আল্লাহতায়ালা বলেন, বেহেশতের মধ্যে বেহেশতবাসীদেরকে স্বর্ণ এবং মুক্তোর বালা পরিধান করতে দেয়া হবে এবং তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে জরির তৈরী। এই সম্বন্ধে কুরআনে পাকে বহু আয়াত রয়েছে। আয়াতসমূহের বিশদব্যাখ্যা হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করবে, সে বহু সুখে কালযাপন করবে। তার কোনরূপ অভাব-অভিযোগ থাকবে না। তার পোশাক-পরিচ্ছদ কখনও পুরাতন হবে না। তার যৌবন নিঃশেষ হবে না। বেহেশতে সে এমন বস্তুসমূহ পাবে, যা' তার পূর্বে কখনও তার নয়নযুগল দর্শন করেনি। যার কথা কোনদিন তার কর্ণযুগল শ্রবণ করেনি এবং যা' কারও হৃদয় কখনও তার কথা কল্পনা করেনি।
এক ব্যক্তি আরজ করল, হে আল্লাহর রাসূল (দঃ)! বেহেশতীদের পোশাক কিরূপ হবে, আমাদেরকে বলুন। পোশাক-পরিচ্ছদ কি সেলাই করা পুরাতন বস্ত্র হবে না বুনট করা বস্ত্র? হুযুরে পাক (দঃ) এই প্রশ্নে কিছু সময় নীরব থাকলে কতক লোক হেসে উঠলেন। তখন হুযুরে পাক (দঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা হাসলে কেন? যে জানে না, সে যে জানে তার নিকট অবশ্যই জিজ্ঞেস করে। তারপর অন্যান্য আরও অনেক বিষয় জিজ্ঞেস করা হল। বেহেশতের বৃক্ষসমূহের বিষয়ও জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেন, বেহেশতের বৃক্ষসমূহ দুনিয়ার বৃক্ষগুলোর ন্যায় হবে না। তার নানাধরনের বৈশিষ্ট্য হবে, দুনিয়ায় যেসব ফল দেখতে পাওয়া যায়, বেহেশতে সে সব ফলের বৃক্ষও থাকবে। তবে ফলগুলোর স্বাদ দুনিয়ার ফলের তুলনায় বহুগুণ বেশী হবে। যে স্বাদের বিষয় দুনিয়ার লোক কল্পনাও করতে পারে না। ফলদার বৃক্ষগুলো বছরে দুবার করে ফল দেবে।
হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের মধ্যে প্রথম দলের মুখমণ্ডল পূর্ণিমার রাত্রের পূর্ণ চন্দ্রের ন্যায় আলোকোজাসিত হবে। তারা বেহেশতে মুখের থুথু, কফ এবং নাসিকার সর্দি ফেলবে না। মূলতঃ এগুলোর উদ্ভবই হবে না। বেহেশতবাসীদের মলমূত্র ত্যাগ করতে হবে না, কখনও তার বেগও হবে না। বেহেশতবাসীদের তৈজসপত্র, প্রয়োজনীয় পাত্র, চিরুনী ইত্যাদি স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত হবে। তাদের প্রত্যেকেরই দুজন করে স্ত্রী থাকবে। তাদের দেহের চামড়ার সৌন্দর্য ও ঔজ্জ্বল্য এত অধিক হবে যে, তাদের পিছন থেকে সম্মুখ ভাগ স্পষ্টরূপে দেখা যাবে। এদের পরস্পরের মধ্যে কোনরূপ দ্বেষ, হিংসা, মনোমালিন্য, কলহ, কোন্দল বা ঝগড়া-বিবাদ থাকবে না। পরস্পরের মধ্যে কোনরূপ মতবিরোধ বা মতভেদ থাকবে না। মোটকথা বেহেশতের অধিবাসী প্রত্যেকেরই মনে একরূপ ধ্যান ধারণা থাকবে ও পরস্পরের মধ্যে গভীর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বিরাজ করবে। বেহেশতে তাদেরকে দুনিয়ার ন্যায় আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকতে হবে না। অবশ্য তারা প্রত্যহ সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহর প্রশংসা করবে।
কোন এক হাদীসে আছে যে, বেহেশতের প্রত্যেক রমণীর সত্তর রকমের পোশাক থাকবে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তাদেরকে বেহেশতের স্বর্ণের বালা পরানো হবে। তাদের মস্তকে এক বিশেষ ধরনের টুপী ব্যবহার করতে দেয়া হবে তা' অমূল্য রত্ন খচিত থাকবে, তার একটি ক্ষুদ্র রত্নের এমন দীপ্তি থাকবে যার আলোকে মাশরেক থেকে মাগরেব পর্যন্ত সব কিছু চোখের সামনে ভেসে উঠবে। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, বেহেশতোদ্যানের মধ্যে মাঝে মাঝে যে তাঁবুসমূহ স্থাপিত থাকবে, তা' মুক্তার দ্বারা নির্মিত হবে। ঐ তাঁবুগুলোর প্রত্যেকটির উচ্চতা হবে ঘাট মাইল। প্রত্যেক তাঁবুর নিরিবিলি প্রকোষ্ঠসমূহে বেহেশতী পুরুষদের জন্য বহু রূপসী রমণী বিদ্যমান থাকবে। এদেরকে বাইরের অন্য রমণীগণ দেখতে পাবে না।
হযরত ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর হাদীস গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, বেহেশতের তাঁবুগুলো মুক্তার দ্বারা তৈয়ার করা হয়েছে। প্রত্যেকটি তাঁবুতে চার হাজার করে স্বর্ণনির্মিত গবাক্ষ থাকবে। হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) আল্লাহতায়ালার এই আয়াত "উচ্চসিংহাসন" সম্বন্ধে বলেছেন, দুই সিংহাসনের দূরত্ব আসমান ও যমিনের দূরত্বের সমান।
0 Comments