(৯) তুমি যে কোন লোকের সঙ্গে প্রফুল্লচিত্তে এবং হাস্য বদনে সাক্ষাত ও আলাপালোচনা করবে। হুযুরে পাক (দঃ) একদা ছাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কার উপর দোযখ হারাম হয়েছে তা' তোমরা জান কি? তারা বললেন, এ বিষয়ে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই সর্বাধিক অবগত। তিনি বললেন, যারা বিনম্র, সরল, প্রফুল্লচিত্ত এবং সহাস্য বদন। তিনি আরও বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সরলমনা ও প্রফুল্লচিত্ত লোকদেরকে ভালবাসেন। জনৈক বুযর্গ ছাহাবী একদা হুযুরে পাক (দঃ) কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমাকে আপনি এমন একটি কাজের 'কথা বলে দিন যা' আমাকে বেহেশতে পৌঁছে দেবে। তিনি বললেন, তাহলে জেনে রাখ, সালাম প্রদান ও মিষ্টভাষণ পাপসমূহ মার্জিত হবার উপায়। তিনি আরও বলেছেন, একটি খুরমার অর্ধেক দানা হলেও তা-ই দান করে দোযখের আগুন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত হও। তিনি আরও বলেছেন, নিশ্চয়ই বেহেশতের মধ্যে এমন বহু প্রকোষ্ট রয়েছে, যেগুলোর অভ্যন্তর ভাগ হতে বহির্ভাগ দৃষ্টিগোচর হয় এবং বহির্ভাগ থেকে অন্তর্ভাগ পর্যন্ত দেখা যায়। জনৈক যাযাবর আরব আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বেহেশতের ঐ সব প্রকোষ্ট কাদের জন্য? তিনি বললেন, ঐ সব লোকের জন্য যারা কথা-বার্তা বলাকালে উত্তম বাক্য ব্যবহার করে। মানুষকে খাদ্য দান করে এবং যখন মানুষ নিদ্রায় মগ্ন থাকে তখন তারা নামাযে লিপ্ত থাকে। হযরত মুআয বিন জাবাল (রাঃ) বলেছেন, একদা হুযুরে পাক (দঃ), আমাকে বললেন, হে মুআয। কতিপয় উপদেশ শুনে নাও। তুমি সর্বদা আল্লাহর প্রতি ভয় রাখবে। সত্য কথা বলবে, প্রতিজ্ঞা পালন করবে। বিশ্বাসঘাতক হবে না। প্রতিবেশীর তত্ত্বাবধান করবে। অনাথ বালকের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবে। বাক্যে বিনয়ী হবে। মানুষকে সালাম দেবে এবং তোমার আচরণ ও ব্যবহার দ্বারা শান্তি বিস্তার করবে
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, একদিন কোন এক দরিদ্র রমণী হুযুরে পাক (দঃ) এর নিকট এসে আবেদন করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ। আপনার নিকট আমার বিশেষ প্রয়োজন আছে। আপনাকে আমার বক্তব্য গুনতে হবে। এ সময় হুযুরে পাক (দঃ) এর বহু সংখ্যক ছাহাবী তথায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাদের মধ্য থেকে বের হয়ে এসে উক্ত রমণীর কাছে গিয়ে বললেন, ইচ্ছে হলে তুমি এখানেই বসে পড়ে আমার নিকট তোমার প্রয়োজন ব্যক্ত কর। এ কথা বলে তিনি নিজেও সেখানে উপবেশন করলেন। রমণীটি তাঁর কাছে নিজের বক্তবা পেশ করল এবং তিনি তার কথাগুলো ধৈর্য্যর সাথে শ্রবণ করলেন।
হযরত ওয়াহহাব বিন মুনাকাবাহ (রহঃ) বলেছেন, বনি ইস্রাইল সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি দীর্ঘ সত্তর বছর পর্যন্ত রোযা রেখেছিলেন। তিনি প্রত্যেক সপ্তাহে শুধু একদিন রোযা ভঙ্গ করতেন। ঐ ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে এরূপ প্রার্থনা করলেন, হে মাবুদ। শয়তান কিভাবে মানুষকে গোমরাহ করে আমাকে সেই দৃশ্য দেখিয়ে দিন। কিন্তু যখন তিনি দীর্ঘদিন ধরেও এই প্রার্থনা করে আল্লাহর দরবার থেকে কোন জবাব পেলেন না, তখন তিনি মনে মনে বললেন, নিশ্চয়ই এটা আমার কোন গুনাহর কারণ। যদি আমি এতদিন সেই কারণটি অনুসন্ধান করতাম তাহলে তা' আমার জন্যে এরূপ প্রার্থনা করার চেয়ে অনেক উত্তম হত। তার মনে এরূপ চিন্তা করবার পরেই আল্লাহতায়ালা তার নিকট একজন ফিরেশতা পাঠিয়ে দিলেন। সে এসে তাকে বলল, আমাকে আল্লাহতায়ালা আপনার নিকট এই সংবাদ বলে পাঠিয়েছেন যে, আপনি আল্লাহর নিকট যে প্রার্থনা করেছেন তা' আপনার পূর্বে সমস্ত ইবাদাত থেকে উত্তম। অতএব আল্লাহ আপনার অন্তর্দৃষ্টি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এখন আপনি দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে দেখুন। ফিরেশতার কথা শুনে তিনি সম্মুখে দৃষ্টিপাত করে দেখলেন, ইবলীছ এবং তার অসংখ্য অনুবর্তী সমগ্র দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। তারা একেকটি ব্যঘ্র এবং অন্যান্য হিংস্র জন্তুর রূপ ধারণ করে এখানে-সেখানে ওত পেতে আছে। তার নিজেরও চর্তুদিকে একইভাবে বহু শয়তান রয়েছে। এ দৃশ্য দেখে তিনি আল্লাহর নিকট আরজ করলেন, হে প্রভু! এই ভয়াবহ বিপদ থেকে মানুষ কিভাবে রক্ষা পায়? আল্লাহর তরফ থেকে উত্তর এল, এ বিপদ থেকে পরহেজগার ও বিনয়ী লোকেরা অতি সহজেই রেহাই পেয়ে যায়।
(১০) মুসলমানদের সাথে কোন ওয়াদা বা প্রতিজ্ঞা করলে তা' রক্ষা করবে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, ওয়াদা বা প্রতিজ্ঞ। রক্ষা করা একটি দান কার্যস্বরূপ। তিনি বলেছেন, মুনাফিকের মধ্যে তিনটি দোষ আছে। যথাঃ (১) যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে। (২) যখন সে ওয়াদা বা প্রতিজ্ঞা করে, তা' ভঙ্গ করে এবং (৩) যখন তার নিকট কিছু আমানত রাখা হয়, সে তার খেয়ানত করে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যার মধ্যে এই তিনটি দোষ আছে নিশ্চয়ই সে মুনাফিক যদিও সে নামায পড়ে ও রোযা রাখে।
0 Comments