সম্মানিত ব্যক্তিকে সম্মান করা


         (১১) নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে মানুষের মধ্যে সুমীমাংসা বা সুবিচার করে দেবে। আর যে বস্তু তারা ভালবাসে তাদের নিকট সে বস্তু নিয়েই যাবে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, কোন মানুষের মধ্যে তিনটি স্বভাব না থাকলে তার ঈমান পূর্ণ হয় না। যথাঃ (১) দরিদ্র না হওয়া পর্যন্ত অর্থ বায় করা। (২) স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে সুবিচার কর। এবং (৩) সালাম দেয়া। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি দোয়থকে দূরে রাখতে চায় এবং বেহেশতে প্রবেশের ইচ্ছে করে সে যেন মৃত্যুর সময় বলে, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহি অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত উপ্যলা নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (দঃ) আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। আর সে যেন মানুষের সাথে এমন ব্যবহার করে যা' সে তাদের নিকট থেকে পেতে আশা করে। একথা হুযুরে পাক (সঃ) স্বীয় ছাহাবী আবু দারদা (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবু দারস্য। তুমি তোমার প্রতিবেশীর সাথে উত্তম ব্যবহার করবে। তাহলে তুমি মু'মিন হবে। তুমি নিজের জন্য যা' ভালবাস অন্যান্য লোকের জন্যও তা' ভালবাসবে। তাহলে তুমি মুসলমান হবে। হযরত হাসান (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা হযরত আদম (আঃ) এর প্রতি অহী পাঠিয়েছিলেন, হে আদম। তুমি চারটি স্বভাব অবলম্বন কর। তা' তোমার ও বংশধরদের জন্য সমস্ত গুণের সমন্বয়। ওগুলোর একটি স্বভাব আমার জন্য। একটি তোমার জনা। একটি আমার ও তোমার মধ্যে এবং একটি তোমার ও লোকের মধ্যে থাকা আবশ্যক। যে স্বভাব শুধু আমার জন্য তা' আমার জন্য তোমার ইবাদাত এবং ইবাদাতে অন্য কাউকে অংশীদার না করা। যে স্বভাব শুধু তোমার জন্য তা' তোমার আমল। তার পুরস্কার আমি এমন সময় দেব যখন তোমার তার আবশ্যক হয়। আর যে স্বভাব শুধু আমার ও তোমার মধ্যে থাকা দরকার তা' তোমার প্রার্থনা এবং আমার কবুল করা, আর যে স্বভাব শুধু তোমার ও লোকের মধ্যে থাকা দরকার তা' তাদের সঙ্গে তোমার এমন ব্যবহার যা' তোমার সঙ্গে তাদের করা উচিত বলে তুমি আকাঙ্খা কর। হযরত মুসা (আঃ) একদা আল্লাহর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, হে প্রভু! তোমার কোন বান্দা সর্বাপেক্ষা বেশী সুবিচারক। আল্লাহ বললেন, যে বান্দা তার নিজের প্রতি সর্বাপেক্ষা বেশী সুবিচার করে।

         (১২) সম্মানিত ব্যক্তিকে সম্মান করবে। যে ব্যক্তির আকৃতি প্রকৃতি চাল-চলন, ব্যবহার-আচরণ এবং পোশাক-পরিচ্ছদ দ্বার। অনুমান করা যায় যে, সে কোন উচ্চ পদস্থ সম্মানিত লোক, তাকে অধিক সম্মান করবে অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার পদমর্যাদানুসারে যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন করবে। বর্ণিত আছে যে, একবার হযরত আয়েশা (রাঃ) কোন সফরে থাকাকালীন তার তাঁবুতে তার জন্য খাদ্য উপস্থিত করা হলে জনৈক ভিক্ষুক এসে কিছু খাবার প্রার্থনা করল। হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, তাকে একটি রুটি দিয়ে দাও। তারপর এক অশ্বারোহী ব্যক্তি তথায় আগমন করলে হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, তাকে তোমরা তোমাদের সাথে খান। খেতে শরীক করে নাও। হযরত আয়েশা (রাঃ)কে জিজ্ঞেস করা হল, হে উম্মুল মু'মিনীন। আপনি দরিদ্র লোকটিকে একটি রুটি দিয়ে বিদায় করতে বললেন এবং এই ধনী অশ্বারোহী ব্যক্তিকে আমাদের সাথে একত্রে খাদ্যে শরীক করতে বললেন এর কারণ কি? হযরত আয়েশা (রাঃ) জবাবে বললেন, তোমর। জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্নরূপ পদমর্যাদা দান করেছেন এবং আমাদেরও তদনুযায়ী তাদেরকে অভ্যর্থনা করা দরকার। দরিদ্র লোকটি একটি কটি পেয়েই সন্তুষ্ট থাকবে অথচ এ ধনী ব্যক্তিকে একটি রুটি দান করা অশোভনীয় এবং তার পক্ষে অমর্যাদাকর। বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূলে করীম (দঃ) কোন এক গৃহে প্রবেশ করলে তাঁর ছাহাবীগণও তাঁর নিকট নিয়ে উপস্থিত হলেন। গৃহটি লোকে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। হযরত জারীর বিদ আবদুল্লাহ (রাঃ) একটু পরে এসে সেখানে স্থান পেলেন না। সুতরাং তিনি গৃহের দরজার উপরেই বসে পড়লেন। তখন হুযুরে পাক (দঃ) তার নিজের চাদর নিয়ে তাঁর কাছে গিয়ে পেতে দিয়ে বললেন, তুমি এর উপর উপবেশন কর। তখন হযরত জারীর (রাঃ) সসম্মানে চাদরখানা উঠিয়ে নিয়ে তা' তাঁর মুখের উপর রেখে চুম্বন করতে লাগলেন। আর তিনি হৃদয়ের আবেগ সামলাতে না পেরে অঝোরে কেঁদে দিলেন। অতঃপর তিনি সে চাদরখানা হুযুরে পাক (দঃ) এর হস্তে সমর্পণ করে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আপনার চাদরে উপবেশন করবার উপযুক্ত নই। কিন্তু আপনি আমাকে যে সম্মান দেখালেন তজ্জন্য আল্লাহ আপনাকে নিশ্চয়ই ততোধিক সম্মান প্রদর্শন করবেন। তখন হুযুরে পাক (দঃ) একবার তাঁর ডানদিকে ও একবার তাঁর বামদিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন, "ইযা আতাকুম কারীমু কাওমিন ফাকরিমুহু" অর্থাৎ যখন কোন কাওমের সম্মানিত লোক তোমাদের নিকট তাশরীফ আনে তোমরা তাকে সম্মান করবে। তদ্রূপ যে ব্যক্তির কারও উপর পুরাতন হক আছে সে যেন তাকে সম্মান করে। বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূলে করীম (দঃ) এর দুধমাতা হালীমা (রাঃ) তাঁর নিকট এলে তিনি নিজের চাদর তার জন্য বিছিয়ে দিয়ে বললেন, আম্মা। আপনাকে অভ্যর্থনা। অতঃপর তিনি তাঁকে চাদরের উপর বসিয়ে দিয়ে বললেন, মাতঃ আপনি কোন সুপারিশ করলে তা' গৃহীত হবে। আপনি যা' চান তা' আপনাকে দেয়া হবে। তখন হযরত হালীমা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। আমি আমার কাওমের জন্য সুপারিশ করছি। হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, আমার হক এবং হাশেমী কবিলার লোকদের হকে আপনি মালিক। এসময়ে লোকগণ দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের হকও কি তাঁকে দিয়েছেন? অতঃপর হযরত রাসূলে করীম (দঃ) হুনায়েনের যুদ্ধে যে গনীমত পেয়েছিলেন তা' সম্পূর্ণই দুধমাতা হযরত হালীমা (রাঃ) কে দিয়ে দিলেন। তিনি ঐ গনীমতের মাল হযরত ওসমান (রাঃ) এর নিকট একলক্ষ দেরহাম মূল্যে বিক্রয় করে ফেললেন। কখনও কখনও কেউ এসে দেখতে পেত যে. হুযুরে পাক (দঃ) তাকিয়ায় ঠেস দিয়ে উপবিষ্ট আছেন। তখন দরবারে বসবার স্থান না থাকলে তিনি তাঁর তাকিয়া সরিয়ে রেখে তার পার্শ্বেই উক্ত আগন্তুককে বসবার জায়গা করে দিতেন। অনেকেই সেখানে বসতে আপত্তি করত। কিন্তু হুযুরে পাক (দঃ) এর পীড়াপীড়িতে না বসে উপায় থাকত না।

Post a Comment

0 Comments