(১৩) সাধ্য এবং সামর্থা থাকলে মুসলমানের মধ্যে কলহ-বিবাদ মীমাংসা করে দেবে। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, আমি কি তোমাদেরকে নামায, রোযা, ও যাকাত অপেক্ষাও অধিক সম্মানিত একটি বিষয়ের সংবাদ দেব না? ছাহাবীগণ বললেন, নিশ্চয়ই দেবেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তিনি বললেন, বিষয়টি হল, পরস্পরের মধ্যে কলহ-বিবাদ মীমাংসা করে দেয়।। কেনন। পরস্পরের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদই ধ্বংসকর বস্তু। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আফলাপুষ হাসাবাতি ইখলাছ ধাতাল বাহানা, অধীন দু'জনের মধ্যে বিভোর আলাদা করে দেয়াই সর্বাপেক্ষা উত্তম দানের কাজ।
হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, একদা হযরত রাসুলে করীম (দঃ) উপবিতাবস্থায় নিজে নিজে হাস্য করতে লাগলেন। এমনকি সে হাস্যে তাঁর দু'একটি দন্ড যুবারকও দেখা যেতে লাগল, তা' দেখে হযরত ওমর (রাঃ) আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ। আমার পিতামাতা আপনার প্রতি কুরবান হোক। আপনার এন্ডন হাস্য করার কারণ কি? তিনি বললেন, আমার উন্মতের মধ্যে দু' ব্যক্তি মহা সম্মানিত প্রস্তুর নিকট নতজানু হয়ে বয়েছে। তার একজন বলছে, হে প্রভু। এ ব্যক্তির নিকট থেকে আমার ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করুন। সে আমার উপর অত্যাচার করেছে। আল্লাহতায়ালা বললেন, তুমি তার প্রাপ্য হক পরিশোধ করে দাও। সে বলল, হে প্রভু। আমার নিকট ছওয়াবের আর কিছুই বাকী নেই। যা' কিছু ছিল তা' সবই আন্যান্য দাবীদারগণ নিয়ে গেছে। তখন আল্লাহতায়ালা ঐ প্রশ্নকারীকে বললেন, তোমার ভাতার সঙ্গে এখন কি করবে। তার কাছে ত আর কোন ছওয়াব নেই। তখন সে বলল, হে প্রভুঃ আমার গুনাহসমূহ তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিন। এসময় হুযুরে পাক (দঃ) এর দু' চক্ষু অশ্রুসিক্ত হল এবং তিনি বললেন, এ ব্যাপারটিই মহা বিচারের দিন সংঘটিত হবে যেদিন মানুষ তাদের গুনাহর বোঝা ঘাড়ে নিয়ে বিচার দরবারে উপস্থিত হবে। হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, আল্লাহতায়ালা তখন ঐ মজলুম বাদীকে বলবেন, তোমার দৃষ্টি উত্তোলন করে বেহেশতের দিকে দৃষ্টিপাত কর।
তখন সে বলবে, আমি যে বেহেশতে রৌপ্য নির্মিত নগরীসমূহ এবং তন্মধ্যে স্বর্ণনির্মিত মণি- মুক্তা খচিত অট্রালিকা সমূহ অবলোকন করতেছি, এগুলো কার জন্য নির্মিত হয়েছে? কোন নবী বা রাসূলের জন্য না আপনার কোন খাছ বন্ধুর জন্য? না কোন শহীদের জন্য? আল্লাহতায়ালা বললেন, ঐ প্রাসাদ সেই ব্যক্তির জন্য যে তার মূল্য দিতে পারবে। সে বলল, হে প্রভু! কে এর মূল্য দিতে পারবে? আল্লাহ বললেন, ইচ্ছা করলে তুমিও মূল্য দিতে পার। সে বলল, আমি কি দিয়ে এর মূল্য দেব হে প্রভু। আল্লাহ বললেন, তুমি যদি তোমার এ ভ্রাতাকে ক্ষমা করে দাও তবে তাতেই তোমার ওগুলোর মূল্য দেয়া হয়ে যাবে। তখন সে নিবেদন করল, হে প্রভু! আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। তখন আল্লাহ বললেন, তাহলে তুমি তোমার এ ভ্রাতার হস্ত ধারণ করে তাকে বেহেশত মধ্যে পৌঁছে দাও। এ পর্যন্ত বলে হযরত রাসূলে করীম (দঃ) উপস্থিত লোকদেরকে সম্বোধন করে বললেন, তোমরা আল্লাহতায়ালাকে ভয় কর এবং তোমাদের মধ্যে বিবাদ বিসম্বাদ মিটিয়ে ফেল। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা রোজ কিয়ামতে এভাবে মু'মিনদের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করে দেবেন। হযরত রাসূলে করীম (দঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দু'জনের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করে দেয় সে প্রায়শঃ মিথ্যাবাদী হয় না। তিনি এ কাজকে যথেষ্ট উত্তম কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে, দু' জন লোকের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করে দেয়া ওয়াজিব এবং মিথ্যা ত্যাগ করা ওয়াজিব থেকেও দৃঢ় এবং শেষোক্ত ওয়াজিবটি প্রথমোক্ত ওয়াজিবটির অবর্তমানে বিলুপ্ত হতে পারে হুজুরে পাক (দঃ) বলেছেন, প্রত্যেক মিথ্যা কথাই লিপিবদ্ধ হয়। শুধু তিনটি মিথ্যা কথ বিপিবদ্ধ হয় না। যথাঃ (১) কোন লোকের যুদ্ধকালে মিথ্যা কথা বলা। কেননা যুদ্ধে প্রতারণার সর্বদান আছে। (২) দু'জন লোকের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করবার জন্য মিথ্যা কথা বলা। এবং (৩) স্ত্রীকে খুশী করবার জন্য মিথ্যা কথা বলা।
(১৪) দুর্নাম এবং অপবাদের স্থান থেকে দূরে থাকবে। যেন তোমাদের প্রতি লোকগণ মন্দ ধারণা করা থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং তাদের রসনা থেকে তোমাদের দোষ রটনা করবার সুযোগ না আসে। কেননা যখন তারা তা' রটনা করে গুনাহগার হয় আর তুমি যদি তা' রটনা করবার কারণ সৃষ্টি কর, তাহলে তুমি তার গুনাহর সাথে অংশীদার হবে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদাত করে, তাদেরকে তিরস্কার করো না। কেননা হয়ত তারা মুর্খতাবশতঃ শত্রুতা করে আল্লাহর তিরস্কার করবে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যে হাঁড় তার পিতামাতাকে গালি দেয়, তোমরা তাদেরকে কি নজরে দেখ্য ছাহাবীগণ বললেন বারি লেংক কি আছে, যে তার পিতামাতকে গালি দেয়। তিনি বললেন, হাঁ, আছে। কোন যাক্তি অন্যের পিতামাতাকে গালি দিয়ে তার মুখ থেকে নিজের পিতামাতাকে গালি শুবণ করাই।
একদা হযরত রাসুলে করীম (দঃ) তাঁর একজন স্ত্রীর সাথে কথা বলতেছিলেন, এ সময় এক বাতি তাঁর নিকট দিয়ে চলে যেতেছিল। তিনি লোকটিকে ডেকে বললেন, হে, অনুক। ইদি আমার স্ত্রী সুফিয়া। লোকটি চলে যাবার পর হযরত সুফিয়া বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ। মানুষ হয়ত অন্য লোক সম্পর্কে কুধারণা পোষণ করতে পারে। কিন্তু আপনার সম্পর্কে তারা কখনই কুধারণা করে না। হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, সুফিয়া। শয়তান মানুষের দেহে রক্তের ন্যায় চলাচল করে। অন্য বর্ণনায় আছে, হুযুরে পাক (দঃ) রমজান মাসে ই'তেকাফরত থাকাকালে হযরত সুফিয়া তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। সে সময় দু'ব্যক্তি ঐ স্থান দিয়ে চলে যেতেছিল। তা' দেখে হুযুরে পাক (দঃ) বলেছিলেন, ইনি আমার স্ত্রী সুফিয়া। আমার ভয় হচ্ছে পাছে আবার তোমরা কোনরূপ মন্দ খেয়াল না কর। হযরত ওমর (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন অপবাদের স্থানে দাঁড়ায় তার উপর কারও মন্দ ধারণা হলে, সে যেন তার অপবাদ রটনা করে। একথা বলার কারণ হল, হযরত ওমর (রাঃ) একদা এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাবার কালে দেখলেন যে, সে একটি রমণীর সাথে রাস্তার উপরে আলাপরত। তখন তিনি তাকে বেত্রাঘাত করতে উদ্যত হলে, লোকটি বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! এ আমার স্ত্রী। তখন হযরত ওমর বললেন, যেখানে কোন লোকজনের দৃষ্টি পড়ে না; এরূপ স্থানে দাঁড়িয়ে কথা বললে না কেন?
0 Comments