হুদায়বিয়ার সন্ধি


 আল্লাহ তা'আলার সাহায্য

        অবশেষে আল্লাহ্ তা'আলা এ সহায়-সম্বলহীন জামা'আতের সাহায্য করেন এবং কাফিরদের দলের উপর এমন বায়ুঝড় প্রবাহিত করলেন যার ফলে তাঁবুর রশি ছিঁড়ে সব কিছু উড়ে গেল। চুলার উপর থেকে ডেকচি উল্টে গেল। এদেিক নাঈম বিন মাসউদ (রাঃ) এমন এক কৌশল প্রয়োগ করলেন যে, তার ফলে কাফিরদের দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে গেল। মূলত সমস্ত ঘটনা মিলে অবস্থা এমন হল যে, কাফিরদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে (অর্থাৎ তারা শক্তিহীন হয়ে যায়)। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে ময়দান পরিষ্কার হয়ে গেল।

এ বৎসরে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনা

        এ বৎসর হজ্জ ফরয হয়। তবে এর তারিখ নিয়ে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। এ বৎসর জমাদিউল আউয়াল মাসে হযরত (সাঃ)-এর দৌহিত্র আবদুল্লাহ বিন উসমান (রাঃ) অর্থাৎ হযরত রুকাইয়া (রাঃ)-এর পুত্র ইনতিকাল করেন। শাওয়াল মাসের শেষ দিকে হযরত আয়েশা (রাঃ) -এর মাতা ইনতিকাল করেন এবং যিলকাদ মাসে হযরত (সাঃ)-এর সাথে যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ)-এর শাদী মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৎসর মদীনায় ভূকম্পন হয় এবং চন্দ্রগ্রহণ হয়।

হুদায়বিয়ার সন্ধি

        হুদায়বিয়া মক্কা মুআয্যমা থেকে জেদ্দার দিকে এক মঞ্জিল দূরত্বে অবস্থিত। হুদায়বিয়া মূলত একটি কূপের নাম। এই সেই স্থান যার সাথে "ফাতহুমমুবীন" ও বাইআতে রিদওয়ানের পুতপবিত্র ইতিহাস জড়িত রয়েছে।

        ষষ্ঠ হিজরীর যিলকদ মাস/ ফেব্রুয়ারী ৬২৮ খৃ. রোজ সোমবার রসূলুল্লাহ (সাঃ) চৌদ্দশত সাহাবী সমভিব্যাহারে উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে মক্কায় রওয়ানা হন। যুল-হুলায়ফা পৌঁছে কোরবাণীর পশুর গলায় মালা পরালেন এবং সকলে ইহরাম বাঁধলেন। নবী (সাঃ) বানু খুযাআর এক ব্যক্তিকে গোয়েন্দার দায়িত্ব দিয়ে কুরাইশদের অবস্থা অবগত হয়ে তাঁকে অবহিত করার জন্য মক্কায় প্রেরণ করলেন।

        মহানবী (সাঃ) যখন গাদীরে আশতাত (মক্কার অদূরে একটি স্থানের নাম) পৌঁছলেন, তখন গোয়েন্দা ফিরে এসে তাঁকে অবহিত করলেন যে, কুরাইশরা তাঁর আগমনের সংবাদ পেয়েছে এবং তারা বিভিন্ন গোত্রের লোকদের একত্র করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে মক্কায় প্রবেশ করতে না দেয়াই তাদের উদ্দেশ্য।

        রসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করলেন। হযরত আবু বাক্স সিদ্দীক (রাঃ) আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা তো বাইতুল্লাহ্ তাওয়াফের উদ্দেশ্যে এসেছি, যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। অতএব আল্লাহর ঘর যিয়ারতের প্রতিজ্ঞা নিয়ে অবশ্যি সামনে অগ্রসর হতে হবে এবং পথিমধ্যে অযথা যেসব লোক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বাধ্য হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করতে হবে। পরামর্শ শেষে নবী (সাঃ) বললেন: 'আল্লাহর নাম নিয়ে সামনে অগ্রসর হও।'

        আল্লাহর ঘরের দর্শনার্থীরা আল্লাহর প্রেমে উদ্বেলিত হয়ে মক্কার পানে অগ্রসর হচ্ছিলেন,নবী (সাঃ) বললেন: খালিদ ইবনে ওলীদ একদল সৈন্যসহ আতীম নামক স্থানে তোমাদের অপেক্ষায় ওৎ পেতে আছে। অতএব এদিক পরিবর্তন করে ডানদিকের রাস্তা দিয়ে অগ্রসর হওয়াই যুক্তিযুক্ত হবে। এভাবে আমরা অজ্ঞাতসারে হঠাৎ করে তার সম্মুখভাবে উপস্থিত হয়ে যাব। অতএব মুসলমানরা যখন আকস্মিকভাবে খালিদ-বাহিনীর সম্মুখ ভাগে এসে গেল তখন খালিদ তার গেরিলা আক্রমণ বিফল হতে দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। সে নিজ বাহিনী সহ দ্রুত গতিতে মক্কায় পৌঁছে মুশরিকদেরকে মুসলমানদের আগমন সম্পর্কে অবহিত করল।

        নবী (সাঃ) যখন এমন একটি টিলায় পৌছলেন- যা থেকে সমতল ভূমিতে অবতরণ করে মক্কায় পৌঁছে যাওয়ার কথা, এমন সময় হঠাৎ তাঁর 'কাসওয়া' নামক উন্ত্রী বসে পড়ল। সাহাবীগণ তাকে উঠানোর জন্য নানা রকম চেষ্টা করলেন, কিন্তু কোন কাজ হল না। লোকেরা যখন বারবার 'হাল' 'হাল' করে অবসন্ন হয়ে বলতে লাগল, "কাসওয়া অবাধ্য হয়ে গেছে।"

         মহানবী (সাঃ) একথা শুনে বললেন- "কাসওয়া কখনো অবাধ্য হয়নি এবং তার অভ্যাসও তা নয়; বরং তাকে হাতী বাহিনীর প্রতিরোধকারী (আল্লাহ) প্রতিরোধ করেছেন।” অর্থাৎ মক্কার কুরাইশদের বাড়াবাড়ি ও যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণে যেহেতু যুদ্ধের মত জরুরী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাই আল্লাহর ইচ্ছা এই যে, কা'বার সম্মান ও মর্যাদার চুক্তি না করা পর্যন্ত আমরা যেন সামনে অগ্রসর না হই। অতএব এই কথা বলার পর মহানবী (সাঃ) আরও বললেন: "সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ। তারা যে দাবিই করবে। যাতে কা'বার মান-মর্যাদা রক্ষিত হবে- আমি তা অবশ্যই অনুমোদন করব।"

        নবী (সাঃ) যখন এই ঘোষণা দান করলেন। তখন যে কাসওয়াকে অনেক উত্যক্ত করেও উঠানো যায়নি তা আপনা আপনিই দাঁড়িয়ে গেল এবং সম্মুখে অগ্রসর হয়ে হুদায়বিসার ময়দানে পৌঁছে গেল।

        আল্লাহর ঘর যিয়ারতকারী এই পবিত্র কাফেলা হুদায়বিয়ায় ছাউনি ফেলার পর সিদ্ধান্ত হল যে, হযরত উসমান (রাঃ)-কে মক্কায় প্রেরণ করা হবে। তিনি মক্কায় মুশরিকদের নিকট পৌঁছে তাদের বুঝিয়ে বলবে, বাইতুল্লাহ শরীফ যিয়ারত করা ছাড়া আমাদের ভিন্ন কোন উদ্দশ্য নেই। অতএব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা তোমাদের জন্য সমীচীন নয়।

        হযরত উসমান (রাঃ) মক্কায় পৌঁছে আবু সুফিয়ান ও অন্যান্য কুরাইশ নেতার সাথে সাক্ষাত করে আলোচনায় ব্যাপৃত হলেন। তারা তাঁর কথায় কর্ণপাত করল না এবং বলতে লাগল, চাইলে তুমি একা বাইতুল্লাহ্ তাওয়াফ করতে পার। অন্যথায় আমরা মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর অপরাপর সাথীদেরকে কখনও মক্কায় প্রবেশ করতে দেব না। হযরত উসমান (রাঃ) বললেন, আল্লাহর রসূল ছাড়া তাওয়াফ ও উমরাহ করা আমার পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। কুরাইশরা তাকে নিজ মতে অটল দেখে তাঁর প্রত্যাবর্তনে বাধা দিল।

বাইআতে রিদওয়ান

        এ খবরটি মুসলমানদের নিকট এভাবে পৌঁছল যে, উসমান (রাঃ) কে হত্যা করা হয়েছে। এটা ছিল মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক খবর। এর ফলে তাঁদের প্রতিটি সদস্য অস্থির হয়ে পড়লেন এবং তাঁদের ধৈর্যের বাঁধ ভেংগে যাচ্ছিল। এই সময় নবী (সাঃ) একটি গাছের নীচে বসে মুসলমানদের শপথ করালেন যে, আমরা মরে যাব, কিন্তু আমাদের একজনও পলায়নের পথ অবলম্বন করবে না। নবী (সাঃ) তাঁদের নিকট থেকে বাইআত গ্রহণ করার সাথে সাথে তাঁদের মধ্যে অলৌকিক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হল। এর খবর সরাসরি মক্কায়ও পৌছে গেল এবং কুরাইশ মুশরিকরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। তারা লোক পাঠিয়ে খবর পৌছাল যে, উসমান (রাঃ)-র হত্যার খবর ভীত্তিহীন। ইতিমধ্যে হযরত উসমান (রাঃ) ও নিরাপদে হুদায়বিয়া ফিরে আসেন।

        জিহাদের এই শপথ যেহেতু অত্যন্ত নাজুক ও গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে নেয়া হয়েছিল এবং মুসলমানরাও পূর্ণ আবেগ-উদ্দীপনা সহকারে এই শপথে অংশ গ্রহণ করেছিলেন, এজন্য আল্লাহ্ তাআলাও তাদের এই শপথের মর্যাদা দান করেন এবং সূরা ফাতহ-এ তাঁর সন্তোষের কথা প্রকাশ করে তাঁদের ভূমিকাকে চিরস্থায়ী করে দিয়েছেন। এই সত্যকে সামনে রেখে ইসলামের ইতিহাসে এই শপথের নামকরণ করা হয় বাইআতে রিদওয়ান।

        আল্লাহ্ তাআলা মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছেন যখন তারা গাছের তলায় তোমার " নিকট বাইআত করছিল। তাদের অন্তরের অবস্থা তাঁর জানা ছিল। এজন্য তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে নিকটবর্তী বিজয় দান করলেন।"

        মুসলমানদের আবেগ ও উদ্দীপনা মক্কার মুশরিকদের উপর এতটা প্রভাব বিস্তার করে যে, এখন তারাই সন্ধির জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল এবং অগ্রসর হয়ে এই বিবাদের মীমাংসার জন্য সুহাইল ইবনে আমরকে দূত হিসাবে নবী (সাঃ)-এর নিকট প্রেরণ করল সন্ধির শর্তাবলী নির্ধারণ করার জন্য। কিন্তু যে কোন অবস্থায় এই শর্ত অবশ্যই যুক্ত হতে হবে যে, মুসলমানগণ এই বছর নয়, বরং আগামী বছর উমরা করতে পারবে।

সন্ধি বা চুক্তির শর্তাবলী

        সুহাইল ইবনে আমর মুসলমানদের ক্যাম্পে পৌঁছলে নবী (সাঃ) সন্ধির চিন্তা ভাবনাকে আগ্রহের দৃষ্টিতে দেখলেন এবং দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর নিম্নলিখিত শর্তাবলীর ভিত্তিতে উভয় পক্ষ সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর প্রদান করলেন:

    (১) এ বছর মুসলমানগণ মক্কায় প্রবেশ না করেই ফিরে যাবে।

    (২) আগামী বছর মুসলমানরা উমরা পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় আসবে এবং আত্মরক্ষার জন্য তাদের সাথে সাধারণ অস্ত্র ছাড়া কোন যুদ্ধাস্ত্র থাকবে না, তাদের তারবারিগুলো কোষবন্ধ থাকবে এবং মাত্র তিনদিন মক্কায় অবস্থান করবে। তারা যতক্ষণ মক্কায় অবস্থান করবে আমরা। (মুশরিকরা) মক্কা ছেড়ে পাহাড়ে চলে যাব। 

    (৩) সন্ধির সময়-সীমার মধ্যে মক্কা ও মদীনার মধ্যে নিরাপদে যাতায়াত অব্যাহত থাকবে।

    (৪) মক্কার কোন ব্যক্তি নিজ অভিভাবকের অনুমিত ছাড়া মুসলমান হয়ে মদীনা চলে গেলে তাকে মক্কায় ফেরত দিতে হবে। কিন্তু মদীনার কোন ব্যক্তি পলায়ন করে মক্কায় চলে এলে আমরা (মক্কার মুশরিকরা) তাকে ফেরত দিব না।

    (৫) আরবের যে কোন গোত্র ইচ্ছা করলে মুহাম্মদ (সাঃ) অথবা কুরইশদের সংগে বন্ধুত্ব সুত্রে আবদ্ধ হতে পারবে।

    (৬) এই চুক্তি দশ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এবং কোন পক্ষই চুক্তির পরিপন্থী কাজ করবে না। 

        চুক্তিপত্র প্রস্তুতের সময় মহানবী (সাঃ) এর নামের সাথে 'রাসূলুল্লাহ' শব্দ যোগ করায় সুহাইল আপত্তি করেছিল। মহানবী (সাঃ) বললেনঃ এটা এমন একটি বাস্তব সত্য যা অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু যেহেতু সন্ধি স্থাপনই আমাদের লক্ষ্য তাই তুমি যদি তা পছন্দ না কর তবে এতে আমার কোন পীড়াপীড়ি নেই। এই কথা বলে তিনি সন্ধিপত্রের লেখক হযরত আলী (রাঃ)-কে ঐ বাক্যাংশ মুছে দেয়ার নির্দেশ দেন। হযরত আলী (সাঃ)-এর পক্ষে তা কেমন করে মুছে ফেলা সম্ভব, যা গোটা বিশ্বে বিপ্লব সৃষ্টি করে অন্ধকারকে আলোর মাধ্যমে, শিরককে ঈমানের মাধ্যমে এবং অজ্ঞতাকে জ্ঞানের মাধ্যমে দূরীভূত করে দিয়েছে। মহানবী (সাঃ) তা অনুভব করে ঐ বাক্যাংশের স্থানটি জেনে নিয়ে নিজ হাতে তা মুছে দেন।

        চুক্তিপত্র সম্পাদিত হওয়ার পর মুসলমানরা অনুভব করল যে, এতে মুসলমানদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পরিস্থিতি এমন মনে হল, যেন মুসলমানগণ পরাজয় স্বীকার করে সন্ধি করেছে। এমনকি হযরত উমর (রাঃ) নিজেকে সংযত রাখতে পারলেন না এবং আল্লাহর কালেমা ও ইসলামের সমুন্নতির আবেগে উদ্বেলিত হয়ে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল। হুদায়বিয়ার এই ঘটনা কি বিজয়ের বার্তাবহ? মহানবী (সাঃ) বললেন: আল্লাহর শপথ! নিঃসন্দেহে এটা বিজয়ের বার্তাবহ।

 এ সন্ধি মক্কা বিজয়ের পথ উন্মুক্তকারী

        হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) বলেন, "এ স্থানে ফাতহুম মুবীন বলতে হুদায়বিয়ার সন্ধি বুঝানো হয়েছে। হুদায়বিয়ার সন্ধি মূলত ফাতহুম মুবীন অর্থাৎ মক্কা বিজয়ের পথ উন্মুক্ত করে দিল। কেননা মাঝখান থেকে যখন যুদ্ধের আশংকা দুরীভূত হতে থাকল এবং শান্তি ও নিরাপত্তার পরিবেশ সৃষ্টি হল, মক্কা ও মদীনার মধ্যে যাতায়াত নিরাপদ হয়ে গেল এবং হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ ও আমর ইবনুল আস (রাঃ)-এর মত বীর ও প্রতিভাবান ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণ এই হুদায়বিয়ার সন্ধিরই অবদান। আর এই সব উপরকণই ধীরে ধীরে মক্কা বিজয়ের পথ উন্মুক্ত করে।"

        ইবনে হিশাম ইমাম যুহরীর বক্তব্যের সমর্থনে লিখেছেন, হুদায়বিয়ার সময় মহানবী (সাঃ)-এর সংগে ছিল চৌদ্দশত মুসলমান, আর দুই বাসর পর যখন তিনি মক্কা বিজয়ের জন্য যাত্রা করেন তখন তাঁর সংগীর সংখ্য ছিল দশ হাজার। এই সত্য থেকেও যুহরীর বক্তব্যের পরিষ্কার সমর্থন পাওয়া যায়।

বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতি দাওয়াতী পত্র 

        এই সন্ধির ফলে রাস্তা নিরাপদ হয়ে যায়; তখন হযরত (সাঃ) আশা করলেন যে, সত্যের আওয়াজ সমস্ত দুনিয়ার বাদশাহদের নিকট এখন পৌছিয়ে দেয়া যায়।

        সুতরাং আমর বিন উমাইয়া (রাঃ)-কে আসহামা নামক হাবশা দেশের বাদশাহ নাজ্জাশীর নিকট প্রেরণ করলেন। তিনি হযরত (সাঃ)-এর পত্রখানা তাঁর উভয় চোখের উপর রাখলেন এবং সিংহাসন থেকে নেমে নীচে বসলেন এবং সন্তুষ্ট চিত্তে ইসলাম গ্রহণ করলেন। তিনি হুযূর (সাঃ)-এর জীবদ্দশায় ইনতিকাল করেন।

        দাহইয়া কালবী (রাঃ)-কে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নিকট প্রেরণ করেন। অকাট্য প্রমাণ এবং পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, হযরত (সাঃ) সত্য নবী। সুতরাং তিনি সহজেই ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা করেন। কিন্তু এতে তাঁর উপর স্বীয় প্রজাকুল ক্ষেপে যায়। তখন তাঁর এ ভয় হয়ে যায় যে, যদি আমি মুসলমান হয়ে যাই, তা হলে এ সমস্ত লোক আমাকে রাজপদ থেকে পদচ্যুত করবে। এ জন্যেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন।

        হযরত আবদুল্লাহ্ বিন হুযায়ফা (রাঃ)-কে ইরানের সম্রাট খসরু পারভেজের নিকট প্রেরণ করেন। ঐ হতভাগা পবিত্র লিপির সাথে অসম্মান জনক আচরণ করে এবং লিপিখানি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে। হযরত (সাঃ) এ খবর শুনে বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা তার সাম্রাজ্যকেও এমনি টুকরো টুকরো করবেন, যেরূপ, সে আমার পত্রখানিকে করেছে।

        সাইয়্যেদুর রসূল (সাঃ)-এর দোয়া কিভাবে অপূর্ণ থাকবে। কিছু দিন পরেই খসরু পারভেজ স্বয়ং তার পুত্র শেরুয়ার হাতে নিমর্মভাবে নিহত হয়।

        হযরত হাতিব বিন আবি বুলতা (রাঃ)-কে মিসরের সুলতান ইস্কান্দারিয়ার (মকুকাস) নিকট প্রেরণ করেন। তাঁর অন্তরেও আল্লাহ তা'আলা ইসলামের যথার্থতা এবং হযরত (সঃ)-এর সত্যতা বিষয়ে প্রকৃত বোধশক্তির জন্ম দিয়েছিলেন। সুতরাং তিনি হযরত হাতিব (রাঃ)-এর সাথে অত্যন্ত সদ্ব্যবহার করেন; এবং হুযুর (সাঃ)-এর নিকট কিছু উপঢৌকন প্রেরণ করেন, যার মধ্যে একজন বাঁদী মারিয়া কিবতী (রাঃ)-ও ছিলেন এবং দুলদুল নামে একটি সাদা খচ্চরও ছিল। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে ১ হাজার দীনার ও ২০ জোড়া কাপড়ও উপঢৌকনের মধ্যে ছিল।

        হযরত আমর বিন আস (রাঃ)-কে আম্মানের বাদশাহ অর্থাৎ জিফর ও আবদুল্লাহর নিকট প্রেরণ করেন। তাদের ব্যক্তিগত অনুসন্ধান ও পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের মাধ্যমে হযরত (সাঃ)-এর নবুওয়তের উপর তাদের উভয়ের বিশ্বাস জন্মেছিল; তাই উভয়ে মুসলমান হয়ে যান। ঐ সময় থেকেই প্রজাদের থেকে যাকাত আদায় করে হযরত আমর বিন 'আস (রাঃ)-এর নিকট অর্পণ করতে থাকেন।

Post a Comment

0 Comments