মেরাজের মূল উদ্দেশ্য ছিল নবী (সঃ)-কে আল্লাহর মহিমার কীর্তিকলাপ দেখানো। যেমন আল্লাহ তায়ালার বাণী-
بارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ أَيَّاتِنَا .
অর্থাৎঃ "এ মেরাজের উদ্দেশ্য হল-আমি আমার হাবীবকে আমার কুদরতে কামেলার আশ্চর্য আশ্চর্য নিদর্শনসমূহ অবলোকন করানো।"
যেহেতু মহানবী (সঃ) দুনিয়াবাসীদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিবেন। তাদের বেহশত ও দোজখের কথা বলবেন। কিন্তু কোন বস্তু সম্পর্কে দেখে বলা আর না দেখে বলার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে, তাই মেরাজের মাধ্যমে আল্লাহ এবং তার নিদর্শনাদি বেহেশত, দোজখ, বেহেশতের নেয়ামত, দোজখের আযাব, ফেরেস্তা, আসমান, আয়শ কুরনী মালায়ে আলা প্রভৃতি প্রত্যক্ষ করিয়ে দেয়ার জন্য এই মেরাজের। এ ছাড়াও মেরাজ সংঘটিত হওয়ার মধ্যে কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন-
মহানবী (সঃ)-এর সান্তনার জন্য ঘরের বাইরে ছিলেন তার তার আপন চাচা আবু ৩৬০ যার ছায়াতলে আট বছর বয়স থেকে এ পর্যন্ত তিনি রয়েছেন। কাফেরদের বিরুদ্ধাচারণ আর। নির্যাতনের সময় তিনিই এগিয়ে এলে মহানবীকে সাহায্য করতে এবং স্বীয় সরদারীর প্রভ রাতেন এবং প্রভাবে কাফেরদেরকে বিভিন্ন অত্যাচার থেকে বিরত রাখতেন। আর মহানবী (সঃ) পারিবারিকভাবে ঘরে সান্ত্বনা দিতেন হযরত খাদিজ (রাঃ)।
ঘরে হযরত খাদিজা (রাঃ)-এর সান্ত্বনা দান এবং বাইরে আবু তালেবের সহায়তার কারণে মহানবী (সঃ) এগার বছর এমনি করে ইসলামের দওয়াতের কাজ করেছেন। কিন্তু সেই এগারই সনে আবু তালেব এবং হযরত খাদিজা (রাঃ) দু'জনেই অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে ইন্তেকাল করলেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মহানবী (সঃ) অতান্ত মর্মাহত হন। আল্লাহর হাবীব ব্যথিত থাকবেন আল্লাহ পাক তা চান না। তাই তাকে বেদনাযুক্ত করা কল্পে মহানবীকে মেরাজে ডেকে পাঠালেন। মেরাজের বিভিন্ন উদ্দেশ্যের মধ্যে এটাও একটা বটে।
আল্লাহ হচ্ছেন আহকামূল হাকেমীন রাজাধিরাজ। তার রাজত্বের সীমা নেই। সমগ্র সৃষ্টির তিনিই একমাত্র অধিকারী। আর তার হাবীব মহানবী (সঃ) হচ্ছেন বিশ্বনবী। মানে মানব-দানব এবং আরো জাত জাতি রয়েছে তিনি সকলের নবী এবং শেষ নবী। তার পরে আর কোন নবীর আগমন হবে না। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে-
بهم ادم كَامِكُمْ وَرُوحُ كَنُوحِكُمْ وَإِبْرَاهِيمُ كَابُرْ هِبْمُكُمْ وَمُوسَى كَمُونَكُمْوعلى كَعِكُمْ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ كَانَي بَعْدِي ..
অর্থাৎঃ যমীনের যেসব স্তরে, তোমাদের আদম (আঃ)-এর মত সেখানেও আদম আছেন তোমাদের নুহ (আঃ)-এর মত সেখানেও নূহ আছেন। তোমাদের ইব্রাহীম (আঃ)-এর মত সেখানেও ইব্রাহীম আছেন। তোদের ঈসা (আঃ)-এর মত সেখানেও ঈসা আছেন। আর আমি হলাম সবার জন্য সর্বশেষ নবী, আমার পর আর কোন নবী নেই। এখানেও নয়, সেখানেও নয়।"
অতএব, হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে, মহানবী (সঃ) কেবল এ দুনিয়ার জন্যই নবী ছিলেন না, বরং দুনিয়া ও আকাশের যত পরিধি আছে, অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টির বা ফুল মাখলুকাতের জন্যই তিনি নবী।
আল্লাহর রাজত্বর কোন সীমা নেই-অসীম। সুতরাং রাসুল (সঃ)-এর রিসালাতেরও সীমা নেই। আল্লাহ তার সৃষ্টির উপর রাজত্ব করেছেন, তাই রাসূল (সঃ)-কে তার রিসালতের সীমানা জরিপ করিয়ে দেয়ার জন্য এই মেরাজের আয়োজন।
আল্লাহ পাক সমস্ত কিছু সৃষ্টি করার পর ঘোষণা করলেন-"এবার আমি আমার সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য সব শেষ নবীকে সৃষ্টি করব, যার জন্য এ সমুদয় সৃষ্টির আয়োজন করেছি। সুতরাং হে আমার সমূদয় সৃষ্টি? তামরা জান কি যে, আমি তাকে কোথায় সৃষ্টি করব।"
এতদুত্তরে সৃষ্টি সমুদয় এক বাক্যে আরজ করল-"হে প্রভু! আপনার যেখানে ইচ্ছে সেখানেই হবে। তবে মিনতি করি এ গৌরবটা যেন আমাকে দান করা হয়।" সমগ্র আকাশ বলল- "প্রভু! এ গৌরবটা যদি আমাকে দান করা হয় তবে চির ধন্য হবো।"
এমনি করে বেহশত, দিন, রাত, চাঁদ, সুরুজ অর্থাৎ প্রত্যেকেই নিজ নিজ মনের বাসনার কথা ব্যক্ত করল যে, "শেষ নবী আমার মধ্যে জন্মগ্রহণ করুক আর আমি এ নিয়ে চিরদিনের জন্য গর্ববোধ করি।"
শেষ নবী সম্পর্কে সৃষ্টির ধ্যান-ধারণা যাচাই করাই ছিল স্রষ্টার তথা আল্লাহ পাকের উদ্দেশ্য। কিন্তু দেখা গেল প্রত্যেকেই সেই শেষ নবীর আগমন নিজের মধ্যে সীমিত করার জন্য ব্যকুল। তাই আল্ল আল্লাহ পাক বলেন-" তোমরা যে যে যাই বল না কেন, হবে সেটা। এই যা আমি আামি ইচ্ছা কার। অবশ্য তোমাদে আকাংখাও আ আমি পূরণ রণ করব। কাকেও বঞ্চিত বা ব্যথিত কর করা হবে না
অবশেষে দেখা গেল, দুনিয়াতেই সেই মহানবী (সঃ)-এর শুভাগমন হয়েছে। দুনিয়া নিয়া ছাড়া আর সবাই বাই সৌভ নীভাগ্য হতে বঞ্চিত রইল। আস মাসলে কিন্তু তা নয়।।। তিনি দুি দুনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছে সত্য রাতের শেষাংশে দিনের প্রথমাশে তার এই শুভাগমন এমন হয়েছে য়ছে দুনিয়ায়। তাই রাত বলে আমার শেষাংশে এসেছেন, দিন বলে আমার প্রথমাংশে আগমন করেছেন। এমনি করে এরাও আনন্দ করে যদি এর বিপরীত অর্থাৎ দিনের শেষ হতো এবং রাতের শুরুতে হত তাহলে এটা শুভ হয়েছে বলে ধরা জেত না। কারণ তখন এই অর্থ নেওয়া হত তিনি আসলে আসলেন আর দুনিয়া অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল। কিন্তু এখন তা বলা যাবে। তিনি আগমন করলেন আর অমনি সারা দুনিয়াটা আলোকিত হয়ে উঠল।
আল্লাহ পাক তার প্রিয় নবীকে মেরাজের মাধ্যম সপ্ত আকাশ আরশ কুর আলাসহ বেহেশত, দোজখ এবং সমস্ত লীলা পরিদর্শন করিয়ে দিয়ে একা একদিকে যেমন তার হাবীব (সঃ)-এর মন তুষ্ট করেছে রছেন অপরদিক আল্লাহর সেই আগেকার ওয়াদা যে, তোমরা যার শুভাগমনের আকাঙ্ক্ষা করেছিলে আজ আমি তাঁকে তোমাদে এসে তামাদের ধন্য করলাম। এজন্যই মেরাজের আয়োজন।
মেরাজের ফজিলত
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত তিনি বলেন- রাসূল (সঃ) বলেছেন- "যে ব্যক্তি সাতাশে রজব রোজা রাখবে, সে যেন যাট মাসের রোজা রাখল।" তবে ঐদিনের রোজা সুন্নাত মনে করে নয় বরং অন্যান্য দিনের রোজার মত মনে করতে হবে।
এমনি ভাবে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- "যে ব্যক্তি ২৭ শে রজব ইবাদত করবে, তার আমল নামায় একশো বছরের ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে আর যে ব্যক্তি ঐ রাতে এই নিয়মে বারো রাকাত নামাজ পড়বে যে, প্রত্যেক দু'রাকআতে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পড়বে, প্রত্যেক দু'রাকাতে সালাম ফিরাবে এবং বারোরাকাত পূর্ণ হলে এই দোয়া-
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلهَ إِلَّا اللهُ اللهُ أَكْبَرُ الأَحَولَ وَلأَقوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ العلي العظيم.
একশো বার এবং যে কোন দরূদ শরীফ একশো বার পড়ে দনিয়ার জায়েজ যে কোন মাকছুদের জন্য দোয়া করবে এবং পরের দিন রোজা রাখবে। আল্লাহ তায়ালা তার ঐ মাকছুদ পূর্ণ করবেন।
আল্লামা ইবনুল হাজার আসকালানী হাদীস বর্ণনা করেন যে "যে ব্যক্তি ২৭শে রজবের রাতে বারো রাকাত নামাজ এই পদ্ধতিতে পড়বে যে, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পাঠ করবে। অতঃপর প্রতি দু'রাকাতে সালাম ফিরাবে তারপর নামাজের জায়গায় বসে সাতবার সূরা ফাতিহা পড়ে চার বার এই দোয়া পড়বে।
سبحان اللهِ وَالْحَمْدُ لله ولا إله إلا الله اللهُ أَكْبَرُ لأَحَولَ وَلا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ العلي العظيم.
তারপরের দিন ২৭শে রজবের রোজা রাখবে। আল্লাহ তায়ালা তার যাট বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন।
0 Comments