(১৯) হাঁচির উত্তর দেবে। হযরত রাসূলে করীম (দঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি হাঁচি দেয় সে বলবে, "আলহামদুলিল্লাহি আলা কুল্লি হালিন" অর্থাৎ সর্বাবস্থায়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যে ব্যক্তি তার উত্তর দেবে সে বলবে, "ইয়ারহামুকুমুল্লাহ" অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে রহম করুন। তখন হাঁচিদাতা আবার বলবে "ইয়াহদীকুমুল্লাহু ওয়া ইযুছলিহু বালাকুম" অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে হেদায়েত করুন এবং তোমাদের হৃদয়কে নির্মল করুন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, হুযুরে পাক (দঃ) আমাদেরকে শিক্ষা দিতেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ হাঁচি দেয়, সে যেন বলে, "আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন" অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য। যখন সে তা' বলে, শ্রবণকারীগণ তখন বলবে, "ইয়ারহামুকুমুল্লাহু" অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে রহম করুন। যখন সে তা' বলে, তখন হাঁচিদাতা বলবে, "ইয়াগফিরুল্লাহু লী অলাকুম" অর্থাৎ আল্লাহ আমাকে ও তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। হুযুরে পাক (দঃ) একজন হাঁচিদাতার কালামের উত্তর দিয়েছিলেন এবং অন্য একজন হাঁচিদাতার উত্তর দেন নি। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, একজন আল্লাহর প্রশংসা করেছে এবং অন্যজন কিছু না বলে নীরব রয়েছে।
হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যখন কোন মুসলমান তিনবার হাঁচি দেয়, তার উত্তর দেবে। যদি তার বেশী দেয়, তবে তা' ব্যাধি মনে করবে। বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) তিনবার হাঁচির উত্তর দিয়েছিলেন। চতুর্থবার হাঁচি দিলে হাঁচিদাতা লোকটিকে বললেন, তোমার ব্যাধি আছে। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, হুযুরে পাক (দঃ) যখন হাঁচি দিতেন, তিনি স্বর বন্ধ করে নিজের মুখের উপর হস্ত বা কাপড় দিতেন। অন্য বর্ণনায় আছে যে, মুখ আবৃত করে রাখতেন। হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) বলেন যে, ইয়াহুদীগণ হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকটে এই আশায় হাঁচি দিত যে, তিনি "আল্লাহ তোমাদেরকে রহম করুন" এ কথাটি বলবেন কিন্তু ইয়াহুদীদের হাঁচির বেলায় তিনি বলতেন, "ইয়াহদীকুমুল্লাহু” আল্লাহ তোমাদেরকে হেদায়েত করুন।" হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, ওয়ার শাক (দঃ)এর ইমামতীতে নামাযের মধ্যে এন্ড ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে বলল, "আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাছীরান হ্রাইয়্যিবাম মুবারাকান ফীহি কামা ইয়ারী বাবলুলনার বাসাধ্য ইয়ারছিল হামদুলিল্লাহি আলা কুল্লি হাল"। অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, অজস্র পবিত্র বরকত পূর্ণ-- যেরূপ আমাদের প্রভু সন্তুষ্ট থাকেন এবং পরেও সন্তুষ্ট থাকেন। সকল অবস্থায়-ই আল্লাহর জন্য প্রশংসা। হুযুরে পাক (দঃ) নামায শেষে সালাম ফিরিয়ে বললেন, কে নামাযের মধ্যে ঐ কালাম পাঠ করেছে। লোকটি বলল, আমি পাঠ করেছি ইয়া রাসুলাল্লাহ (দঃ)। আমি এর দ্বারা আমার মঙ্গলই কামনা করেছি। হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, আমি বারজন ফিরেশতাকে দেখলাম, প্রত্যেকেই এর ছওয়াব লিখার জন্য প্রতিযোগিতা করছে।
হযরত রাসূলে করীম (দঃ) বলেছেন, হাঁচি আল্লাহর তরফ থেকে এবং হাই শয়তানের তরফ থেকে আসে। যখন তোমাদের কেউ হাই তোলে, সে যেন তার হাত মুখের উপর স্থাপন করে। যখন সে হা হা শব্দ করে তখন শয়তান তাকে লক্ষ্য করে মনে মনে হাসে। হযরত ইব্রাহীম নাখয়ী (রহঃ) বলেন, যখন মল-মূত্র ত্যাগের সময়ে কেউ হাঁচি দেয়, তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করায় কোন দোষ নেই। হযরত হাসান বছরী (রহঃ) বলেছেন যে, তখন সে মনে মনে আলহামদু বলবে। হযরত কা'ব (রহঃ) বলেছেন, হযরত মূসা (আঃ) বলেছিলেন, হে মাবুদ। তুমি কি নিকটবর্তী যে, তোমার সঙ্গে সংগোপনে কথা বলব? না তুমি কি দূরবর্তী যে তোমার সঙ্গে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলব? আল্লাহতায়ালা বললেন, যে আমাকে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গে থাকি। হযরত মুসা (আঃ) বলছিলেন, আমরা অনেক সময়ে এমন অবস্থায় থাকি যখন তোমাকে স্মরণ করায় বেআদবী মনে করি। যেমন আমাদের অপবিত্র থাকা কালে এবং মল-মূত্র ত্যাগ করবার সময়ে। আল্লাহতায়ালা বললেন, সব সময়েই আমাকে স্মরণ করো।
(২০) বিপদ-আপদ কালে সাহায্য করবে। যখন কোন মুসলমানের বিপদ-আপদ উপস্থিত হয়, তাকে সাহায্য করতে ছুটে যাবে ও তাকে বিপদ মুক্ত করবে। জনৈক বিজ্ঞ লোক বলেছেন, মুমিনদের সাথে নিঃস্বার্থ ব্যবহার এবং গুনাহগারদের সাথে তার বিপরীত ব্যবহার করবে। অবশ্য শেষোক্ত ব্যক্তি পাপাচারী বলে প্রকাশ্য উত্তম ব্যবহারই অধিক আকাঙক্ষা করে এবং তা' পেলে সন্তুষ্ট হয়। হযরত আবু দারদা (রাঃ) বলেন যে, আমি অনেক লোকের সামনে খুবই প্রফুল্লতা প্রদর্শন করি কিন্তু অন্তরে তার প্রতি মোটেই খুশী থাকি না। বিনম্র ব্যবহারের এটাই সূক্ষ্ম তাৎপর্য। এরূপ ব্যবহার অসৎ লোকের থেকে অনিষ্টের আশংকায় করা হয়। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "ইদফা' বিল্লাতী হিয়া আহসানুস সাইয়্যিয়াতা ওয়া ইয়াদরায়ূনা বিলহাসানাতিস সাইয়ি্যয়াতা" অর্থাৎ যা উত্তম, তদ্বারা মন্দ দূর কর। তারা নেক কাজ দ্বারা মন্দ দূর করে দেয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) "সাইয়্যিয়াত" অর্থাৎ মন্দের অর্থ করতে গিয়ে বলেছেন যে, অনিষ্ট এবং রুক্ষ ব্যবহারের প্রতিদান দেয় তারা সালাম এবং নম্র ব্যবহার দ্বারা। আল্লাহতায়ালা বলেছেনঃ অ লাওলা দাফউল্লাহিন্নাসা বা'দুহুম বিবা'দ্বিন লা হুদ্দিমাতিছ ছাওয়ামিউ--অর্থাৎ যদি আল্লাহ মানবদের এককে অন্যের দ্বারা দূরীভূত না করতেন, তা হলে গির্জা প্রভৃতি ধ্বংস হয়ে যেত। হয়রত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাস্থ অর্থাৎ অন্যের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, অন্যের অর্থ আশা, ভয়, লজ্জা এবং নম্র ব্যবহার। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, এক ব্যক্তি হুযুরে পাক (দঃ) এর দরবারে উপস্থিত হওয়ার জন্য। অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, তাকে আসতে দেয়া হোক। লোকটি তার সম্প্রদায়ের মধ্যে অসৎ ছিল। যখন লোকটি হুযুরে পাক (দঃ) এর দরবারে প্রবেশ করল, হুযুর (দঃ) তার সাথে খুবই নম্র ব্যবহার করলেন। আমরা ভাবলাম যে, হযরত রাসূলে করীম (দঃ) এর নিকন্তু লোকটির যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। লোকটি বিদায় হওয়ার পর আমরা হুযুর (দঃ)কে বললাম, আপনি তাকে একটি অসৎ প্রকৃতির লোক জেনেও তার সাথে এরূপ নম্র ব্যবহার কেন করলেন? হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, হে আয়েশা! রোজ কিয়ামতে ঐ ব্যক্তিই সর্বাপেক্ষা অসং লোক হবে, যার অনিষ্টের ভয়ে দুনিয়ার মানুষ তাকে ত্যাগ করে দেয়। হাদীস শরীফে আছে, কটু কথা শুনে মানুষ নিজের সম্মান রক্ষার্থে যদি ধৈর্য ধারণ করে, তা' তার জন্য দানের কার্যরূপে গণ্য হয়। কোন এক ব্যক্তি বলেছেন, তোমাদের স্বভাবানুযায়ী মানুষের সাথে মেলামেশা করবে আর অন্তরে তাদের থেকে পৃথক থাকবে। মুহাম্মদ বিন হানফিয়া বলেছেন, যে ব্যক্তির সাথে সংসর্গ করা একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। আল্লাহ তার জন্য কোন উপায় করে না দেয়া পর্যন্ত সে সদুপদেশ দ্বারা ঐ ব্যক্তির সংসর্গ না করলে তা' তার জ্ঞানানুযায়ী কাজ হবে না।
0 Comments