(২১) ধনবানের সংসর্গ ত্যাগ করবে বরং দরিদ্রের সংসর্গ অবলম্বন করবে এবং ইয়াতিমদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবে। হুযুরে পাক (দঃ) বলতেন, হে মাবুদ! আমাকে তুমি দরিদ্র রূপে বাঁচিয়ে রাখ। দরিদ্ররূপে মৃত্যুদান কর এবং দরিদ্রদের সাথে আমার পুনরুত্থান করো। হযরত কা'ব আহবার (রহঃ) বলেছেন, হযরত সোলায়মান (আঃ) তাঁর রাজ্যে যেখানেই দরিদ্র লোক দেখতে পেতেন, সেখানেই তিনি বসে পড়ে বলতেন, গরীব ব্যক্তি গরীবদের সাথেই বসেছে। বর্ণিত আছে যে, হযরত ঈসা (আঃ) কে মিসকীন বলে সম্বোধন করলে যত খুশী হতেন, তত খুশী অন্য কোন সম্বোধনেই হতেন না। হযরত কা'ব (রহঃ) বলেছেন, পবিত্র কুরআনে যেখানে যেখানে বলা হয়েছে ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা। আমানু অর্থাৎ হে মু'মিনগণ! সেখানে সেখানে তাওরাতে বলা হয়েছে, "ইয়া আইয়্যুহাল মাসাকীন্" অর্থাৎ হে মিসকীনগণ! হযরত ওবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) বলেছেন, দোযখের সাতটি দরজা আছে, তার তিনটি ধনীদের জন্য, তিনটি স্ত্রীলোকদের জন্য এবং একটি দরিদ্র ও মিসকীনদের জন্য।
হযরত ফোজায়ল (রাঃ) বলেছেন, আমি শুনেছি যে, কোন এক নবী বলেছেন, হে মাবুদ! আমার প্রতি যে তুমি সন্তুষ্ট আছ, তা' আমি কি ভাবে জানব? আল্লাহতায়ালা বললেন, তোমার প্রতি মিসকীনগণ কিরূপ সন্তুষ্ট থাকে, সে দিকে লক্ষ্য রেখ। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছিলেন, তোমরা মৃত ব্যক্তিদের মজলিসের ব্যাপারে সতর্ক হবে। জিজ্ঞেস করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)! মৃত ব্যক্তি কারা? তিনি বললেন, ধনী লোকগণ। হযরত মূসা (আঃ) আরজ করলেন, হে মাবুদ। তোমাকে কোথায় খুঁজব? আল্লাহতায়ালা বললেন, ভাঙ্গা হৃদয়ের কাছে। হুযুরে পাক (সঃ) বলেছেন, তোমরা পাপিষ্ঠ লোকদের ধন-সম্পদের প্রতি উর্ণান্বিত হয়ো না। কেননা তোমার জানা নেই যে, মৃত্যুর পর তাদের অবস্থ। কিন্তুপ হবে। তাদের পিছনে জনৈক দ্রুত বাবমান অন্বেষণকারী আছে।
(২২) ইয়াতিমদের সম্পর্কে হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন ইয়াতিমতে নিয়ে তার বালেগ না হওয়া পর্যন্ত তাকে লালন-পালন করে, তার জন্য বেহেশত সুনিশ্চিত। তিনি আরও বলেছেন, আমি এবং ইয়াতিমের প্রতিপালনকারী আমার এই দুটো আঙ্গুলের নায়ে নিকটবর্তী রূপে বেহেশতে অবস্থান করব। একথা বলে তিনি তাঁর হস্তের পরস্পর নিকটবর্তী আঙ্গুলের দিকে ইশারা করলেন। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি দয়াপরবশ হয়ে কোন ইয়াতিমের মস্তকে হস্ত বুলায়, তার হাত যত কেশের সাথে স্পর্শিত হয়, সে তত পরিমাণ নেকী লাভ করবে। তিনি আরও বলেছেন, যে গৃহে কোন ইয়াতিমদের প্রতি দুর্ব্যবহার করা হয়, মুসলমানদের সেই গৃহ-ই সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট।
প্রত্যেক মুসলমানকে উপদেশ দেবে এবং তার মনে খুশী উৎপাদনের জন্য চেষ্টা করবে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, "আল মু'মিনু ইয়ুহিব্বু লিলমু 'মিনি কামা ইয়ুহিদু লি নাফসিহী" অর্থাৎ মু'মিন ব্যক্তি নিজের জন্য যা ভালবাসে, অন্য মু'মিনদের জন্যও তা' ভালবাসবে। তিনি আরও বলেছেন, "লা ইয়ু'মিনু আহাদুকুম হান্ডা ইয়ুহিব্বু লি আখীহি মা ইয়ুহিব্বু লি নাফসিহী” অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে কেউ ঈমানদার হবে না যে পর্যন্ত না সে নিজের জন্য যা ভালবাসে, তা' তার ভ্রাতা মুসলমানের জন্যেও ভালবাসবে। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, ভোমাদের মধ্যে এক ব্যক্তি অন্যের দর্পণ স্বরূপ। যদি সে তার মধ্যে অনিষ্টকর কিছু দেখে, তবে সে যেন তা' তার থেকে দূর করে দেয়। তিনি আরও বলেছেন, যে তার ভ্রাতা মুসলমানের প্রয়োজন পূর্ণ করে, সে যেন সমগ্র জীবন আল্লাহর ইবাদাতে অতিবাহিত করল। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুমিনের মান-সম্মান নষ্ট করে, আল্লাহতায়ালা রোজ কিয়ামতে তার পুণ্য নষ্ট করবেন। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভ্রাতা মুসলমানের অভাব মোচনের জন্য দিবা বা রাতের এক ঘন্টা সময় ব্যয় করে, অভাব মোচন হোক বা না হোক এ সময় তার দু' মাস ই'তেকাফ অপেক্ষা উত্তম। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন চিন্তাযুক্ত মুমিনের চিন্তা দূর করে, অথবা কোন মজলুম ব্যক্তিকে সাহায্য করে, আল্লাহতায়ালা তার সত্তরটি গুনাহ মার্জনা করে দেন। তিনি আরও বলেছেন, তোমার ভ্রাতা মুসলমান অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত হোক, তাকে সাহায্য করবে। অত্যাচারীকে সাহায্য করার অর্থ হল, তাকে অত্যাচার করতে বারণ করবে। আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় কাজ হল, মুমিনের অন্তরে সন্তুষ্টি বিধান করা অথবা তার ঋণ পরিশোধ করে দেয়া অথবা খাদ্য দান করে তার ক্ষুধা নিবারণ করা। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি মুনাফিকের ধোকাবাজী হতে কোন মুমিনকে রক্ষা করে, আল্লাহতায়ালা রোজ কিয়ামতে একজন ফিরেশতা পাঠাবেন। সে তার দেহের মাংসকে দোযখের অগ্নি হতে রক্ষা করবে। তিনি আরও বলেছেন, দুটি পাপ অপেক্ষা নিকৃষ্টতর আর কোন পাপ নেই। তার একটি হল, আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং অন্যটি হল, আল্লাহর কোন রাখার প্রতি অত্যাচার করা। তিনি আরও বলেছেন, দুটি নেককাজ অপেক্ষা আর কোন উৎকৃষ্টতর নেক কাজ নেই। তার একটি হল, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আর অন্যটি হল, আল্লাহর তোন বাখার উপকার করা। তিনি আরও বলেছেন, যার অন্তর কোন মুসলমানের বাধায় ব্যথিত না হয়, সে মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। হযরত মা'কফ কারখী (রহঃ) বলেন, সে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন বলে, "আল্লাহুম্মারহাম উম্মাতা মুহাম্মাদিন অর্থাৎ হে মাবুদ! মুহাম্মদ (দঃ)এর উম্মতকে রহম কর। আল্লাহতায়ালা তাকে আবদালদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। অন্য বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি প্রত্যেকদিন পাঠ করে, "আল্লাহুম্মাছলিহ উম্মাত। মুহাম্মাদিমা "আল্লাহুম্মা ফাররিহ আলা উম্মাতি মুহাম্মাদিন" আল্লাহতায়াল। তাকে অবদাল শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত বলে লিপিবদ্ধ করেন।
হযরত আলী বিন ফোজায়ল (রহঃ) একদা ক্রন্দন করতে লাগলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি ক্রন্দন করছেন কেন? তিনি বললেন, আমি আমার প্রতি অত্যাচারকারীর জন্য ক্রন্দম করছি। কেননা তাকে যে আগামীকল্য আল্লাহর দরবারে দাঁড়াতে হবে এবং সে অত্যাচারের কোন কারণ দেখাতে পারবে না।
0 Comments