উৎপীড়িতদেরকে সাহায্য করবে

        (১৫) প্রত্যেকের জন্য সুপারিশ করবে। যদি কোন মুসলমানের কোন আবশ্যকতা থাকে তবে তার জন্য ক্ষমতাশালী ও পদমর্যাদাশালী লোকদের নিকট তার জন্য সুপারিশ করবে এবং তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। হযুরে পাক (দঃ) বলেছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ কিছু আমার নিকট প্রার্থনা করলে, আমার ইচ্ছে হয় যে, আমি তাকে তখনই তা' দিয়ে দেই। কিন্তু তখন আমার নিকট কেউ উপস্থিত থাকলে, সে প্রার্থী লোকটির জন্য সুপারিশ করুক, এটা আমি ভালবাসি। কেননা ঐ সুপারিশের মাধ্যমে সে ছওয়াব পেতে পারে। এ হাদীসের মর্মানুযায়ী ছওয়াব লাভের জন্য প্রত্যেকেরই জন্য সুপারিশ করা উচিত। আল্লাহতায়ালা যা ভালবাসেন, তিনি তা' তাঁর প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর মাধ্যমে করে থাকেন।

        হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, আমার নিকট তোমরা সুপারিশ করবে এবং তজ্জন্য তোমরা ছওয়াব পাবে। আমি কোন কাজ করতে ইচ্ছে করেও এজন্য বিলম্ব করি যে, তোমরা তজ্জন্য সুপারিশ করে ছওয়াব পেয়ে যাও। তিনি আরও বলেছেন যে, মৌখিক দানের চেয়ে অন্য কোন দানই উৎকৃষ্ট নয়। আরজ করা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ। মৌখিক দান কিরূপ? তিনি বললেন, এমন লায়সঙ্গত সুপারিশ গার আর্য কারও প্রাণ রক্ষা হয়, কারও উপকার হয়, কেউ বা বিভিন্ন রকম বিপদ আপদ থেকে যুক্তি পেয়ে যায়।

        হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেছেন, বারীরার স্বামী একজন গোলাম ছিল। তাক নাম মুগীছ। আমি একদা লক্ষ্য করলাম যে, মুগীয়ের চোখের অশ্রু প্রবাহিত হয়ে তার দাড়ি সিক্ত করতেছে। তখন হুযুরে পাক (দঃ) আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, বারীরার জন্য মুর্গীছের ভালবাসা এবং মুগীছের প্রতি বারীরার ঘৃণা তোমার নিকট কি আশ্চর্য বোধ হয় নাঃ হুযুরে পাক (দঃ) বারীরাকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি যদি মুগীছের নিকট ফিরে যেতে, তবে বড়ই উত্তম হত। কেননা সে (আর যাই হোক) তোমার সন্তানের পিতা। বারীরা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ। আপনি কি আমাকে এই আদেশ দেন? তিনি বললেন, না, আমি আদেশ দেই না বরং তোমাকে সুপারিশ করছি।

        (১৬) উৎপীড়িতদেরকে সাহায্য করবে। নিজ মুসলমান ভ্রাতার সম্মান এবং ধন-প্রাণ অন্যের জুলুম থেকে যথাসাধ্য রক্ষা করবে। জুলুম বন্ধ করার চেষ্টা করবে। কেননা এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের জন্য ওয়াজিব। হযরত আবু দারদা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, এক ব্যক্তি হুযুরে পাক (দঃ) এর সামনে কোন ব্যক্তিকে গালিগালাজ করলে, এক তৃতীয় ব্যক্তি তার পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ করল। তখন হুযুরে পাক (দঃ) বললেন, যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভ্রাতার এভাবে সম্মান রক্ষা করে তার একাজ দোযখের পর্দাস্বরূপ হয়ে যায়। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যে মুসলমান ও মুসলমানের সম্মান রক্ষা করে, রোজ কিয়ামতে তার থেকে দোযখের আগুন দূর করে দেয়া আল্লাহতায়ালার কর্তব্য হয়ে পড়ে। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, হযরত রাসূলে করীম (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির সামনে তার মুসলমান ভ্রাতার কথা উল্লেখ করা হয় এবং সে তাকে সাহায্য করতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যদি সাহায্য না করে, তবে আল্লাহতায়ালা লাকে ইহ-পরলোকে পাকড়াও করবেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির সামনে তার মুসলমান ভ্রাতার কথা উল্লেখ করা হয় এবং সে তাকে সাহায্যও করে, আল্লাহতায়ালা তাকে ইহ-পরলোক সাহায্য করবেন।

        হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় তার মুসলমান ভ্রাতার সম্মান জীবিত রাধে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য রোজ কিয়ামতে একজন ফিরেশতা পাঠিয়ে দেবেন। যেন সে দোযখের আগুন থেকে তাকে রক্ষা করে। হযরত জাবের (রাঃ) এবং হযরত আবু তালহা (রাঃ) বলেছেন, আমরা হুযুরে পাক (দঃ) কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে এমন স্থানে সাহায্য করে, যেখানে তার সম্মান নষ্ট হতে থাকে বা সম্মান নষ্ট হবার উপক্রম হয়, আল্লাহতায়ালা তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন যেখানে তার সাহায্যের জন্য ঐ ব্যক্তির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের অপমান করতে উদ্যত হয় যদি অপর মুসলমান তখন তার জন্য যথাসাধ্য সাহায্য ও সহানুভূতি প্রদর্শন না করে, তবে আল্লাহতায়ালা এরূপ সাহায্য সহানুভূতি ত্যাগকারীকে এমনস্থানে অপমান ও লাঞ্ছিত করবেন, যেস্থানে সে সাহায্যের জন্য খুবই প্রত্যাশী থাকবে। 

Post a Comment

0 Comments