হযরত উম্মে সুফিয়া (রাঃ) জীবনী

        সপ্তম হিযরীতে ইনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। ইনি ছিলেন খায়বরের ইয়াহুদী রাজকন্যা। তিনি অতিশয় রূপসী ছিলেন। খায়বর হতে আসবার সময় তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে একটি উটে আরোহণ করে মদিনায় পৌঁছেন।

        এক আনসার মহিলার গৃহে তাকে উঠান হয়। তাঁর রূপের কথা শুনিয়ো মাহীনার নয় মাগী তাঁকে দেখবার জন্য উক্ত মহিলার ঘরে যায়। হযরত আয়েশা (রাঃ)-ও বোরখা পরিয়া তাঁকে দেখতে যান। কিন্তু বোরখা পরিহিত অবস্থায় নবী করীম (সাঃ) হযরত আয়েশারে চিনে ফেলেন। তিনি ধীরে ধীরে তাঁর নিকট গমন করে প্রশ্ন করেন, জায়েলা। কেমন দেখতে

        হযরত আয়েশা (রাঃ) একটু কটাক্ষ করে বললেন, 'রূপসী, কিন্তু সে তো ইয়াজদিন। হুযুর (সাঃ) বললেন, ইহা বলা তোমার পক্ষে একান্ত গর্হিত হয়েছে। সে ইসলাম কবুল করেছে। এই রাজ দুহিতা যেমন সুন্দরী, তেমনি বহু গুণের অধিকারিণীও ছিলেন।

        রন্ধন কাজে তিনি অতিশয় পারদর্শী ছিলেন। গোশ্ত দ্বারা তিনি বিভিন্ন উপাদের খাদ্য তৈরি করতে পারতেন। হযরত আয়েশা বলেন, আমি সুফিয়া (রাঃ) অপেক্ষা উত্তম রান্না করতে কাউকেও দেখি নাই।

        হযরত আয়েশা তাঁকে খুব স্নেহ করতেন। অনেক সয় তিনি তাঁকে আপন ঘরে ডাকতেন। হযরত সুফিয়া (রাঃ)-ও হযরত আয়েশাকে মনে প্রাণে ভালবাসতেন। তাঁর অমায়িক ব্যবহারে তাঁকে সকলেই শ্রদ্ধা করতেন। একদা হযরত আয়েশা ও হযরত সুফিয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য গোস্ত পাকাবার ব্যবস্থা করেন। সুফিয়ার রান্না হয়ে গেলে তিনি একটি পেয়ালায় করে একজন পরিচারিকার দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে প্রেরণ করেন। তখনও হযরত আয়েশার পাক হয় নাই। সুফিয়ার ঘর হতে তাঁর পাক হবার পূর্বে রাসূলুল্লাহকে গোশত পাঠিয়ে দেয়ায় তিনি পরিচারিকার হাত হতে পেয়ালটি ফেলে দিলেন। ফলে পেয়ালাটি ভেঙ্গে গেল। এই ঘটনায় নবী করীম (সাঃ) পরিচারিকাকে শুধু এই বললেন যে, 'তোমার আম্মা রাগ করেছেন।' আর আপন মনে ভাঙ্গা পেয়ালার টুকরা সংগ্রহ করতে লেগে যান। ক্ষণকাল পরে আয়েশা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলে আপন কৃতকর্মের জন্য অত্যন্ত মর্মাহত হন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে আরজ করলেন, 'ইয়া রাসুলাল্লাহ। আমার এই কাজের কি প্রায়শ্চিত্ত হতে পারে? নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করলেন, 'এরূপ একটা পেয়ালা এবং উত্তমভাবে রন্ধনকৃত গোশত পাঠায়ে দিলেন। তাঁর মধুর আচরণে আত্মীয়-স্বজন তাঁকে অতিশয় শ্রদ্ধা করতেন। হযরত আয়েশা বলেন যে, আত্মীয়-স্বজনের প্রতি এরূপ উত্তম ব্যবহার করতে আমি অপর কাকেও দেখি নাই। হযরত আয়েশার সহিত উক্ত রূঢ় ব্যবহার ছাড়া তাঁর আর কোন মনোমালিন্য হয় নাই।

Post a Comment

0 Comments