হযরত আয়েশা (রা) দাম্পত্য জীবন

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে হযরত আয়েশা (রা) ছিলেন আল্লাহ তা'য়ালার বিশেষ নিয়ামত ও প্রধান অবলম্বন। কেবল মাত্র আয়েশাই নন, ঘোর বিপদের দিনে যিনি নিজের ধন-সম্পদ তাঁর পদতলে লুটিয়ে দিয়ে একজন আদর্শ স্ত্রীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে প্রেম-প্রীতি দ্বারা হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনকে এক নতুন আলোকে উদ্ভাসিত করেছিলেন, সে খাদিজাতুল কুবরা হতে শুরু করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক মহিষীই প্রয়োজনীয় সাহায্যে উৎস হিসেবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কেউ বা দান করেছিলেন মাতৃস্নেহ, বোনের আদর, কেউ বা এগিয়ে এসেছিলেন আশ্রয় ও অভয় নিয়ে। কেউ বা দান করেছেন উৎসাহ-উদ্দীপনা। কেউ বা দান করেছেন পরম প্রীতি। কোন একজন নারী চরিত্রে এতগুলো গুণের সমাবেশ কিছুতেই সম্ভব নয়। বোধ হয় এজন্যই আল্লাহর ইদিতেই হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করে তাঁদের নিকট হতে জীবনের নানা ক্ষেত্রে নানাভাবে প্রেরণা লাভ করেছিলেন।

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মহিষীগণকে কিরূপ ভালবাসতেন তাঁর প্রমাণ মিলে তাঁর উক্তিতে। তিনি সাহাবিগণকে এরশাদ করলেন,

خيركُمْ لِي أَهْلِي وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِي أَهْلِي

        অর্থঃ তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম যে স্বীয় পত্নীর নিকট উত্তম আর আমি আমার পত্নীদের নিকট সকলের চেয়ে উত্তম।

        হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ সহজ, সরল ও হৃদ্যতাপূর্ণ বাণী দ্বারা তাঁর মহিষীদের প্রতি গভীর ভালবাসা এবং স্বামী-স্ত্রীর অধিকার নিরূপণ করে দিয়েছেন। প্রাচ্যের অনেকেই এ মত পোষণ করে থাকে, নারীর প্রতি প্রেম চরিত্রের একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। তাদের নিকট নারী শুধু ভোগের সামগ্রী। বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে, 'যদি নিরাপদ পথে চলতে চাও, তবে পথের কণ্টক নারী জাতিকে পথ হতে দূরে সরিয়ে দাও। আবার ইয়াহুদিগণ নারীকে মানব সমাজের জন্য এক চরম অভিশাপ তুল্য মনে করে।

        পক্ষান্তরে, পাশ্চাত্য দেশগুলোতে নারীকে দেবতা বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যে গোত্রে নারীর মর্যাদা অধিক, সে গোত্রই তাদের নিকট সমাদৃত। মুলমানদের বিধান স্বামীর নিকট স্ত্রীকে সমমর্যাদায় আসীন বলে ঘোষণা করেছে। এখানে রমণীকে ভোগের পর আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপের কথাও বলে নি আবার দেবতার আসনেও সমাসীন করার পক্ষপাতি নয়।

        ইসলামে নারীর স্থান এ দু'য়ের মাঝখানে। হযরত আয়েশা (রা) মাত্র নয়টি বছর স্বামী সোহাগে সৌভাগ্যশালিনী হয়েছিলেন। এ দাম্পত্য জীবনের নয়টি বছরের কেবল মাত্র ঈলার একটি মাস ছাড়া আর এমন কোন ঘটনাই ঘটে নি যে, তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতে পারে।

        সব সময় তাঁদের অভাব-অনটনের কথা চিন্তা করলেই আমরা দেখতে পাই যে, দিনের পর দিন হযরত আয়েশা (রা) অভুক্ত রয়েছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা (রা)-এর নিকট খানা চাওয়ার পর তিনি কোন কিছুই তাঁর সম্মুখে পেশ করতে পারেন নি। এমন অভাবও তাঁদের ভালবাসায় চির ধরাতে পারে নি; বরং তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

        হযরত আয়েশা (রা) এবং রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানব প্রকৃতির ঊর্ধ্বে ছিলেন না। তাই দেখা যায়, মাঝে মাঝে তাঁদের মধ্যে মান-অভিমানের সৃষ্টি হয়েছে তাঁদের ভালবাসা আরো গাঢ় হতে গাঢ়তর হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা) কোন সময় অভিমানবশত রাগ করলে তা অতি সহজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট ধরা পড়ত।

        একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশাকে বললেন, 'আয়েশা। তুমি যখন আমার সাথে খোশ মেজাজে থাক তখন বল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আল্লাহর কসম, আর অভিমানের সময় বল, ইব্রাহীম (আ)-এর আল্লাহর কসম।

        হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কৌতুকপূর্ণ উক্তি শুনে হযরত আয়েশা (রা) কিছুটা অপ্রস্তুত হলেন এবং বললেন, 'ইয়া রাসূলাল্লাহ্। অভিমানের সময় কেবল আপনার নামটিই বাদ দেই।

        হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও কখনও হযরত আয়েশাকে উপদেশমূলক কাহিনী শুনাতেন। আবার আয়েশাও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তদ্রূপ গল্প শুনিয়ে তৃপ্তি দান করতেন।

        হযরত আয়েশা (রা) উম্মুল মুমিনীনগণের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠা ছিলেন। তাই হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে অধিক ভালবাসতেন। তাঁর সামান্য কষ্টের আশঙ্কায় হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন।

        একবার 'সালাসিল-এর জেহাদ হতে ফিরার পথে হযরত আয়েশা (রা)-এর উটটি অতি দ্রুত দৌড়াতে আরম্ভ করল। অল্প সময়ের মধ্যেই উটটি হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল। এ ঘটনায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষভাবে ভেঙ্গে পড়লেন এবং বার বার সঙ্গীদের নিকট বলতে লাগলেন, যদি আয়েশা পড়ে যায় তবে কেমন চোট পাবে। তাঁর এ ব্যথা আমি কিভাবে সহ্য করব? আর আমি তাঁর পিতার নিকটই বা কি জবাব দিব?

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল হযরত আয়েশাকেই অধিক ভালবাসতেন বলে সব সময় আপনার কাছে রাখতেন তা নয়। কোন যুদ্ধে বা ভ্রমণে যাওয়ার সময় তিনি মহিষীগণের নামে লটারী চালিয়ে লটারী অনুযায়ী তাদিগকে সঙ্গিনীরূপে নিতেন। এরূপ লটারীর মাধ্যমে হযরত আয়েশা বনী মুসতালিকের দুটি যুদ্ধে, হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় এবং বিদায় হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহযাত্রী হয়েছিলেন।

        হযরত আয়েশা (রা) বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার সাথে খোশগল্প বা আমোদ-আহ্লাদ করতেছেন, এমতাবস্থায় মসজিদে আজান ধ্বনিত হলে মনে হল তিনি আমাকে চিনেন না, এরূপভাবে তিনি ঐ স্থান ত্যাগ করতেন।

        রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আয়েশাকে অন্যান্য মহিষীগণ অপেক্ষা অধিক ভালবাসতেন ইহা সাহাবাগণও অবগত ছিলেন। তাই রাসূলুল্লাহ্ যেদিন হযরত আয়েশার। ঘরে গমন করতেন সেদিন সাহাবাগণ বেশি পরিমাণে তোহফা আয়েশার ঘরে প্রেরণ করতেন। এ বিষয়টি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপর মহিষীগণ আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করতে পারেন নি। তাই তাঁরা হযরত ফাতেমাকে এর কারণ জানার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে প্রেরণ করলেন।

        হযরত ফাতেমা তাঁর নিকট বর্ণিত বিষয়টির কারণ জানতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ স্নেহের কন্যার নিকট এ কথা শুনে বললেন, মা। আমি যাকে চাই, তুমি কি তাকে চাবে না? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উত্তরে তাঁর আর বুঝার বাকি রইল না। তিনি নিঃশব্দে রাসূলুল্লাহর দরবার হতে বিদায় নিয়ে চলে আসলেন। উম্মুল মুমিনীনগণ পরিষ্কার জবাবের আশায় পুনঃ ফাতেমাকে রাসূলুল্লাহর দরবারে পাঠাতে চাইলেন। কিন্তু তিনি যেতে অসম্মতি জানান। উন্মুল মুমিনীনগণের মধ্যে সালমা ছিলেন অতিশয় বুদ্ধিমতি।

        কোনও সমস্যা সমাধানে তিনি ছিলেন বিশেষ পটু। তাই এ বিষয়ে একটি সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সকলে একমত হয়ে তাকে মনোনীত করলেন। হযরত উম্মে সালমা কোন এক সুযোগে কথাটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালেন। তাঁর বক্তব্য শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, উম্মে সালমা। আয়েশা সম্বন্ধে বলে আমাকে বিরক্ত করিও না। কারণ আয়েশার বিছানা ছাড়া অপর কোন স্ত্রীর বিছানায়ই আমার নিকট অহী অবতীর্ণ হয় নি। হযরত আমর ইবনুল আস বলেন, সালাসিল যুদ্ধ হতে ফিরার পর আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। দুনিয়ায় আপনি কাকে অধিক ভালবাসেন।

        হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আয়েশাকে। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, পুরুষের মধ্যে কাকে অধিক ভালবাসেন। V

        হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আয়েশার পিতাকে। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আয়েশাকে কি পরিমাণ ভালবাসতেন তা দাম্পত্য জীবনের অতি ক্ষুদ্র একটি ঘটনায় সকলের চোখে অতি সহজেই ধরা পড়বে।

        একদা কোনও এক মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার বাড়িতে দাওয়াত দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, আয়েশাও নিমন্ত্রিত হয়েছে কি না। মহিলা বলল, না।

        মহিলার উত্তর শুনে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি তোমার দাওয়াত গ্রহণ করতে পারলাম না। মহিলা পুনরায় তাঁকে অনুরোধ করল। এবারও তিনি তার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করলেন।

        সে মহিলা হযরত আয়েশা (রা) কে দাওয়াত করলে তৎক্ষণাৎ তার দাওয়াত কবুল করলেন এবং আয়েশা (রা)কে সাথে নিয়ে দাওয়াত রক্ষা করলেন। এক সময় খয়বর যুদ্ধবন্দীদের কয়েকজনকে হযরত আয়েশার হেফাজতে রাখা হল।

        তাঁর অন্যমনষ্কতার সুযোগে বন্দীগণ পালিয়ে গেল। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে দেখলেন, বন্দীগণ পালিয়ে যাবার কারণে হযরত আয়েশা (রা) চিন্তান্বিত অবস্থায় বসে আছেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বন্দীদের পালিয়ে যাবার খবর শুনে বললেন, এ অবহেলার দরুণ তোমার হাত কাটা যাবে।

        ইতোমধ্যে পলাতক অপরাধীদের ধরার জন্য সাহাবাগণকে পাঠায়ে দিলেন। অনেক খোঁজাখুঁজি ও চেষ্টার পর সাহাবাগণ পলাতক বন্দীগণকে পুনরায় বন্দী করলেন।

        এরপর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলেন। হযরত আয়েশা (রা) তাঁর হাত দু'খানা বার বার উলট-পালট করে দেখতেছেন। প্রথমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা (রা)-এর এ হেয়ালীপনা বুঝতে পারলেন না। তিনি এর কারণ জিজ্ঞেস করলে আয়েশা (রা) বললেন, কোন হাতখানা কাটা যাবে তা আমার জানা নেই। তাই দু'খানা হাতই শেষ বারের মত দেখে নিচ্ছি। হযরত আয়েশার এ করুণ উক্তি শ্রবণ করে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোমল অন্তর বিগলিত হয়ে গেল। তিনি আল্লাহ পাকের দরবারে হযরত আয়েশা (রা) অপরাধ মার্জনার জন্য মুনাজাত করলেন। আরব দেশে যেমন কুৎসিত ও বর্বরোচিত মেলা, আমোদ-প্রমোদ ও খেল-তামাশার প্রচলন ছিল, পাশাপাশি নির্দোষ, আনন্দদায়ক ও বীরত্বপূর্ণ খেলা-ধূলা, যেমন, ঘোড়দৌড়, কুস্তি ও তীর নিক্ষেপ ইত্যাদিরও প্রচলন ছিল।

        এ সকল খেলা-ধূলায় আরবের অধিকাংশ চরিত্রবান বীর যুবকও অংশগ্রহণ করত। সাধারণত ঈদের সময়ই এসব খেলার আয়োজন হত।

        রাসূলুল্লাহ এটা নিজে দেখতেন এবং স্বীয় মহিষীগণকে সাথে করে নিয়ে পর্দার অন্তরাল হতে তা দেখার ব্যবস্থা করতেন। অনেকের ধারণা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আয়েশা (রা)-এর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে অধিক ভালবাসতেন।

        কিন্তু তাদের এ ধারণা মোটেই সত্য নহে। কেননা রূপের মোহে আকৃষ্ট হলে নবী করীমকে হযরত সুফিয়া, জয়নব ও যোওয়াইরিয়া প্রমুখকেই অধিক ভালবাসতে হত। কারণ উম্মুল মুমিনীনগণের মধ্যে তাঁরা ছিলেন সবচেয়ে রূপসী। তাঁদের রূপের কথা লোকমুখে ঘোষিত। হাদীস এবং ইতিহাসে তাঁদের রূপের বর্ণনা রয়েছে।

        হযরত আয়েশা (রা)-এর গায়ের রং ছিল গৌর বর্ণের। রূপে-গুণে তুলনামূলকভাবে তিনি উপরোক্ত তিন জন উম্মুল মুমিনীন অপেক্ষা কম ছিলেন। হযরত আয়েশার রূপের কথা অতি ক্ষীণভাবে দু এক বর্ণনায় পরিলক্ষিত হয়।

        একদা হযরত ওমর (রা) স্বীয় কন্যা হাফসা (রা) কে বললেন, তুমি আয়েশার প্রতি বিদ্বেষভাব কখনও পোষণ করো না। তিনি তোমা অপেক্ষা অধিক রূপবতী এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট অধিক স্নেহের পাত্রী। হযরত ওমরের এই উডিতে নবী করীম মৃদু হাসলেন।

        হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেছেন এবং সহীহ মুসলিম ও আবু দাউদ শরীফে হযরত আবু হুরায়রাহ হতে বর্ণিত রয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, চারিটি বিষয়ের প্রতি বিচার-বিবেচনা করে বিবাহের পাত্রী বাছাই করা বাঞ্ছনীয়। যথা-

    ১। ধন-সম্পদ, ২। সৌন্দর্য, ৩। বংশাবলি এবং ৪। ধার্মিকতা।

        তবে তোমরা ধর্মপ্রাণ কনেই বিশেষভাবে খোঁজ করবে। কারণ এ প্রকার পাত্রীই স্ত্রী হবার জন্য অধিক উপযুক্ত। যেহেতু তার দ্বারা বেশি পরিমাণে ধর্মীয় কাজ সমাধান হয়ে থাকে। মূলত নবী করীম হযরত আয়েশাকে বেশি ভালবাসার কারণ হল, তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল তীক্ষ্ণ। যে কোন মাসয়ালা ও ধর্মীয় অনুশাসন তিনি একবার শুনলে স্মরণ রাখতে পারতেন। এ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট তিনি অতি প্রিয় ছিলেন। আল্লামা ইবনে হযম একটি দলিল দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন হযরত আয়েশা (রা) কে ভালবাসতেন। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, পুরুষের মধ্যে বহু মনীষী চলে গিয়েছেন। রমণীদের মধ্যে হযরত ঈসা (আঃ)-এর জননী এবং ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া ব্যতীত অপর কোন মহিলা আয়েশা (রা) হতে মর্যাদার চরম শিখরে আরোহণ করতে পারেন নি।


Post a Comment

0 Comments