সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দ্বায়িত্ব কি

  স্বামীর  কর্তব্যসমূহ পর্ব-৫


        (১১) একাদশ কর্তব্যঃ সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে পাঁচটি নিয়ম পালন করতে হবে। (১) প্রথম নিয়মঃ পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সন্তুষ্ট এবং কন্যা সন্তান হলে অসন্তুষ্ট হওয়া অনুচিত বরং উভয় ক্ষেত্রেই সন্তুষ্ট হতে হবে। কেননা কোন সন্তানের মধ্যে অধিক মঙ্গল নিহিত রয়েছে তা' কেউই অবগত নয়। অনেক পিতা রয়েছে, পুত্র সন্তান কামনা করে না; বরং কন্যা সন্তান কামনা করে এবং তাদের জন্য ছওয়াব অধিক। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যার একটি কন্যা আছে এবং সে তাকে উত্তম আদব শিক্ষা দেয়, উত্তম খাদ্য আহার করায় এবং আল্লাহ তাকে যে নিয়ামত দান করেছেন, সে তা' থেকে তার জন্য খরচ করে, তাহলে সে তার জন্য উক্ত কন্যা সৌভাগ্যের কারণ হয় এবং তাকে সে দোযখ থেকে নাজাত দিয়ে বেহেশতের পথ সহজ করে দেয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যার দুটো কন্যা বা ভগ্নি আছে এবং সে তাদেরকে বিবাহ পর্যন্ত উত্তম শিক্ষা দেয়, আমি এবং সে বেহেশতে এই দু'ই অঙ্গুলির ন্যায় নিকটবর্তী থাকব। তিনি আরও বলেছেন যে, যে মুসলমান বাজারে গিয়ে কোন দ্রব্য ক্রয় করে বাড়িতে ফিরে এসে প্রথম তা' পুত্র সন্তানগণকে না দিয়ে কন্যা সন্তানগণকে দেয় আল্লাহতায়ালা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন এবং আল্লাহতায়ালা যার প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন তিনি তাকে শাস্তি দিবেন না। হুযুরে পাক (দঃ) আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি বাজার থেকে একটি উত্তম জিনিস ক্রয় করে তার পরিবারে নিয়ে আসে, তার ছওয়াব ছদকাহর তুলা। ঐ ক্রয়কৃত দ্রব্য প্রথম কন্যার হাতে দিয়ে তারপর পুত্রের হাতে দেয়া উচিত। যে ব্যক্তি কন্যাকে সন্তুষ্ট করে সে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার সমান ছওয়াব পায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে, আল্লাহ তার শরীরকে দোযখের অগ্নির জন্য হারাম করে দেন। হুযুরে পাক (দঃ) আরও বলেছেন, যার তিনটি কন্যা সন্তান বা ভগ্নি আছে এবং সে তাদের আব্দারের তাড়ণায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও ধৈর্যাবলম্বন করে, আল্লাহ তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ। যদি কারো দুজন কন্যা বা ভগ্নি থাকে? তিনি বললেন, দুজন থাকলেও। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, যদি একজন থাকে? তিনি বললেন, একজন থাকলেও।

        (২) দ্বিতীয় নিয়মঃ সন্তানের কর্ণে আযান দেয়া। আবু রাফে' বলেছেন, আমি হুযুরে পাক (দঃ)কে তাঁর নাতী হযরত ইমাম হাসানের কর্ণে আযান দিতে দেখেছি। হযরত রাসূলে করীম (দঃ) বলেছেন, যখন সন্তান হয় তার ডান কানে আযান দেবে এবং বাম কানে একামত বলবে। যখন সন্তান কথা বলতে শুরু করে তখন তাকে "লাইলাহা ইল্লাল্লাহু” বলতে শিক্ষা দেবে। এটা মুস্তাহাব। এই কালেমাই সন্তানের প্রথম বাক্য হওয়া উচিত। সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে তার খাতনা করাবে। (পুংসস্তান হলে)

        (৩) তৃতীয় নিয়মঃ সন্তানের একটি উত্তম নাম রাখবে। যেমন আবদুল্লাহ বা আবদুর রহমান ইত্যাদি। এটা সন্তানদের একটা অধিকার। হুযুর (দঃ) বলেছেন, যখন তোমরা সন্তানের নাম রাখ তখন গোলামের নামকরণ কর। তিনি আরও বলেছেন, আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা উত্তম নাম আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। তিনি আরও বলেছেন, আমার নামে নামকরণ কর। কিন্তু আমার উপনামে নামকরণ করোনা। ওলামায়ে কিরাম বলেছেন, এটা শুধু হযরত রাসূলে করীম (দঃ) এর যমানই ছিল। কেননা তখন তাকে আবুল কাসেম নামে ডাকা হত। এটা ছিল তাঁর উপনাম  এখন এ নাম রাখায় কোন দোষ নেই। তাঁর নাম ও উপনাম একত্র করে রেখ না।  কারো কারো মতে, এটাও তাঁর জীবনকালের ব্যাপার। কোন কোন লোককে আবু ঈসা বলে ডাকা হত। হুযুরে পাক (দঃ) বলতেন, ঈসা (আঃ) এর পিতা ছিল না। সুতরাং তোমরা এরূপ নাম রেখ না। গর্ভপাতের মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তারও নাম রাখবে। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) বলেছেন, আমার নিকট এই মর্মে হাদীস এসেছে যে, রোজ কিয়ামতে গর্ভপাতের সন্তান তার পিতার পিছনে পিছনে চিৎকার করে বলবে, তুমি আমাকে নষ্ট করেছ, তুমি আমার কোন নামকরণ কর নি। হযরত ওমর বিন আবদুল আযীয (রহঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, পুত্র কি কন্যা তা' জানা না গেলে তার নাম কিরূপে রাখা হবে? হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ বললেন, বহু নাম এরূপ আছে যে, তা' পুরুষ ও স্ত্রী উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়। যথা- হামযাহ, আমরাহ, তালহা, ওতবাহ ইত্যাদি। হুযুর (দঃ) বলেছেন, রোজ কিয়ামতে তোমাদের নাম ধরে বা তোমাদের পিতার নাম ধরে তোমাদেরকে ডাকা হবে। সুতরাং উত্তম নাম রাখা ভাল। কারণ কোন মন্দ নাম রাখা হলে তা' পরিবর্তন করা মুস্তাহাব। দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, হুযুরে পাক (দঃ) ফালাহ, ইয়াসার, নাফে', বারাকাহ ইত্যাদি নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন।

        (৪) চতুর্থ নিয়মঃ পুত্রসন্তানের জন্য দুটি বকরী এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি বকরীর দ্বারা আকীকাহ করবে। তবে যদি বকরী বলিষ্ঠ এবং হৃষ্ট-পুষ্ট হয় তাহলে পুত্র সন্তানের জন্যও একটি বকরী দ্বারা আকীকাহ করা চলবে। হুযুরে পাক (দঃ) একটি পুত্র সন্তানের জন্য দুটি পূর্ণ বয়স্ক বকরী দ্বারা এবং একটি কন্যা সন্তানের জন্য একটি পূর্ণ বয়স্ক বকরীর দ্বারা আকীকাহ করতে আদেশ দিয়েছিলেন। বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) তাঁর নাতী হযরত হাসানের আকীকায় একটি বকরী যবেহ করেছিলেন। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, কন্যা সন্তানের জন্য একটি বকরী দ্বারা আকীকাহ করবে। আর পুত্র সন্তানের জন্যও একটি বকরী দ্বারা সন্তানের বিপদ আপদ ও কষ্ট-ক্লেশ দূর করে দেয়ার নিয়ত করবে। সন্তানের কেশের ওজনের পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য দান করা সুন্নত। হুযুরে পাক (দঃ) কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) কে হযরত হোসায়েনের জন্মের সপ্তম দিনে তাঁর মস্তক মুন্ডন করতে আদেশ দিয়েছিলেন এবং তাঁর মুণ্ডিত কেশ ওজন করে তদপরিমাণ রৌপ্য দান করতে বলেছিলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, আকীকাহর প্রাণীর হাড় চূর্ণ করো না। 

        (৫) পঞ্চম নিয়মঃ শিশুর মস্তক-তালু খেজুর বা অন্য কোন সুমিষ্ট দ্রব্য দ্বারা মেখে দেবে। হযরত আসমা (রাঃ) বলেছেন, হযরত আবদুল্লাহ বিন জোবায়ের (রাঃ) কোবায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁকে হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট এনে তাঁর কোলে দেয়া হল। তিনি তাঁকে দোয়া করে একটি খেজুর তাঁর অঙ্গে মেখে দিলেন। তারপর তিনি তাঁর একটু মুখের লালা শিশুর মুখে দিলেন। হযরত আবদুল্লাহ বিন জোবায়েরের উদরে সর্বপ্রথম যা প্রবেশ করল তা' ছিল হুযুরে পাক (দঃ) এর পবিত্র মুখের লালা। বর্ণিত আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ বিন জোবায়েরের জন্মগ্রহণে মদীনার মুসলমানগণ সকলেই অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। কেননা তাদেরকে বলা হত যে, ইয়াহুদীগণ তোমাদেরকে যাদু করেছে। তোমাদের কোন সন্তান হবে না।

Post a Comment

0 Comments