আল্লাহতায়ালার অসীম গুণাবলীর দ্বিতীয় নিদর্শন দুনিয়া এবং তন্মধ্যস্থিত বস্তুসমূহ

         যখন তুমি তোমার মধ্যে চিন্তার উপায় জানতে পেরেছ, তখন দুনিয়ার বিষয় চিন্তা কর। কেননা দুনিয়া-ই তোমার বসবাস স্থল। তারপর দুনিয়ার নদ-নদী, সমুদ্র, মহাসমুদ্র, পাহাড়-পর্বত, খনিজ দ্রব্য ইত্যাদির বিষয় চিন্তা করবে। তারপর শূন্য রাজ্যের চিন্তায় মগ্ন হবে। দুনিয়া আল্লাহতায়ালার নিদর্শনসমূহের মধ্যে এরূপ একটি নিদর্শন যে তিনি দুনিয়াকে শয্যা ও বিশ্রামস্থান করেছেন এবং তন্মধ্যে বহু বিস্তীর্ণ পথ-ঘাট ও সড়ক ইত্যাদি স্থাপন করেছেন এবং তা' বশীভূত করে দেয়া হয়েছে। যেন তোমরা তাতে বিচরণ ও হাটা চলা করতে পার। তিনি তা' স্থির রেখে দিয়েছেন যেন তা' নড়াচড়া করতে না পারে। দুনিয়ার মধ্যে তিনি বড় বড় পাহাড়-পর্বতকে তার পেরেক স্বরূপ স্থাপন করেছেন। যেন তা' হেলাদোলা করতে না পারে। তারপর তিনি তার কতক স্থানকে এত উচ্চ করেছেন যে, কোন লোকই তার চারদিকে বিচরণ করতে সমর্থ না হয়। যদিও তার জীবন দীর্ঘ হয় এবং তার ভ্রমণ অধিক হয়। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আমি আকাশকে শক্তি দ্বারা নির্মাণ করেছি এবং তা' বিস্তৃত করেছি। দুনিয়াকে আমি বিস্তার করেছি, কি উত্তম বিস্তারকারী আমি। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "তিনি তোমাদের জন্য দুনিয়াকে বশীভূত করেছেন। সুতরাং চতুষ্পার্শ্বে তোমরা বিচরণ কর।" আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তিনি তোমাদের জন্য দুনিয়াকে শস্যস্বরূপ করেছেন। আল্লাহতায়ালার পাক কালামে দুনিয়া সম্বন্ধে এরূপ অনেক আয়াত আছে যেন তোমরা তাঁর আশ্চর্য কারু-কার্য সম্বন্ধে চিন্তা করতে পার। তিনি দুনিয়াকে জীবিত লোকদের জন্য বসবাসের স্থান করেছেন এবং তার অভ্যন্তর ভাগকে মৃতদের জন্য শয্যা করেছেন।


        এবার তুমি দুনিয়ার দিকে লক্ষ্য কর, এটা মৃত থাকে। যখন এর উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয় তখন তাতে বিচিত্র তৃণলতা জন্মে। তদ্বারা নানা শ্রেণীর প্রাণী জীবন ধারণ করে। তারপর লক্ষ্য কর কিরূপে মহান প্রভু দুনিয়ার চারদিকে পাহাড়-পর্বতকে দৃঢ় ও উচ্চ করে রেখে দিয়েছেন এবং তার নিম্নদেশে সলিল রাশি সঞ্চয় করে রেখে দিয়েছেন। তা' থেকে প্রস্রবণ এবং নদ-নদী দুনিয়ার যমিনের উপর দিয়ে প্রবাহিত করে দিয়েছেন। তিনি শুষ্ক প্রস্তর খণ্ড এবং কর্দমাক্ত ভূমি থেকে. বিশুদ্ধ নির্মল ও সুমিষ্ট সলিল বের করেছেন এবং তদ্বারা প্রত্যেক জীবিত প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন। তদ্বারা তিনি শস্য, আলু, খর্জুর, জয়তুন, ডালিম এবং অসংখ্য-বিভিন্ন শ্রেণীর ও বিভিন্ন বর্ণের ফল-মূল ও বক্ষরাজি সৃষ্টি করেছেন। তদ্বারা তিনি খাদ্য ও অন্যান্য ফল-মূল উৎপাদন করেছেন। কোন কোন বৃক্ষের ফল অন্য বৃক্ষের ফল থেকে উত্তম। এসব বৃক্ষ একই পানি দ্বারা সিঞ্চিত হয়ে থাকে এবং একই মৃত্তিকা থেকে উদগত হয়।

        যদি প্রশ্ন কর যে, বিভিন্ন বীজ থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর বৃক্ষ ও তরুলতা কিরূপে জন্মে? তার উত্তরে বলব যে, খেজুরের একটি আঁটির মধ্যে খেজুর বৃক্ষের বীজ লুক্কায়িত থাকে। কখনও কখনও একই শস্যবীজের মধ্যে সাতটি শীষ থাকে এবং প্রত্যেক শীষে একশ' শস্য থাকে। তারপর লক্ষ্য কর বিস্তৃত প্রান্তরের দিকে এবং তার প্রকাশ্য ও গুপ্ত পদার্থের দিকে। তাকে একইরূপ মৃত্তিকা দেখতে পাবে। যখন তার উপর বৃষ্টি নেমে আসে তা' স্ফিত ও বর্ধিত হয় এবং তাতে প্রত্যেক প্রকার সুন্দর ও বিভিন্ন বর্ণের সাদৃশাত্মক বৃক্ষরাজি ও তরুলতা জন্মে। প্রত্যেক তরুলতার বিভিন্ন স্বাদ, বিভিন্ন গন্ধ, বিভিন্ন বর্ণ এবং বিভিন্ন আকৃতি আছে। একটি থেকে অন্যটি পৃথক। তার অধিক সংখ্যা, বিভিন্ন শ্রেণী, বিভিন্ন আকৃতি, বিভিন্ন প্রকৃতি এবং উপকারের দিকে লক্ষ্য কর যে, আল্লাহ কিরূপে আশ্চর্য উপকার তার মধ্যে সঞ্চিত রেখেছেন? কোন বৃক্ষ খাদ্য দান করে, কোনটি শক্তি প্রদান করে, কোনটি জীবন রক্ষা করে, কোনটি জীবন বিনষ্ট করে, কোনটি শীতল করে এবং কোনটি উষ্ণ করে, কোনটি যখন পাকস্থলীতে যায় তা' শিরার তলদেশ থেকে পাণ্ডু রোগ নির্মূল করে দেয়। কোনটি পাও রোগ বর্ধিত করে কোনটি শ্লেষ্মা ও স্নিহা দমন করে। কোনটি তাদের উভয়ের সাথে যোগসূত্র, রক্ষা করে। কোনটি রক্ত পরিষ্কার করে। কোনটি রক্ত প্রবাহিত করে। কোনটি আনন্দ দান করে, কোনটি নিদ্রা আনে, কোনটি শক্তি বৃদ্ধি করে, আবার কোনটি বা শক্তি দুর্বল করে। মোট কথা মৃত্তিকা থেকে এমন কোন বৃক্ষ বা তৃণ জন্মে না যার মধ্যে উপকার না আছে। এই বৃক্ষও তৃণের মধ্যে আল্লাহতায়ালা কি গুণ রেখেছেন তা' উপলব্ধি করা মানব শক্তি ও সাধ্যের অতীত।

        এসব তরুলতা জন্মাবার জন্য এবং তা' থেকে ফল পাওয়ার জন্য বিশেষ বিশেষ পন্থার দরকার হয়। খুর্মার জন্য যমিন সার দিয়ে উর্বরা করতে হয়। আঙ্গুরের জন্য যমিন পরিষ্কার করতে হয় এবং খাদ্যশস্যের জন্য বন্য গাছ গাছড়া এবং আগাছা তুলে ফেলতে হয়। কোন কোন বীজ মাটিতে বপন করতে হয়, কোন বীজের চারা রোপন করতে হয়, কোন কোন লতা বৃক্ষের শাখা-প্রশাখায় বেয়ে বর্দ্ধিত হয়। মোটকথা গাছপালা ও তরুলতা যত রকমের আছে সবগুলোর অবস্থা দেখে মোটামুটি ধারণা করে নিতেও বহু দিনের প্রয়োজন। এই তরুলতা উৎপাদন এবং তাতে ফুল-ফল ধারণের মধ্যেও আল্লাহতায়ালার বহু কৌশল নিহিত।

        পাহাড়-পর্বত এবং ভূগর্ভস্থ খনিসমূহের মধ্যে আল্লাহতায়ালা অমূল্য রত্নসমূহ এবং অন্যান্য পদার্থ রেখেছেন। খনিসমূহ থেকে স্বর্ণ, হীরক ইত্যাদি পাওয়া যায়। কোন কোন খনিজ পদার্থ অন্য বস্তুর সাথে মিশ্রিত থাকে, যেমন স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, সীসা, লৌহ ইত্যাদি। আবার কোন কোন বস্তু মিশ্রিত থাকে না যেমন ফিরোজা (এক প্রকার বহুমূল্যবান প্রস্তর) এবং রত্ন ইত্যাদি। এগুলি বের করবার ব্যবস্থাপনাও আল্লাহতায়ালা মানুষকে শিখিয়ে দিয়েছেন এবং এর কোন কোন বস্তু দ্বারা ক্ষুদ্র এবং অন্যান্য দ্রব্য তৈরীর ব্যবস্থাও আল্লাহ মানুষকে শিখিয়েছেন।

        ভূগর্ভস্থ অন্যান্য কিছু খনিজ পদার্থের দিকে লক্ষ্য কর যেমন গন্ধক, নেফতা, আলকাতরা ইত্যাদি। লবণও এই শ্রেণীর একটি সুলভ এবং সাধারণ দ্রব্য। খাদ্যের স্বাদ পূর্ণ করার জন্য লবণের প্রয়োজন হয়। লবণের অভাবে খাদ্য দ্রব্য বিশ্বাদ লাগে। তাছাড়া কোন কোন খাদ্য দ্রব্য এরূপ যে, তা' লবণ ব্যতীত ভক্ষণে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। তাছাড়া ঐ বস্তু লবণের অভাবে অকালে নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালার করুণার প্রতি লক্ষ্য কর যে, কিরূপে তিনি কোন কোন মাটিকে লবণাক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। বৃষ্টির পরিষ্কার পানি তথাকার পুকর ও নালায় সঞ্চিত করে রেখে দেন এবং তা কি কৌশলে উত্তপ্ত হয়ে লবণে পরিণত হয়। ফলকথা আল্লাহ কোন বস্তুকে অনর্থক এবং খেল-তামাশা রূপে সৃষ্টি করেননি। তারপর তিনি যে জিনিস যেভাবে এবং যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করলে উত্তম হয়, তিনি তা' সেইভাবে সৃষ্টি করেছেন। এজন্যই আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আমি আসমান ও যমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে, তা' অনর্থক সৃষ্টি করিনি বরং আমি তা' ন্যায়ের সাথে সষ্টি করেছি। যথাঃ কুরআনে পাকে রয়েছেঃ "অমা খালাজ্বনাস সামাওয়াতি অল আরদ্বা অমা বাইনা হুমা লাইবীনা অমা খালাঞ্ছনা হুমা ইল্লা বিল হাজ্বত্ত্বি"।

Post a Comment

0 Comments