অশ্লীলতায় উদ্বুদ্ধ করে এমন কিছু ক্রয় করা নিষেধ
সঠিক পথে ব্যয় করা মু'মিনের ঈমানী দায়িত্ব। তাই মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদে ঘোষণা করেছেন-
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهُوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوا أَوْلَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ .
অর্থঃ এক শ্রেণীর লোক এমন রয়েছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে বস্তু ক্রয় করে থাকে অন্ধভাবে এবং তাকে নিয়ে বিদ্রূপ করতে পারে। এদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।
আলোচ্য আয়াতটি এর ব্যাখ্যায় তাফসীর বিশারদগণ বলেছেন, লাহওয়াল হাদীস প্রত্যেক ঐ সমস্ত ক্রিয়াকে বলে, যা আল্লাহ পাকের স্মরণ থেকে বিরত রাখে। যেমন নিরর্থক কিসসা, পর্দাহীনতা, হাসি-ঠাট্টা, ক্রীড়া-কৌতুক, অশ্লীল কথা-বার্তা, গান-বাজনা ইত্যাদি।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও মুফাসসিরীন বলেছেন, গান, বাদ্যযন্ত্র ও অনর্থক কিসসা কাহিনীসহ যেসব বস্তু আল্লাহর যিকির থেকে দূরে রাখে সবই লাহওয়াল হাদীসের শামিল। সুতরাং বুঝা যায়, যেখানে অনর্থক কিসসা, কাহিনী, বাদ্যযন্ত্র এ আয়াতের শামিল তাহলে টিভি, ভিসিআর যেগুলোর প্রতিটি অনুষ্ঠানেই বাদ্যযন্ত্র বাজায় এমনকি অশ্লীল ও অনুষ্ঠানাদি প্রচারিত হয়। যা মানুষের মনের শয়তানীর খোরাক যোগায়। এত অশ্লীলতা শিক্ষা দেয়া হয় এবং বেপর্দা, বেহায়াপনা, নগ্নতার প্রতি উৎসাহিত করা হয়। সুতরাং আমাদের সমাজের পর্দাহীনতা রোধকল্পে প্রথমে টিভি, ভিসিআর দেখা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং সংবাদ ইসলামী অনুষ্ঠান ছাড়া অন্যকোন অনুষ্ঠান না দেখাই শ্রেয়।
গায়রে মুহাররাম নারীদের পোশাকের দিকে তাকানো
ইসলাম গায়রে মাহরাম মহিলাদের পোশাকের দিকে দৃষ্টি দেয়াকে কঠোর হুশিয়ারী আরোপ করেছে। তাদের এ ধরনের পোশাক দ্বারা দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠন আকৃতি অনুমান করা যায়। শরীয়ত তার প্রতি দৃষ্টিপাত করাকে নিষিদ্ধ করেছে। সুতরাং যখন অপরিচিতা মহিলাদের পোশাকের প্রতি দৃষ্টি দেয়াকে নাজায়েয করা হয়েছে, তাহলে এ ধরনের যন্ত্রপাতি যা দ্বারা অপরিচিতা নারীদের দিকে উদ্দীপনা এবং আত্মার আসক্তের মধ্যস্থতা হয়, শরীয়ত কেমন করে তা বৈধ ও স্বীকৃতি দিতে পার?
দুররুল মুখতারে উল্লেখ করা হয়েছে যে-
অপরিচিত নারীর চাদরের দিকে কামনার দৃষ্টিপাত করা অবৈধ। আল্লামা শামী (র) অনেক গ্রন্থের উদ্ধৃতিসহ বলেন, মহিলাদের পোশাক পরিহি- তাবস্থায় তাদের দিকে দৃষ্টি দেয়ার দ্বারা কোন ক্ষতি নেই। যদি পোশাক তাদের দেহের সাথে এমনভাবে মিলানো না থাকে যা দ্বারা তাদের দেহের গঠন আকৃতি পরিস্কার বুঝা যায়। কারণ এমতাবস্থায় দর্শক তাদের পোশাক এবং দেহের উচ্চতার দিকে দৃষ্টিপাত করছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, যেন দর্শকের দৃষ্টি শিবিরের দিকে পতিত হলো যে শিবিরে মহিলা রয়েছে।
উপরিউল্লিখিত আলোচনা দ্বারা একথা স্পষ্ট হলো যে, মহিলাদের পর্দা কেবল পর-পুরুষ থেকে করা জরুরি তা নয়; বরং সাথে সাথে পোশাক, পরিচ্ছেদ সবকিছুতেই পর্দার হুকুম রয়েছে।
মৃত ব্যক্তির সতর দেখা নিষেধ
মৃত ব্যক্তির সতর দেখা হারাম। চাই সে পুরুষ বা নারী যেই হোক না কেন? এ সম্পর্কে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেন-
হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, হে আলী। তোমরা রানকে খুলো না এবং জীবিত বা মৃত কারো রানের দিকে তাকাবে না। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
যে লোক মারা গেল তার অনুভূতিও নিঃশেষ হয়ে গেল কিন্তু আপনি তার গুপ্তাঙ্গ দেখতে গেলে হয়ত আপনার অনুভূতির পরিবর্তন হতে পারে, তাই তাদের দিকে তাকানো বৈধ নয়।
উপরিউক্ত হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে; সতরের যে অংশটুকু ঢেকে রাখা ফরয ততটুকু কারো দেখা বা দেখানো নাজায়েয।
গোসল দেয়া এবং কাফন পরানোর সময় এ ব্যাপারে বিশেষ নজর থাকা প্রয়োজন। এজন্যেই ফিক্ শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন যে, গোসল দেয়ার সময় মৃত ব্যক্তির সতর তথা নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। যদি সতরের কোন অংশ মালিশ বা ময়লা দূর করার দরকার হয়; তাহলে হাতে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে স্পর্শ করবে। ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে-
কেননা স্পর্শ করাও দেখার ন্যায় হারাম।
لأَنَّ الْمَسَ حَرَامَ كَالنَّظْرِ .
অর্থাৎ, কেননা স্পর্শ করা ও দেখার ন্যায় হারাম।
আলোচনা শেষে বলা যায় যে, মাসআলা হলো কারো সতরের দিকে লক্ষ্য করা জায়েয নয়। চাই সে লোকটি পুরুষ হোক বা মহিলা হোক। জীবিত বা মৃত হোক।
0 Comments