হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম

        সকল সীরাতকার ও ঐতিহাসকিগণ এই কথার উপর একমত হয়েছেন যে, হাতীর অধিপতি আবরাহা বাদাশাহর ঘটনার বৎসর অর্থাৎ উক্ত ঘটনার মাত্র চল্লিশ অথবা পঞ্চান্ন দিন পর মহানবী (সাঃ) দুনিয়াতে তাশরীফ নিয়ে ছিলেন। তার জন্ম তারিখ সম্মন্ধে কিছুটা মতভেদ থাকলেও ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার সোবেহ ছাদেকের সময় তিনি ভূমিষ্ট হয়েছেন এটা অতি সুবিখ্যাত মত এবং এর জনশ্রুতি অত্যাধিক। উপরন্ত এই তারিখেই মক্কাবাসীদের নিকটবিশেষ প্রচলিত। তারা উক্ত ১২ই তারিখে মুস্তাহাব হিসাবে মাহা নবী (সাঃ) এর জন্ম স্থান পরিদর্শন করে থাকেন।

        হযরত আমিনা বলেন- সাধারণত সন্তান প্রসবের সময় নারীদের যে ব্যথা হয়ে থাকে আমার সে প্রসব ব্যথা যখন হয়েছিল তখন আমি নিজ গৃহে একাকি ছিলাম এবং আবদুল মুত্তালিব কাবা ঘরের তাওয়াফে ছিলেন। এমন সময় একটি বিরাট শব্দ শুনে আমি ঘাবরায়ে গেলাম। অতঃপর আমি একটি ছোট সাদা পাখী দেখতে পেলাম, যে তার পাখা দ্বারা আমার বক্ষ মুছতে লাগল, এতে আমার সমস্ত ব্যথা ও ভীতি চলে গেল। এরপর আমার নিকট সাদা শরবত দেখতে পেলাম আমি তা পান করলাম, যম্বরুন আমি শাস্তি পেলাম এবং খুব উচ্চ জ্যেতি আমার দৃষ্টি গোচর হল। ইতিমধ্যে আমার নিকট খেজুর বৃক্ষের ন্যায় লম্বাকৃতির কয়েকন মহিলা উপস্থিত হলেন। আমি অত্যাধিক আশ্চার্যন্নিত হলাম যে তারা কোথা থেকে এসেছে। এমন সময় তাদের মধ্যে হতে একজন বলে উঠলেন- যে ফেরাউন গোমরাহ হয়ে ছিল আমি তার স্ত্রী আছিয়া। দ্বিতীয় আরেকজন বললেন- আমি ইমরান কন্যা মারিয়াম, ঈসা (আঃ) এর মাতা। আর এই সমস্ত নারী যারা আমাদের সাথে এসেছে তারা সকলেই বেহেশতের হুর।

        আমিনা বললেন- এই সমস্ত আমার খুব খারাপ লাগছিল। প্রতি ঘন্টায় এক একটি বিরাট শব্দ শুনতে লাগলাম। পূর্ব শব্দ হতে পরের শব্দগুলি ক্রমান্বয়ে অত্যাধিক ভীতিজনক ছিল। এমন সময় হঠাৎ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তিস্থানে রেশমী কাপড়েরর ন্যায় একটি সাদা চাদর লম্বা লম্বী ভাবে দেখতে লাগলাম। আসমানও জমিনের মধ্যে কতগুলি পদ্যলোক দাড়ায়ে রয়েছে। তাদের হাতে রৌপ্য তৈরী পানির পাত্র ছিল। অতঃপর অমি একদল পাখ দেখেছিলাম। উহারা আমার নিকট আসল, তাদের চক্ষু জমরুদ পাথরের এবং পাখা ইয়াকুত পাথরের ছিল। এই সময় আল্লাহ তায়ালা আমার চোখের পর্দা উঠায়ে নিলেন, পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমে দেখে নিলাম। এই সময় তিনটি পতাকা দেখতে পেলাম। একটি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে দ্বিতীয়টি পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি কাবা শরীফের ছাদের উপর ছিল।

        আমার প্রসব ব্যথা আসল। একটু পরেই আমি মুহাম্মদ (সাঃ) কে প্রসব করলাম। তার নাড়ি কাটা ও খতনা করা অবস্থায় ছিল। আমিন্য ফরমায়েছেন- যখন মাওলুচুল মাহমুদ প্রসংশিত সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছিলাম, তখন আমি তাকে সিজদা রত অবস্থায় দেখতে পেলাম। সে সময় তার উভয় হাতের তজুর্নীর আঙ্গুলী দোয়া ও ক্রন্দকারীর ন্যায় আকাশের দিকে প্রসারিত ছিল। অতঃপর দেখতে পেলাম, একটি সাদা আবরন এসে তাকে ঢেকে ফেলল এবং আমার চোখের অগোচরে হয়ে গেল। এসময় আমি শুনতে ছিলাম এবং আওয়াজকারী বলছে যে, এই পবিত্রতম সন্তানটিকে পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমে ঘুরায়ে আন এবং সকল সাগর ও মহাসাগর দেখায়ে আন। এতে সকল স্থল ও জল বাসী তার নাম ও প্রশংসা এবং উজ্জ্বলতম আকৃতি সহকারে তাকে চিনে নিতে পারবে।

নবী-রাসূল গণের পৃথিবীতে আগমন

        আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় বান্দাদের হিদায়েতের জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেন। হযরত আদম (আ) হতে আরজ করে আজ পর্যন্ত এ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রাসূল আগমন করেছেন। স্বীয় বান্দাদের হিদায়েতের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁদের মাধ্যমে বহু কিতাবও অবতীর্ণ করেন। এমন কোন দেশ নেই, এমন কোন জাতি নেই যেখানে আল্লাহর বার্তাবাহক আবির্ভূত হন নি। আল্লাহ তাআলা বলেন- "আর এমন কোন সম্প্রদায় নেই, যাদের নিকট কোন সতর্ককারী আগমণ করেন নি।" "আর প্রত্যেক জাতির উদ্দেশ্যেই প্রথ-প্রদর্শক প্রেরিত হয়েছেন।"

        তাঁদের সকলের উদ্দেশ্য ছিল এক; মূল ধর্ম এক; শিক্ষা এক। তাঁরা ছিলেন একে অন্যের পরম বন্ধু। তাদের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ, দ্বন্ধ, কলহ কিছুই ছিল না। প্রত্যেকেই ছিলেন একে অন্যের সমর্থক। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পূর্বে যত নবী-রসূলের আবির্ভাব হয়েছে তাদের কেহই সমগ্র জগতের পথ-প্রদর্শকরূপে প্রেরিত হন নাই। তাদের প্রত্যেকেই প্রেরিত হয়েছিলেন নির্দিষ্ট কোন দেশ বা জাতির হিদায়েতের জন্যে। এ কারণেই এক সময়ে একাধিক নবীও আবির্ভূত হতেন।

        রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: আমার পূর্বে রসূলগণ স্বীয় সম্প্রদায়ের হিদায়েতের জন্যেই প্রেরিত হতেন, আর আমি প্রেরিত হয়েছি সমগ্র জগতের জন্যে।

        সর্বশেষে আল্লাহ্ তা'আলা প্রেরণ করেন সৃষ্টির সেরা মহামানব, নিখিল বিশ্বের অনন্ত কল্যাণ, মানবকুলের পরম ও চরম আদর্শ, নবী-রসূলদের শিরোমণি মুহাম্মদ (সাঃ)-কে। তিনি সর্বশেষ রসূল। তাঁর পর আর কোন নবীর আর্বিভাব হবে না। তাই আল্লাহ্ তা আলা ঘোষণা করলেন: "আজ আমি আপনার ধর্ম পূর্ণ করে দিলাম। স্বীয় নিয়ামত আপনার প্রতি সমাপ্ত করলাম এবং ধর্ম হিসেবে ইসলামকে আপনার জন্যে মনোনীত করলাম।"

        অন্যত্র বলেন- "মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রসূল এবং সর্বশেষ নবী।"


সহীহ্ হাদীসেও স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আছে- "আমি শেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী হবে না।"

        অন্য হাদীসে রসুলুল্লাহ্ (সাঃ) উদাহরণ দ্বারা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁর দ্বারা পবিত্র ধর্ম পূর্ণত্ব লাভ করেছে। সুতরাং তিনিই শেষ নবী; তাঁর পর অন্য কোন রসূল আগমনের সম্ভাবনা নেই।

Post a Comment

0 Comments