মীকাত থেকে মক্কায় প্রবেশ পর্যন্ত করণীয় কাজ (দ্বিতীয় কর্তব্য)
মীকাত অর্থাৎ এহরাম বাঁধার স্থান হতে মক্কা মুয়াযযমায় প্রবেশ করা পর্যন্ত পাঁচটি করণীয় আছে। যথাঃ
(১) যে এলাকার হাজীদের যে স্থানটি মীকাত অর্থাৎ এহরাম বাঁধার জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে, সেখানে পৌছার পর এহরামের নিয়তে গোসল করবে। শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ উত্তমরূপে পরিষ্কার করবে। হাত পায়ের নখ কর্তন করবে। গোঁফ কর্তন করবে, চুল ও দাড়িতে চিরুনী করবে।
(২) সিলাইকৃত জামা কাপড় খুলে ফেলে এহরামের পোশাক অর্থাৎ একটি সিলাই বিহীন সাদা লুঙ্গী ও একটি সাদা চাদর পারিধান করবে। আল্লাহর দরবারে সাদা পোশাকই অধিক প্রিয় এবং পছন্দনীয়। শরীরে ও পরিধেয় কাপড়ে সুগন্ধি লাগাবে। এহরামের পরেও সুগন্ধির ঘ্রাণ থেকে গেলে তা' দোষের কিছু নয়। কেননা হুযুরে পাক (দঃ) এর মাথার সিথিতে মেশকের স্পষ্ট নিদর্শন এহরামের পরেও দেখা গেছে। তিনি তা' এহরামের পূর্বে লাগিয়েছিলেন।
(৩) এহরামের পোশাক পরিধান করে একটু পরেই যখন রওয়ানা হবে, তখন সে এহরাম হজ্জ্বের জন্য বা ওমরাহর জন্য, বা হজ্জ্বে কেরান বা হজ্জ্বে এফরাদের জন্য বাঁধল, তার নিয়ত করবে, এহরাম শুদ্ধ হওয়ার জন্য মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট। তবে এতে সুন্নত হল, লাব্বাইকার এই দোয়াটি পাঠ করা। যথাঃ
"লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা লাশারীকা লাব্বাইকা আন্নাল হামদা অন্নি'মাতা লাকা অল মুলকা লা শারীকা লাকা"
অর্থাৎ আমি হাজির আছি হে মাবুদ! আমি হাজির আছি। প্রশংসা, নিয়ামত তোমারই, হুকুমত তোমারই। তোমার কোন শরীক নেই।
যদি এর চেয়ে আরও বেশী কিছু বলতে ইচ্ছে হয়, তা হলে বলবেঃ আমি হাজির আছি, আমি তৎপর রয়েছি হে মাবুদ! কল্যাণ সব তোমারই আয়ত্তে। আমার আগ্রহ তোমার প্রতি। আমি হাজির আছি হজ্জ্বের জন্য, মূলতঃ ইবাদাত এবং গোলামীর জন্য। হে মাবুদ। হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এবং হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর বংশধরদের প্রতি রহমত প্রেরণ কর।
(৪) লাব্বাইক বলে এহরাম দুরস্ত করার পর অত্র দোয়াটি পাঠ করা উত্তম। যথাঃ
হে মাবুদ! আমি হজ্ব আদায় করার ইচ্ছে করছি। অতএব আমার জন্য তুমি তা' সহজ করে দাও। এর ফরজ (কর্তব্য) সমূহ আদায়ে আমাকে সাহায্য কর এবং আমার হজ্জকে কবুল কর।
হে মাবুদ। আমি হচ্ছে তোমার ফরজ আদায় করার নিয়ত করেছি। অতএব তুমি আমাকে তাদের শামিল কর যারা তোমার আদেশে সাড়া দিয়েছে, তোমার প্রতিশ্রুতিতে আস্থা এনেছে এবং তোমার নির্দেশের অনুবর্তী হয়েছে। আমাকে তুমি তোমার সেই মেহমানদের শামিল কর। যাদের উপর তুমি খুশী ও আনন্দিত এবং যাদের হজ্জ্ব তুমি কবুল করেছ। হে মাবুদ। আমার নিয়তকৃত হজ্জ্ব তুমি আমার প্রতি সহজসাধ্য কর। হে মাবুদ! তোমার জন্য আমার মাংস, আমার চুল, আমার রক্ত, শিরা, উপশিরা, মগজ, অস্থি প্রভৃতি এহরাম বেঁধেছে। আর আমি শুধু তোমারই জন্য নিজের উপর রমণী, সুগন্ধি, সিলাইকৃত পোশাক পরিচ্ছদ হারাম করেছি। এহরাম বাঁধার সময় থেকে পূর্বোল্লিখিত নিষিদ্ধ বিষয়গুলো হারাম হয়ে যায়। (৫) এহরাম বহাল থাকার জন্য কিছুক্ষণ পরে পরে লাব্বাইকা বলা মুস্তাহাব। বিশেষ করে উঁচু যমিনে ওঠার সময়ে এবং নিম্ন যমিনে অবতরণের সময়ে আর বাহনে উঠা নামার সময়ে লাব্বাইকা পাঠ করবে। খুব উচ্চ কণ্ঠে বা গলা ফাটিয়ে তা' বলা দরকার হবে না। কেন না উদ্দেশ্য হল, আল্লাহ তায়ালাকে শুনানো। তিনি অন্ধ বা দূরে অবস্থানকারী নন যে, চীৎকার করে তাঁকে শোনাতে হবে। এ বিষয়ে হাদীসেও বর্ণিত রয়েছে। তবে মসজিদে হারাম, মসজিদে খায়েফ এবং মসজিদে মীকাতে উচ্চৈঃস্বরে লাব্বাইকা বলায় কোন দোষ নেই। উক্ত তিনটি মসজিদই হজ্জ্বের রোকন আদায় করার স্থান। এছাড়া অন্যান্য মসজিদে অনুচ্চ শব্দে লাব্বাইক। বলায় কোন দোষের কারণ নেই। উক্ত তিনটি মসজিদই হজ্জ্বের রোকন আদায় করার স্থান, তবে এছাড়া অন্যান্য মসজিদে অনুচ্চ শব্দে লাব্বাইক বলায় কোন দোষের কারণ নেই।
0 Comments