(৭) প্রত্যেক আয়াতকে গুরুত্ব এবং বিশেষত্ব প্রদান করা: অর্থাৎ কুরআনে পাকের প্রতিটি সম্বোধনকে বিশেষত্ব দান করা। যদি তোমরা কুরআনের আদেশ ও নিষেধ শোন, তবে প্রত্যেকেই মনে করবে যে, এই আদেশ ও নিষেধ আমার প্রতি। একই ভাবে যদি কুরআনের ওয়াদা ও সতর্কবাণী শোন, তাও তোমার উপর প্রযোজ্য বলে মনে করবে। যদি পূর্ববর্তীদের এবং নবী-রাসূলদের কাহিনী শ্রবণ কর, তবে মনে করবে যে, এর উদ্দেশ্য কাহিনী বর্ণনা নয় বরং তা' থেকে উপদেশ গ্রহণ করা এবং যা আবশ্যক অবলম্বন করা। কেননা, কুরআনে পাকের বিষয়-বস্তুর মধ্যে হযরত রাসূলে করীম ও তাঁর উম্মতের জন্য অবশ্যই কিছু উপকার রয়েছে। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি তোমার দিলকে তদ্বারা সুস্থির করি; সুতরাং মানুষের বুঝা দরকার যে, আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসূলদের অবস্থা বর্ণনা করে হুযুরে পাক (সঃ) এর হৃদয়কে দৃঢ় এবং অবিচল রেখেছেন। দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণের শক্তি দিয়েছেন। দ্বীনের উপর সুপ্রতিষ্ঠ রেখেছেন। যেন আল্লাহ প্রদত্ত জয় ও সাফল্য তাদের দৃষ্টিগোচর হয়। তোমরা কেন তাতে সমর্থ হবে না? যখন কুরআনে পাক শুধু বিশেষভাবে হুযুরে পাক (দঃ) এর উপরই নাযিল হয় নি বরং তা' সবারই রোগের দাওয়াই, সবারই পথ প্রদর্শক এবং সবারই জন্য রহমত, সারা জগতের জ্যোতি। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা সমস্ত মানুষকে কুরআনের মাধ্যমে অনুগ্রহ লাভের জন্য নিদেশ দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে, “ওয়ায়কুর নি'মাতাল্লাহি আলাইকুম ওয়ামা উনবিদার মালাইতাম মিনাল কিতাবি ওয়াপ হিকমাতিযায়কৃত নি'মাতাল্লাহি আৎপতোমাদের উপর বর্ণিত নিয়ামাতকে স্মরণ কর এবং কুরআন ও হিয়াইয়াইজম দিতে মার্চের্জর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। যদ্বারা তিনি তোমাদেরকে নসীহত করছেন তা' স্মরণ কর।
আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের উপর এমন একটি কুরআন নাযিল করেছি যার মধ্যে তোমাদের বর্ণনা আছে। তোমরা কি তা' লক্ষ্য করে। কটি কুরআন আরিল বলেন, আমি তোমার উপরা স্মরণকারী কিতাব নাযিল করেছি যেন ভূমি টন। আল্লাহ আরও ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ কর। যা তাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে। এভাবেই আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য উপমা প্রদান করেন। আল্লাহ বলেন, তোমাদের উপর তোমাদের প্রভু থেকে যা নাযিল হয়েছে তন্যধ্যে সর্বোত্তম বিষয়ের অনুসরণ কর। তা-ই মানুষের পথপ্রদর্শক। যারা দুঢ় বিশ্বাস রাখে তাদের জন্য পথপ্রদর্শক ও রহমত স্বরূপ। আল্লাহ বলেন, কুরআন মানুষের জন্য ব্যাখ্যাকারী এবং অনুসরণকারীদের জন্য হেদায়েত ও উপদেশ দানকারী। উল্লিখিত আয়াতসমূহ দ্বারা সমস্ত মানুষকেই সম্বোধন করা হয়েছে, কোন বিশেষ মানুষকে নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কুরআন পাঠকারীও এরই অন্তর্গত। সেও এই সম্বোধনে শামিল ব্যক্তি। এজন্যই তার উদ্দেশ্য হওয়া চাই আল্লাহর বাণীর অনুরূপ। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, "ওয়া উহিয়া লি হাযাল কুরআন। লিউনযিরাকুম বিহী ওয়া মান বালাগা" অর্থাৎ এই কুরআন আমার উপর অবতীর্ণ হয়েছে, যেন আমি তোমাদেরকে এবং যাদের নিকট তা' পৌছে যায় তদ্দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করতে পারি। মুহাম্মদ বিন কা'আব (রহঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে, আল্লাহ যেন তার সাথে কথা বলতে থাকেন। যখন কুরআন পাঠকারী কুরআনে পাকে তাকেই সম্বোধন করা হয়েছে বলে মনে করে, তখন সে তা' বিশেষ মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকে। যেরূপ কোন গোলাম তার মনিবের চিঠি বিশেষ মনোযোগের সাথে পাঠ করে। চিঠিতে লিখা আছে, তুমি নিজ বুদ্ধি খাটিয়ে আবশ্যকানুরূপ কাজ করবে। এজন্যই অনেক বিজ্ঞ আলিম বলেছেন যে, কুরআন মজীদ কতগুলো চিঠির সমন্বয়, যা আমাদের প্রভু থেকে তাঁর প্রদত্ত ওয়াদা সহ নাযিল হয়েছে যেন আমরা নামাযের ভিতর তা' বুঝতে পারি যেন নির্জনে তদ্বিষয় চিন্তা-ভাবনা করতে পারি। যেন ধর্মে-কর্মে এবং সুন্নতের ভিতর তা' প্রবেশ করাতে পারি। হযরত মালেক বিন দীনার (রহঃ) বলতেন, হে কুরআন তিলাওয়াতকারীগণ। কুরআন কি তোমাদের অন্তরে এই কথার বীজ বপন করে না যেরূপ বৃষ্টি মৃত্তিকার জন্য ফোয়ারা সদৃশ? তদ্রূপ কুরআনে পাক মুমিনদিগের ফোয়ারা। হযরত কাতাদাহ (রাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি কুরআনে পাকের সাথে প্রীতির সম্পর্ক বজায় রাখলে সে কমি ও বেশীর উপর দণ্ডায়মান হয়ে যায়। মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, "হুয়া শিফাউন অ রাহমাতুল্লিল মু'মিনীন-ওয়ালা ইয়াযীদুজ জালিমীনা ইল্লা খাসারা" অর্থাৎ কুরআন মজীদ মুমিনদের জন্য দাওয়াই এবং করুণা সদৃশ এবং গুনাহগারদের জন্য ক্ষতি-লোকসান ব্যতীত অন্য কিছুই বৃদ্ধিকারী নয়।
0 Comments