বোরাকের আকৃতি বর্ণনা প্রসঙ্গে মহানবী (সঃ) বর্ণনা করেন যে-"আমি খানায়ে কাবার সামনে একটি বাহন দাঁড়ানো অবস্থায় দেখলাম। যার শারীরিক আকৃতি ছিল গাধা অপেক্ষা বড় খচ্চর অপেক্ষা ছোট সুন্দর ও অযীব প্রাণী। যার কপালে কালিমা
لا إله إِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ الله
লিখা। এ পবিত্র বাহনটি ছিল বেহেশত হতে আনা একটি আধিব প্রাণী। যার সর্ব শরীরে ছিল বেহেশতী অলংকার সজ্জিত। কাধে ছিল হীরা মুক্তা জড়ানো। যার নয়ন যুগল ছিল হীরা মুক্তা জড়ানো। যার চোখ ছিল কাল রঙের বড় বড় সুরমা বিশিষ্ট। তার বাহুতে ছিল মণি-মুক্তা খচিত দু'টি পাখা আর পাখাগুলোর প্রত্যেকটি পালকে বিভিন্ন লেখা। তার গতি ছিল বিদ্যুত গতি সম্পন্য। কবিতার ভাষায়-
" দেখতে বোরাক বরণ ছফেদ মুখ মানুষের মুখ
পা'গুলো তার ঘোড়ার মতন উটের মতন বুক,
গাধার চাইতে একটু উঁচু, খচ্চর হইতে কম,
পঙ্খীর মতন দুইটি ডানা চলল তার বেদম।
জিলকী মত গতি তাহার হাওয়ার পরে পর
চোখ পলকে হায় ছাড়ায়া দেশতো দেশান্তর।"
মহানবী (সঃ)-এর বোরাকে আরোহণঃ
এবার হযরত জিব্রাইল (আঃ) বোরাকের লাগাম ধরে হুজুর (সঃ)-এর সম্মুখে এসে বললেন- "হে আল্লাহর নবী (সঃ)। এ বোরাককে আপনি আপনার সওয়ারী হিসেবে কবুল করুন এবং আপনার সওয়ারী হিসেবে তার উপর আপনি উপবিষ্ট হউন।" মহানবী (সঃ) বলেন- "একথা শুনে আমি যখন উক্ত বোরাকের উপর আসন গ্রহণ করতে ইচ্ছে পোষণ করলাম। তখন বোরাক কিছুটা ঔদ্বত্যপনা ভাব দেখাতে লাগল। হযরত জিব্রাইল (আঃ) তখন সাথে সাথে বোরাকের গর্দানে হাত রেখে বললেন- "হে বোরাক! তুমি কি সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাম্মদ (সঃ)-এর সওয়ারী হওয়ার মধ্যে ঔদ্ধত্যপনা ভাব দেখাচ্ছ?"
বোরাক একথা শুনামাত্র লজ্জা ও ভয়ে ঘামে সিক্ত হয়ে গেল।
মহানবী (সঃ) বলেন- "যখন বোরাকের কানে আমার কথা পৌঁছাল তখন সাথে সাথে স্বীয় ঘাড় নিচু করে দিল এবং নিশ্চুপ ভাবে দাঁড়িয়ে রইল। তখন আমি তার উপর উপনি হলাম। হযরত জিব্রাইল (আঃ) তার রিকাবে অর্থাৎ গদীতে বসে দু'পাশে পা দ্বয় রাখার লোহ। বেড়ীতে পা রাখলেন এবং হযরত মিকাইল (আঃ) লাগাম ধরলেন। অতঃপর জিব্রাইল (আঃ) তাকে সম্মুখ পানে চলার জন্য ইঙ্গিত করলেন। বোরাক দ্রুত গতিতে ছুটে চলল। বোরাকে গতি এত দ্রুত ছিল যে, সেখানে আমার দৃষ্টির শেষ সীমা ২০ সেখানেই তার কদম গিয়ে পড়ত।
বোরাকে চড়ে আমার নয়ন যুগলে পানিতে ভরে উঠল। জিব্রাইল আমীন তা লক্ষ্য করে প্রশ্ন করলেন- "ইয়া আল্লাহর নবী। আপনি মালায়ে আল্লাহর সফরে রওয়ানা হয়েছেন। আপনার উপর মহান আল্লাহর তাজাল্লী ও মেহেরবাণী নাযিল হচ্ছে আর আপনি জান্নাতুল ফেরদৌসের এক মর্যাদার বোরাকের উপর আসীন। এখন তো আপনার সময়টা অত্যন্ত খুশীর সময় আপনি তো বেহেশত ও দোযখে ভ্রমণে যাচ্ছেন। এমন সময় আপনার চিন্তা ভাবলার তো কোন কথা হতে পারে না।"
জিব্রাইলের জবারে আমি বললাম- "হে জিব্রাইল আমিন। আমি তো বেহেশতী বোরাকে আরোহণ করে আল্লাহর দীদারে যাচ্ছি কিন্তু আমার উম্মতের কি অবস্থা হবে। কিয়ামতের ময়দানে তারা কিভাবে এবং কেমন করে পদব্রজে পথ চলবে? তাদের কথা আমার মতে পড়ে গেল। তাই তাদের চিন্তায় আমার চোখে পানি দেখা দিয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে জিব্রাইল আমীন তখন আমাকে এই আয়াতটি পাঠ করে শুনালেন-
অর্থাৎঃ "হে নবী (সঃ)। আপনি মনে সান্ত্বনা অনুভব করুন। কিয়ামতের ময়দানে আপনার পরহেজগার উম্মতের জন্যও এমন বোরাকের ব্যবস্থা হবে। তারা স্বীয় প্রভুর সম্মুখে এ ধরনের বোরাকেব আরোহণ করে উপস্থিত হবেন।
একথা শুনে আমার মনে খুশীতে ভরে গেল এবং বোরাকের উপর আরামের সাথে উপবিষ্ট হলাম। কবিতার ভাষায় মহানবী (সঃ)-এর বোরাকে আরোহণ এখানে বর্ণণা করা হয়েছে।
"জিব্রাইলে কন- খোদার হাবীব হইয়াছে সময়
ত্বরিৎ চলেন বোরাক খাঁড়া পলক দেরী নয়।
চইড়্যা বসেন দীনের নবী কথার সাথে সাথে
ডাইনে বসি জিব্রাইলে বোরাক নিলেন হাত
বায় মিকাইল বইস্যা হাতে ধরিলেন লাগাম
চলল বোরাক ছাইড়্যা কত শহর নগর গ্রাম।"
0 Comments