হযরত আয়েশা (রা) এর রাসূলের প্রতি ভালবাসা

        প্রতিটি কাজে ও কথায়ই প্রমাণিত হবে হযরত আয়েশা (রা) হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিরূপ ভালবাসতেন। কিছু ঘটনার, উপমার প্রতি লক্ষ্য করলেই তা সকলের নিকট উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

        ন্যায় নীতি, সত্যের আধার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালাক্রমে যেদিন হযরত আয়েশার (রা)-এর গৃহে আগমন করতেন, তখনকার কোন রাত ঘুম হতে জেগে যদি আয়েশা (রা) রাসূলুল্লাহকে তাঁর পার্শ্বে না পেতেন তবে তিনি চিন্তায় অধীর হয়ে পড়তেন। যে পর্যন্ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুঁজে বের করতে না পারতেন তাঁর ব্যস্ততা দূর হত না।

        একরাত্রে এমন একটি অবস্থা ঘটল। রাতের অন্ধকারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিছানায় না পেয়ে তিনি অস্থির। আলো জ্বালারও কোন ব্যবস্থা নেই।

        নিরুপায় হয়ে তিনি হাতড়িয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুঁজতে আরয় করলেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর হাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পায়ের উপর পড়ল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনায় রত রয়েছেন। অন্য এক রাতে তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রেমসিক্ত আবেষ্টনে ঘুমিয়ে পড়লেন। শেষ রাতে তাঁর ঘুম ভাঙলে দেখতে পেলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ঘরে নেই। অধীর হয়ে তিনি দেখতে পেলেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতুল বাকীর পাশে দাঁড়িয়ে মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে আল্লাহর নিকট মুনাজাত করতেছেন।

        এ অবস্থা দেখে কোন বাক্যালাপ ছাড়াই তিনি ঘরে ফিরে আসলেন। তিনি এরশাদ করলেন, আমি অদূরে কালো কি একটা দেখছিলাম, এখন বুঝলাম তা তুমিই ছিলে।

        অন্য এক রাতে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না পেয়ে মনে মনে ভাবলেন, হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হয়ত অপর কোন মহিষীর ঘরে গিয়েছেন। দুঃখে ও ক্ষোভে তিনি জ্বলতে লাগলেন।

        পুনরায় তিনি ভাবতে লাগলেন তাঁকে রাতের বেলা একাকিনী রেখে রাসূলুল্লাহ অপর কোন মহিষীর নিকট গমন করা কোন মতেই সম্ভব নয়।

        তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অন্ধকার গৃহে খুঁজতে লাগলেন। তিনি দেখতে পেলেন, নবী করীম ঘরের এক কোণে আল্লাহর দরবারে ইবাদতে নিমগ্ন।

        এ অবস্থায় তাঁকে দেখতে হযরত আয়েশা তাঁর এ কুধারণার জন্য অতিশয় লজ্জিত হলেন এবং আপনা আপনি তাঁর মুখ হতে বের হয়ে আসল, আমার জীবনের প্রতি শতধিক। আমি কেমন জঘন্য কু-চিন্তায় রয়েছি আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন জগতে অবস্থান করতেছেন?

        কোন এক সফরে হযরত আয়েশা ও হযরত হাফসা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহগামিনী ছিলেন। প্রতি রাতেই নবী করীম হযরত আয়েশার হাওদায় আগমন করতেন।

        গভীর রাত পর্যন্ত কাফেলা চলতে থাকত। কাফেলা চলাকালীন সময় তিনি হযরত আয়েশার হাওদায় বসে তাঁর সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন।

        একদিন হযরত হাফসা হযরত আয়েশা (রা) কে বললেন, চল আমরা আজ হাওদা পরিবর্তন করি। খোলা মনে তাঁর প্রস্তাবে তিনি হাওদা পরিবর্তন করলেন। কাফেলা চলতে আরম্ভ করল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য দিনের ন্যায় আজও হযরত হাফসা (রা) উপবিষ্টা রয়েছেন। রাসুলুল্লাহ কোন কথাবার্তা না বলে তাঁকে সালাম করে বসে পড়লেন।

        এদিকে হযরত আয়েশার প্রেম সাগরে ভীষণ তোলপাড় শুরু হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন করবেন এ আশায় তাঁর প্রহর কাটতেছে। কিন্তু তাঁর কামনা ও বাসনার ধন আজ আর আসলেন না। তাঁর মনের অবস্থায় রো অবনতি হল। যখন কাফেলা তাঁবু ফেলল তার প্রতীক্ষিত প্রেমাস্পদের আশা আজকের মত ত্যাগ করলেন। তিনি হাওদা হতে অবতরণ করে প্রেমিকে বিরহ ব্যথায় আপন পা মাটিতে আছড়িয়ে বলতে লাগলেন, 'হে আল্লাহ্। আমি তাঁকে কোন মতেই দায়ী করতে পারি না। বরং তুমি কোন সাপ বা বিষ্ণু পাঠিয়ে দাও যারা আমাকে দংশন করে।

        হযরত আয়েশা ক্ষণিকের তরেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দৃষ্টির আঁড়াল হতে দিতে অসহ্য বোধ করত। অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালাক্রমেই আপন মহিষীগণের নিকট গমন করতেন।

        একরাত্রে হযরত আয়েশা শুয়ে আছেন, এমন সময়ে তিনি সাড়া পেলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘর হতে বের হচ্ছেন। হযরত আয়েশা ভাবলেন, তিনি হয়ত অপর কোন মহিষীর নিকট গমন করতেছেন। এ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ধীর পদে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করলেন। দেখলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক কবরস্থানে মৃতদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনায় মগ্ন হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রার্থনা শেষ করে ফিরিতেছেন দেখে তিনি দ্রুতপদে আপন ঘরে প্রবেশ করলেন।

        হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগেই এ ঘটনাটি উপলব্ধি করেছিলেন। ঘরে এসে তিনি আয়েশা (রা) কে বললেন, আয়েশা। মনের আনন্দ পরিহার কর, এটা আদর্শ চরিত্রের লক্ষণ নয়।

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ তিনি নিঃসংকোচে মনের গোপন কথাটি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট বললেন। সাথে সাথে স্বীয় অপরাধ মার্জনার জন্য তাঁর নিকট আবেদন জানালেন। নবী পরিবারের চিরসাথী ছিল নিদারুণ অভাব। অনেক মহিষীই গৃহে আসার পূর্বে অভাব চিনিতেনই না। তারা এরূপ দুঃখ-দৈন্যের মধ্যে জীবনযাত্রায় মোটেই অভ্যস্ত ছিলেন না।

        ইতোমধ্যে তাখাইয়্যুর অধিকারের আয়াত নাযিল হল। তাঁদেরকে এ অধিকার প্রদান করা হল, যার ইচ্ছা নবী গৃহিণী হয়ে থাকতে পারে, যার ইচ্ছা সে নবীর পত্নীত্ব ত্যাগ করে চলে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু উন্মুল মুমিনীনদের মধ্যে এমন একজনও হলেন না যে, যিনি ইহকালীন সামান্য ধনের মোহে সম্রাটের সঙ্গত্যাগ করে চলে যান। অভাব-অনটন আরো তীব্র হলেও তারা সকলেই হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে আপনাকে বিলিয়ে দিয়ে গণ্য হতে সম্মতি জ্ঞাপন করলেন। তবে সকলের পূর্বে হযরত আয়েশা তাঁর সম্মতির কথা হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমীপে পেশ করলেন। তিনি হুযুরের নকট নারীসুলভ অপর একটি কথাও বললেন, 'আমি সকলের পূর্বে সম্মতি প্রদান করেছি একণা অন্য কারও নিকট প্রকাশ করবেন না। তা দ্বারা বুঝা যায় যে, হযরত আয়েশা (রা) হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইরি ওয়া সাল্লামকে কত গভীরভাবে ভাল বাসতেন। তাঁর নিকট অভাব-অনটন প্রিয় স্বামীর মোকাবিলায় অতি তুচ্ছ ছিল।

        হযরত আয়েশা আপন হাতে গৃহের সমুদয় কাজ সমাধা করত। নিজেই রান্না-বান্না করে আপন হাতে হুযূর পাককে খাওয়াতে বিশেষ আনন্দ পেতেন। কোন পরিচারিকার দ্বারা কখনও তিনি কাজ করাতেন না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুর পানি তিনি সর্বদা আপন হাতেই যোগাড় করে রাখতেন। এমন কি ঘরের বিছানা কখনও অপরের হাতে করাতেন म।

        মোটকথা, সাংসারিক যাবতীয় কাজ তিনি নিজেই করে তৃপ্তি বোধ করতেন। তিনি নিজ হাতে চিরুণী দ্বারা হুযুর পাকের দাড়ি, চুল আঁচড়িয়ে দিতেন বা সুগন্ধি মেখে দিতেন। অর্থাৎ তিনি হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যাবতীয় খেদমত করতে পারলেই নিজেকে ধন্য মনে করতেন। 'তাখাইয়্যুর-এর আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কিছুকাল পরে 'আয়জার আয়াত নাযিল হয়। এ আয়াতে আল্লাহ পাক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই অধিকার দিলেন যে, আপনি যাকে ইচ্ছা রেখে অপরকে পরিত্যাগ করতে পারেন। কিন্তু জগতের সেরা চরিত্রবান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবতার খাতিরে এ অধিকার কারও উপর প্রয়োগ করলেন না।

        এ প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা বলেন, 'হুযুর। আপনাকে আল্লাহ তা'য়ালা যে অধিকার দান করেছেন আমাকে প্রদান করলে একজনকে রেখে আর সকলকে বিদায় দিতাম।

        নবী করীম ও হযরত আয়েশা অধিকাংশ সময়েই একই প্লেটে আহার করতেন। রাতের বেলায় অনেক সময় হযরত আয়েশা (রা)-এর ঘরে বাতি দিবার সংস্থান থাকত না। বাধ্য হয়ে অন্ধকারেই উভয়ে খেতে বসতেন। অন্ধকারে হযরত আয়েশা (রা) কোন একখানা গোস্তের টুকরার উপর হয়ত হাত রেখেছেন এমন সময় ঘটনাক্রমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সে একই টুকরায় হাত দিতেন। এ ঘটনায় উভয়েই মহা কৌতুকে হেসে উঠতেন।

        নবী করীম কোন একখানা হাডিড খাওয়ার পর দস্তরখানে রাখলে হযরত আয়েশা (রা) তা চুষে খেতেন। আবার আয়েশা (রা) রাখলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা চুষে খেতেন। পানি পান করার জন্য একটি পেয়ালাই ব্যবহার করতেন। পেয়ালার যে জায়গায় মুখ রেখে হযরত আয়েশা (রা) পানি পান করতেন নবী করীমও ঠিক সেখানে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন। এ ছিল তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসার মধুর সম্পর্ক।

        কোন কোন বিদ্বেষপরায়ণ চরিতকার বিশেষ করে উরোপীয় ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন যে, হযরত আয়েশা (রা) ও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যকার ভালবাসা এক তরফা ছিল। তাদের ধারণা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপেক্ষা হযরত আয়েশা (রা) অল্প বয়স্কা হওয়ায় তিনিই হযরত আয়েশাকে মনে-প্রাণে ভালবাসতেন। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সী নবী করীমকে হযরত আয়েশা (রা) আন্তরিকতার সাথে কোন সময় গ্রহণ করতে পারেন নি।

        তাদের এ কল্পনাপ্রসূত উক্তি যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তা হযরত আয়েশার বিবাহিত জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজে অতি সহজেই দিবালোকে ন্যায় পরিষ্কার হয়ে যাবে। হযরত আয়েশা (রা) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বামীরূপে পেতে নিজেকে দুনিয়ার সেরা ভাগ্যবতী বলে গর্ব করতেন। তিনি অতি সহজ ও স্বাভাবিকভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সকল সময় আপনার কাছে আঁকড়িয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করতেন। অথচ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপরাপর মহিষীগণ বিদ্যমান থাকায় তা সম্ভব হত না বলে তিনি স্বামীর প্রতীক্ষায় উদ্বিগ্ন চিত্তে কাল কাটাতেন। পালা হিসেবে যেদিন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর গৃহে তাশরীফ আনার কথা থাকত সেদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটু বিলম্বে আগমনকে তিনি কিছুতেই সহ্য করতে পারতেন না।

        রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অপর কেউ তাঁর চেয়ে অধিক ভালবাসে এ কথা তিনি কারও নিকট শুনতে পেলে তাঁর ধৈর্যের বাঁধ টুটে যেত। কারণ তাঁর চেয়ে অধিক কেউ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসে এটা ছিল তাঁর কল্পনার অতীত। তাই হযরত আয়েশা (রা) হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমত ও প্রেম-প্রীতি এবং সন্তুষ্টির নিমিত্ত তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থের কথা এক মুহূর্তের জন্যও চিন্তা করতেন না।

        একবার কোন সাহাবীর বিবাহ উপলক্ষে হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি ভোজের আয়োজন করতে মনস্থ করলেন। কারণ উক্ত সাহাবীর ভোজের ব্যবস্থা করার মোটেই সামর্থ্য ছিল না। তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক সাহাবীকে বললেন, আয়েশার (রা)-এর গৃহ হতে তরকারীর ঝুড়িটি নিয়ে এস। সে সাহাবী আয়েশা (রা)-এর গৃহ হতে ঝুড়িটি নিয়ে আসলেন।

        সেদিন হযরত আয়েশা (রা)-এর গৃহে এটা ব্যতীত খাওয়ার মত আর কিছুই ছিল না। তিনি তা রাসূল পাকের সন্তুষ্টির জন্য পরম আনন্দে পাঠিয়ে ঐ রাত্র নিজে অভুক্ত কাটালেন।

        হযরত আয়েশা (রা) দাম্পত্য জীবনে এমন কোন কাজ করতেন না, যাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসন্তুষ্ট হতে পারেন। তাঁর অসন্তুষ্টির লক্ষণ দেখলেও তৎক্ষণাৎ ঐ কাজ পরিত্যাগ করতেন। এ ব্যাপারে নিম্নবর্ণিত ঘটনাগুলোর প্রতি লক্ষ্য করলে তা সহজেই অনুধাবন করা যাবে, 'তাবুক যুদ্ধে হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জয়লাভ করেছেন শুনে হযরত আয়েশা তাঁর ঘরখানা সাধ্যমত সজ্জিত করলেন।

        হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরের দরজায় এসেই বিরক্তির ভাব প্রকাশ করলেন। তাঁর বিরক্তি লক্ষ্য করে আয়েশা তৎক্ষণাৎ দরওয়াজা হতে পর্দাখানা সরিয়ে ফেললেন।

        হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে আয়েশা (রা) কে বললেন, আল্লাহ তা'য়ালা আমাকে যে সব ধন-সম্পদ দান করেছেন তা মাটি বা ইট সাজাবার জন্য নহে। হযরত আয়েশা (রা) বিনম্রভাবে স্বীয় কাজের নিমিত্ত ক্ষমা চাইলেন। অনুরূপ আর একটি ঘটনা ঘটেছিল খয়বর যুদ্ধের সময়ও। খয়বর যুদ্ধে মুসলমানগণ জয়লাভ করেছেন শুনে হযরত আয়েশা (রা) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মনোরঞ্জনের জন্য ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ঘরের দরজায় লটকিয়ে দিলেন। এ পর্দা দেখামাত্রই হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারা রক্তবর্ণ ধারণ করল। হযরত আয়েশা বুঝলেন, তিনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তাই বিলম্ব না করে পর্দাখানা খুলে ফেললেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, প্রাণীর ছবি যে ঘরে থাকবে সেই ঘরে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। কাজেই ছবি রাখা নিতান্ত অন্যায়।

        হযরত আয়েশা (রা)-এর এ বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল সময়ই কর্তব্য কর্মে অতিশয় সজাগ ছিলেন। কোন প্রকার সুখ-শান্তি বা আরাম-আয়েশ তাঁকে কর্তব্য কর্ম হতে এক মুহূর্তের জন্যও বিরত রাখতে পারে নি।

        মানব প্রকৃতির আকর্ষণে তিনি স্ত্রীগণের সাথে মধুর সম্পর্ক স্থাপন করে তাদিগকে অভিভূত করে রেখেছিলেন। সাথে সাথেই তিনি আল্লাহর আদেশ পালনে, সমাজের উপকারে, মজলুমের করুণ আর্তনাদে আপন দেহ-প্রাণ বিনা দ্বিধায় বিলিয়ে দিয়ে যে আদর্শ স্থাপন করে গিয়েছেন তার নজীর পৃথিবীর বুকে আর কারও পক্ষে সম্ভব নহে।

        পতিপ্রাণা হযরত আয়েশা (রা) হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পদানুসরণ করে একদিকে যেমন একজন আদর্শ স্ত্রী হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেবা করে আপন জীবনকে ধন্য করতেন, তাঁকে আপনার নিকট জড়িয়ে রাখতে চেয়েছিলেন, পরক্ষণেই রাসূলুল্লাহর অন্যান্য মহিষীগণের অধিকার চিন্তা করে তন্মুহূর্তেই আপন প্রিয়জনকে সরল চিত্তে বিদায় দিয়ে করুণাময় আল্লাহ্ তা'য়ালার ইবাদতে নিমগ্ন হতেন। তাঁর এ মহান চরিত্র নারীকূলের জন্য এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বিশেষ। তাঁর দাম্পত্য জীবনের আদর্শ চিরদিন নারীর জন্য এক মহান শিক্ষা হিসেবেই পরিগণিত হবে। যে তাঁর শিক্ষার আলোকে আপন জীবনকে পরিচালিত করতে তাঁর নারী জন্ম সার্থক হবে।

Post a Comment

0 Comments