হিজাবের শরয়ী নির্দেশ কেমন

 হিজাব সম্পর্কে কয়েকটি জরুরি কথা

        ১. আল-কুরআনে যাদের সাথে হিজাব করতে বলা হয়েছে তাদের সঙ্গে হিজাব করতেই হবে।

        ২. যারা মুহাররম পুরুষ অর্থাৎ যাদের সাথে বিয়ে হারাম তাদেরও কারও কারও সাথে যদি হিজাব করে চলে তবে তা ভাল, তবে হুকুম নেই। তবু তাকওয়ার জন্য তা ভাল। যেমন-

        (ক) যেসব মেয়েদের এখনও হিজাবের বয়স হয়নি তাদেরকেও হিজাব করে চলার অভ্যাস তৈরির জন্য বা হিজাব করতে শেখানোর জন্য ছোট অবস্থায়ই হিজাব করে চলা।

        (খ) বৃদ্ধ বয়সের কাজের লোকদের সাথে হিজাব করা।

        (গ) লজ্জার বশবর্তী হয়ে আপন লোক (যাদের সাথে বিয়ে হারাম) তাদের সাথে হিজাব করা।

        (ঘ) সৎ পুত্রের সঙ্গে হিজাব করে চলা। এসব ক্ষেত্রে হিজাবের যদিও হুকুম নেই তবে যদি কেউ হিজাব পালন করে চলে তা জায়েয আছে। এমনকি বৃদ্ধা বয়সীরাও (যাদের হিজাব করে চলার বয়স নেই) তারাও যদি হিজাব করে চলে তবে সেটাও জায়েয।

ছোটদের হিজাব

         যাদের নারী-পুরুষের মধ্যে পার্থক্য করার মত বোধশক্তি সৃষ্টি হয়নি তাদের সাথে হিজাবের প্রয়োজন নেই। তবে আজকাল খবরের কাগজে যেসব খবর বের হচ্ছে তাতে দেখা যায় ছোটরা আর ছোট নেই। খুব অল্প বয়সে সন্তান হওয়ার খবর এবং খুব ছোট মেয়েদেরকেও ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে।

        উক্ত অবস্থার কারণে ছোট মেয়েদেরও হিজাব করা কর্তব্য হয়ে পড়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে ৯ বছরের মেয়েও 'মা' হয়ে পড়তেছে। তবে যদি একেবারেই শিশু হয় তাহলে তাদের কথা আলাদা। তাদের হিজাবের কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। কিন্তু অপরিপক্ক বয়সের মেয়েদের সন্তান হওয়া ও ধর্ষণ করার যে খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে থাকে তার প্রেক্ষিতে তাদের শরয়ী হিজাব ফরয হওয়ার আগেই হিজাব করা সময়ের দাবিতে ওয়াজিব হয়ে পড়েছে। নচেত যে কোন মুহূর্তে অঘটন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

সহশিক্ষা

        সহশিক্ষার বিষয়ে কিছু জরুরি কথা না বলে পারছি না। যারা মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা দিতে চান তাদের উচিত মহিলা কলেজে মেয়েদেরকে ভর্তি করা। সেই সাথে পিতা-মাতা অথবা বড় ভাই কেউ সাথে করে কলেজে দিয়ে আসা এবং ফেরার সময় সাথে করে নিয়ে আসা। না হলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটা ঘটনা শুনলামঃ একজন দ্বীনদার লোকের এক কলেজ ছাত্রী মেয়ের তার পিতা-মাতার অগোচরে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী জায়েয পন্থায়ই বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়ে দিনের বেলায় কলেজ টাইমে তার স্বামীর বাড়িতে যাতায়াতও করে, কিন্তু তাদের বিয়ের বয়স প্রায় দেড় বছর হয়ে যাওয়ার পরও মেয়ের পিতা-মাতা খবর পায়নি যে, তাদের মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।

        এখন বলুন, তার আত্মীয়-স্বজন যখন জানে যে তার বিয়ে হয়নি এমতাবস্থায় যদি ঐ মেয়ে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে তাহলে লোকে কি খোঁজ নিতে যাবে যে, কবে তার বিয়ে হয়েছে? তার সম্মানিত পিতা-মাতার অবস্থা তখন কি দাঁড়াবে? এজন্যই মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হলে তাকে কলেজে দিয়ে আসা এবং নিয়ে আসার মত ব্যবস্থা থাকতে হবে। না হলে উচ্চ শিক্ষায় লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ হবে অনেক বেশি।

        খাস করে বর্তমান যুগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর যা অবস্থা তাতে একই সাথে দু'টি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। যথা:

        ১. মহিলা কলেজে ভর্তি করে প্রতিদিন দিয়ে আসার এবং নিয়ে আসার ব্যবস্থা।

        ২. ইসলামী ছাত্রী সংস্থার অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া যেন শয়তান ভেতর ও বাইরের উভয় দরজাই বন্ধ অবস্থায় পায়।

হিজাবের শরয়ী নির্দেশ

    ১. যদিও বোরকা পরে মেয়েদের বাইরে যাওয়া জায়েয, তবু যেখানে পুরুষের আনাগোনা বেশি সেখানে বোরকা পরে যাওয়াও নিষেধ।

    ২. বোরকা পরিহিতা অবস্থায়ও একা একা চলাফেরা করা অনুচিত। এতে দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।

    ৩. বোরকা পড়া অবস্থায় যদিও বাইরে যাওয়ার ছাড়পত্র আছে, তবু বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া ঠিক নয়।

    ৪. যতটুকু দেখে মানুষ চেনা যায় না ততটুকু ঢেকে রেখেই অর্থাৎ দু'টি চোখ ছাড়া চেহারার সবটুকু ঢেকে রাখা উচিত। মুখমণ্ডল খুলে রাখার ব্যাপারে যদিও শরীয়তে কিছু ছাড়পত্র আছে, কারণ পুরো মুখমণ্ডল পর্দার বাইরের অংশ অর্থাৎ মুখমণ্ডল সতর নয়। কিন্তু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শরীয়তের মাসআলা কখনও কখনও কড়াকড়ি করার নিয়ম আছে।

    ৫. হিজাব পরে মহিলাদের বাজারে যাওয়াও জায়েয আছে, তবে একা একা বাজারে যাওয়া সম্পূর্ণ অনুচিত।

    ৬. হিজাবের সাথে পুরুষের ওয়াজ নসীহত শোনাও জায়েয।

    ৭. হিজারের সাথে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়াও জায়েয।

    ৮. পুরুষ লোক থাকা অবস্থায়ও মেয়েদের বোরকা পরে বাজারে যাওয়া ঠিক নয়।

    ৯. প্রয়োজনে হিজাবের আড়াল থেকে বেগানা পুরুষের সঙ্গে শরয়ী কথা বলা যাবে। তবে তাকে পুরুষের সাথে কর্কশ কথা বলতে হবে যেন কথাবার্তার মধ্যে প্রেমের কোন আবেগ বা আবেদন না থাকে। অর্থাৎ কারও নিকট থেকে প্রয়োজনীয় কোন খবর শোনা যাবে এবং জরুরি কোন খবর বলা যাবে। তবে তা শুনতে ও বলতে হবে হিজাবের আড়াল থেকে।

Post a Comment

0 Comments