প্রকাশ্যভাবে দাওয়াত প্রচার শুরু


        তিন বৎসর পর যখন বিপুল পরিমাণ নরনারী ইসলাম গ্রহণ করতে লাগলেন এবং জনগণের মধ্যে এটা আলোচিত হতে লাগলো, তখন আল্লাহ্ তা'আলা হযরত (সাঃ)-কে প্রকাশ্যভাবে জনগণের নিকট কালেমায়ে হকের দাওয়াত পৌছাবার জন্য নির্দেশ দিলেন।

        হযরত (সাঃ) সাথে সাথে তা পালন করলেন এবং মক্কার সাফা নামক পাহাড়ে চড়ে কুরাইশ গোত্রের নাম ধরে আহ্বান জানালেন। যখন সমস্ত গোত্রের লোক একত্র হলো, তখন তিনি সর্বপ্রথম জিজ্ঞেস করলেন, "যদি আমি তোমাদেরকে এ সংবাদ দিই যে, শত্রুসৈন্য তোমাদের উপর আক্রমণের জন্য আসছে এবং অচিরেই তোমাদের উপর লুটতরাজ শুরু করবে, তা হলে তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে?"

        এটা শুনে সবাই একবাক্যে বলে উঠলো, 'নিশ্চয়ই। আমরা আপনার খবর সম্পূর্ণ সত্য বলে বিশ্বাস করবো। কেননা, আমরা আজ পর্যন্ত আপনাকে কখনো মিথ্যা কথা বলতে শুনিনি।"

        এরপর হযরত (সাঃ) বললেন, "আমি তোমাদেরকে খবর দিচ্ছি যে, যদি তোমরা তোমাদের বাতিল বিশ্বাস না ছাড়ো, তা হলে আল্লাহ্ তা'আলার কঠিন শাস্তি তোমাদের উপর নেমে আসবে।" তিনি আরো বললেন, "আমার যতটুকু জানা আছে তাতে দুনিয়াতে কোন মানুষ স্বীয় গোত্রের জন্য এ উপহারের চেয়ে উত্তম কোন উপহার নিয়ে আসে নি, যা আমি তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি।

         আমি তোমাদের জন্য ইহকাল ও পরকালের মঙ্গল নিয়ে এসেছি। আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি তোমাদেরকে এর দিকে আহবান করি। আল্লাহর শপথ! যদি আমি সমস্ত দুনিয়ার মানুষের নিকট মিথ্যা বলতাম, তবুও তোমাদের সামনে মিথ্যা বলতাম না; যদি সমস্ত দুনিয়াকে ধোঁকা দিতাম, তবুও তোমাদেরকে ধোঁকা দিতাম না। ঐ পবিত্র সত্তার শপথ। যিনি এক এবং যাঁর কোন সমকক্ষ ও অংশীদার নেই। আমি তোমাদের নিকট বিশেষ করে সমস্ত দুনিয়াবাসীদের জন্য আল্লাহ্ তা'আলার পয়গম্বর ও রসূল।

আরববাসীর বিরোধিতা ও প্রিয়নবীর (সাঃ) দৃঢ়তা

        এ দাওয়াত ও তাবলীগের ক্রমধারা এমনিভাবে চলতে থাকে। আরবরা যখন এটা জানলো যে, হযরত (সাঃ)-এর ওহীর মাধ্যমে তাদের প্রতিমার রহস্য প্রকাশ হয়ে পড়েছে এবং এদের পুজাদানকারীদেরও মুর্খতা প্রকাশ হয়ে পড়েছে, তখন তারা হযরতের শত্রুতার জন্য দাঁড়িয়ে গেল। তাদের একদল হুযূর (সাঃ)-এর চাচা আবু তালিবের নিকট এসে বললো যে, তিনি যেন তাঁকে এ ধরনের কথাবার্তা বলা থেকে বিরত রাখেন এবং তিনি যেন তাঁর সহযোগিতা ছেড়ে দেন।

        আবু তালিব একটি সুন্দর কৌশলে তাদের উত্তর দিলেন। হযরত (সাঃ) এভাবে কালেমায়ে হকের প্রসার ও প্রচারের কাজে উৎসাহ এবং প্রতিমার উপাসনা হতে জনগণকে বাধা দিতে থাকেন। যখন আরবরা ধৈর্য ধারণ করতে পারলো না, তখন পুনরায় আবু তালিবের নিকট এলো এবং কঠোরভাবে তাঁর নিকট প্রতিফার দাবী করলো যে, হয় আপনার ভাতিজাকে ফিরিয়ে রাখবেন নতুবা আমরা আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবো। ফলে উভয় দলের মধ্যে কোন এক দল ধ্বংস হয়ে যাবে।

প্রিয়নবীর (সাঃ) জওয়াব

        আবু তালিবও চিত্তিত হলেন। এবং হযরত (সাঃ)-এর সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করলেন। হযরত (সাঃ) বললেনঃ হে শ্রদ্ধেয় চাচাজান, আল্লাহর শপথ; যদি তারা আমার ডান হাতে সূর্য এবং বাম হাতে চন্দ্র এনে দেয় এবং এর পরিবর্তে যদি তারা এটা কামনা করে যে, আমি আল্লাহর কালেমা মানুষের কাছে পৌঁছানো হতে বিরত থাকি, তাহলেও আমি তা করবো না। আল্লাহর সত্য ধর্ম জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দিষ্ট সংগ্রামে অন্ততঃপক্ষে আমি আমার এ জীবন বিলিয়ে দেব।

        আবু তালিব যখন নবীর এ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা দেখলেন, তখন বললেন, "ঠিক আছে, তুমি তোমার আপন কাজ করতে থাক। আমি তোমার সাহায্য সহযোগিতা থেকে কখনো হাত ফিরিয়ে নেব না।"

জনগণের মাঝে ঘৃনা ছড়ানোর প্রতিক্রিয়া

        যখন কুরায়শরা দেখল যে, বনী হাশিম ও বনি আবদুল মুত্তালিব তাঁর সাথে রয়েছে এবং এদিকে হজ্জের সময় নিকটবর্তী, এ সময় হযরত (সাঃ) প্রচারের কাজে যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। সকলেই হুযুর (সাঃ)-এর কথাবার্তার আকর্ষণ সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। ফলে এটা আশংকা ছিল যে, এই ধর্ম দুনিয়ার বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়বে। তখন সবাই একত্র হয়ে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো যে, মক্কার সমস্ত রাস্তায় লোক বসাতে হবে। বিভিন্ন দেশ হতে যে লোক হজ্জে আসবে, তাদেরকে দূর হতেই এটা বলে দেওয়া হবে যে, এখানে একজন যাদুকর আছে, যে তার কালামের (কথাবার্তা) দ্বারা পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী এবং সমস্ত আত্মীয়-স্বজনের মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে। তোমরা তার নিকট যেও না।

        আল্লাহ্ তা'আলার কুদরত, তাদের এ কার্যকরী পদক্ষেপের দরুন হযরত (সাঃ)-এর প্রচারের কাজ হয়ে গেল। যদি তারা এরূপ না করতো, তাহলে সম্ভবত অনেকে হুযুর (সাঃ)-এর ব্যাপারে কোন কিছুই জানতো না। কিন্তু তাদের এ অপচেষ্টা সবাইকে হুযুর (সাঃ)-এর আশেক বানিয়ে দিল।

Post a Comment

0 Comments