সাধারণ মুসলমানের হক মৃত ব্যক্তির জানাযায় যোগদান করা

        (২৪) মৃত ব্যক্তির জানাযায় যোগদান করবে। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মৃতের খাটের অনুসরণ করে, সে এক কিরাত ছওয়াব পাবে। আর যদি সে মৃতের দাফন পর্যন্ত অপেক্ষা করে, সে দু' কিরাত ছওয়াব পাবে। হুযুর (দঃ) বলেছেন, এক কিরাত হল ওহুদ পর্বত তুল্য। যখন হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছিলেন, তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) তা' শুনে বললেন, তা হলে আমরা তো এ পর্যন্ত অসংখ্য কিরাত লাভ করেছি।

        জানাযার খাটের অনুসরণ করার উদ্দেশ্য হল মুসলমানের হক আদায় করা ও উপদেশ গ্রহণ করা। হযরত মকহুল দামেশকী (রহঃ) যখন কোন মৃতদেহ দেখতেন, তিনি বলতেন, আমরাও আসতেছি এবং আমাদের উপদেশ পূর্ণ হয়েছে। একদা হযরত মালেক বিন দীনার (রহঃ) তাঁর ভ্রাতার মৃতদেহ নিয়ে বের হলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন, আল্লাহর কসম, আমার নেত্রদ্বয় শান্ত হবে না যে পর্যন্ত না তোমার কি অবস্থা হয় তা' আমি জানতে পারি। অবশ্য আমার জীবিতকাল পর্যন্ত আমি তা' জানতে পারব না সে কথা আমি জানি। হযরত আ'মাশ (রাঃ) বলেছেন, আমরা জানাযায় উপস্থিত থাকতাম। কার জন্য আমরা শোক করতাম তা' আমরা জানতাম না। সবাই শোক করতাম। হযরত ইব্রাহীম জাইয়াত (রহঃ) একদা মৃতের প্রতি একদল দোয়াকারী লোকের প্রতি দৃষ্টিপাত করে বললেন, যদি তোমরা তোমাদের নিজের জন্য দোয়া করতে, তবে তা' উত্তম হত। মৃত ব্যক্তি তিনটি ভয়ংকর বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। সে মৃত্যুর ফিরেশতার সম্মুখীন হয়ে তাকে দেখেছে। মৃত্যুর বিপদ সে উপভোগ করেছে এবং অন্তিম ভয় ভীতি থেকে সে মুক্তি পেয়েছে। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, তিনটি বস্তু মৃত দেহের অনুসরণ করে। তার দুটি ফিরে আসে এবং একটি ফিরে আসে না। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন এবং ধন-সম্পদ ফিরে আসে কিন্তু তার আমল ফিরে আসে না।

        (২৫) মৃত লোকের কবর  জিয়ারত করবে। এর উদ্দেশ্য মৃত ব্যক্তিকে দোয়া করা, উপদেশ লাভ করা এবং অন্তরকে কোমল করা। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আমি কবরের মত এত ভীষণ দৃশ্য আর দেখি নি। তখরত ওমর (রাঃ) বলেন, আথবা একদা হুযুরে পাক (দঃ)এর সাথে বের হলাম। তিনি এক কবরস্থানে এসে একটি কবরের পার্শ্বে বসলেন। আমি সর্বাপেক্ষা তাঁর অধিক নিকটবর্তী ছিলাম। তিনি ক্রন্দন শুরু করলেন। আমরাও তাঁর সাথে ক্রন্দন শুরু করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা ক্রন্দন করছ কেন? আমি বললাম, আপনার ক্রন্দন দেখে জমেরাও ক্রন্দন করছি। তখন তিনি বললেন, এ কবর ওয়াহাবের কন্যা আমার জননী আমেনার। আমি আমার প্রভুর নিকট হতে এর যিয়ারাত করবার অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানালেন। তবে মাতার প্রতি সন্তানের স্বাভাবিক মমতা এই মুহূর্তে আমার মনে জেগে উঠেছে। হযরত ওমর (রাঃ) একদ্য একটি কবরের কাছে গিয়ে কেঁদে কেঁদে তাঁর দাড়ি ভিজিয়ে ফেললেন এবং বলতে লাগলেন, আমি হুযুরে পাক (দঃ) কে বলতে শুনেছি যে, "ইন্নাল কাবরা আউয়্যালু মানযিলিম মিন্ মানাযিলিল আখিরাহ" অর্থাৎ কবর আখেরাতের সোপানসমূহের প্রথম সোপান। যদি কবরবাসী এখানে মুক্তি পায় তবে এর পর যা আসবে তা' সহজ হবে। আর যদি এই মনয়িলে মুক্তি না পাওয়া যায়, তবে এর পরে যা আসবে সেগুলোও কঠোর হবে। হযরত মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, কবর মানুষের সাথে প্রথম যে কথা বলবে, তা' এরূপ, আমি কীট পোকার গৃহ নির্জন আবাস, অন্ধকার কক্ষ। তোমার জন্য এ রূপ নিয়েই আমি প্রস্তুত হয়ে আছি। তুমি আমার জন্য কি প্রস্তুত করে এনেছ? হযরত আবু দারদা (রাঃ) কবরস্থানে গিয়ে কবরের মধ্যে ঢুকে বসতেন। তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলতেন, আমি এমন লোকের সাথে বসতে চাই, যারা আমাকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যদি আমি তাদের নিকট থেকে উঠে যাই তারা আমার নিন্দা করে না। হযরত হাতেম আছাম (রহঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন কবরের নিকট দিয়ে হেঁটে যাওয়ার কালে নিজের জন্য চিন্তা না করে ও কবরবাসীর জন্য দোয়া না করে, সে নিজের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করে।

        হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, এমন কোন রাত নেই, যে রাতে একজন ঘোষণাকারী এরূপ ঘোষণা না করে যে, হে কবরবাসীগণ! তোমরা কাকে ঈর্ষা কর? তারা বলে যে, আমরা মসজিদের অধিবাসীদেরকে ঈর্ষা করি। কেননা তারা রোযা রাখে, আমরা রোযা রাখি না। তারা নামায পড়ে, আমরা নামায পড়ি না। তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। আমরা আল্লাহকে স্মরণ করি না। হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কবরকে অধিক স্মরণ করে, সে বেহেশতের বাগিচাসমূহের মধ্যে একটি গহ্বরেরও অধিকারী হবে। হযরত রাবী' বিন খায়ছাম (রহঃ) তাহার বাসগৃহের এক কোনায় একটি কবর খনন করে নিয়েছিলেন। যখনই তিনি তাঁর মনকে খুব কঠিন দেখতে পেতেন, অমনি ঐ কবরের মধ্যে গিয়ে শায়িত হতেন এবং বেশ কিছু সময় তার মধ্যে অবস্থান করতেন আর নিম্নোক্ত আয়াত শরীফ মনে মনে পাঠ করতেন। "রাব্বিরজিউনা লাআল্লী আ'মালু ছালিহান ফীমা তারাকতু" অর্থাৎ হে প্রভু! আমাকে পুনরবার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দাও, যেন যে সৎ কাজ পূর্বে করে আসতে পারি নি তা' এবার করে আসতে পারি। তারপর তিনি আবার মনে মনে বলতেন, হে রাবী'। আল্লাহ সুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। পুনরায় এখান থেকে বিদায় হওয়ার পূর্বে এখন সৎকাজ করে নাও।

         হযরত মাইমুন বিন মেহরান (রাঃ) বলেছেন, একদা আমি খলীফা ওমর ইবনে আবদুল আযীয সহ এক কবরস্থানে গমন করলাম। তিনি কবরের দিকে দৃষ্টিপাত করে কেঁদে দিলেন এবং বললেন, যে মাইমুন। এসকল কবর আমার পূর্বপুরুষ বনি উমাইয়াদের। তারা দুনিয়ার সুধয়ান্সদ্যের একচ্ছত্র অধিকারী ছিলেন। এখন দেখ তারা কে কি ভাবে পড়ে আছে? তাদের অঙ্গের সেই সুসজ্জিত বসন-ভূষণ এখন আর নেই। কীট-পতঙ্গ তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দংশন ও ভক্ষণ করছে। তারপর তিনি ক্রন্দন করে উঠে বললেন, আল্লাহর কসম যারা এ কবরে আছে তাদের চেয়ে আমি আর কাউকে এত অধিক পার্থিব সুখ-শান্তি ও নিয়ামতসমূহ ভোগ করতে দেখি নি এবং আল্লাহতায়ালার শাস্তি থেকে এত বেশী নিশ্চিন্ত থাকতেও দেখি নি।

        মৃত ও জীবিত লোকদেরকে সান্ত্বনা ও সহানুভূতি প্রদর্শনের নিয়মঃ দুঃখ প্রকাশ করা, অল্প কথা বলা, হাসি ত্যাগ করা, মৃত্যুর চিন্তা করা, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকা, মৃতদেহের অতি নিকটবর্তী হয়ে তার বহনকৃত খাটের সাথে পদব্রজে চলা, মৃতদেহের সত্বর কাফন-দাফন করা ইত্যাদি কাজগুলো সুন্নত। এ নিয়ম-কানুনগুলো মানুষের সাথে সংসর্গের নিয়ম কানুনের অনুরূপ। অর্থাৎ জীবিত হোক বা মৃত ব্লোক কাউকে ঘৃণা করবে না। তাতে তোমার সর্বনাশ হতে পারে। কেননা মৃত ব্যক্তি তোমা থেকে বেশী নেককার হতে পারে। সে ফাসেক হলেও যদি তার অন্তিম সময় সুন্দর হয় এবং তোমার অন্তিম সময় তার ফেসকী কার্যের মত হয়, তবে তো সে তোমা হতে অনেক উত্তম। ফাসেক এবং গুনাহগারদের পার্থিব জাঁকজমক দেখে তাদেরকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখ না। কেননা দুনিয়া এবং দুনিয়ার সব কিছুই আল্লাহর নিকট অতি ক্ষুদ্র। যখনই তুমি কোন দুনিয়াদার ব‍্যক্তিকে বড় বলে মনে করবে, তখনই এ দুনিয়া তোমার নিকট খুব বড় ও মূল্যবান বস্তুরূপে বিবেচিত হবে। আর তখনই তুমি আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে পড়ে যাবে। দুনিয়াদারদের ঐশ্বর্যের বিনিময়ে তুমি তোমার দ্বীনকে নষ্ট করো না। কেননা তাতে তুমি তাদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত হেয় হয়ে যাবে এবং তুমি দুনিয়ার সুখ-সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে। যদিও বা কিছু অর্জন করতে পার তবে তা' হবে খুব মূল্যবান দ্রব্যের বিনিময়ে সামান্য মূল্যের কোন দ্রব্য অর্জন। তুমি গুনাহগারদের সাথে প্রকাশ্য ভাবে শত্রুতা সৃষ্টি করতে যেও না। কেননা এভাবে তোমার শত্রুতা প্রকাশ হওয়ার ফলে তোমার দ্বীন ও দুনিয়া উভয় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হ। তবে এ কথা সত্য যে, তুমি তাদেরকে কোন গর্হিত বা জঘন্য কার্যে লিপ্ত দেখলে তাদের প্রতি তোমার ঘৃণা পোষণ করতে হবে। তবে তাদেরকে কৃপার দৃষ্টিতে দেখতে হবে। হিংসার দৃষ্টিতে নয়। কেননা এ প্রকাশ্য বিষয় যে, তারা তাদের গুনাহর কারণে আল্লাহর ক্রোধের শিকার হয়ে আছে। তিনি তাদেরকে সে জন্য শাস্তি দান করবেন। এ শাস্তির জন্য তাদের জাহান্নামই যথেষ্ট। জাহান্নামেই তারা প্রবেশ করবে; সুতরাং এক্ষেত্রে তাদেরকে তোমার হিংসা করার কোন প্রয়োজনই করে না। গুনাহগার ফাসেকগণ তোমাকে ভালবাসলে সে ভালবাসাকে তুমি কোনরূপ স্বস্তিকর এবং তৃপ্তিকর মনে করবে না। তোমার মুখের উপর তারা তোমাকে প্রশংসা করলে এবং তোমাকে তারা কোন সুসংবাদ দিলে তাতে তুমি এখটুপ্ত আরাম বা তৃপ্তি বোধ করো না। কেননা যদি তুমি ঐ প্রশংসা এবং সুসংবাদ দেয়ার কারণ তালাস কর। তাহলে দেখবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই তার পিছনে বিশেষ কারণ রয়েছে। তুমি কখনও তোমার নিজের অবস্থা তাদের উপর ন্যস্ত করতে যেও না। কেননা তাতে হয়ত তোমার বড় আল্লাহতায়ালাও তোমাকে তার দায়িত্বের মধ্য থেকে বের করে দিতে পারেন। অরচ তারা তোমার নিকট প্রকাশ্যে যেরূপ, গোপনেও যে তারা তন্ত্রস এরূপ বিশ্বাস রেখে, তুমি নিজের বিপদই ডেকে আনবে। তারা তোমার উপস্থিতিতে তোমার সাথে যেরূপ অচেরণ প্রদর্শন করে, তোমার অনুপস্থিতিতেও যে তারা তোমার ব্যাপারে তদ্রূপ আচরণ করবে তুমি কিছুতেই এরূপ আশা করবে না। কেননা এরূপ আশা করা মিথ্যা প্রমাণিত হবে। তাদের দখলে যা আছে, তুমি তার লোভ করো না, তাতে শীঘ্রই তোমাকে অপমানিত হতে হবে এবং তোমার উদ্দেশ্যও সফল হবে না। আর যদি তোমার তাতে প্রয়োজন না থাকে, তবে তুমি অহংকার করে অলগ্য তাদের প্রতি দোষারোপও করতে যেও না। যদি নিজের অভাবহীনতার বিষয় প্রকাশ করে প্রচ্ছন্নভাবে তোমার অহঙ্কার জাহির কর তবে নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমাকে তার শান্তি স্বরূপ তাদের নিকট সমর্পণ করবেন। যখন তুমি তোমার কোন মুসলমান ভাতার নিকট তোমার প্রয়োজনে কিছু যাজ্ঞা কর এবং সে তা' পূর্ণ করে, তখন সে তোমার উপকারী ভাতা, আর যদি সে 'তা' না করে, তাকে তিরস্কার করো না। কেননা তাতে সে তোমার শত্রু হবে এবং সে শত্রুতা দীর্ঘদিন স্থায়ী থাকবে। তোমাকে বহুদিন ধরে তার অসন্তোষের শিকার হয়ে থাকতে হবে। যদি তুমি জান যে কোন ব্যক্তি তোমার উপদেশের প্রতি আমল করবে না বরং তার বিরোধিতা করবে তবে তাকে উপদেশ দেয়ার জন্য ব্যস্ত হবে না। অবশ্য তাকে শুধু দু' একটি দৃষ্টান্তমূলক উপদেশ দেয়া যেতে পারে, যা' সাধারণতঃ সর্বসাধারণের প্রতি দেয়া হয়ে থাকে। বিশেষভাবে তাকে লক্ষ্য করে কোন উপদেশ দেয়। উচিত হবে না। যদি দেখ, লোকগণ তোমাকে সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখে তাহলে আল্লাহতায়ালা যে তাদের মন তোমার প্রতি ধাবিত করছেন এজন্য তুমি আল্লাহতায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। যদি তুমি তাদের কবজায় আবদ্ধ হয়ে পড় তবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। তাদের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিকট পানাহ চাইবে। নিজে কারও থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ব্যস্ত হবে না। কেননা তাতে তোমার ক্ষতি ও অনিষ্টই বৃদ্ধি পেতে পারে। তুমি যদি কারও কাছে এরূপ বল যে, আমাকে তুমি সম্মান প্রদর্শন করলে না। তাহলে আল্লাহ তাদের হৃদয় তোমার প্রতি আরও বেশী বিদ্রূপ করে তুলবেন। কেননা আল্লাহতায়ালাই মানুষের মনে মানুষের প্রতি একদিকে যেমন ভালবাসার সৃষ্টি করেন, অন্যদিকে ঘৃণা এবং বিদ্বেষের বীজও উৎপন্ন করেন। মানুষের মধ্যে তুমি এমন ভাবে অবস্থান করবে যে তুমি যেন তাদের প্রত্যেকের হক এবং দাবী দাওয়া সম্পর্কে অত্যন্ত সজাগ ও সতর্ক। তুমি যাদের নিকট থেকে যত রকমের কথাবার্তা শোননা কেন সম্ভব হলে সর্বক্ষেত্রেই নীরবতা অবলম্বন করবে। অধিক লোকের সংসর্গ ত্যাগ করে চলবে। কেননা তাদের মধ্যে এমন বহুলোকই রয়েছে যারা তোমার সামান্য দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করবে না। তোমার এতটুকু পদস্খলনকে তারা এমনিই ছেড়ে দেবে না: তোমার গোপনীয় বিষয়কে গোপন করবে না। তোমার ছোটখাটো যে কোন ব্যাপার তন্ন তন্ন করে হিসাদ করবে। তারা তোমার প্রতি হিংসা পোষণ করবে এবং তোমার থেকে প্রতিশোধ গ্রহদে অশ্চাদপদ হবে না। তোমার প্রতি তারা সুবিচার করবে না। এতটুকু ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোছে দেখবে না। পরচর্চা এবং চোগলখোরী দ্বারা তোমার ও তোমার ভাইদের মধ্যে বিবাদ বাঁধিয়ে দেবে। এ সমস্ত কারণেই তোমার তাদের সঙ্গে সংসর্গ বর্জন করে চলা উচিত। যখন তার তোমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে তাদের বাহ্যিক আচরণ এবং ভাবভঙ্গী দ্বারা তা' প্রকাশ পায়। কিছু যখন তারা অসন্তুষ্ট থাকে, তাদের হৃদয় হিংসা ও বিদ্বেষে পরিপূর্ণ থাকে তখন তাদের অবস্থা অনুমান করা বড়ই কঠিন। কিন্তু এ সময় তোমার তাদের সাহচর্য অবলম্বন করা তোমার জন্য মোটেই নিরাপদ নয়। তোমার উচিত তাদের খোশামোদ ও তোষামোদে প্রতারিত না হওয়া। তারা প্রকাশ্যে তোমার সাথে যতই মোলায়েম ব্যবহার করুক তাদের অন্তর বাঘ্র স্বরূপ। তারা উপস্থিতিতে তোমার সাথে সামান্য কথা কাটাকাটি করবে। কিন্তু পিছনে তোমার প্রতি বিরূপ কটাক্ষপাত করতে এতটুকু মাত্র দ্বিধা করবে না। তোমার ছোটখাটো দোষত্রুটিগুলো একটি একটি করে সঞ্চয় করে রাখবে। যেন প্রয়োজনের সময় একসাথে সবগুলো তোমার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য মজলিসে প্রকাশ করতে পারে। তুমি যাদের সাথে কখনও সংসর্গ কর নি তাদের বন্ধুত্বে বিশ্বাস করো না। সংসর্গের অর্থ হল, কিছু সময় একই স্থানে তার সাথে বসবাস করা। তার একাকী বাস করা কালে, তার শক্তি ও সামর্থ্যের আধিক্যের কালে, তার দুর্বলতার সময়ে অভাব-অভিযোগের সময়ে মোট কথা অনুকূল প্রতিকূল প্রত্যেক অবস্থায় তার সঙ্গে থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করা অথবা নিজের বিপদ-আপদে লিপ্ত হয়ে তার নিকট সাহায্যপ্রার্থী হওয়া। এসব ব্যাপারে যদি তাকে উত্তম দেখতে পাও, তবে সে যদি তোমার বয়োজ্যেষ্ঠ হয় সেজন্য তাকে তোমার পিতৃতুল্য মনে করবে। যদি সে বয়োকনিষ্ঠ হয় তবে তাকে পুত্রতুল্য জানবে। আর যদি সে সমবয়সী হয় তবে তাকে ভ্রাতৃসদৃশ মনে করবে। মোটকথা মানুষের সাথে ওঠাবসা ও মেলামেশার মাধ্যমে মানুষের চরিত্র পরীক্ষা করে কে বন্ধুত্বের উপযুক্ত এবং কে অনুপযুক্ত তা' নির্ণয় করবে।

Post a Comment

0 Comments