হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কুরআনে পাক অধ্যয়ন করতঃ মনে করে যে, অন্যকে যা দেয়া হয়েছে তা' এতদপেক্ষা উত্তম। তবে সে ব্যক্তি আল্লাহ যে বস্তুকে বড় করেছেন, তাকে ছোট মনে করল। হুযুরে পাক (দঃ) আরও বলেছেন, রোজ কিয়ামতে ফিরেশতা বা অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তু কুরআন অপেক্ষা পদমর্যাদায় শ্রেষ্ঠ শাফায়াতকারী হবে না। হুযুরে পাক (দঃ) আরও বলেছেন, যদি কুরআন মজীদকে কোন চর্মের মধ্যে রাখা হয়, তবে জ্বলন্ত আগুন তা' স্পর্শ করবে না। হুযুরে পাক (দঃ) আরও এরশাদ করেছেনঃ "আফজালু ইবাদাতি উন্মাতী তিলাওয়াতুল কুরআনি" অর্থাৎ কুরআন তিলাওয়াত আমার উম্মতের সর্বোত্তম ইবাদাত। তিনি আরও বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সূরা ত্বোয়াহা ও সূরা ইয়াসীনকে মাখলুক সৃষ্টির হাজার বৎসর পূর্বে পড়েছিলেন-তা' ফিরেশতাগণ শ্রবণ করে বলেছিল, যাদের উপর এটা অবতীর্ণ হবে, তারা কি সৌভাগ্যবান। যারা এটা মুখস্ত করবে, কি সৌভাগ্যবান তারা। আর যার মুখ এটা প্রচার করবে, তার কি সৌভাগ্য। ইয়ুর (দঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কুরআন শিক্ষাকারী ও শিক্ষা দানকারীই হল সর্বোত্তম ব্যক্তি। তিনি বলেছেন, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন শিখাতে লিপ্ত থাকার কারণে আমার নিকট প্রার্থনা করার অবসর পাচ্ছে না, তাকে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী থেকেও উত্তম পুরস্কার দান করব।
হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, রোজ কিয়ামতে তিন ব্যক্তি মেশকের পাহাড়ের উপর অবস্থান করবে। তাদের কোন ভয়-ভীতির কারণ থাকবে না এবং তাদের কাছ থেকে কোন হিসেব নেয়া হবে না। এমন কি তারা মানুষের মধ্যেকার ব্যাপারাদি থেকেও ঝঞ্ঝাট মুক্ত থাকবে। এদের মধ্যে একজন হল, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরআন পাঠ করে। আর একজন হল, যে ব্যক্তি জাতির নেতা হয় এবং জাতি তার উপর খুশী থাকে। হুযুর (দঃ) বলেছেন, যে কুরআন পড়ে ও কুরআনকে ভালবাসে, সে আল্লাহর খাছ বান্দা। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, লোহায় যেরূপ মরিচা পড়ে, তদ্রূপ দিলেও মরিচা পড়ে থাকে। আরজ করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)। উক্ত মরিচা দূর করা যায় কোন বস্তু দ্বারা? তিনি জবাবে বললেন, কুরআন তিলাওয়াত এবং মৃত্যুর স্মরণ দ্বারা। তিনি আরও বলেছেনঃ গায়িকা বালিকার গান যেমন তার মালিক খুব মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে, কুরআন পাঠকে আল্লাহ তার চেয়ে বেশী মনোযোগ দিয়ে শুনে থাকেন।
কুরআনকে লটকিয়ে তুমি এই বিভ্রান্তিতে পড় না যে, এটাই যথেষ্ট। বলনা যে, আমাদের কাছে কুরআন রয়েছে। কুরআনের আধারকে আল্লাহ শাস্তি দান করবেন না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, যখন তোমরা জ্ঞানার্জনের আকাঙ্খা কর, তখন কুরআনের শিক্ষা অর্জন কর। কেননা এতে পূর্বাপর সকল জ্ঞানের সমন্বয় আছে। তিনি হুযুরে পাক (দঃ) এর বাণী উদ্ধৃত করে আরও বলেছেন, তোমরা কুরআন পাঠ কর। এর প্রত্যেক হরফের বিনিময়ে দশ দশ করে নেকী পাবে। আর শুনে নাও, আমি এ কথা বলছি না যে, "আলিফ লাম-মীম" একটি হরফ: বরং আলিফ এক অক্ষর, লাম এক অক্ষর এবং মীম আর এক অক্ষর। তিনি আরও বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যেন কেউ নিজের সম্বন্ধে কুরআন ব্যতীত প্রার্থনা না করে, যদি সে কুরআন ভালবাসে ও তার প্রতি খুশী থাকে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। আর যদি সে কুরআনকে অশ্রদ্ধা ও অভক্তি করে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অরক্ষা ও অভক্তি করে।
হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেন, কুরআনের প্রত্যেকটি আয়াত বেহেশতের একেকটি দরজা এবং তোমাদের গৃহের একেকটি বাতি স্বরূপ। তিনি আরও বলেছেন, যে কুরআন পাঠ করে, সে যেন তার দু' পার্শ্বে নবুয়তের দরজা উন্মুক্ত করল। তবে তার কাছে অহী আগমন করবে না। হযরত আবু হোরায়রাহ (রাঃ) বলেন, যে গৃহে কুরআন পাঠ করা হয় সে গৃহের লোকদের রুজীতে বরকত এবং স্বচ্ছলতা আসে। তাদের জন্য কল্যাণ দেখা দেয়, সে ঘরে ফিরেশতাদের সমাবেশ ঘটে। শয়তান ও তার দলবল সে ঘর থেকে দূর হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যে গৃহে আল্লাহর কুরআন পাঠ করা হয় না, সে গৃহবাসীদের রুজী সংকীর্ণ হয়ে যায়। তাদের উপর থেকে কল্যাণ এবং মঙ্গল হ্রাস পায়। ফিরেশতাগণ সে গৃহ থেকে বের হয়ে যায় এবং শয়তান ও তার দলবল সে ঘরে আস্তানা গাড়ে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) বলেন, আমি আল্লাহ তায়ালাকে স্বপ্লযোগে জিজ্ঞেস করলাম, হে মাসুদ। তোমার নৈকট্য লাভ করার জন্য সর্বোত্তম বস্তু কোনটি? আল্লাহ তায়ালা জবাব দিলেন, তা হল কুরআন। আমি আবার বললাম, কুরআন বুঝা বা না বুঝা উভয় অবস্থায়? আল্লাহ বললেন, হাঁ উভয় অবস্থায়। মুহাম্মদ ইবনে কা'ব (রহঃ) বলেন, যখন লোকজন রোজ কিয়ামতে আল্লাহর কুরআন পাঠ শুনবে, তখন তারা বলবে, এমন কুরআন পাঠ আমরা আর কখনও শুনি নি। ফোজায়ল ইবনে আইয়াজ (রহঃ) বলেন, হাফেজে কুরআন ব্যক্তির কোন হাজত নিয়ে খালীফা বা অন্য কারও দরবারে যাওয়া চাই না। কিন্তু লোকজন তাদের হাজত নিয়ে হাফেজদের কাছে যাবে। ফোজায়ল (রহঃ) আরও বলেছেন যে, হাফেজ হল ইসলামের পতাকাবাহী। কোন গল্প-গুজবকারী ব্যক্তির সাথে হাফেজের গল্পগুজব করা উচিত নয়। কুরআনের তাজীমের হক হল এটাই। কুরআন পাঠ করে তা' ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, যখন মানুষ কুরআন পাঠ করে, তখন ফিরেশতারা তার দু' চোখের মাঝে চুম্বন করে। আমর ইবনে মায়মুন (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাযের বাদে কুরআন খুলে একশ আয়াত পাঠ করে, আল্লাহ তাকে সারা জগদ্বাসীর আমলের পুণ্য দান করেন। বর্ণিত রয়েছে, খালেদ বিন ওকবাহ (রাঃ) হুযুরে পাক (দঃ) এর দরবারে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)। আপনি আমাকে কুরআন পাঠ করে শুনান। হুযুরে পাক (দঃ) তাঁর কাছে কুরআন পড়লেন, ইন্নাল্লাহা ইয়া মুরু বিল আ'দলি অল ইহসান" অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচার এবং উপকার করার নির্দেশ দান করেছেন। খালেদ বিন ওকবাহ (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)। আবার পড়ুন। হুযুরে পাক (দঃ) আবার পড়লেন। অতঃপর ওকবাহ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম এতে আছে অত্যধিক মাধুর্য্য, অত্যুত্তম স্বাদ এর নীচের দিক যেন স্নিগ্ধ বারি বর্ষণের ন্যায় এবং উর্দ্ধাংশ যেন বহুবিধ ফলের ন্যায়। নিশ্চয় এই কালাম মানুষের বাণী নয়।
হযরত হাসান বছরী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ, কুরআনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ধন আর নেই, আর কুরআনের অভাবের চেয়ে বড় অভাব নেই। ফোজায়ল আইয়াজ (রহঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি ফজরের নামাযে সূরা হাশরের শেষাংশ পাঠ করে, অতঃপর সেদিনই তার মৃত্যু হয়, তার উপর শহীদের মোহর মেরে দেয়া হয়। কাসেম বিন আবদুর রহমান বলেছেন, আমি জনৈক আবেদের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে এমন কেহ আছে কি, যার সাথে আপনার বন্ধুত্ব আছে। আবেদ কুরআনে পাকের দিকে হাত বাড়িয়ে তা' নিজের ক্রোড়ে ধরে বললেন, এই কুরআন রয়েছে। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, তিনটি জিনিস স্মরণ শক্তি বাড়ায় এবং শ্লেষ্মা দূর করে। তার একটি হল, মেসওয়াক, দ্বিতীয়টি রোযা এবং তৃতীয়টি কুরআন তিলাওয়াত।
0 Comments