মহানবী (সাঃ)-এর মিরাজ মূলত হিজরতের মহান ঘটনার ভূমিকা হিসাবে সংঘটিত হয়। অর্থাৎ মিরাজের অলৌকিক ঘটনাবলী তাঁর দাওয়াতের নতুন পর্যায়ের সূচনা হওয়ার ভূমিকাস্বরূপ ছিল। রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল যে, এখন আপনার প্রচারমূখী জীবন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে যাচ্ছে। এটা সাফল্য ও সফলতার পরিপূর্ণ জীবন। এজন্য আপনাকে আগেই দুই কিবলা এবং উর্ধ্ব জগতের রহস্যময় ঘটনাবলী ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অবগত করানো হয়েছে।
"আজ আমি তোমাদের দীনকে পূর্ণতায় পৌঁছে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসাবে মনোনীত করলাম"
আয়াতের দাবি পুরণ করে নবী (সাঃ)-কে মহান মর্যাদায় অভিষিক্ত করলেন।
সূরা বনী ইসরাঈলের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মদীনায় হিজরতের নিগূঢ় রহস্য ও সূক্ষ্ম তাৎপর্য পরিপূর্ণ। আয়াতের প্রথমে মিরাজের বর্ণনা উল্লেখিত হয়েছে, অতঃপর মানব জাতির পথ প্রদর্শনের মূলনীতির কথা এসেছে এবং মাঝখানে পূর্বকালের নবী-রসূল ও তাঁদের উম্মাতের ঘটনাবলী সাক্ষী ও দৃষ্টান্ত হিসাবে পেশ করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং তাবিঈ কাতাদা (রঃ) নিম্নের আয়াত দু'টির বিষয়বস্তুকে মদীনায় হিজরত সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করেন: "এরা তোমাকে এই জমীন থেকে উপড়িয়ে ফেলতে চায় এবং তোমাকে এখান থেকে বহিষ্কার করতে চায়। কিন্তু তারা যদি এটা করে, তবে তোমার পরে এখানে তারা আর বেশী দিন টিকে থাকতে পারবে না।"
এ আয়াতে মক্কার মুশরিকদের কঠোর হুমকি দেয়া হয়েছে এবং সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, তাদের অত্যাচারের মুখে নবী (সাঃ) কে যদি বাধ্য হয়ে মদীনায় হিজরত করতে হয় তবে তাদের সমাজ জীবনকে অচিরেই উলট-পালট করে দেয়া হবে। তাই বলা যায়, হিজরত ইসলামের উন্নতি ও ইসলাম বিরোধী শক্তি ধ্বংসের বার্তাবহ ছিল।
"আর বল, হে আমার প্রতিপালক। আমাকে উত্তমরূপে (মদীনায়) প্রবেশ করাও এবং মক্কা থেকে সসম্মানে বের করে নাও। তোমার পক্ষ থেকে আমাকে ব্যাপক সাহায্য সহযোগিতা দান কর।" অনুরূপভাবে সূরা আনফালে অন্যান্য ঘটনাবলীর আলোচনার সাথে মদীনায় হিজরতের কথাও উল্লেখ আছে:
"আর (সেই সময়ের কথাও স্মরণীয়) যখন মুশরিকরা তোমার বিরুদ্ধে এই যষড়যন্ত্র করেছিল যে, হয় তারা তোমাকে বন্দী করবে অথবা হত্যা করবে নতুবা মক্কা থেকে বহিষ্কার করবে। তারা নিজেদের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, আর আল্লাহ (তাদের বিরুদ্ধে) পরিকল্পনা তৈরী করে রেখেছিলেন। আল্লাহ পরিকল্পনা প্রণয়নকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী।"
অনুরূপভাবে সূরা তাওবায় সিদ্দীকে আকবার (রাঃ)-র মহান মর্যাদার কথা বর্ণনার সাথে সাথে মদীনায় হিজরতের কথাও এভাবে উল্লেখ আছেঃ "তোমরা যদি আল্লাহর রসূলের সাহায্য না কর (তবে তাতে কিছু যায় আসে না), তাকে আল্লাহ্ তখনও সাহায্য করেছেন যখন মুশরিকরা তাকে (মক্কা থেকে) বহিষ্কার করেছিল, যখন উভয়ে (মুহাম্মদ ও আবু বাক্ত সাওর পাহাড়ের) গুহায় আত্মগোপন করেছিল, যখন সে (মুহাম্মদ (সাঃ) তার সাথীকে বলছিল, তুমি চিন্তান্বিত হয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। অতএব আল্লাহ্ তায়ালার উপর নিজের তরফ থেকে প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাকে এমন একদল সৈন্য দ্বারা সাহায্য করলেন যা তোমরা দেখতে পাওনি। আর এভাবে আল্লাহ কাফিরদের কথাকে নিম্নগামী করে দিলেন এবং আল্লাহর কালেমা সবচেয়ে উচ্চে এবং উর্ধ্বে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ বিজয়ী এবং পরিপূর্ণ কৌশলের অধিকারী।"
কুরআন মজীদ 'হিজরতের" গুরুত্ব সম্পর্কে স্থানে স্থানে মানব জাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং একে ঈমান ও ইসলামের মানদন্ড সাব্যস্ত করেছে। ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে মক্কা কুফরী রাষ্ট্র এবং শত্রুরাষ্ট্র ছিল। এজন্য সেখান থেকে মদীনায় হিজরত করা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফরয ছিল, যাতে মুসলমানরা নিরাপদে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতে পারে। শুধু তাই নয়, বরং তারা যেন ইসলামের মহান উদ্দেশ্য "সত্য ন্যায়ের আহবান এবং অন্যায় ও অসত্যের প্রতিরোধ" অন্য কথায় আল্লাহর দীন প্রচারের সঠিক খেদমত আঞ্জাম দিতে পারে। কিন্তু অষ্টম হিজরীর মহান বিজয় যখন মক্কাকে ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করল তখন থেকে হিজরতের বিশেষ ফরয শেষ হয়ে গেল এবং মহানবী (সাঃ) "মক্কা বিজয়ের পর মদীনায় হিজরত করার বাধ্যবাধকতা আর অবশিষ্ট নেই" এই সত্যের ঘোষণা দিয়ে দিলেন। অবশ্য আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তৌহীদের কেন্দ্রভূমি মক্কা-মদীনায় আজও হিজরত করে যাওয়া অতি বড় সওয়াবের কাজ।
কিন্তু কোন দেশ বা এলাকার মুসলমানরা এখনও যদি এমন অবস্থার সম্মুখীন হয় যে, তথায় বসবাস করে দীন ও ঈমান ঠিক রাখা মক্কার সেই যুগের মতই অসম্ভব, তখন তাদের ক্ষেত্রে দুটি নির্দেশের যে কোন একটি কার্যকর হবে, (এক) হয় তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে এই অবস্থার পরিবর্তন সাধন করবে, অথবা (দুই) হিজরত করে নিরাপদ এলাকায় চলে যাবে। কিন্তু সেখানকার বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিকে মেনে নিয়ে তথায় নিশ্চিন্তে বসবাস করা ঠিক হবে না। কুরআন, হাদীস এবং ইসলামী ফিকাহ্ থেকে আমরা এই নির্দেশই পেয়ে থাকি।
মক্কা যখন কুফরী রাষ্ট্র ছিল তখন মদীনায় হিজরত করে যাওয়ার উপর ইসলাম কি পরিমাণ গুরুত্ব আরোপ করেছে, এই মহান উদ্দেশ্যের জন্য মুসলমানদের কাছে কি পরিমাণ কুরবাণী দাবি করেছিল, নিন্মোক্ত আয়াতসমূহ থেকে তা সহজেই অনুমান করা যায়ঃ
"অতএব যেসব লোক হিজরত করেছে, যাদেরকে নিজেদের বসতি থেকে উৎখাত করা হয়েছে এবং যারা আমার পথে নির্যাতন ভোগ করেছে, আমার রাস্তায় যুদ্ধ করেছে এবং নিহত হয়েছে, আমি অবশ্যই তাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং এমন বেহেশতে প্রবেশ করাব যার (বৃক্ষসমূহের) নিম্নদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত আছে। এই প্রতিদান আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং আল্লাহর কাছে অতি উত্তম পুরষ্কার রয়েছে।"
"যেসব লোক ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের ধন-প্রাণ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। তাদের জন্য আল্লাহর নিকট অতি উচ্চ পদমর্যাদা রয়েছে এবং তারাই সফলকাম হবে।"
"যেসব লোক নিজেদের উপর অত্যচার করছিল তাদের রূহ কবজ করার সময় ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে, তারা বলল, আমরা পৃথিবীর বুকে দুর্বল ছিলাম। ফেরেশতারা বলল, আল্লাহর দুনিয়া কি প্রশস্ত ছিল না যেখানে তোমরা হিজরত করতে পারতে? অতএব এদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান। কিন্তু দুর্বল নারী-পুরুষ ও শিশু। যারা হিজরত করার কোন উপায় ও পথ খুঁজে পাচ্ছিল ন। তাদের কথা স্বতন্ত্র। আশা করা যায় তাদের ক্ষমা করে দেবেন এবং আল্লাহ্ অতি উদার ও ক্ষমাশীল।" (সূরা নিসা: ৯৭-৯৯)
হিজরতের সূচনা
সাহাবিগণ কুরায়শদের থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দু'একজন করে মক্কা শরীফ হতে মদীনার দিকে হিজরত করা শুরু করলেন। এমন কি মক্কায় হযরত (সাঃ), হযরত আবুবকর (রাঃ), হযরত আলী (রাঃ) এবং আর অল্প সংখ্যক অক্ষম ব্যক্তি ছাড়া কোন মুসলমানই অবশিষ্ট রইল না। সিদ্দীকে আকবর (রাঃ) ও হিজরতের ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। কিন্তু হযরত (সাঃ) বলেছিলেন, এখন থামুন! আল্লাহ্ তা'আলা আমাকেও হিজরতের অনুমতি দিয়ে দেবেন। হযরত সিদ্দীকে আকবর (রাঃ) অনুমতির অপেক্ষায় ছিলেন এবং তিনি দু'টি উটও এ সফরের জন্য তৈরী করে রেখেছিলেন। একটি নিজের জন্য অপরটি হুযূর (সাঃ)-এর জন্য।
মদীনায় হিজরতের কারণ
নবুওয়াতের একাদশ বছরে হজ্জের মৌসুমে আল-হেরা এবং মিনার মধ্যখানে অবস্থিত আকাবা নামক স্থানে ইয়াসরিবের কয়েকজন লোক এক-তৃতীয়াংশ রাতে নবী (সাঃ)-এর মুখে সত্যের বাণী শ্রবণ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁরা সংখ্যায় ছয় অথবা আটজন ছিলেন। পরবর্তী বছর ১২ জন লোক একই স্থানে নবী (সাঃ) এর মুখে ইসলামের বাণী শ্রবণ করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে পূর্ববর্তী বছরে আগত লোকদের থেকেও কয়েকজন ছিলেন। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অনুযায়ী তাঁরা হলেন, আবু উমামা (রাঃ), আওফ ইবনুল হারিস (রাঃ), রাফি ইবনে মালিক (রাঃ), যাকওয়ান ইবনে আবদে কায়েস (রাঃ), খালিদ ইবনে মাখলাদ (রা), উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ), আব্বাস ইবনে উবাদা (রাঃ), আবুল হাইসাম (রাঃ) এবং আদীম (উদাইম) ইবনে সায়েদা (রাঃ)।
হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা) বলেন, আমরা আকাবায় প্রথম বছরের শপথনামায় নিম্নোক্ত বিষয়ের উপর বাইআত হই।
(১) এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কারও ইবাদত করব না।
(২) চুরি করব না।
(৩) যেনা করব না।
(৪) নিজেদের সন্তানদের হত্যা করব না।
(৫) কারও উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করব না।
(৬) কারও গীবত করব না।
(৭) কোনও ভালো কাজে আপনার [নবী (সাঃ) অবাধ্যাচরণ করব না।
শপথ গ্রহণের পর নবী (সাঃ) বললেন, তোমরা যদি এই শর্তাবলী পূর্ণ করতে পার তবে তোমাদের জন্য বেহেশতের সুসংবাদ। আর তোমরা যদি এসব খারাপ কাজের কোনও একটি করে ফেল তবে তোমাদের ব্যপার আল্লাহর হাতে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের ক্ষমা করবেন, আর ইচ্ছা করলে তোমাদের অপরাধের শাস্তিও দিতে পারেন।
এই ঘটনায় মদীনার প্রতিটি পরিবারে ইসলামের চর্চা শুরু হয়ে যায় এবং প্রত্যেক পরিবারে 'ইসলাম' নামক সূর্যের কিরণ বিচ্ছুরিত হতে থাকে। ফলে নবুওয়াতের এয়োদশ বর্ষে আওস ও খাযরাজ গোত্রের ৭৩ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা হজ্জের মৌসুমে এক অন্ধকার রাতে ঐ আকাবা নামক স্থানে উপস্থিত হন।
নবী (সাঃ)ও আপন চাচা আব্বাস (রাঃ)-কে সংগে করে সেখানে গিয়ে পৌছলেন। তিনি তাদের সামনে আবেগময়ী বক্তৃতা দিলেন। ফলে তাদের মাঝে এ নিয়ে আলোচনা হল যে, তিনি যদি মদীনা চলে আসেন তবে ইসলাম প্রচারেরও যথেষ্ট সুযোগ পাওয়া যাবে এবং তাঁরাও তাঁর সাহচর্যে ধন্য হতে পারবেন। তাঁরা তাঁকে সার্বিকভাবে সাহায্য করারও প্রতিশ্রুতি দেন। নবী (সাঃ) তাদের মধ্য থেকে ১২ জনকে বেছে নিয়ে দাওয়াত ও শিক্ষা-প্রশিক্ষণের জন্য নিজেদের প্রতিনিধি নিয়োগ করলেন।
ইয়াসরিবে ইসলামের প্রসার যখন এতটা অগ্রগতি লাভ করল তখন ওহীর মাধ্যমে নবী (সাঃ) এর উঃসর্গীকৃত-প্রাণ সাহাবীদের মদীনায় হিজরত করার অনুমতি দেয়া হয়। তাহলে তারা মুশরিকদের অত্যাচার থেকে নিরাপদ হতে পারবে এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে জন্মভূমি ত্যাগ করার সুন্নাতও পালিত হবে। অতএব মুসলমানরা ধীরে ধীরে মদীনায় হিজরত শুরু করল। মুশরিকরা এটা লক্ষ্য করে তাদের দেশ ত্যাগ প্রতিরোধের জন্য নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিল এবং সম্ভাব্য সকল পন্থায তাদের পথে বাধার সৃষ্টি করল।
কিন্তু আল্লাহর দীনের জন্য ওয়াক্তকৃত প্রাণগুলোর হিজরতের উৎসাহে মোটেই ভাটা পড়ল না, বরং তাঁরা অধিক সংখ্যায় ধন-মাল, জীবন, সন্তান ইত্যাদি বিপদের মধ্যে ফেলে রেখে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করতে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, মুশরিকরা যখন তাদেরকে নিজেদের ধন-সম্পদ ও পরিবার পরিজনদের সহ হিজরত করতে বাধা দিয়েছে, তখন তাঁরা এসব কিছু পেছনে ফেলে রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করে মদীনার পথে পাড়ি জমান। এখন মক্কায় কেবল হযরত আবু বাকর (রাঃ), হযরত আলী (রাঃ) এবং মুষ্টিমেয় কয়েকজন মুসলমান অবশিষ্ট ছিলেন।
প্রিয়নবী (সাঃ)-কে দ্বিতীয়বার হত্যার ষড়যন্ত্র
এ সময় কুরাইশরা চিন্তা করল, মুহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যা করে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার এটাই মোক্ষম সুযোগ। অতএব কুরাইশ নেতারা কুসাই ইবনে কিলাবের প্রতিষ্ঠিত সরকারী সভাগৃহ 'দারুন-নাদওয়ায়' সমবেত হল এবং নবী (সাঃ) কে হত্যার ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য পরামর্শ পরিষদ আহবান করল। এই সভায় উতবা, শাইবা, আবু সুফিয়ান, তাঈমা ইবনে আদী, জুবায়ের ইবনে মুতঈম, হারিস ইবনে আমির, নাদর ইবনে হারিস, আবুল বুখতারী রাফআ ইবনে আসওয়াহ, হাকীম ইবনে হিযাম, আবু জাহল, বুনাইয়া ইবনুল হাজ্জাজ, মুনাব্বেহ ইবনুল হাজ্জাজ ও উমাইয়্যা ইবনে খালফের মত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা যোগদান করে। মত বিনিময় শুরু হতে যাচ্ছিল, এমন সময় এক শয়তান 'শেখ নাজদী' দারুন-নাদওয়ার দরজায় এসে উপস্থিত হল এবং সভায় অংশ গ্রহণের অনুমতি নিল। মত বিনিময় শুরু হল। বিভিন্নজন বিভিন্ন মত প্রকাশ করল। কিন্তু শেখ নাজদী সবার মতকে ভুল আখ্যায়িত করল। অবশেষে এক ব্যক্তি বলল, প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে যুবক বাছাই করে নিতে হবে এবং তাদের নির্দেশ দিতে হবে তারা যেন একযোগে মুহাম্মদের উপর চড়াও হয়ে তাকে হত্যা করে। এতে আমাদের পরিকল্পনাও বাস্তাবায়িত হবে, আর একা আবদে মান্নাফ গোত্র হত্যার প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হবে না। অতএব রক্তমূল্য প্রদান করেই ব্যাপারটি মীমাংসা করা যাবে। শেখ নাজদী এই পরামর্শের বহুত প্রশংসা করল এবং এটাই সিদ্ধান্ত হিসাবে গৃহীত হল।
0 Comments