হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) সমগ্র বিশ্বের নবী


        কোন নবী রসূলই সারা জগতের হিদায়েতের ভারপ্রাপ্ত হন নাই। প্রত্যেকেই স্বীয় গোত্র বা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের পথ-প্রদর্শকরূপে প্রেরিত হয়েছিলেন। কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) প্রেরিত হয়েছিলেন শ্বেতকায়-কৃষ্ণকায়, ইউরোপীয়-নিগ্রো, 'আরব-আজম, তুর্কী-তাতার, চীনা-ভারতীয় নির্বিশেষে সমগ্র জগতের হিদায়েতের জন্যে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ "হে মুহাম্মদ! (সাঃ) আমি আপনাকে সমস্ত লোকের হিদায়েতের জন্যেই প্রেরণ করেছি।"

        অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- "তিনি বরকতময়, যিনি স্বীয় বান্দা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছেন, যেন তিনি নিখিল বিশ্বকে সতর্ক করতে পারেন।"

        যে ধর্মের প্রর্বতন ও উৎকর্ষ সাধনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ তা'আলা যুগে যুগে রাসূল প্রেরণ  করে আসছেন এবং সর্বশেষে সৃষ্টসেরা মহামানব মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর হাতে যা পূর্ণত্ব প্রাপ্ত হয়, কুরআনের মতে তা-ই হল ইসলাম।

        এই পূর্ণত্ব ও সমাপ্তির কথাই সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ইসলাম একটি সুরম্য অট্টালিকাস্বরূপ এবং প্রত্যেক রসূল উক্ত অট্টালিকার এক একখানি ইষ্টকস্বরূপ; আর মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন উক্ত অট্টালিকার শেষ ইষ্টক।

        হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, "আল্লাহ্তা 'আলা আমাকে তাওরাতের পরিবর্তে মাসানী, ইঞ্জীলের পরিবর্তে মিয়ীন, যাবুরের পরিবর্তে হাওয়ামীম দান করেছেন; আর মুফাস্স্সালাত তদতিরিক্ত প্রাপ্ত হয়েছি।" এ থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, পবিত্র কুরআনে অপরাপর সমস্ত ধর্মগ্রন্থের শিক্ষাই বিদ্যমান আছে, তদতিরিক্ত আরও অনেক কিছু আছে। পবিত্র কুর'আনে চারিত্রিক, সাংসারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, তথা পূর্ণাঙ্গ ধর্মের সর্বপ্রকার 'ইবাদত-বন্দেগী, 'আকীদা বা বিশ্বাস সংক্রান্ত বিষয়সমূহ, সদুপদেশ, দু'আ প্রার্থনা ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ের বিশদ বিবরণ রয়েছে। এক কথায় একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যা কিছু আবশ্যক, সবই আছে। ইসলাম বলতে কুরআনের বাহিরে কিছুই নেই।

        আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি যে নির্দেশ প্রদত্ত হত তা-ই ওহী। ওহী দুই প্রকার (ক) মল্ল ও (খ) গায়রে মল্। আল্লাহ্ তাআলা কর্তৃক জিবরাঈল (আ)-এর মাধ্যমে যে বাণী অবতীর্ণ হত তা-ই মতলু বা কুরআন। আর আল্লাহ্ তা'আলার তরফ হতে রসুলুল্লাহ এর অন্তরে যা ইলহাম হত তা-ই গায়রে মতলু বা হাদীস। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ "রসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় প্রবৃত্তির তাড়নায় কিছুই বলেন না, তিনি তা-ই বলেন, যা ওহীরূপে প্রদত্ত হন।"

        রসুলুল্লাহ্ (সাঃ) যা বলেছেন, যা করেছেন অথবা অন্য কারো সর্তক করা হয়েছে, অথচ তিনি তা দেখতে বা জানতে পেরেও নীরব রয়েছেন, তা-ই হল হাদীস। নবী চরিত সবই ওহীর অন্তর্ভুক্ত। আর এগুলিই হল মহানবীর মহান শিক্ষা।

প্রিয়নবীর (সাঃ) শিক্ষা চির অপরিবর্তনীয়

        নিখিল বিশ্বের অনন্ত কল্যাণ, মূর্ত-আশির্বাদ, মানব জাতির পরম ও চরম আদর্শ, স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনিই সর্বশেষ নবী। তাঁর পর আর কোন নবী আগমন করবেন না। তাঁর ধর্মই সর্বশেষ ধর্ম। তার পর আর কোন ধর্মের প্রবর্তন হবে না। তাঁর শিক্ষাই শেষ শিক্ষা। অতঃপর আর কোন শিক্ষার প্রয়োজন থাকবে না। অতএব এ ধর্ম ও এর শিক্ষা কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত থাকতে হবে অটুট ও অবিকল।

        কিন্তু জগতে আল্লাহর অবাধ্য দুষ্ট প্রকৃতির লোকের অভাব নেই। চির দিনই তাঁরা আল্লাহ্ ও রসূলের শত্রু। ইসলামী ইতিহাস ও ইসলামী শিক্ষাকে বিকৃত করে পবিত্র ইসলাম ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য। এ শত্রুর হাত হতে পবিত্র ইসলাম রক্ষা করবে কে? এ প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ "এবং আমিই তার রক্ষক।"

        রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন: প্রত্যেক নবী এমন মু'জিযা প্রাপ্ত হয়েছেন, যা দর্শনে তদীয় উম্মৎগণ ঈমান আনয়ন করেছেন। আর আমি যা প্রাপ্ত হয়েছি, তা আল্লাহ্ প্রদত্ত ওহী সুতরাং আমি আশা করি সমস্ত নবী-রসূলের অনুসরণকারী অপেক্ষা আমার অনুসরণকারী অধিক হবে।

        অন্যান্য রসূলদের ধর্মগ্রন্থ মু'জিযা ছিল না। এজন্যেই তা বিকৃতি ও পরিবর্তন হতে রক্ষিত থাকতে পারে নাই।' আর মহানবী (সাঃ)-এর ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুর'আন স্বয়ং চির-জীবন্ত মু'জিযা। একে বিকৃতি হতে রক্ষা করার ভার স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা গ্রহণ করেছেন। কাজেই এর একটি হরফ এমনকি একটি যের-যবর পর্যন্তও বিকৃত হতে পারে না। সুতরাং এ জীবন্ত মুজিযা স্থায়ী থাকবে বলেই তিনি স্বীয় অনুসরণকারীর সংখ্যা সর্বাধিক হওয়ার আশা পোষণ করতে পেরেছেন।

Post a Comment

0 Comments