ইহরাম অবস্থায় হিজাব কেমন করতে হবে
ইসলামী শরীয়তে নারীদের ইজ্জত রক্ষার ব্যাপারে এত বেশি তাগিদ দেয়া হয়েছে যে ইহরাম অবস্থায়ও হিজাব রক্ষা করতে বলা হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, আমরা একবার নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম। সে সময় কোন পুরুষ আমাদের সামনে দিয়ে গেলে আমরা চাদর দিয়ে সম্পূর্ণ মুখ ঢেকে ফেলতাম, আবার সে চলে গেলে মুখ খুলে ফেলতাম। (আবু দাউদ)
এই বিষয়ে সম্যক জ্ঞান না থাকার ফলে অনেকের ধারণা যে, ইসলামের অবস্থায় হিজাব করা হলেও মুখ ঢাকার দরকার নেই। কারণ, এ বিষয় অনেকেই জানেন যে, হজ্জের সময় যেন নারীদের মুখে কাপড় স্পর্শ না করে। এ ধারণা যে ঠিক নয় তা মা আয়েশা (রা) এর হাদীসই প্রমাণ করে। তবে ইহরামের হিজাবে একটু ব্যতিক্রম আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যদি মাথায় একটি হ্যাট পরা হয় এবং হ্যাটের চারপাশে কাপড় ঝুলানো হয়, তবে কাপড় মুখ স্পর্শ করে না। হজ্জের সময় অনেক মহিলা মক্কা শরীফে এবং অন্যান্য স্থানে এইরূপ হ্যাটের উপর কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে ইহরাম অবস্থায় হিজাব রক্ষা করে থাকেন। উন্মুল মু'মিনীনগণ ইহরাম অবস্থায় বড় শাল দিয়ে গায়রে মুহররামের সামনে পর্দা রক্ষা করেছেন। এ প্রসঙ্গে ফাতেমা বিনতে মুনজিরের হাদীস উল্লেখ করা যায়। তাঁর ভাষ্য হচ্ছে-"হজ্জের সময় আমরা আমাদের মুখ-মাথা শাল দিয়ে ঢেকে ফেলতাম। তখন আবু বকর (রা)-এর কন্যা আসমা (রা) আমাদের সাথে ছিলেন। অথচ তিনি এ বিষয়ে কোন আপত্তি করেননি। অর্থাৎ মুখ ঢাকার ব্যাপারে বাধা দান করেননি। (মুয়াত্তা, ইমাম মালেক)
ফাতহুল বারীর হিজাব সম্পর্কিত অধ্যায়ে আয়েশা (রা)-এর একটি হাদীস এখানে বর্ণনা করা যেতে পারে। তিনি বলেন "ইহরাম অবস্থায় একজন মহিলা তাঁর চাদর মুখমণ্ডলের উপর দিতে পারেন।"
রোগ চিকিৎসার সময় হিজাব রক্ষার উপায়
শরীয়ত অনুযায়ী শুধু যে অংশ ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য দরকার সেই অংশটুকু দেখানো যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যদি শুধুমাত্র নাড়ী দেখেই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়, তাহলে অন্য কোন অংশ দেখার প্রয়োজন নেই। কনুই বা হাতে যদি ক্ষত হয় তাহলে শুধু আহত অংশটিই দেখবেন। চোখ, নাক বা মুখ দেখতে হলে, শুধুমাত্র যে অংশ আহত বা পীড়াগ্রস্ত, সে অংশটিই দেখবেন। সম্পূর্ণ মুখ নয়। এক্ষেত্রে মুহাররাম পুরুষ হলেও সম্পূর্ণ শরীর দেখবেন না। মুহারাম পুরুষ ডাক্তারের সামনেও নারী পুরো পিঠ, বক্ষদেশ বা উরুদেশ দেখাতে পারবেন না। অতএব বুক পিঠ উরু মুহাররাম ডাক্তারের জন্যও দেখা নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে পুরাতন অথবা নতুবা কাপড়ে ঐ অংশ সামান্য ছিদ্র করে অনায়াসে ডাক্তারকে দেখানো যায়। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী একজন নারী অন্য নারীর সম্মুখে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অনাবৃত রাখতে পারবেন না। এই কারণে চিকিৎসার জন্য নারী ডাক্তারের সম্মুখেও কেবলমাত্র যতটুকু আবশ্যক ততটুকু অংশ প্রকাশ করা যাবে। স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে; যে সমুদয় শরীরের অংশ উন্মুক্ত করা হবে, সে সমুদয় অংশ রোগীর কোন আত্মীয় দেখতে পারবেন না। কিন্তু যদি বাবা, ভাই বা পুত্র কনুই অথবা হাঁটু ইত্যাদির অংশ দেখা প্রয়োজন মনে করেন তাহলে, একটু ক্ষণের জন্য দেখতে পারেন। (অর্থাৎ নিতান্ত প্রয়োজন হলে) এটা সকলের অবহিত থাকা উচিত যে, একমাত্র মুহাব্রাম পুরুষের ক্ষেত্রেই ইহা জায়েয।
পুরুষের ক্ষেত্রে: উপরের যেন নিষেধগুলি আলোচনা করা হলো তা পুরুষের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। কোন পুরুষ অন্য পুরুষের সামনে, তার নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত খোলা রাখতে পারবেন না। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, যদি পশ্চাদ্দেশে কোন ইনজেকশন দিতে হয় বা ঔষধ লাগাতে হয়, তাহলে শুধু ঐটুকু অংশের কাপড় খোলা যাবে। তাও শুধু চিকিৎসকের সম্মুখেই খোলা যাবে। ডাক্তারের সাথে হিজাবের মাসয়ালার সংক্ষিপ্তসার নিম্নরূপ:
১) একান্ত ঠেকে গেলে অর্থাৎ যেখানে জীবন যাওয়ার আশংকা রয়েছে সেখানে মহিলা ডাক্তার পাওয়া না গেলে পুরুষ ডাক্তারের নিকট যেতে পারে এবং তার নিকট থেকে চিকিৎসা নিতে পারে।
২) দরকার হলে পুরুষ ডাক্তার মহিলা রোগীর অপারেশন করতে পারে, তা যে কোন অঙ্গেরই হোক না কেন। তবে বর্তমানে একটু খোঁজ করলেই মহিলাদের জন্য মহিলা ডাক্তার পাওয়া সম্ভব।
৩)যদি মহিলা ডাক্তার একেবারেই না মেলে সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে পুরুষ ডাক্তার মহিলা রোগীর যে কোন অংগ দেখতে ও স্পর্শ করতে পারে।
৪) যেনার সাক্ষ্য-প্রমাণ নেয়ার জন্য মহিলাদের দ্বারা যেনাকারিণী নারীর গোপন অঙ্গ দেখানো যেতে পারে, এখানে পুরুষ সাক্ষীর প্রয়োজন নেই, মহিলা সাক্ষীই যথেষ্ট।
৫) সাক্ষীর প্রয়োজনে দুগ্ধবতী নারীর স্তন কোন মহিলা সাক্ষীকে দেখানো যাবে।
ফেরিওয়ালাদের নিকট থেকে কেনাকাটা
প্রায় সব স্থানে দেখা যায় ফেরিওয়ালারা বিভিন্ন জিনিস ফেরি করে বিক্রয় করে। আর ক্রেতা হচ্ছে একচেটিয়া মহিলারা।
এমনও দেখা যায়, যারা সেসব লোকের সঙ্গে পর্দা করে চলে যাদের দ্বারা কোন প্রকার দুর্ঘটনা ঘটার কোন সামান্যতমও আশংকা নেই অথচ ফেরিওয়ালাদের সাথে তারা অনায়াশে বেপর্দায় কথাবার্তা বলে এবং তাদের নিকট থেকে কেনাকাটা করে। এটা একটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ রোগ দূর করার জন্য সচেতন মুসলমানদের এখনই হুঁশিয়ার হওয়া উচিত। এর কুফল নানাবিধ। যথা: ১. শরয়ী পর্দার খেলাফ। ২. ফেরিওয়ালা বেপর্দা কোন মহিলা হলেও সে পুরুষের সমান। কাজেই তার সাথেও পর্দা করতে আল্লাহর হুকুম রয়েছে। ৩. এসব কেনাবেচার মাধ্যমে অনেক সময় ছদ্মবেশী ডাকাতরাও ডাকাতি করার সুযোগ সন্ধান করে বেড়ায়। ৪. ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে কেনাকাটা করার মাধ্যমে বেপর্দার এমন অভ্যাস তৈরি হয় যা পরে আর ত্যাগ করানো কঠিন হয়ে পড়ে। ৫. বিভিন্ন ধরনের গুপ্তঘাতকরাও ফেরিওয়ালা সাজে। ৬. অবস্থার প্রেক্ষিতে ভিক্ষুকদেরও বাড়ির গেটের বাইরে রেখে ভিক্ষা দেয়া উচিত। কারণ ভিক্ষুকবেশেও অনেকে ডাকাতি করতে বা ডাকাতির জন্য সুযোগ-সুবিধা দেখতে আসে। সব ভিক্ষুকই ভিক্ষুক নয়। এদের মধ্যে অনেক প্রতারকও থাকে। কাজেই সময়ের এবং অবস্থার দাবি অনুযায়ী ভিক্ষুক ও ফেরিওয়ালাদের যমের মত ভয় করা উচিত। ৭. অনেক সময় ছেলেধরারাও ভিক্ষুক ও ফেরিওয়ালার বেশে আসে। সুতরাং ভদ্র পরিবারের সরল মেয়েদের অনেক দিক থেকেই এরা সর্বনাশ ঘটাতে পারে। কাজেই এদের থেকে সাবধান থাকা উচিত।
কোন কিছু কেনার দরকার হলে পুরুষদের দ্বারা কেনানো উচিত। আর ছোট ছেলেমেয়েদের দিয়ে ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দিতে হলেও বড়দের লক্ষ্য রাখা উচিত যে, তারা শুধু ভিক্ষাই নিতে আসে, না আর কোন উদ্দেশ্যে আসে।
0 Comments