ওজুর ফরজগুলির বিবরণ

        প্রঃ     ওজুর ফরজ কি কি?

        উঃ     ওজুতে চারিটি ফরজ আছে-

    প্রথম একবার এরূপ ভাবে মুখমণ্ডল ধৌত করা যে, অন্ততঃ দুই বিন্দু পানি বহিয়া পড়ে, ফয়েজ গ্রন্থে ইহাকে সমধিক সহিহ মত বলা হইয়াছে। মুখ মণ্ডলের সীমা উপরের দিকে ললাটের উপরিভাগ (অথবা কেশ উৎপত্তির স্থল), নীচের দিকে থুতনির নিম্ন ভাগ, অন্য দিকে এক হইতে অন্য কর্ণমূল পর্যন্ত। শামি, ১/৯৯/১০০।

    প্রঃ     মুখমণ্ডলের অন্যান্য মছলা কি কি?

    উঃ     চক্ষু কোণ ধৌত করা ফরজ, যদি চক্ষুর পীড়াতে চক্ষে ময়লা জমিয়া যায়, এক্ষেত্রে চক্ষু বন্ধ করিলে, যতটুকু ময়লা প্রকাশ থাকে, উহার নিম্নভাগে পাণি পৌঁছান ফরজ, স্বাভাবিক মুখ বন্ধ থাকিলে, যে পরিমাণ ঠোঁট প্রকাশ থাকে সেই পরিমাণ ছহিহ মতে ধৌত করা ফরজ। দাড়ি ও কর্ণের মধ্যে যে অংশটুকু পরিষ্কার দেখা যায়, তাহাও ধৌত করা ফরজ। চক্ষুদ্বয়ের মধ্যভাগ, নাসিকা ও মুখের মধ্যভাগ ধৌত করা ফরজ নহে। -শামি, ১/১০০/১০১।

        থুতনির নিম্নভাগের মর্ম এই যে, যে হাড়খানিতে নিম্ন দপ্তগুলি উৎপন্ন হয়, উক্ত হাড়ের নিম্নভাগ পর্য্যন্ত ধৌত করা ফরজ। শামি, ১/৯৯।

        যে দাড়ি মুখমণ্ডলের সীমার মধ্যে পড়ে, যথা, গণ্ড ও থুতনির উপরিস্থ দাড়ি, যদি উহা ঘন হয়, তবে তৎসমস্ত ধৌত করা ফরজ, ইহাই ফৎওয়া গ্রাহ্য ছহিহ মত, তদ্ব্যতীত অন্যান্য রেওয়াএতগুলি অগ্রাহ্য। ইহা ছেরাজোল-অহ্যাজ, জহিরিয়া বাদায়ে, ও ফৎহোল-কদির গ্রন্থে আছে। আর যদি উক্ত দাড়ি এরূপ অল্প হয় যে, উহার নিম্নস্থ চর্ম দেখা যায়, তবে উক্ত চর্ম ধৌত করা ফরজ হইবে। আর যে দাড়ি মুখ মণ্ডলের সীমার বাহিরে পড়ে (ঝুলিয়া থাকে), উহা ধৌত কিম্বা মছাহ করা ফরজ নহে, বরং উহা মছাহ করা ছুন্নত হইবে। বাহরোররায়েক ১/১৬/ শমি, ১/১০৪।

        পাঠক, মনে রাখিবেন, মৌলবি নইমদ্দীন মরহুম মগফুর সাহেব জোব্দাতল-মাসায়েলের প্রথম খণ্ডে (৩ পৃষ্ঠায়) লিখিয়াছেন যে, ঘন দাড়ির চতুর্থাংশ মছাহ করা ফরজ, উহা ফৎওয়া গ্রাহ্য মতের বিপরীত, কাজেই উহা অগ্রাহ্য। এইজন্য তিনি স্বয়ং উক্ত কেতাবের ৪ পৃষ্ঠায় ঘনদাড়ির ধৌত করা ফরজ হওয়া ফৎওয়া গ্রাহ্য মত বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন।

         যে দাড়ি থুতনির কিম্বা চোয়ালের নীচে উৎপন্ন হইয়াছে, উহা মুখ মণ্ডলের সীমার বাহিরে পড়ে, উহা ধৌত করা ফরজ নহে- শামি; ১/১০৪।

        যদি নীচের ঠোঁটের নিম্নস্থ দাড়ি (বাচ্চা দাড়ি), ভ্রুযুগল ও গোঁফ এরূপ হয় যে; তৎসমুদয়ের নিম্নস্থ চৰ্ম্ম দেখা যায়, তবে উক্ত চর্মই যৌত করা ফরজ হইবে, আর যদি এরূপ ঘন হয় যে নিম্নস্থ চৰ্ম্ম দেখা না যায়; তবে উক্ত দাড়ি ভ্রুযুগল ও গোঁফ ধৌত করা ফরজ হইবে। -শামি, ১/১০১/১০৪। বাহরোর রায়েক ১/১১।

        শামিতে আছে, যদি গোঁফ উভয় ঠোঁটকে ঢাকিয়া ফেলে, তবে উহা খেলাল করা ওয়াজেব।

         ওজু করিয়া মস্তক, দাড়ি, গোঁফ ও সুযুগল মুণ্ডন করিলে, নখ কাটিলে ও চামড়া ছিঁড়িয়া ফেলিলে, দ্বিতীয়বার ওজু করিতে হইবে না এবং উক্ত স্থানগুলি ধোত করিতে হইবে না।

        যদি ওজুর স্থানে ফোড়া হইয়া থাকে, আর উহার উপরিস্থ পাতলা চামড়ার উপর পানি পৌঁছান হইয়া থাকে, তৎপরে উক্ত পাতলা চামড়া, ছিড়িয়া ফেলিয়া দেওয়া হয়, তবে উহাতে বেদনা অনুভূত হউক, আর নাই হউক, ফৎওয়া গ্রাহ্য মতে উক্ত স্থান ধৌত করা ফরজ হইবে না। শামি, ১/১০৫।

দ্বিতীয় কনুই অবধি দুই হস্ত একবার  ধৌত করা ফরজ।

প্রঃ।     হস্তের অন্যান্য মছলা কি কি?

উঃ।     নখের নিম্নদেশটী ওজুর স্থান যদি তথায় আটা লাগিয়া থাকে, তবে উহার নিম্নদেশে পানি পৌঁছান ওয়াজেব, ইহা খোলাছা ও অধিকাংশ বিশ্বাসযোগ্য কেতাবে আছে।

        শেখ এমাম আবু নছর বলিয়াছেন, যদি নখ লম্বা হইয়া অঙ্গুলির অগ্রভাগকে ঢাকিয়া ফেলে, তবে উহার নিম্নদেশে পানি পৌঁছান ওয়াজেব, আর যদি নখ ছোট হয়, তবে উক্ত স্থানে পানি পৌঁছান ওয়াজেব নহে। ইহা মুহিত কেতাবে আছে। যদি নখ লম্বা হইয়া অঙ্গুলির অগ্রভাগ অতিক্রম করে, তবে সকলের মতে উক্ত নখ ধৌত করা ওয়াজেব, ইহা মৎহোল- কদিরে আছে। আলমগিরি, ১/৪।

        যদি নখের মূলদেশে শুষ্ক মৃত্তিকা লাগিয়া যায় এবং ধুইবার স্থানের এক সূচ্যাগ্র শুষ্ক থাকিয়া যায়, তবে ওজু জায়েজ হইবে না। যদি লম্বা নখে ময়লা, মৃত্তিকা কিম্বা আটা লাগিয়া যায়, অথবা স্ত্রীলোক (অঙ্গ লীতে) মেহদী লাগাইয়া থাকে, তবে ফৎওয়া গ্রাহ্য মতে ওজু জায়েজ হইবে। আলমগিরি, ১/৪। শামি, ১/১৩।

        পাঠক মনে রাখিবেন, নখের মধ্যে মৃত্তিকা, কদম, মেহদী, ময়লা, রং, দুধ থাকিলে ফৎওয়া গ্রাহ্য এবং ছহিহ মতে ওজু জায়েজ হইবে, কিন্তু নখে আটা থাকিলে, ওজু জায়েজ হইবে কিনা, ইহাতে মতভেদ হইয়াছে।

         বাহরোর-রায়েকের ১৩ পৃষ্ঠায় উহা জায়েজ হওয়ার প্রতি ফৎওয়া দেওয়া হইয়াছে।

        শামির ১/১৬০ পৃষ্ঠায় নহরোল ফায়েক হইতে এই মতের ফৎওয়া গ্রাহ্য হওয়ার কথা উল্লেখ করা হইয়াছে।

        ফৎয়েল কদিরের ৪ পৃষ্ঠায়, জামে ছগির হইতে এই মতের মহিহ ও ফাৎওয়া গ্রাহ্য হওয়ার কথা উল্লেখ করা হইয়াছে।

        ফাতওয়ায় আলমগিরির ৪ পৃষ্ঠায়, ফাতাওয়ায় মা-অরাউন্নহর ও জাহেদি হইতে উহা জায়েজ হওয়ার উল্লেখ করা হইয়াছে।

        দোরোল-মোখতারের ১১ পৃষ্ঠায়, আবুল মাকারেমের ১২ পৃষ্ঠায়, বরজন্দির ১৪ পৃষ্ঠায়, হাশিয়ায় শারাম্বালালির ১১ পৃষ্ঠায়, মারাকিল-ফালাহ কেতাবের হাশিয়া তাহতাবির ৩৬ পৃষ্ঠা, মনইয়ার ১৩ পৃষ্ঠায়, জওহেরা কেতাবের ৩ পৃষ্ঠায়, কবিরির ৪৬ পৃষ্ঠায়, মোলতাকাল-আবহোরের ২১ পৃষ্ঠায় ও মারাকিল ফালাহ কেতাবের ৩৬ পৃষ্ঠায় আছে যে, আটা, মোম, চর্বি নখে বা শরীরের কোন স্থানে লাগিয়া থাকিলে তৎসমস্তের নীচে পানি পৌঁছান ওয়াজেব, পানি না পৌঁছাইলে ওজু জায়েজ হইবে না। এইরূপ চক্ষুকোণে ময়লা থাকিলে, শরীরে মৎস্যের আঁশ ও শুষ্ক চৰ্ব্বিত রুটির অংশ লাগিয়া থাকিলে, উহার নীচে পানি না পৌঁছাইলে ওজু জায়েজ হইবে না। মশকও মক্ষিকার বিষ্ঠা লাগিয়া থাকিলে ওজু জায়েজ হইবে। আলমগিরির ৪ পৃষ্ঠায় আছে, খেজাব পরিস্ফুট হওয়া শুকাইয়া গেলে ওজু, গোসল জায়েজ হইবে না।

        মূল কথা নখে আটা লাগিয়া থাকিলে, ফাৎওয়া গ্রাহ্য মতে ওজু জায়েজ হইলেও এহতিয়াতের জন্য আটার নীচে পানি পৌঁছাইয়া লইবে, বরং মৃত্তিকা ইত্যাদির নীচে পানি পৌঁছাইয়া লইবে। অধিকাংশ বিদ্বানের মত গ্রহণ করিয়া, আটার নীচে পানি পৌঁছান ওয়াজেব বলাই শ্রেয়ঃ।

        যদি অঙ্গুলীতে কসা (সঙ্কীর্ণ) আংটা থাকে, তবে উহা খুলিয়া কিম্বা নাড়াইয়া উহার নিম্নদেশে পানি পৌঁছান ফরজ, আর যদি ঢিলা আংটি থাকে তবে উহা নাড়ান ছুন্নত, ইহা খোলাছা কেতাবে আছে, আর মুহিত কেতাবে ইহাকে জাহেরে-রেওয়াএত (ফৎওয়া গ্রাহ্যমত) বলা হইয়াছে। আলমগিরি, ১/৫ পৃষ্ঠা।

তৃতীয় গাঁইট সহ দুই পা একবার ধৌত করা ফরজ।

প্রঃ।     পা ধৌত করার অন্যান্য মছলা কি কি?

উঃ।        যদি কাহারও পা ফাটিয়া গিয়া থাকে, তজ্জন্য সে উহাতে চর্বি দিয়া থাকে এবং দুই পা যৌত করিয়া থাকে, কিন্তু উহার মধ্যদেশে পানি না পৌঁছাইয়া থাকে, তবে এক্ষেত্রে দেখিতে হইবে, যদি উহার মধ্যদেশে পানি পৌঁছাইলে ক্ষতিকর হয়, তবে ওজু জায়েজ হইবে, আর যদি ক্ষতিকর না হয়, তবে ওজু জায়েজ হইবে না, ইহা মুহিত কেতাবে আছে। আর যদি উক্ত স্থানের চামড়া সেলাই করা হইয়া থাকে, তবে উপরোক্ত উভয় অবস্থায় ওজু জায়েজ হইবে। যদি কাহারও ওজুর স্থান ফাটিয়া গিয়া জখম হইয়া থাকে, এক্ষেত্রে (উহা ধৌত করিতে সক্ষম হইলে, ধৌত করিবে), আর যদি ধৌত করিতে অক্ষম হয়, তবে উক্ত স্থানে পানি ঢালিয়া দেওয়া ওয়াজেব হইবে, আর যদি পানি ঢালিয়া দিতে অক্ষম হয়, তবে মাছাহ করিতে হইবে, আর যদি মাছাহ করিতে অক্ষম হয়, তবে উহার চারি পার্শ্বে ধৌত করিতে হইবে, ইহা জখিরা কেতাবে আছে।

        যদি কাহারও পা এরূপ অবসন্ন হইয়া থাকে যে, উহা কাটিয়া ফেলিলেও বেদনা অনুভূত না হয়, তবে উক্ত পা ধৌত করাও ফরজ হইবে, ইহা তাতারখানিয়া কেতাবে আছে।-আলমগিরি, ১/৫।

    চতুর্থ মস্তকের এক চতুর্থাংশ মাছাহ করা ফরজ।

        মছাহ শব্দের অর্থ ভিজা হস্ত কোন অঙ্গে ফেরাইয়া বা টানিয়া লওয়া। মস্তকের কি পরিমাণ মছাহ করা ফরজ, ইহাতে মতভেদ হইয়াছে কিন্তু উহার এক চতুর্থাংশের মছাহ ফরজ হওয়ার মতটি বিশ্বাসযোগ্য মত, ইহা 'মতন' গ্রন্থগুলিতে উল্লিখিত হইয়াছে, ফৎহোল-কদির, নহরোল- ফায়েক ও দোর্রোল-মোখতার ইত্যাদি কেতাবে সমর্থন করা হইয়াছে। বাহঃ ১/১৪। শামি ১/১০২।

প্রঃ।     মস্তক মছাহ করার সম্বন্ধীয় অন্যান্য মছলা কি কি?

উঃ।     যদি মেঘের পানি পড়িয়া মস্তকের এক চতুর্থাংশ ভিজিয়া যায়, কিম্বা কেউ মস্তককে কোন পাত্রে ডুবাইয়া দেয়, তবে মাছাহ ফরজ আদায় হইয়া যাইবে। -দোর্রোল-মোখতার।

        যদি কেহ বরফ দ্বারা মস্তক মছাহ করে, মছাহ জায়েজ হইবে, ইহা ফাতাওয়ার বোরহানিয়াতে আছে।

        টুপি ও পাগড়ীর উপর মছাহত্র করা জায়েজ নহে, ইহা খোলাছা কেতাবে আছে। যাহার মস্তকে লম্বা কেশ আছে, যদি সে ব্যক্তি ললাটের কিম্বা ঘাড়ের উপরিস্থ কেশের উপর মছাহ করে; তবে মছাহ জায়েজ হইবে না। যদি কেহ বেণীর উপর মাছাহ করে, উহা মস্তকের উপর বাঁধা থাকুক, আর নাই থাকুক, তবে অধিকাংশ বিদ্বানের মতে উক্ত মছাহ জায়েজ হইবে না, ইহা মুহিত কেতাবে আছে। আলমগিরি ১/৫/৬।

        যদি তিনটি অঙ্গুলী মস্তকে রাখিয়া উহার এক চতুর্থাংশ টানিয়া একবার মাছাহ করা হয়, কিম্বা হস্তের তালু ও এক দুই অঙ্গুলী মস্তকে রাখিয়া অথবা খোলা বৃদ্ধা ও তর্জনী এবং তন্মধ্যস্থ তালু অংশ মস্তকে রাখিয়া উহার এক চতুর্থাংশ মছাহ করা হয়, তবে উক্ত মছাহ জায়েজ হইবে।

        যদি তিনটি অঙ্গুলী না টানিয়া কেবল মস্তকের উপর রাখিয়া দেওয়া হয়, কিম্বা তিনটি অঙ্গুলীর অগ্রাংশ মস্তকের উপর স্থাপন করিয়া টানিয়া লওয়া না হয়, তবে মছাহ জায়েজ হইবে না।

        যদি এক বা দুই অঙ্গুলী মস্তকে রাখিয়া উহার এক চতুর্থাংশ টানিয়া মাছাহ করা হয় তবে উক্ত মাছাহ জায়েজ হইবে না।

        যদি তিন অঙ্গুলীর অগ্রাংশ মস্তকে স্থাপন করিয়া এক চতুর্থাংশ টানিয়া মছাহ করা হয়, তবে বাদায়ে' কেতাবের রেওয়াএত অনুযায়ী মছাহ জায়েজ হইবে না, কিন্তু বাহরোর-রাএক কেতাবে মুহিত হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে, পানি বিন্দু বিন্দু পতিত হইতে থাকিলে, মছাহ জায়েজ হইবে, নচেৎ না। আরও উক্ত কেতাবে খোলাছা কেতাব হইতে উদ্ধৃত হইয়াছে বে, পানি বিন্দু বিন্দু পতিত হইতে থাকুক, আর নাই থাকুক, মছাহ জায়েজ হইবে, ইহাই ছহিহ মত। শেখ ইস্মাইল বলিয়াছেন, ওয়াকেয়াত ও ফয়েজ গ্রন্থে এইরূপ আছে। -শামি, ১/১০৩/১০৪।

        পাঠক, মনে রাখিবেন, মৌলবি নইমদ্দিন মরহুম সাহেব জোব্দার প্রথম খণ্ডে (৪ পৃষ্ঠায়) লিখিয়াছেন যে, মস্তকের চতুর্থাংশ হস্তের তিন অঙ্গুলী পরিমাণ।

        তিনি এস্থলে অনুবাদে মহা ভ্রম করিয়াছেন, আরবি এবারতের প্রকৃত অনুবাদ এইরূপ হইবে, তিন অঙ্গুলী দ্বারা মস্তকের চতুর্থাংশ মছাহ করিলে, মছাহ জায়েজ হইবে, কিন্তু এক বা দুই অঙ্গুলী দ্বারা উহার চতুর্থাংশ মছাহ করিলে, মছাহ জায়েজ হইবে না, এই স্থলে তিনি তিন অঙ্গুলী পরিমাণকে মস্তকের চতুর্থাংশ লিখিয়া মহাভ্রমে পতিত হইয়াছেন।

        মছলাযদি কাহারও হস্তে এরূপ জখম থাকে যে, পানি ব্যবহার করিতে অক্ষম হয়, তবে কি করিবে?

        উত্তর। যদি কাহারও হস্তে উক্ত প্রকার জখম হয়, তবে দ্বিতীয় হস্তের দ্বারা ওজু করিবে। আর যদি দুই হস্তে উক্ত প্রকার জখম হয়, তবে তায়াম্মাম করিবে। -তাহতাবী।

        মছলাযদি কাহারও হাত পা কাটা গিয়া থাকে, তবে ওজুতে কি করিতে হইবে?

        উঃ     যদি হাত পা এরূপ ভাবে কাটা গিয়া থাকে যে, কনুই ও পায়ের গাঁইটের কিছুই বাকী না থাকে, তবে হাত পা ধৌত করার হুকুম রহিত হইয়া যাইবে। আর যদি কনুই বা গাঁইটের কিছু অংশ বাকী থাকে, তবে সেই অংশ ধোওয়া ওয়াজেব হইবে। শামি ১/১০৫/১০৬, বাহঃ ১/১৩।

    মছলা। যদি কাহারও হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় কাটা গিয়া থাকে এবং তাহার মুখমণ্ডলে জখম থাকে, তবে কি করিয়া নামাজ পড়িবে?

    উত্তর। জহিরিয়া কেতাবে আছে, এইরূপ ব্যক্তি বিনা ওজু ও বিনা তায়াম্মাম নামাজ পড়িবে এবং উক্ত নামাজ পুনরায় পড়িতে হইবে না, ইহা সমধিক ছহিহ মত-দোর্রোল মোখতার।

    মছলাযদি কাহারও হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় কাটা গিয়া থাকে, তবে সে ব্যক্তি কি করিবে?

    উত্তর। উক্ত ব্যক্তি তায়াম্মামের নিয়তে প্রাচীরে, উপর মুখ মছাহ করিয়া লইবে। ইহা তাহতাবীতে আছে। শামি, ১/৮৩।

    মছলা। যদি কেহ এরূপ স্থানে বন্দী হয় যে, পানি কিম্বা পাক মৃত্তিকা না পাওয়া যায়, তবে সে ব্যক্তি কি করিবে?

    উত্তর। দোর্রোল মোখতার গ্রন্থে ফয়েজ গ্রন্থ হইতে উদ্ধৃত করা হইয়াছে যে, সে ব্যক্তি প্রকৃত নামাজ পড়িবে না, বরং তাহার পক্ষে নামাজির ভাবাপন্ন হওয়া ওয়াজেব,-অর্থাৎ রুকু করিবে, শুষ্ক স্থান পাইলে ছেজদা করিবে, নচেৎ দাঁড়াইয়া (ছেজদার জন্য) ইশারা করিবে তৎপরে নামাজ দোহরাইয়া লইবে।

        এবনে আবেদিন শামি বলেন, ওয়াক্তের সম্মান হেতুএইরূপ করিবে, কিন্তু নামাজের নিয়ত করিবে না, কেননা ইহা প্রকৃত নামাজ নহে। তাহতাবি বলেন, আবু ছউদের মতানুযায়ী সে ব্যক্তি কেরাত করিবে না।

        হুলইয়া কেতাবে আছে, যখন উক্ত স্থানটি নাপাক, তখন শুষ্ক হউক, আর নাই হউক, উক্ত স্থানে ছেজদা করিলে, নাপাকির উপর ছেজদা করা হইবে, কাজেই প্রত্যেক অবস্থায় ইশারা ভাবে ছেজদা করিবে, ইহাই ছহিহ মত।

        উপরোক্ত অবস্থায় নামাজিদের ভাবাপন্ন হওয়া এমাম আজমের ছির সিদ্ধান্ত মত এবং ইহার উপর ফৎওয়া দেওয়া যাইবে। শামি, ১/৮৩৩/২৫৯/২৬০।

    মসলা। যদি কেহ বিনা ওজু ও তায়াম্মোম নামাজ পড়ে, তবে কি হইবে?

    উত্তর। বিনা ওজু ও তায়াম্মোম নামাজ পাঠ তিন প্রকার হইতে পারে, ওয়াজেব, গোনাহ ও কাফেরি ।

       যদি কাহারও হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় কাটা গিয়া থাকে এবং তাহার মুখে জখম থাকে, তবে তাহার পক্ষে বিনা ওজু ও তায়াম্মুম নামাজ পড়া ওয়াজেব।

        যদি উপরোক্ত কারণ ব্যতীত বিনা ওজু ও তায়াম্মাম স্বেচ্ছায় নামাজ পড়ে, তবে ইহাতে বিদ্বানগণের মতভেদ হইয়াছে, খোলাছা ও জখিরা কেতাবে আছে যে, ছদরে শহিদ উহাতে কাফের হওয়ার ফৎওয়া দিয়াছেন, কিন্তু হুলুয়া কেতাবে ইহার প্রতিবাদ করা হইয়াছে। কাজিখান বলেন, যদি কেহ ইসলামের প্রতি অবজ্ঞা করার ইচ্ছায় এইরূপ করিয়া থাকে, তবে সকলের মতেই কাফের হইবে, আর যদি উক্ত ইচ্ছা না থাকে, তবে নওয়াদেরের রেওয়াএত অনুযায়ী কাফের হইলেও জাহের রেওয়াএত (ফৎওয়া গ্রাহ্য মত অনুযায়ী কাফের হইবে না।

        আল্লামা এবনে আবেদীন শামি বলেন, যদি শরিয়তের প্রতি বিদ্রুপ করার ইচ্ছায় এইরূপ কার্য্য করিয়া থাকে, তবে কাফের হইবে, আর শৈথিল্য বা অজ্ঞতা বশতঃ উহা করিয়া থাকিলে (উহাতে) মহা গোনাহ হইলেও) সকলের মতে কাফের না হওয়াই সঙ্গত। শামি, ১/৮৩/৮৪।

        মসলা। কাহারও একখানা হস্ত কিম্বা পদ অথবা কজা, কি একটি অঙ্গুলী বেশী উৎপন্ন হইলে, ওজুর সময় কি করিবে?
        উঃ। যদি কাহারও ওজুর স্থলে একটি অঙ্গুলী বা একখানা কব্জা বেশী উৎপন্ন হইয়া থাকে, তবে উক্ত বেশী অঙ্গুলী ও কব্জা যৌত করা ফরজ হইবে। যদি স্কন্দের উপর দুইখানা হস্ত উৎপন্ন হইয়া থাকে, তবে যে হাতখানি পূর্ণ হইয়াছে, উহা আসল হস্ত বলিয়া গণ্য হইবে এবং উহা যৌত করা ওয়াজেব হইবে। আর অবশিষ্ট হাতখানি অতিরিক্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে। এই অতিরিক্ত হাতখানির যে অংশটুকু ফরজ (ওজুর) স্থানের বরাবর হইবে, উহা ধৌত করা ওয়াজেব হইবে। আর যাহা ফরজ স্থানের বরাবর না হয়, উহা ধৌত করা মোস্তাহাব হইবে। বাহরোর রাএক, ১/১৩, আলমগিরি, ১/৪।

        যদি কাহারও একটি অঙ্গুলী বা কজা অতিরিক্ত উৎপন্ন হইয়া থাকে যদি ফরজের (ধৌত করার) স্থানে উৎপন্ন হইয়া থাকে, তবে ধৌত করা ওয়াজেব হইবে। আর যদি ফরজের স্থনে উৎপন্ন না হইয়া থাকে, তবে যে অংশটুকু ফরজের (ওজুর) স্থানের বরাবর হইবে, উক্ত অংশটুকু ধৌত করা ওয়াজেব হইবে, আর যদি ওজুর স্থানের বরাবর না হয়, তবে উহা ধৌত করা মোস্তাহাব হইবে। দোরোল মোখতার।

        যদি একদিকে দুইখানা হাত পা উৎপন্ন হইয়া থাকে, এক্ষেত্রে যদি উভয় হস্ত দ্বারা ধরিতে কিম্বা উভয় পা দ্বারা চলিতে পারে, তবে উভয়খানা ধৌত করা ওয়াজেব হইবে। আর যদি একখানা দ্বারা ধরিতে ও চলিতে পারে, তবে সেইখানা আসল (মূল), আর অপরখানা অতিরিক্ত হইবে। এক্ষেত্রে যদি উভয় খানা পূর্ণ আকারে হইয়া থাকে এবং একসঙ্গে জোড়া (সংলগ্ন) থাকে, তবে উভয় খানা ধৌত করা ফরজ হইবে। আর যদি পৃথক পৃথক ভাবে থাকে, তবে আসল খানা ধৌত করা ওয়াজেব হইবে, ইহা তাহতাবিতে আছে। শামি, ১/৭৬।

    মসলা।     ওজুর ফরজগুলি কয় প্রকার হইবে?

    উঃ। দুই হাত, দুই পা ধৌত করা কাৎয়ি ফরজ, কিন্তু দুই পায়ের দুইটি গাইট ও দুই কনুই ধৌত করা জান্নি ফরজ। এইরূপ মূল মস্তক মছাহ করা কাৎয়ি ফরজ, কিন্তু উহার এক চতুর্থাংশ মছাহ করা জান্নি ফরজ, আর মুখ-মণ্ডল ধৌত করা ফরজ, কিন্তু উহার সীমার মধ্যে যে ঘন দাড়ি পড়ে, তৎসমুদয় ধৌত করা জান্নি ফরজ-শামি ১০৪/১০৭।

Post a Comment

0 Comments