেশ্য। উক্ত মূল উদ্দেশ্যের স্মরণ রেখে কামরিপুর সাহায্য গ্রহণ করতে হয়। কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করা মূল উদ্দেশ্য কখনও নয়। কামরিপু ও সন্তান এ দুটো সুনির্দিষ্ট ভাগ্যলিপি এবং এতদুভয়ের মধ্যে দৃঢ়বন্ধন রয়েছে। সুখ উপভোগ করাই বিবাহের লক্ষ্য একথা বলা সিদ্ধ হবে না। যেমন আহার্য ভক্ষণের ফলে মলমূত্র ত্যাগ করা হয়, তদ্রুপ সঙ্গম সুখ উপভোগের ফলে সন্তান জন্ম হয়। সুখ উপভোগ চরম লক্ষ্য নয়, সন্তান উৎপাদনই চরম লক্ষ্য। কামপ্রবৃত্তি সন্তান জন্মদানের প্রেরণা বর্দ্ধক। সন্তান উৎপাদন ব্যতীত কামপ্রবৃত্তির অন্য হেকমতও আছে, তা' হল সুখানুভব। যদি তা' স্থায়ী থাকে, তবে তার ন্যায় অন্য সুখ আর নেই। সঙ্গমের মধ্যে যে সুখ-স্বাদ আছে তা' পারলৌকিক সুখ-স্বাদের নমুনা মাত্র। যে জিনিসের স্বাদ পাওয়া যায় না, তার দ্বারা কোন উপকার নেই। কোন নাবালেগকে সঙ্গম স্বাদের উৎসাহ দেয়া হলে সে তার স্বাদ পাবে না বা যদি কোন নাবালেগকে প্রভুত্ব ও রাজত্বের উৎসাহ দেয়া হয় সে তাতে স্বাদ পাবে না। আল্লাহতায়ালা পার্থিব স্বাদ এজন্য সৃষ্টি করেছেন যে, যেন লোকগণ তা' আস্বাদন করে বেহেশতের স্থায়ী আস্বাদের জন্য লালায়িত হয়। সে স্বাদ পাওয়ার জন্য ইবাদাতে ইলাহীতে ব্যস্ত হতে হবে। তজ্জন্য আল্লাহর এই হেকমতের দিকে, তারপর তাঁর করুণার দিকে, তারপর তাঁর বিধানের উপর লক্ষ্য কর। কিরূপে তিনি একই কামপ্রবৃত্তি দান করতঃ দুটি জীবনের স্বাদ দান করেছেন, তা' হল প্রকাশ্য ও গুপ্ত জীবনের স্বাদ। প্রকাশ্য জীবনের স্বাদের রূপধারণ করে যখন সন্তান জন্মগ্রহণ করে জীবিত থাকে, এর এই অস্থায়ী সুখ দেখে মানুষ স্থায়ী ও পূর্ণ সুখের জন্য লালায়িত হবে। এটাই গুপ্ত জীবন এবং আখেরাতের জীবন। ক্ষণস্থায়ী সুখের আস্বাদ পূর্ণ সুখের স্থায়ী আস্বাদের উৎসাহ যোগায় এবং তা' অর্জনের জন্য মানুষকে ইবাদাতের দিকে মগ্ন রাখে। বান্দা সেই সুখের জন্য লালায়িত হয় এবং নিজ কর্তব্য পালন করে। মানুষের দেহের মধ্যে একটিও প্রকাশ্য বা গুপ্ত অণু-পরমাণু নেই যা আসমান ও যমিনের রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়। তার ভিতর এমন সূক্ষ্ম হেকমত ও আশ্চর্য বস্তু আছে, যা দেখে মানুষের জ্ঞান দিশেহারা হয়ে যায়, কিন্তু তা' পবিত্র হৃদয়ে এর পবিত্রতার পরিমাণ অনুযায়ী প্রকাশ পায়।
সুতরাং বিবাহ কামরিপুর প্রবল তাড়না থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি উপায়। দ্বীনের জন্য বিবাহ প্রত্যেক সমর্থ লোকের জন্য অপরিহার্য। যখন কামশক্তি প্রবল হয় এবং খোদাভীতির শক্তিদ্বারা তাকে আয়ত্তাধীন বা নিয়ন্ত্রণে না রাখা যায় তখন বিবাহ করা অত্যাবশ্যক। অন্যথায় তার দ্বারা অনেক অশ্লীল কাজ সংঘটিত হয়। এদিকে ইঙ্গিত করেই হুযুরে পাক (দঃ) আল্লাহর বাণী উদ্ধৃত করেছেন, "যদি তারা তা' (অশ্লীল কাজ) করে, দুনিয়ায় অশান্তি এবং গুরুতর বিবাদ-বিসম্বাদ সৃষ্টি হবে। আর যদি কামপ্রবৃত্তিকে আল্লাহ ভীতির লাগাম দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে রাখা হয় তাহলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো কামপ্রবৃত্তির প্রেরণা অনুসারে চলা থেকে বিরত থাকে, দৃষ্টি সংযত হয় এবং গুপ্তাঙ্গ নির্দোষ থাকে। শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং কুচিন্তা হতে মনকে নিরাপদ রাখা কারও ইচ্ছাধীন নয়। এজন্যই কুপ্রবৃত্তি মনকে সর্বদা উৎক্ষিপ্ত করতে থাকে এবং সঙ্গমের ব্যাপারটি মনে উপস্থিত করে। এমন কি নামাযের মধ্যেও মনে কামভাব জাগ্রত করে, সঙ্গম বাসনাও মনে নিয়ে আসে। আল্লাহতায়ালা মানুষের মনের এ অবস্থা দেখেন। মানুষের ক্ষেত্রে রসনার অবস্থা যেরূপ, আল্লাহর নিকট হৃদয়ের অবস্থাও তদ্রুপ। আখেরাতের পথিকদের সকল কাজের মূল তাদের অন্তর। রোযা রাখা সত্ত্বেও অধিকাংশ লোকের বেলায় উল্লিখিত কুমন্ত্রণার মূল কর্তিত হয় না; বরং শরীর দুর্বল হয় কিন্তু মনের বাসনা উগ্র হয়। এজন্যই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, কোন আবিদেরই বিবাহ ব্যতীত ইবাদাত পূর্ণ হয় না এটা কামপ্রবৃত্তি- জনিত অতি স্বাভাবিক বিপদ। খুব অল্পলোকই এ থেকে রক্ষা পায়। এজন্যই হযরত কাতাদাহ (রহঃ) নিম্নোক্ত আয়াত "অলা তাহমিলনা মা লা ত্বাক্বাতা লানা বিহ" এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন (হে মাবুদ! কামপ্রবৃত্তি) যে বিষয়ে আমাদের শক্তি নেই। তা' আমাদেরকে বহন করতে দিও না। হযরত আকরামাহ এবং হযরত মুজাহিদ এ আয়াতের অর্থ করেছেন, মানুষ স্ত্রীলোকদের ক্ষেত্রে ধৈর্যাবলম্বন করতে পারে না। হযরত ফাইয়াজ বিন নাজীহ (রহঃ) বলেন, যখন মানুষের যৌনাঙ্গ উত্থিত হয়, তখন তার জানের দু-তৃতীয়াংশ লোপ পায়। অন্য একব্যক্তি বলেন, এ সময় মানুষের এক-তৃতীয়াংশ জ্বীন বিদায় নেয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) "যখন রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে আসে তা' থেকে আশ্রয় চাই' এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, যখন পুরুষাঙ্গ উত্থিত হয়, তা' থেকে আশ্রয় চাই। যখন কামভাব উত্তেজিত হ্যা, জ্ঞান বুদ্ধি বা ধর্ম তাকে সংবরণ করতে পারে না। যদিও তা' উত্তম বস্তু, কেননা, তারই মাধ্যমে নূতন জীবনের সঞ্চার হয়। তবু তা-ই আদম সন্তানের উপর সর্বাধিক মারাত্মক অস্ত্র।
হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, হে মাবুদ। আমি আমার মন, আমার চক্ষু, আমার হৃদয় এবং আমার মন্দ হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। তিনি বলেছেন, আমি আমার হৃদয় পবিত্র হওয়ার জন্য এবং আমার গুপ্তাঙ্গ রক্ষার জন্য তোমার নিকট প্রার্থনা করি। লক্ষ্য করার বিষয়, স্বয়ং হযরত রাসূলে করীম (দঃ) যে বিষয় থেকে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছিলেন, অন্য লোকগণ তা' থেকে কিরূপে নিরুদ্বেগ থাকতে পারে?
জনৈক ধার্মিক ব্যক্তি বার বার বিবাহ করতেন। এমনকি কোন সময়ই তার দুজন বা তিনজন স্ত্রীর কম থাকত না। একজন সুফী ব্যক্তি তার এ কাজকে ঘৃণা করে কটুমন্তব্য করায় তিনি বললেন, আচ্ছা তোমাদের কেউ যদি আল্লাহর ইবাদত বা ধ্যানে তপস্যায় বসে, তবে তদবস্থায় তার মনে কি কখনও কামপ্রবৃত্তির উদয় হয়? সুফী সাহেব বললেন, তা' অনেকেরই অনেক সময় হয়ে থাকে। উক্ত ধার্মিক ব্যক্তি বললেন, আমার মনে যদি এরূপ অবস্থা না হত, তাহলে নিশ্চয় আমি বিবাহ করতাম না, কিন্তু যখন আমার মনে এরূপ ওয়াসওয়াসা উদয় হয় এবং তা' আমাকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে রাখে, তখন আমি তা' আমার মন থেকে তাড়িয়ে দিতে পারি এবং মনের শান্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। গত চল্লিশ বছর ধরে আমার (একাধিক) স্ত্রী থাকার কারণে আমার মনে কোন গুনাহর বাসনাই জাগে নি।
এক ব্যক্তি সুফীবাদের এ অবস্থাকে অস্বীকার করলে জনৈক ধার্মিক ব্যক্তি তাকে জিজেস করলেন, তুমি কি তাদেরকে অস্বীকার কর? সে বলল, তারা অধিক আহার করে। তিনি বললেন, তাদের মত অধিক ক্ষুধার্ত হলে তুমিও বেশী আহার করতে। সে বলল, তারা বহু বিরাহ করে। তিনি বললেন, তারা যেরূপ তাদের চক্ষু ও গুপ্তাঙ্গ রক্ষা করে, তুমি তদ্রুপ তা' রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে তুমিও তাদের মত বহু বিবাহ করতে। হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রহঃ) বলেন, আহার্যের যেরূপ আবশ্যকতা আছে, স্ত্রীসঙ্গমেরও তদ্রুপ আবশ্যকতা আছে। মূলতঃ স্ত্রী পুরুষের হৃদয়ের আহার এবং মনের পবিত্রতার মাধ্যম। এজন্যই হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যার দৃষ্টি কোন নারীর উপর পড়ে সে যেন তার নফসকে সেদিক থেকে আকর্ষণ করে আনে এবং নিজ স্ত্রীর সহিত সহবাস করে। কেননা তাতে মনের কুপ্রবৃত্তি প্রশমিত হবে। হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, একদা হুযুরে পাক (দঃ) জনৈক মহিলার দিকে দৃষ্টিপাত করলেন (সাথে সাথে) তিনি তার স্ত্রী জয়নব (রাঃ) এর নিকট গিয়ে নিজের আবশ্যকতা পূর্ণ করলেন এবং বের হয়ে বললেন, কোন স্ত্রীলোক সামনে এলে শয়তানের রূপ নিয়ে আসে। যদি তোমাদের কেউ বেগানা স্ত্রীলোক দেখে উত্তেজনা অনুভব করে, তবে সে যেন তার নিজ স্ত্রীর নিকট চলে আসে। কেননা উক্ত স্ত্রীলোকের নিকট যা রয়েছে তার স্ত্রীর নিকটও তা' আছে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, কোন স্ত্রীলোকের নিকট তার স্বামী অনুপস্থিত থাকা কালে তার নিকট যেও না। কেননা শয়তান রক্ত চলাচলের ন্যায় তোমার হৃদয় মধ্যে আনা গোনা করে। ছাহাবীগণ বলেন, আমরা আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)। তা' কি আপনার ক্ষেত্রেও? তিনি বললেন, হাঁ আমার ক্ষেত্রেও। তবে আল্লাহতায়ালা তার উপর আমাকে সাহায্য করেছেন এবং সে বশ্যতা স্বীকার করেছে। বশ্যতা স্বীকারের অর্থ আমি তার থেকে রক্ষা পেয়ে গেছি। আসলে শয়তান কারও বশ্যতা স্বীকার করে না।
হযরত ওমর (রাঃ)-তনয় হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) একজন জাহেদ এবং সংসারবিরাগী ছাহাবী হিসেবে সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন। কোন কোন আলিম বলেন যে, তিনি রোযা রেখে ইফতার করার পর স্ত্রীসঙ্গম করে তারপর আহার করতেন। অনেক সময় তিনি মাগরিবের নামাযের পূর্বে স্ত্রীসঙ্গম করার পর গোসল করে মাগরিবের নামায পড়তেন। আল্লাহর ইবাদাতের জন্য মনকে সম্পূর্ণ নিখুঁত নিরঙ্কুশ এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত ও খালেছ করে নেয়ার জন্য তিনি এরূপ করতেন। শুনা যায়, রমযান মাসে এশার নামাযের পূর্বে তিনি স্ত্রীসহবাস করতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যার বহু স্ত্রী বিদ্যমান, এ যুগের উম্মতের মধ্যে সে-ই উত্তম। যেহেতু আরবদের মধ্যে কামভাব প্রবল, সেহেতু তাদের মধ্যে ধার্মিকদের বহু বিবাহ উত্তম। অন্তরকে পরিষ্কার রাখার জন্যই গুনাহর আশঙ্কায় দাসীর সহিত বিবাহ জায়েয করা হয়েছে। কিন্তু অশ্লীল কাজের জন্য আখেরাতের জীবন বরবাদ হয়ে যায়। যার একটি দিনের তুলনায় ইহলৌকিক দীর্ঘ জীবনও অতি তুচ্ছ। কথিত আছে যে, একদা সব লোক হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর দরবার হতে উঠে চলে গেলেও একটি যুবক একা বসে থাকল। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কোন প্রয়োজন আছে কি? সে বলল, হাঁ। আমি একটি মাসয়ালা জিজ্ঞেস করব। কিন্তু এতক্ষণ ত লোকলজ্জা আমাকে বাধা দিয়েছিল। এখন যে আবার আপনার সম্মান এবং গাম্ভীর্য আমাকে সে মাসয়ালার ব্যাপারে বাধা দিচ্ছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, আলিম লোক পিতৃতুল্য। যা তোমার পিতাকে বলতে লজ্জা কর না, তা' আমার নিকটও বলতে পার।
লোকটি বলল, আমি যুবক, কিন্তু আমার স্ত্রী নেই। অনেক সময় আমি হাত দ্বারা বীর্যপাত করি। এতে কি আমার গুনাহ হয়? হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেন, আফসুস! এ থেকে দাসী বিবাহ করা ভাল এবং তা' জিনা থেকে ভাল। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, অবিবাহিতাবস্থায় কামোত্তেজনা দেখা দিলে তিনটি কুকাজ উপস্থিত হয়। তন্মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম মন্দ দাসী বিবাহ। তার চেয়ে বেশী মন্দ হস্ত মৈথুন এবং সর্বাধিক মন্দ কাজ ব্যভিচার করা। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ কাজগুলোকে হালাল বা সিদ্ধ বলেন নি। তিনি বলেছেন প্রথম কাজগুলো সতর্কতা রক্ষামূলক কাজ। তবে এ কাজ দুটি অপেক্ষাও বড় গুনাহর কাজ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ কাজ দুটিকে গ্রহণ করা যায়, তা-ই বলা হয়েছে। যেমন জীবন রক্ষার প্রয়োজনে মৃত জন্তুর মাংস ভক্ষণ করা হয়। এ এক গুরুতর মন্দ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আর এক গুরুতর মন্দের আশ্রয় লওয়া। কিন্তু এ দুটোকেই হালাল বলা যায় না। এ ভাবে হপ্ত কর্তন করা উত্তম কাজ নয় কিন্তু তা' মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য উত্তম। এই দৃষ্টিতে বিবাহে কল্যাণ বর্তমান কিন্তু তা' সবার জন্য নয় বরং অধিকাংশ লোকের জন্য কল্যাণকর। বার্ধক্য, রোগ ব্যাধি বা অন্যান্য কারণে অনেক লোকেরই কামশক্তি লোপ পায়, কামপ্রবৃত্তি সব পুরুষের ক্ষেত্রেই একরূপ। শুধু নপুংসকদের মধ্যে কামশক্তি নেই। কোন কোন পুরুষের কামশক্তি এত বেশী যে, তার চরিত্র রক্ষার জন্য এক স্ত্রী যথেষ্ট নয়, এদের জন্য অবস্থাভেদে চার স্ত্রী পর্যন্ত রাখা সিদ্ধ। এদের হৃদয়ে আল্লাহ প্রত্যেক স্ত্রীর প্রতি প্রেম প্রীতি মমতা রক্ষা সহজ করে দেন। আর যদি তাদের মধ্যে এগুলোর অভাব দেখা দেয়, তাহলে তার জন্য স্ত্রী পরিবর্তন করে নেয়া সিদ্ধ।
হযরত আলী (রাঃ) হযরত ফাতেমার (রাঃ) মৃত্যুর মাত্র সাত দিন পর বিবাহ করেছিলেন। কথিত আছে যে, হযরত হাসান (রাঃ) একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করেছিলেন। অবশ্য একই সাথে কখনও চারজনের বেশী রাখেন নি। হুযুরে পাক (দঃ) হযরত হাসান (রাঃ) কে বলেছিলেন, আমার স্বভাব ও আকৃতির সাদৃশ্য অনেকটা তোমার মধ্যে আছে। তিনি আরও বলেছিলেন, "হাসানু মিন্নী অ হোসায়েনু মিন আলিয়্যিন" অর্থাৎ হাসান আমা থেকে এবং হোসায়েন আলী থেকে। ছাহাবায় কিরামদের মধ্যে কারও কারও তিন চারজন করে স্ত্রী ছিলেন। কিন্তু দুজন করে স্ত্রী ছিলেন অসংখ্য ছাহাবীর।
উল্লিখিত বিষয়ের দ্বারা বুঝা গেল যে, বিবাহ ব্যতীত অন্তরে ব্যাধির উদয় হয়। আর সে ব্যাধি নিরাময়ের দাওয়াই বিবাহ, চাই তা' এক বিবাহের দ্বারা হোক বা অধিক বিবাহ দ্বারা।
0 Comments