বেহেশতীদের খাদ্য সম্পর্কে কুরআনে পাকে উল্লেখ আছে যে, ফল, পাখীর মাংস, সারা, সালওয়া, মধু, দুদ্ধ এবং নানাবিধ অসংখ্য রকম খাদ্য তারা ভক্ষণ করবে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যখনই তাদেরকে কোন ফল খেতে দেয়া হবে তারা বলবে যে, "এরূপ ফল কো আমাদেরকে পূর্বেও দেয়া হয়েছে।" (আসলে একইরূপ দেখতে হলেও তার স্বাদ বিভিন্ন হবে। খাবার পরে তা' বেহেশতীগণ উপলব্ধি করবে।) আল্লাহতায়ালা বেহেশতীদের পানীয় সম্বন্ধে কুরআনে পাকের অনেক স্থানেই উল্লেখ করেছেন।
হুযুরে পাক (দঃ) এর খাদেম হযরত ছাওবান (রাঃ) বলেছেন, আমি একদা হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট উপস্থিত থাকাকালীন জনৈক ইয়াহুদী বিদ্বান ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে কতগুলো প্রশ্ন করল। যথাঃ পুলছিরাত প্রথম কোন লোকগণ অতিক্রম করবে? হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ। ইয়াহুদী আবার প্রশ্ন করল, তারা যখন বেহেশতে প্রবেশ করবে, তখন তাদের সর্বপ্রথম কি খাদ্য ভক্ষণ করতে দেয়া হবে? তিনি বললেন, মৎস্যের গুর্দার কাবাব। ইয়াহুদী আবার প্রশ্ন করল পরদিন ভোরে তাদেরকে কি খাদ্য ভক্ষণ করতে দেয়া হবে। তিনি বললেন, বেহেশতের গরুর মাংস, বেহেশতের গরু তাদের খাওয়ার জন্য যবাই করা হবে। এই গরু বেহেশতের মধ্যে বিচরণ করত। ইয়াহুদী ব্যক্তি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, তাদেরকে কোন পানীয় পান করতে দেয়া হবে? তিনি বললেন, বেহেশতের খাছ প্রস্রবণ হতে তাদেরকে পানীয় পান করতে দেয়া হবে, তার নাম ছালছাবীল। ইয়াহুদী লোকটি হুযুরে পাক (দঃ) এর জবাবগুলো শুনে বলল, আপনি সত্য কথাই বলেছেন।
হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) বলেছেন, একদা এক ইয়াহুদী হুযুরে পাক (দঃ)এর নিকট এসে বলল, হে আবুল কাসেম। আপনি কি মনে করেন যে, বেহেশতীগণ বেহেশতে পানাহার করবে? হুযুরে পাক বললেন, হাঁ যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, তাদের প্রত্যেকেই বেহেশতে খাদ্য ভক্ষণ করবে এবং পানীয় পান করবে। তাদের প্রত্যেককেই খাদ্য ভক্ষণ, পানীয় পান এবং সঙ্গমের জন্য আল্লাহতায়ালা একশ জনের শক্তি প্রদান করবেন। ইয়াহুদী জিজ্ঞেস করল, যারা পানাহার করবে তাদের কি মল-মূত্র ত্যাগের প্রয়োজন হবে? হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, না, তাদের মল-মূত্র ত্যাগের প্রয়োজন হবে না; বরং তার বদলে শরীর থেকে ঘর্ম নির্গত হবে। ঐ ঘর্ম থেকে মেশকের সুঘ্রাণ বহির্গত হবে। ঘর্ম নির্গত হওয়ার ফলে তাদের উদর পরিষ্কার হয়ে যাবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের মধ্যে কোন পাখী দেখে তুমি যদি তার মাংস ভক্ষণ করতে চাও, তবে তখনই তা' আপনা থেকে ভুনা হয়ে তোমার সামনে উপস্থিত হয়ে যাবে। হযরত হোযায়ফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন যে, বেহেশতের মধ্যে এক প্রকার বিশেষ পক্ষী আছে। হযরত আবুবকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)! তা' কি আল্লাহর কোন খাছ নিয়ামত? হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, আবশ্যই তা' আল্লাহর খাছ নিয়ামত। যে তা' ভক্ষণ করবে, সে সেই নিয়ামত পাবে। তুমি তা' ভক্ষণকারীদের অন্যতম।
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "তারা পিয়ালা নিয়ে চারদিকে ঘুরতে থাকবে" হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এই আয়াতের অর্থে বলেছেন, স্বর্ণ নির্মিত সত্তরটি পিয়ালা নিয়ে তারা ঘুরতে থাকবে। প্রত্যেক পিয়ালায় এমন ব্যঞ্জন থাকবে, অন্য পিয়ালায় তা' থাকবে না অর্থাৎ সত্তরটি পিয়ালায় মোট সত্তর রকম ব্যঞ্জন থাকবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর আয়াতঃ "তার সংমিশ্রণ হবে তাছনীম থেকে সৌভাগ্যশীলদের জন্য তা' মিশ্রিত করা হবে এবং নিকটবর্তীগণ তা' পান করবে এর দ্বারা বেহেশতীদের পানাহার করা সম্বন্ধে স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) বলেছেন যে, আল্লাহর আয়াত "রৌপ্যের ন্যায় শ্বেত বর্ণের শরবত, যার মুখ বন্ধ থাকবে" যদি দুনিয়ার কোন লোক তার মধ্যে নিজের হস্ত প্রবেশ করিয়ে দিয়ে তারপর আবার তা' বের করে লয়, তবে দুনিয়ায় এমন কোন প্রাণী থাকবে না, যে তার সুগন্ধি উপভোগ করবে না।
0 Comments