বেহেশতের হুর ও গেলমান কেমন

        পবিত্র কুরআনে একাধিক বার বেহেশতের হুর ও গেলমান সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সম্বন্ধে হাদীসও উক্ত হয়েছে। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহর পথে সকালে ও সন্ধ্যায় যাত্রা করা দুনিয়া ও তার ধন-সম্পদ থেকে উত্তম। তোমাদের মধ্যে কারও বেহেশতে একটি তৃণের পরিমাণ স্থান বা এক কদম পরিমাণ স্থানও সমগ্র দুনিয়া ও তার মধ্যস্থ ধন-সম্পদ থেকে বহুগুণ উত্তম। যদি বেহেশতের একটি রমণী দুনিয়ায় এতটুকু উঁকি দিয়ে মাত্র দেখত, তাহলে সারা দুনিয়া তাতে আলোকিত হয়ে যেত এবং দুনিয়ার সবকিছু সুঘ্রাণে আমোদিত হয়ে যেত, ঐ রমণীর মস্তকের এক গুচ্ছ কেশও দুনিয়া ও তার সব ধন-সম্পদ থেকে অধিক উত্তম।

         হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, "তারা যেন ইয়াকুত এবং মারজান, পর্দার আড়াল থেকে তাদের মুখমণ্ডলের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, আয়নার চেয়েও অধিক স্বচ্ছ এবং পরিহিত একটি রত্নের অলঙ্কারও মাশরেক থেকে মাগরেব পর্যন্ত আলোকোদ্ভাসিত করে দেবে। তার পরিধানে সত্তরটি বস্ত্র থাকবে। তার শরীরের ঔজ্জ্বল্য সমস্ত বস্ত্র ভেদ করেও বের হয়ে আসবে। এমন কি তার শরীরের সম্মুখ ভাগ পশ্চাদ্ভাগ থেকে দেখা যাবে।

        হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, আমাকে যে রাত্রে মেরাজের সফর করানো হয়েছিল, আমি তখন বেহেশতের বায়দাখ নামক স্থানে প্রবেশ করেছিলাম, তার তাঁবুগুলো লাল বর্ণের ইয়াকুত নির্মিত। ফিরেশতাগণ আমাকে সালাম করল, আমি বললাম, হে জিব্রাইল। কাদের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে? সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ (দঃ)! তাঁবুর অভ্যন্তরস্থ সুন্দরী ছরী ও অন্দরীগণের শব্দ শুনা যাচ্ছে। তারা আপনার প্রতি সালাম করার অনুমতি চাইছে। সুতরাং আপনি তাদেরকে সালাম করার অনুমড়ি দিন। তারা বলতে থাকবে আমরা সন্তুষ্ট আছি; কখনও আমরা অসন্তুষ্ট হব না। আমরা সর্বদাই এখানে থাকব, বাইরে আমরা কখনই ঘুরব না। তখন হুযুরে পাক (দঃ) কুরআনে পাকের এই আয়াতটি পাঠ করলেন, "হরুম মাজুজুবাতুন ফিল বিয়াম" অর্থাৎ তাঁর মধ্যে আবদ্ধ হুরগণ। আল্লাহতায়ালা অন্য আয়াতে বলেছেন, "আযওয়াখুম মুতাহহাবাতুন' অর্থাৎ পবিত্র রমণীগণ। মুজাহিদ বলেছেন, তারা হায়েজ, মল-মূত্র, মনি ও সন্তান প্রসব থেকে পবিত্র থাকবে।

         হযরত আওজায়ী (রহঃ বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, "ফী শুগুলিন ফাকিছুন” অর্থাৎ তারা তাদের কর্মে ব্যস্ত থাকবে। কুমারী রমণীদের সাথে সঙ্গম সহবাস ব্যতীত তাদের অন্য কোন কাজ নেই। এক ব্যক্তি আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)। বেহেশতবাসীগণ কি সঙ্গম করবে? তিনি বললেন, বেহেশতীদের যে কোন ব্যক্তিকে তোমাদের ন্যায় সত্তরজন লোকের সঙ্গম শক্তি দেয়া হবে। হযরত আবুদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেছেন, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন যে, বেহেশতে যে ব্যক্তির মর্যাদা সর্বাপেক্ষা কম হবে তার জন্যও এক হাজার খাদেম নিয়োজিত থাকবে এবং তন্মধ্যে একজনের কাজ অন্য জনে করবে না। প্রত্যেক খাদেম নিজ নিজ কর্তব্য পালন করবে। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, বেহেশতে প্রত্যেক অধিবাসীর পাঁচশ' হুর, চার হাজার কুমারী রমণী এবং আট হাজার বিধবা রমণী থাকবে। তন্মধ্যে প্রত্যেকেরই সাথে তার আলিঙ্গন হবে।

        হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের মধ্যে হাট-বাজার থাকবে। তাতে কোন ক্রয়-বিক্রয় হবে না। শুধু নর ও নারীদের ভীড় থাকবে। যখন কোন নরের কোন নারীকে পছন্দ হবে এবং তার সাথে সঙ্গমের আকাঙ্ক্ষা হবে, সে তখনই বিনা বাধায় তার সাথে সঙ্গম সুখ ভোগ করতে পারবে। এসময় সমবেত হুরগণ এমন এক মন মুগ্ধকর আওয়াজ করবে যে, তদ্রূপ আওয়াজ কোন ব্যক্তিই কোনদিন শ্রবণ করেনি। হুরগণ বলবে, আমরা সর্বদাই আছি। আমরা কোনদিনই চলে যাব না। আমরা বেহেশতীদেরকে সুখদান করি। তাদের কাউকেই নিরাশ করি না। আমরা সর্বদাই সন্তুষ্ট এবং কখনই অসন্তুষ্ট নই। যারা আমাদের জন্য এবং আমরা যাদের জন্য তাদের ধন্যবাদ। 

        হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের মধ্যে হুরগণ নৃত্যগীত করবে এবং বলবে, আমরা পরমাসুন্দরী হুর। আমরা আমাদের সম্মাণিত স্বামীদের জন্য নির্ধারিত। হযরত ইয়াহইয়া ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, এসব হুর বেহেশতের উদ্যানে বিচরণ করবে। হযরত আবু উমামাহ বাহেলী (রহঃ) বলেছেন যে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন যে, যে ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করবে তার মস্তক ও পদদ্বয়ের নিকট দুজন হুর মোতায়েন থাকবে। তারা এমন সুমধুর সুরে গান করবে যে তা' মানুষ ও জ্বিনগণ তন্ময় হয়ে শ্রবণ করবে। শয়তানের বাদ্যযন্ত্রের সাথে তারা গান করবে না বরং আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতার সাথে গান গাইবে।

Post a Comment

0 Comments