হিজাব সম্বন্ধে জাপানের নও-মুসলিম খাওলার অভিমত

            পবিত্র ইসলাম সম্বন্ধে আমার অভিমত হলো: ফ্রান্সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পূর্বে অধিক সংখ্যক জাপানীদের ন্যায় আমি কোন ধর্মের অনুসারী ছিলাম না। ফ্রান্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য চর্চা নিয়েই আমার অধিক সময় কেটে যেত। নাস্তিকতাবাদে বিশ্বাসী সয়টার, নাঈছেজ ও কামাস আমার পছন্দনীয় চিন্তাবিদ ছিলেন। আমার অন্তরের প্রয়োজনে নয় বরং সত্যিকারের ভালবাসার প্রয়োজনে একই সাথে ধর্মবিষয়ে আমাকে উৎসুক করে তুলল। মৃত্যুর পর কি ঘটতে পারে মোটেই সে ব্যাপারে নয়। আসলে কিভাবে বাঁচতে হবে তাই ছিল আমার উদ্বিগ্নতা। অধিক সংখ্যক বিশ্ব মানবতা বিশেষ করে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে পরিচালিত পশ্চিমা দেশসমূহের মানুষের জন্য ব্যাপারটি উদ্বেগজনক। মানুষ যা পায় তার চাইতেও অধিক পাবার আশায় কর্মমূখর হয়ে ওঠে। আজকের দ্বিতীয় পর্যায়ের বস্তুকে আগামীকালের প্রয়োজন ধরে নেয়া মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক ঘোষিত মধ্যপন্থাকে কিছুসংখ্যক ব্যতীত বাকী সকলেই অবহেলা করে আসছে। (ডাঃ এম. আস. সালেহ)

        বহুকাল ধরে আমার মনে দাগ কাটছিল যে, আমার যা করণীয় তা আমি করছি না এবং আমি শুধু সময় নষ্ট করছি। আল্লাহ আছেন কি নেই এ বিষয়ে ভাবাতুর না হয়ে সত্য অনুসন্ধান ও উদঘাটন সাপেক্ষে আল্লাহতে অথবা আল্লাহ ব্যতীত জীবন পরিক্রমা নির্বাহ বিষয়টি আমাকে ভাবাতুর করে তুলছিল।

        (বোন খাওলা ১০/২৫/১৯৯৫ ইং সউদী আরবের বুরাইদা আল কাসিম ইসলামিক সেন্টারের মহিলা দপ্তর পরিদর্শন করেন। মুসলমান ভাই-বোনদের সাথে একযোগে মিলিত হওয়া এবং খাওলার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ঘটনা, অভিজ্ঞতা ও হিজাব সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও উপদেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।)

         আমি ইসলাম ব্যতীত অন্যান্য ধর্মীয় পুস্তকাদি পড়তে শুরু করলাম। আসলে স্থসলাম ধর্ম সম্বন্ধীয় পুস্তকাদি পড়া আদৌ উপযোগী কিনা এ কথা আমি কোনদিন চিন্তা করিনি। আদিম পৌত্তলিকতার প্রভাবে সহজ সরল মনে কতইনা অজ্ঞ ছিলাম আমি তখন। আমি খৃস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করেছিলাম এবং বাইবেল পাঠ করে কয়েক বছরের মধ্যে আল্লাহর অস্তিত্ব সম্বন্ধে জানতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু তারপরও আমি দোদুল্যমনা অবস্থায় পড়লাম। আল্লাহ আছেন দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাবার পরও তাঁর অস্তিত্বহীনতা অনুভূত হত। আমি গির্জায় প্রার্থনা করতে চেষ্টা করতাম কিন্তু বৃথা। তারপরও আল্লাহর অস্তিত্বহীনতা ছাড়া আর কিছুই অনুভব করতাম না। জৈব ও যৌগের মাধ্যমে আল্লাহর অস্তিত্ব জানার আশায় এরপর আমি বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ে পড়তে লাগলাম। বৌদ্ধ ধর্মের মাঝে এমন কিছু পেলাম যা খৃষ্টান ধর্মের সাথে মিল ও সঠিক বলে প্রতীয়মান হলো, তারপরও অনেক কিছু বোধগম্য হলো না এবং আমি গ্রহণ করতে পারলাম না। আমার ধারণা জন্মিল, যদি আল্লাহর অস্তিত্ব থেকেই থাকে তাহলে তিনি হবেন সবার জন্য এবং সত্য যা তা সকলের জন্য পরিচ্ছন্ন ও বোধগম্য হবে। মানুষ কেন তার সাধারণ জীবন পরিত্যাগ করে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হবে, এটাও আমার বোধগম্য হয়নি। জীবন-মরণ আল্লাহ তাআলার অনুসন্ধানে পরিব্যাপ্ত হয়ে তার শেষ ফলাফলে পৌঁছতে কিংবা পরিসমাপ্তি ঘটাতে প্রকৃতপক্ষে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছি। ফ্রান্সে লালিত-পালিত ও জন্মগ্রহণকারী এক আলজিরীয় মুসলমানদের সাথে আমার পরিচয় হয়, প্রার্থনা কিভাবে করতে হয় তাও সে জানত না এবং তার জীবন প্রবাহ ইসলামী মতবাদ হতে অনেক বিচ্ছিন্ন মনে হলো। কিন্তু তা সত্ত্বেও মহান আল্লাহর প্রতি তার প্রগাঢ় বিশ্বাস ছিল। জ্ঞানহীন হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস আলোকে আলোড়িত করল, আমি ইসলাম ধর্ম বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করলাম। এই অনুভূতির সাথে সাথে আরবি ভাষায় অনুদিত একখানা কুরআন শরীফের অনুবাদ ক্রয় করলাম কিন্তু দু'পাতার বেশী পড়তে সক্ষম হলাম না। তা আমার কাছে অতীব কঠিন ও অসাধ্য মনে হল। একাকী অনুশীলন বাদ দিয়ে প্যারিসের এক মসজিদে গেলাম। সেদিন ছিল রোববার, ঐখানে মহিলাদের এক সভায় বক্তৃতা চলছিল। সকল মহিলা আমাকে সাদর অভ্যর্থনা জানাল। মুসলমান মহিলাদের সাথে আমার মুখোমুখি সাক্ষাতের এটাই প্রথম ঘটনা। তাদের সাহচর্য আশ্চর্যজনক এবং আমার মুখোমুখি সাক্ষাতের এটাই প্রথম ঘটনা। তাদের সাহচর্য আশ্চর্যজনক এবং আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছিল। আমি নিজেকে সহজ মনে করছিলাম। যদিও খৃষ্টানদের সাথে মেলামেশায় নিজেকে অপরিচিত মনে হচ্ছিল। প্রতি সপ্তাহান্তে আমি ঐ সভায় অংশগ্রহণ করতে আরম্ভ করলাম, সভার কোন এক মুসলমান আমাকে একটা সহ দিয়েছিলেন এবং আমি তা পড়তে লাগলাম। প্রতিটি মুহূর্তের বক্তৃতা এবং প্রতিটি পাতার অধ্যয়ন আমাকে আধ্যাত্মিক তৃপ্তি দান করছিল যা ইতিপূর্বে কখনও অনুভূত হয়নি। আমাকে এক উত্তেজনাকর অনুভূতি যেন সত্যের দিকে ধাবিত করতে শুরু করল। সুবহানাল্লাহ (সমস্ত প্রশংসাই মহান আল্লাহর জন্য)। আমি যখনই সেজদায় যেতাম তখনই মাহান আল্লাহ আমার অতি সন্নিকটবর্তী রয়েছেন বলে অনুভব করতে লাগলাম।

Post a Comment

0 Comments