এবার তুমি বেহেশতের আকার-আকৃতি সম্বন্ধে লক্ষ্য কর এবং তার অধিবাসীদের সুখ-শান্তি ও আরাম-আয়েশ সম্বন্ধে চিন্তা কর। যারা এই বেহেশতের সুখ-সম্পদ ও আরাম-আয়েশের বিনিময়ে পার্থিব সুখ-সম্পদ গ্রহণ করেছে, তাদের বিষয়ও ভেবে দেখ।
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের দেয়াল রৌপ্য এবং স্বর্ণের ইষ্টক দ্বারা নির্মিত। তার ধূলিকণা জাফরানের তৈরী এবং মৃত্তিকা মেশক দ্বারা নির্মিত। একবার ছাহাবায়ে কিরাম হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট বেহেশতের ধূলিকণা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তখন তিনি বলেছিলেন যে, বেহেশতের ধূলিকণা মক্কার শ্বেতবর্ণের মোতি এবং খালেছ মেশক দ্বারা তৈয়ার করা হয়েছে।
হুযুরে পাক (দঃ) আরও এরশাদ করেছেন যে, যে ব্যক্তি আশা করে যে, বেহেশতের শরাব পান করে তৃপ্তি লাভ করবে সে যেন এই দুনিয়ায় শরাব পান ত্যাগ করে। যে ব্যক্তি আশা করে যে, আল্লাহতায়ালা আখেরাতে তাকে জরির পোশাক পরিধান করতে দেবেন, সে যেন এই দুনিয়ায় জরি ও রেশম নির্মিত পোশাকসমূহ পরিধান করা ত্যাগ করে। বেহেশতের স্রোতস্বিনীসমূহ তার মেশকের পর্বতের পাদদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে। যদি বেহেশতীদেরকে বেহেশতের কোন একটি অলঙ্কার মাত্র পরিধান করানো হয়, তবে তা-ই দুনিয়ার নানাবিধ অলঙ্কার এক সাথে পরিধান করলে যে সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয় তার চেয়ে বহুগুণ অধিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে।
হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের মধ্যে বৃক্ষ রয়েছে। তার কোন কোন বৃক্ষ এরূপ বিশাল যে, তার ছায়ায় কোন যানবাহনারোহী পথিক একশ বছরের পথ অতিক্রম করতে পারবে। এর মধ্যে তাকে রোদের তাপ ভোগ করতে হবে না। যদি তোমরা ইচ্ছা কর, কুরআনে পাকের "অ জিল্লুম মামদূদ" আয়াতটি পাঠ করতে পার। হযরত আবু উমামাহ (রাঃ) বলেন, হুযুরে পাক (দঃ)এর ছাহাবীগণ বলতেন, আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে গ্রাম্য আরবদের প্রস্রবণ দ্বারা সাহায্য করেছেন। একদা জনৈক গ্রাম্য আরব এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)! আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে কষ্টপ্রদানকারী কণ্টকবৃক্ষের কথা উল্লেখ করেছেন, আমি জানি না বেহেশতের মধ্যে কষ্টপ্রদানকারী কোন কাঁটাদার বৃক্ষ আছে কি না।
হুযুরে পাক (দঃ) তার কথা শুনে বললেন, তা কি? লোকটি বলল, ছেদর অর্থাৎ কাঁটাদার বৃক্ষ। তখন হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, কাঁটাদার বৃক্ষ নয়, তবে কাঁটাশূন্য বৃক্ষ রয়েছে। আল্লাহতায়ালা তার কাঁটাগুলোকে দূর করে দিয়ে প্রত্যেক কাঁটার স্থলে একটি করে ফল উদ্দাত করবেন এবং ঐ ফলগুলো দ্বারা বাহাত্তর রকম খানা প্রস্তুত করা হবে এবং তা' এমন সুস্বাদু ও উপাদেয় খানা, যার সাথে দুনিয়ার অন্য কোন খানারই তুলনা হয় না।
হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, আমরা একদা ছেফার নামক একটি স্থানে উপস্থিত হয়ে দেখলাম যে, একব্যক্তি একটি বৃক্ষের ছায়ায় শায়িত হয়ে নিদ্রা যাচ্ছে। সূর্যরশ্মি তার অতি নিকটবর্তী হয়েছে। আমি তখন একটি গোলামকে বললাম যে, এই চর্মের চাদর দ্বারা তার জন্য ছায়ার ব্যবস্থা কর। সে ঐ চাদর দ্বারা তার জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করল। অতঃপর ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হলে দেখা গেল, তিনি সালমান ফারসী। তারপর আমি তাঁর নিকটবর্তী হলে তিনি আমাকে সালাম দিলেন এবং বললেন, হে জারীর। আল্লাহর জন্য বিনম্র হও। যদি তুমি দুনিয়ায় আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনম্র হও, তবে রোজ কিয়ামতে উন্নীত করবেন। তুমি কি কিয়ামতের দিনে অত্যাচারের বিষয় চিন্তা করেছ? আমি বললাম, তা' আমি চিন্তা করিনি। তিনি বললেন, মানুষের পরস্পরের উপর অত্যাচার। তারপর তিনি একটি ক্ষুদ্র কাঠের টুকরা হস্তে নিলেন। তা' এত ক্ষুদ্র যে, ক্ষুদ্রতার জন্য দেখা কষ্টকর। কাষ্ঠের টুকরোটি হাতে নিয়ে তিনি বললেন, হে জারীর। যদি তুমি এরূপ একটি ক্ষুদ্র কাষ্ঠ টুকরোও বেহেশতের মধ্যে অনুসন্ধান কর, তবে তাও কোথাও পাবে না। আমি বললাম, হে আবু আবদুল্লাহ! খুরমা ও অন্যান্য বৃক্ষ তাহলে কোথায় থাকবে? তিনি বললেন, ঐ বৃক্ষসমূহের মূল, কাণ্ড এবং শাখা- প্রশাখা হবে স্বর্ণ এবং মণিমুক্তার; কিন্তু তাতে স্বাভাবিকভাবেই ফল ধরবে।
0 Comments