আল্লাহতায়ালা মানুষের অঙ্গ প্রতাঙ্গ কী ভাবে সৃষ্টি করেছে

        চক্ষুর সৃষ্টি কৌশলঃ আল্লাহতায়ালা চক্ষুকে সাতটি পর্দা দ্বারা নির্মাণ করেছেন। প্রত্যেক পর্দার বিশেষ গুণ এবং বিশেষ আকৃতি আছে তা' থেকে একটি পর্দা বিনষ্ট হয়ে গেলে বা একটি গুণ চলে গেলে চক্ষুর দৃষ্টিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। যদি একটি অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গের মধ্যে যেমন আশ্চর্য ও বিস্ময়কর বস্তু আছে তা' আমরা বর্ণনা করতে চাই, তবে তাতে আমাদের জীবনের আয়ু নিঃশেষ হয়ে যাবে।

        অস্থির সৃষ্টি কৌশলঃ এবার তুমি অস্থির দিকে লক্ষ্য কর। এটা কঠিন ও শক্ত বস্তু। এটা সূক্ষ্ম নোতফা থেকে নির্মাণ করা হয়েছে এবং এটাকে আল্লাহতায়ালা শরীরের স্তম্ভ ও রক্ষাকারীরূপে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি তাকে বিভিন্ন পরিমাণ ও বিভিন্ন আকার দিয়েছেন। তন্মধ্যে আছে ছোট ও বড় অস্থি, দীর্ঘ ও খাটো অস্থি, গোল ও চওড়া অস্থি। কিন্তু প্রত্যেক অস্থিখণ্ড সংযুক্ত করে রাখা হয়েছে। কেননা মানুষের সমস্ত শরীর বা কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে চলাফেরা করার আবশ্যক হয়। সমস্ত অস্থিকে একটি অস্থিখণ্ডে পরিণত করা হয়নি বরং বহু অস্থি খণ্ড নির্মাণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে জোড়া আছে, যেন তদ্বারা গতিবিধি ও চলাফেরা করা সহজ হয়। যে অস্থির যেরূপ গতিবিধির প্রয়োজন তজ্জন্য তার আকৃতিকেও তদ্রূপ করা হয়েছে এবং তার সাথে জোড়া লাগানো হয়েছে। একটির সাথে আর একটির জোড়া দেয়া হয়েছে। যদি অস্থিগুলি একটানাভাবে খণ্ডিত না করে ও পরস্পর জোড়া না লাগিয়ে একটানাভাবে গোটা প্রস্তুত করা হত তবে পৃষ্ঠ ঝুঁকাতে ও মস্তক নত করতে পারা যেত না। আবার যদি সেগুলি খণ্ডিত হত এবং পরস্পর জোড়া লাগানো না হত তবে সোজা করে পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ান যেত না। এই উভয় অসুবিধা এড়ানোর জন্য একখণ্ড অস্থির সাথে অন্য খণ্ডের জোড়া দেয়া হয়েছে। খণ্ডগুলি একপ্রান্তে চারটি বর্তুলাকৃতি দাঁত এবং অন্যপ্রান্তে সেই দাঁতগুলি উত্তমরূপে বসতে পারে এমন চারটি গর্তাকৃতি খাঁজ কাটা হয়েছে। একখণ্ডের প্রান্তস্থিত বর্তুল অন্য খণ্ডের প্রান্তস্থিত গর্তাকৃতি খাঁজের মধ্যে বেশ করে বসে যায়। যখনই কোন লোক তার শরীরের কোন এক খণ্ড বা কোন এক অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ নাড়াতে ইচ্ছা করে ভাতে কোন বাধা আসে না। যদি যুক্তগ্রন্থি না থাকত তবে তাতে নানারূপ অসুবিধা দেখা দিত।

        মস্তক-অস্থির সৃষ্টি কৌশলঃ এবার তুমি মস্তকের অস্থি সম্বন্ধে চিন্তা কর, তিনি কিরূপে সেসব গ্রন্থি একত্র করে রেখেছেন। তোমার মস্তকের করটি (খুলি) পঞ্চান্নটি বিভিন্ন অস্থি খণ্ডের সংযোগে নির্মিত হয়েছে। তাদেরও পৃথক এবং ভিন্ন ভিন্ন আকৃতি আছে এবং একের সাথে অন্য অস্থিকে সংযুক্ত করা হয়েছে যেন মস্তিষ্কের করটি গেলাকার হয়। যেরূপ তুমি তাকে বাহ্যতঃ দেখছ। তন্মধ্যে ছয়টি অস্থি করটির জন্য, চৌদ্দটি অস্থি উপরের চোয়ালের জন্য, দুটি অস্থি নীচের জন্য এবং অবশিষ্ট অস্থিগুলি দন্তসমূহ। কোন দাঁত চওড়া। তার উপর খাদ্য চিবানো যায়। তা' যাঁতির ন্যায় কাজ করে। কোন কোন দাঁত ধারালো ছড়ির ন্যায়। যদ্বারা কর্তন করা যায়, সেগুলো হল, শিকারী দন্ত।

        গ্রীবা দেশের সৃষ্টি কৌশলঃ এবার লক্ষ্য কর, আল্লাহতায়ালার গ্রীবাদেশ সৃষ্টির কৌশলের দিকে। তিনি তাকে সাত খণ্ড অস্থি দ্বারা নির্মাণ করেছেন। তৎসমুদয় শিরা, ধমনী ও স্নায়ু সূত্রে জড়িয়ে মজবুত করে রাখা হয়েছে। প্রত্যেক নির্মাণ কার্যের কলা-কৌশল আশ্চর্যজনক। তারপর পৃষ্ঠের উপর মেরুদণ্ডকে স্থাপন করা হয়েছে এবং পৃষ্ঠদেশ বা মেরুদণ্ডকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত চব্বিশ খণ্ড অস্থিটুকরা জোড়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পাঁচটি অস্থিকে তিনটি পৃথকভাবে ভাগ করা হয়েছে। তার সর্বনিম্ন ভাগের সাথে তাদেরেক সংযোগ করে দেয়া হয়েছে, তাও আবার তিনটি অংশ সংযুক্ত করা হয়েছে। আমরা তার সংখ্যা বর্ণনা করে বিষয়ের কলেবর বৃদ্ধি করব না। মানুষের শরীরের অস্থির সংখ্যা সর্বমোট ২৪৮টি। যে ক্ষুদ্র অস্থি দ্বারা অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজিত, তা' এই সংখ্যার বহির্ভূত।

        এখন লক্ষ্য কর, কিরূপে আল্লাহতায়ালা সামান্য একবিন্দু ঘনীভূত তরল শুক্র দ্বারা এসব সৃষ্টি করেছেন। আমাদের উদ্দেশ্য এই অস্থির সংখ্যা গণনা করা নয়। কেননা এটা চিকিৎসকের ও শরীর তত্ত্ববিদগণের জ্ঞানের বিষয়। আমাদের উদ্দেশ্য সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকৌশল কিরূপে তা' বর্ণনা করা। তিনি কিরূপে তা' পরিমাণ মত সুশৃংখলভাবে সাজিয়েছেন এবং এর বিভিন্ন আকৃতি, পরিমাণ ও বিশেষত্ব দিয়েছেন। যদি এর মধ্যে তিনি একটি অস্থিও বৃদ্ধি করে দিতেন তা' মানুষের উপর শাস্তিস্বরূপ হয়ে যেত। তা' তাকে ভীষণ অসুবিধায় ফেলত। যদি তা' থেকে একটি অস্থিও কম হত, তাতে তার ক্ষতি হত এবং তার আবশ্যকতা পূর্ণ হত না। চিকিৎসক চিকিৎসার উদ্দেশ্য জানার জন্য তার দিকে লক্ষ্য করে। অন্তদর্শীগণ সৃষ্টিকর্তার কৌশলের প্রমাণস্বরূপ তার দিকে দৃষ্টিপাত করে।

        মাংসপেশীর সৃষ্টির কৌশলঃ এবার লক্ষ্য কর, কিরূপে আল্লাহতায়ালা এসব অস্থি, সঞ্চালন করার জন্য যন্ত্র সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে মাংসপেশী বলে। মানবদেহে সর্বমোট ৫২৯টি পেশী আছে। প্রত্যেক পেশী মৎসাকৃতি, মধ্যভাগ চওড়া ও স্ফীত, প্রান্তের দিকে ক্রমশ লঘু ও অপ্রশস্ত। এর বিভিন্ন স্থান ভেদে ও আবশ্যকতার পরিমাণ ভেদে আয়তন ও আকৃতি আছে। তন্মধ্যে চব্বিশটি পেশী চোখের গোলকের আশে পাশে স্থাপিত আছে। তাদের সাহায্যে চক্ষু গোলক পাতা ও ভ্রূ সঞ্চালন করতে পারে। যদি তন্মধ্যে একটিও কম থাকত, চক্ষের ব্যাপার অন্যরূপ হত। তদ্রূপ প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নির্দিষ্ট সংখ্যক মাংসপেশী আছে। মস্তক ও ললাটের একটি পেশী, নাসিকার একটি পেশী, মুখ সংক্রান্ত একটি পেশী, উদরের দুটি পেশী, উদরের নিম্নদেশে চারটি পেশী। অবশিষ্ট পেশীগুলি শরীরের উভয় পাশে অবস্থিত বলে জোড়ায় জোড়ায় গণনা করা হয়েছে। মোটকথা সাড়া শরীরের গঠন প্রণালী অতি আশ্চর্যজনক। তা' মানব শরীরের সর্বশ্রেষ্ঠ অনুভূতি দ্বারাও উপলব্ধি করা যায় না।

        এবার তুমি মানুষের অন্তর, বার, শরীর ও তার গুণাবলীর দিকে লক্ষ্য কর, তাতে আশ্চর্য কৌশল দেখতে পাবে এ সবই আল্লাহর কীর্তি-কার্য। সামান্য একটি অপবিত্র শুক্রবিন্দুর মধ্যে এটা দৃষ্টিগোচর হয়। এ থেকে ধারণা করতে হবে যে, আসমান, যমিন এবং আসমানের তারকারাজি ও অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের মধ্যে কত শিল্প কৌশল নিহিত আছে। তাদের আকৃতি, পরিমাণ ও সংখ্যায় কত কত বৈচিত্র বিদ্যমান। তাদের পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্ব কত! কখনও ভেব না যে, স্বর্গ রাজ্যের এক কণাও তার কৌশলের বিধান থেকে মুক্ত। বরং তা' তাঁরই সৃষ্টি বিধানে ও কৌশলে পরিপূর্ণ। তা' মানব শরীর থেকেও অধিক আশ্চর্যজনক। আসমানের অত্যাশ্চর্য বস্তুসমূহের তুলনায় দুনিয়ার বস্তুসমূহ ও তার কলা-কৌশল অনেকটা নগণ্য। এজন্য আল্লাহতায়ালা বলেছেনঃ "আ আনতুম আশাদ্দু খালকান আমিস্ সামাউ বানাহা নাফাআ সামকাহা ফা সাওয়্যাহা অ আগত্বাশা লাইলাহা অ আখরাজ দুহাবা" অর্থাৎ তোমরা সুদৃঢ় সৃষ্টি অথবা আসমান যা তিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাকে উচ্চ করেছেন এবং তাকে সুপরিমিত করেছেন। তিনি তাকে রাত্র দ্বারা, আবৃত করেছেন এবং তা' থেকে দিবস বের করেছেন।

       শুক্রবিন্দুর মধ্যকার কৌশলঃ যখন তুমি শুক্রবিন্দুর দিকে মনোনিবেশ করে তদ্বিষয়ে চিন্তা করবে এবং তদ্বারা কি কাজ সাধন হয় সে বিষয়েও চিন্তা করবে। আরও চিন্তা করবে যে, যদি মানুষ ও জ্বিন সম্মিলিত হয়, তাদের মিলনে কি মানব শুক্রবিন্দুর ন্যায় কর্ণ, চক্ষু, শক্তি, বুদ্ধি, জ্ঞান ও আত্মা ইত্যাদি সৃষ্টি হবে? তুমি এশা তো দূরের কথা, সব মানুষ মিলেও যদি এ বিষয় চিন্তা করে, তবে তাদের চিন্তা ব্যর্থ হবে। যদি তুমি দেয়ালে একটি মানুষের আকৃতি অঙ্কিত দেখ, তা' দেখেই তুমি আশ্চর্যান্বিত হবে যে, তা' অঙ্কন করতে চিত্রকর কত পরিশ্রম করেছে এবং তা' যে অবিকল মানুষেরই মত মনে করবে। কেউ কেউ তো তাকে অবিকল মানুষই বলে ফেলবে। মোটকথা ঐ চিত্রকরের যোগ্যতা দেখে তার প্রতি তোমার একটা স্বতন্ত্র ভক্তি ও সম্মান বোধ জন্মাবে। অথচ তুমি জান যে, শক্তি, জ্ঞান অনুভূতি ও আত্মা ইত্যাদির অভাবে ঐ মূর্তির মধ্যে কোন সম্পূর্ণতা নেই; বরং ওর কোন মূল্যই নেই। আর এই সব বস্তু সৃষ্টির ক্ষমতা চিত্রকরের নেই বরং তা' অন্যের অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমতার অন্তর্গত।


        এখন তুমি চিন্তা কর, যে এক বিন্দু অপবিত্র শুক্র তুমি এখন দেখছ, এক সময় তার অস্তিত্ব ছিল না। তারপর সৃষ্টিকর্তা তা' পুরুষের পৃষ্ঠে এবং রমণীর বক্ষে সৃষ্টি করে তা' থেকে সেই শুক্র বের করে তাকে আকৃতি দান করেছেন, সেই আকৃতি সুন্দর করেছেন, তার পরিমাপ ঠিক করে দিয়েছেন। যেই পরিমাণ ও আকৃতি তিনি পরিমাপ মত ও সুষ্ঠুরূপে করেছেন। তারপর তিনি তাকে বিভিন্নভাবে ভাগ করেছেন। তারপর অস্থিসমূহকে যথাস্থানে স্থাপন করেছেন। তিনি তার সব অঙ্গ-প্রত্যেঙ্গকে সুন্দর আকৃতি দিয়েছেন এবং আকৃতির ভিতর ও বার সুশোভিত করেছেন। তিনি এর শিরা ও গ্রন্থি সুশৃঙ্খলভাবে স্থাপন করে তার জীবিকার সংস্থান করেছেন যেন তা' বেঁচে থাকতে পারে। তিনি তাকে শ্রবণ শক্তি, দর্শন শক্তি, বাকশক্তি এবং জ্ঞানশক্তি দিয়েছেন। তিনি তার পৃষ্ঠ বানিয়ে তাকে তার শরীরের ভিত্তি করেছেন। তিনি উদরকে তার জীবিকা যন্ত্রের প্রস্রবণ বানিয়েছেন। তারপর মস্তিষ্ককে অনুভূতির ফোয়ারা বানিয়েছেন।

        চক্ষুর সৃষ্টি কৌশলঃ আল্লাহতায়ালা দুটো চক্ষু উন্মুক্ত করেছেন। তার স্তর সুবিন্যস্ত করেছেন, আকৃতির রূপকে সুন্দর করেছেন। তারপর তিনি চক্ষুকে পাতা দিয়ে রক্ষা করেছেন যেন প্রয়োজনে তা' আবৃত করে রাখে ও এভাবে তাকে রক্ষা করে ধুলো-বালু দূর করে দেয়। তারপর চোখের মণি ক্ষুদ্র ডানার তুল্য হলেও অসীম আকাশ ও বিশাল ভূখণ্ডের ছবি ধারণের ক্ষমতা রাখার উপযুক্ত করেছেন। এই যে প্রকাণ্ড আকাশ এত উচ্চে ও এত দূরে অবস্থিত আছে তবু চক্ষু উন্মিলন করা মাত্র তার বিশাল ছবি তোমার চক্ষু মণির মধ্যে এসে পড়ে। তারপর তুমি দুটো কর্ণের সৃষ্টি কৌশল দেখ। যে কোনরূপ শব্দ শুনার জন্য আল্লাহতায়ালা তোমাকে দুটো কর্ণ দিয়েছেন এবং এক প্রকার তিক্ত পানি বা ময়লা তাতে সঞ্চিত করে রেখেছেন। যেন ময়লার গন্ধে কীট-পতঙ্গ কর্ণ কুহরে প্রবেশ করতে না পারে এবং শ্রবণ শক্তিও অব্যাহত থাকে সে ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। কর্ণের ছিদ্র শামুকের ন্যায় পেচালো করে বানানোর ফলে শব্দসমূহ তার মধ্যে পতিত হয়ে তা' হ্রাস-বৃদ্ধি হয় এবং মৌমাছির গুণ গুণ শব্দের ন্যায় তা' অনুভূত হয়। তাছাড়া কর্ণের মধ্যে যাতে পিপীলিকা বা অন্য বস্তু সহজে প্রবেশ করতে না পারে এবং প্রবেশ করলেও মধ্যে যেতে অনেক সময় লাগে সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এজন্য কর্ণ কুহর দীর্ঘ ও আঁকা-বাঁকা করা হয়েছে।

        নাসিকার সৃষ্টি কৌশলঃ আল্লাহতায়ালা নাসিকাকে মুখমণ্ডলের মধ্যভাগ থেকে উন্নত করেছেন এবং তার আকৃতিও সুন্দর করেছেন। নাসিকার মধ্যে ছিদ্র করে দিয়েছেন এবং তন্মধ্যে ঘ্রাণ গ্রহণের অনুভূতি শক্তি দিয়েছেন যেন তা' তদ্বারা খাদ্য-দ্রব্য ও অন্যান্য বস্তুর ঘ্রাণ গ্রহণ করতে পারে। তাছাড়া হৃদয়ের খোরাকীর জন্য শূন্য থেকে নিশ্বাস গ্রহণ করতে পারে এবং আভ্যন্তরীণ উষ্ণতা উদগার করে ফেলতে পারে। তিনি মুখ গহ্বর রেখেছেন এবং তন্মধ্যে কথা বলার রসনা স্থাপন করেছেন। এই রসনাই মনের মধ্যে যা' নিহিত থাকে তা' ব্যক্ত করে দেয়। তিনি মুখকে দন্তরাজির দ্বারা সুশোভিত করেছেন যেন তা' যা তার ন্যায় পেষণের কাজ করতে পারে। শক্ত বস্তু ভাঙ্গতে পারে, কর্তন করতে পারে। তিনি দাঁতের মূলকে শক্ত করে দিয়েছেন এবং তার অগ্রভাগকে ধারাল করে দিয়েছেন। বর্ণকে শ্বেতবর্ণ করেছেন। তাছাড়া তা' দুটো পংক্তিতে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং দন্তরাজির প্রান্তভাগ সমান করে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রেখেছেন। দেখে মনে হয় যেন তা' সুবিন্যস্ত মুক্তোরাজি।

        অধরের সৃষ্টি কৌশলঃ আল্লাহতায়ালা দুটো অধর সৃষ্টি করে তার বর্ণ ও আকৃতিকে সুন্দর করেছেন, যেন তা' মুখ গহ্বরকে ঢেকে রাখতে পারে এবং অনিষ্টকর বস্তু প্রবেশে বাধা দিতে পারে যেন বাক্যের শব্দ পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারে। তিনি স্বর বের করার জন্য কণ্ঠ প্রস্তুত করেছেন। রসনাকে নাড়া-চাড়া ও কর্তন করার শক্তি দিয়েছেন যেন তার স্বর বের হওয়া মাত্র বন্ধ করে দিতে পারে। তদ্বারা সে ইচ্ছামত স্বর হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারে। তারপর তিনি বিভিন্ন প্রকার আকৃতি দ্বারা কণ্ঠস্বরকে সৃষ্টি করেছেন। কখনও তা' ক্ষীণ হয়, কখনও উচ্চ হয়, কখনও কর্কশ, কখনও কোমল, কখনও দীর্ঘ, কখনও খাট, তজ্জন্য স্বরেরও পার্থক্য হয়। দুটো লোকের স্বর এক প্রকার নয়; বরং দুটো স্বরের মধ্যে পার্থক্য দৃষ্ট হয়। এমন কি শ্রোতা এই স্বরের সাহায্যে বিভিন্ন লোককে না দেখেও চিনতে পারে। তারপর আল্লাহতায়ালা মস্তককে কেশ দ্বারা সুশোভিত করেছেন এবং মুখমণ্ডলকে দাড়ি ও ভ্রূযুগল দ্বারা সুন্দর করেছেন। তিনি চক্ষুর পালককে সূক্ষ্ম কেশ দ্বারা সুশোভিত করেছেন। তিনি নয়নযুগলকে পাতা দ্বারা সুন্দর করেছেন। এর মধ্যে আবার অত্যাশ্চর্য বিষয় এই যে, তিনি পুরুষকে দাড়ি ও শুক্ষ দিয়েছেন কিন্তু নারীদেরকে তা' দেননি।

        আভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সৃষ্টি কৌশলঃ আল্লাহতায়ালা বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ন্যায় আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সৃষ্টি করেছেন এবং তার প্রত্যেকটিকে একেকটি বিশেষ কাজে ন্যস্ত করেছেন। পাকস্থলীকে খাদ্য হজম করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। যকৃতকে তা' রক্তে পরিণত করার ক্ষমতা দিয়েছেন। প্লীহা ও পিত্তকোষ যকৃতকে সাহায্য করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। রক্ত পিত্তকোষের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়াকালে তার অন্তর্গত ফেনবৎ অংশ থাকে, পিত্ত বলে তা' ছাকা হয়ে যায়। আর রক্তের দাগ প্লীহা নামক যন্ত্র চুষে ও ছেঁকে পরিষ্কার করে দেয়। রক্তের দাগ ছাঁকা না হলে তা' রক্তের সাথে প্রবাহিত হয়ে মস্তিষ্কে গেলে বায়ু রোগ হতে পারে। রক্ত মধ্যস্থ অতিরিক্ত জলীয় ভাগ যকৃত নামক যন্ত্র টেনে নিয়ে মূত্রাধারের দিকে প্রেরণ করে। শিরাগুলো যকৃতের খাদেম স্বরূপ কাজ করে রক্তকে শরীরের সর্বস্থলে চলাচল করে দেয়।

Post a Comment

0 Comments