প্রিয়নবী (সাঃ)-এর সিরিয়া ভ্রমণ

 আবদুল মুত্তালিবের ইন্তেকাল

        পিতা-মাতার পর তিনি তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিবের স্নেহ-ছায়ায় লালিত-পালিত হন। কিন্তু আল্লাহ পাকের এটাই দেখানো ইচ্ছা ছিল যে, এ শিশুর লালন-পালন শুধু রহমতের ছায়াতেই হবে। আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং এর লালন-পালনের জিম্মাদারী নিয়েছেন। যখন তাঁর বয়স আট বৎসর দু'মাস দশ দিন, তখন আবদুল মুত্তালিব দুনিয়া হতে বিদায় নিলেন।

প্রিয়নবী (সাঃ)-এর সিরিয়া ভ্রমণ

        দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর পিতৃব্য আবু তালিব তাঁর অভিভাবক হলেন এবং তিনি তাঁর কাছেই বাস করতে লাগলেন। এমনিভাবে তাঁর বয়স যখন বার বৎসর দু'মাস দশ দিন হলো, তখন আবু তালিব ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় যাওয়ার চিন্তা করলে হযরত (সাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে সিরিয়া অভিমুখে রওয়ানা হলে তিমা নামক স্থানে তাঁদের যাত্রা বিরতি হলো।

এক ইয়াহুদী আলেমের ভবিষ্যদ্বাণী

        তিনি যখন তিমা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন, তখন ঘটনাক্রমে ইয়াহুদীদের বুহায়রা নামক এক বিখ্যাত আলেম তাঁর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁকে দেখে আবু তালিবকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "আপনার সাথে এই ছেলেটি কে?" আবু তানির বললেন, "আমার ভাতিজা।" বুহায়রা বললেন, "আপনি কি এর প্রতি মমতা রাখেন এবং এর নিরাপত্তা কামনা করেন?" আবু তালিব বললেন, "নিশ্চয়ই।" এর কথা শুনে বুহায়রা আল্লাহর শপথ নিয়ে বললেন, "যদি আপনি তাকে সিরিয়ায় নিয়ে যান, তাহলে ইয়াহুদীরা তাকে হত্যা করে ফেলবে। কেননা, তিনি আল্লাহ তা'আলার নবী, যিনি ইয়াহূদীদের দীনকে রহিত করবেন। আমি তাঁর গুণাবলী আসমানী কিতাবে (তাওরাতে) পেয়েছি।

        বুহায়রা রাহেব তাওরাতের বিজ্ঞ আলেম ছিলেন এবং তাওরাতে হযরত (সাঃ)-এর পূর্ণ পরিচয় ও বর্ণনা (অবয়ব ও আকৃতি) বর্ণিত ছিল, তাই তিনি তাঁকে দেখেই চিনে ফেলেন যে, এ-ই শেষ নবী, যিনি তাওরাত রহিত এবং ইয়াহ্দী আলেমদের হুকুমত শেষ করে দেবেন। বুহায়রা রাহেবের কথায় আবু তালিবের মনে ভয় সৃষ্টি হলো। তিনি হযরত (সাঃ)-কে মক্কা মুয়ায্যমায় পাঠিয়ে দিলেন।

ব্যবসার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয়বার সিরিয়া গমন

        এ সময় পবিত্র মক্কায় খাদীজা নামীয় এক ধনবতী মহিলা ছিলেন। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ও অভিজ্ঞতাসম্পন্না ছিলেন। যে সমস্ত অসহায় লোককে চতুর ও নির্ভরযোগ্য মনে করতেন, তাদেরকে স্বীয় মালপত্র সমর্পণ করে নির্দেশ দিতেন, এগুলো ঐ জায়গায় গিয়ে বিক্রি করে আস। তোমাদেরকে এরূপ লভ্যাংশ দেওয়া হবে।"

        রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নবুওয়ত যদিও তখন পর্যন্ত প্রকাশ হয়নি, কিন্তু তাঁর সততা ও আমানতদারীর কথা মক্কাবাসীদের নিকট প্রসিদ্ধ ছিল। তিনি 'আল-আমীন' উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। এ প্রসিদ্ধি ও সম্মান হযরত খাদীজার অজানা ছিল না। তাই তিনি স্বীয় ব্যবসা তাঁর হাতে সমর্পণ করে তাঁর সততার দ্বারা উপকৃত হন।

        তখন খাদিজা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট বলে পাঠালেন, "যদি আপনি আমার মালপত্র নিয়ে সিরিয়া যেতে রাযী হন, তাহলে আমার একটি গোলামকে আপনার সেবার জন্য সাথে দেওয়া হবে এবং অন্যান্য লোকদেরকে যা লভ্যাংশ দেওয়া হয়, এর চেয়ে বেশী আপনাকে দেওয়া হবে। আপনি যেহেতু স্বয়ং কল্যাণকর এবং দুঃসাহসী ও মুক্ত চিন্তার অধিকারী ব্যক্তিত্ব।" তখন তিনি অনতিবিলম্বেই দীর্ঘ সফরের জন্য তৈরী হলেন এবং খাদীজার গোলাম মায়সারাকে সাথে নিয়ে ১৬ যিলহজ্জ সিরিয়ায় রওয়ানা হলেন। সেখানে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে মালপত্রগুলো অতি উচ্চমূল্যে অধিকতর লাভে বিক্রয় করলেন এবং সিরিয়া হতে অন্যান্য মালপত্র ক্রয় করে মক্কা মুয়ায্যমায় ফিরে এসে হযরত খাদীজার নিকট অর্পণ করলেন। হযরদ খাদীজা (রাঃ) এগুলো এখানে বিক্রি করে প্রায় দ্বিগুণ লাভ করেন।

        সিরিয়ার পথে যখন তিনি কোন এক জায়গায় অবস্থান করেন, তখন নাস্তরা নামক একজন রাহেব তাঁকে দেখেন এবং শেষ যুগের নবীর যে নিদর্শনসমূহ পূর্ববর্তী কিতাবগুলোতে লিপিবদ্ধ ছিল, তাঁর মধ্যে বিদ্যমান দেখে তাঁকে চিনে ফেলেন। রাহেব মায়সারাকে চিনতেন। তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার সাথে ইনি কে? সে বললো মক্কা মুয়ায্যমার বাসিন্দা কুরায়শ বংশের একজন ভদ্র যুবক। জবাবে তিনি বললেন, 'এই ব্যক্তি (ভবিষ্যতে) নবী (হিসেবে আবির্ভূত) হবেন।

Post a Comment

0 Comments