হযরত খাদিজা (রা) সাথে রাসূলের বিবাহ

        আরবের বহু ধনী, শিক্ষিত ও সুন্দর যুবক পাণিপ্রার্থী হয়ে নিরাশ হয়েছিল। অথচ ঘটনা প্রবাহে আজ হযরত খাদীজার সে প্রতিজ্ঞা স্রোতের মুখে তৃণ-খণ্ডের ন্যায় ভেসে গেল। বিধির কি অপূর্ব বিধান।

        নারী স্বভাবতঃই গুণের পূজারিণী। পুরুষের গুণ নারী দেহ মনে এক অপূর্ব আকর্ষণের সৃষ্টি করে। হযরত খাদীজা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুণরাশি যতই অবগত হচ্ছিলেন, ততই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছিলেন। তাঁর অসামান্য গুণাবলির কথা অবগত হয়ে তিনি তাঁর পূর্ব প্রতিজ্ঞা তুলে নিয়ে আবার নতুন করে সংসার পাতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়লেন। হযরত খাদীজা নিজকে আর সামলিয়ে রাখতে পারলেন না। লুকিয়ে রাখতে পারলেন না তাঁর মনের কথা। নফিসা নারী জনৈকা বয়স্কা দাসীর নিকটে তিনি খুলে বললেন সব কথা। দাসী নফিসা তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আপনার মনের বাসনা নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার এ কাজ উদ্ধারের জন্য। একদা দাসী নফিসা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ কথা সে কথা আলাপ করতে করতে বলে ফেলল, আপনার এ যৌবনকাল, এ পর্যন্ত আপনি বিয়ে করছেন না। কেন? হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর করলেন। বিয়ে করার মত সংস্থান আমার নেই। নিজেরই চলার মত পথ নেই, তাঁর উপরে আবার আর একজনকে এনে তাকে খাওয়াব কি? তাছাড়া বিয়ে করতে হলে তার যে একটা প্রাথমিক খরচ আছে সেটাও কি কম ? গহনা-পত্র, জামা-কাপড়, মোহরানা এসব নিয়ে যে একটা বিরাট অঙ্ক খরচ করতে হবে তা চিন্তা করলে বিয়ের কথা যে আমি কল্পনাও করতে পারি না নফিসা। নফিসা বলল, আচ্ছা, এমন কোন রমণী যদি আপনি পান যাকে গহনাপত্র, জামা-কাপড়, মোহরানা প্রভৃতি কিছুই দিতে হবে না, এমনকি তাকে ভরণ-পোষণের দায়িত্বও আপনাকে বহন করতে হবে না বরং তার নিকট থেকেই আপনি কিছু সাহায্য পেতে পারেন, সেরূপস্থলে আপনার বিয়ে করতে কোন আপত্তির কারণ আছে কি? 

        হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কে সে রমণী, কেমন ধরনের রমণী সে? এসব কথা না জেনে কেমন করে তোমার এ কথার উত্তর দেব? নফিসা বললেন, এমন রমণী যেই হোক না কেন, যদি সে পরমা সুন্দরী বিদূষী, সচ্চরিত্রা ও উচ্চবংশীয়া হয়, কোন আপত্তি আছে কি?

        হযরত বললেন, এমন রমণী কে আছে যে, উচ্চবংশীয়া, সচ্চরিত্রা, সুন্দরী ও বিদূষী হয়েও আমার মত একজন সহায়-সম্বলহীন নিঃস্ব দরিদ্রকে পতিত্বে বরণ করতে রাজি হবে। নফিসা উত্তর করল, যদি থেকেই থাকে, তবে আপনি রাজি হবেন কি না তাই বলুন। হযরত বললেন, যদি সত্যই এত সহজে এমন যুবতী একজন স্ত্রী পাওয়া যায় যাকে কিছুই দিতে হবে না এমন কি ভরণ পোষণও দিতে হবে না, তবে আর অমত করার কি আছে। কিন্তু এটা যে একেবারে আকাশ-কুসুম বলেই মনে হয়। এও কি সম্ভব?

        নফিসা বলল, নিশ্চয়ই সম্ভব, আকাশ কুসুম নয়। হযরত জিজ্ঞেস করলেন, কে সেই রমণী ? নফিসা বলল, খুওয়াইলিদের কন্যা খাদীজা। তিনি সর্বদাই আপনার প্রশংসা করে থাকেন। আমার বিশ্বাস যে, আপনার তরফ হতে প্রস্তাব করলে অতি সহজেই তিনি রাজি হবেন। যদি বলেন তবে আমি তাঁকে এ বিষয়ে একটু জিজ্ঞেস করে দেখতে পারি।

        হযরত বললেন, বেশ, তা চেষ্টা করে দেখতে কথা খুলে বললে তিনি তাকে আবার পাঠিয়ে দিলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটে। তিনি তাকে বলে দিলেন তুমি গিয়ে তাঁকে আমার সম্মতির কথা জানিয়ে এসো। নফিসা পুনরায় এসে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খাদীজার সম্মতির কথা জানালে তিনি বললেন, আচ্ছা তুমি একবার আমার চাচা আবু তালিবের নিকটে এ কথাটা বলে এসো। যেহেতু আমার ইচ্ছা থাকলেও আমার চাচা ১৭৭ অমতে আমি কিছুই করতে পারব না, আবার আমি নিজেও তাঁকে একথা বলতে পারব না। নফিসা আবু তালিবকে একথা জানালে তিনি বিশেষ আগ্রহের সাথে সম্মতি প্রদান করলেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিন্তা করেননি তা নয়। তবে হযরত খাদীজার যে সবগুণের পরিচয় তিনি পেয়েছিলেন সে তুলনায় তাঁর বয়সের এ তারতম্যটুকু একেবারেই ধর্তব্য নয় বলেই তিনি মনে করেছিলেন।

         অতঃপর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে আবু তালিব এবং হযরত খাদীজার পক্ষে তাঁর চাচা আমর-বিন-আসাদ বিবাহের কথাবার্তা নিষ্পত্তি করে দিন তারিখ ধার্য করলেন। নির্দিষ্ট তারিখে হযরতের পক্ষ থেকে আবু তালিব, হযরত হামজা এবং আরও অনেক আত্মীয়-স্বজন আর হযরত খাদীজার পক্ষে আমর-বিন-আসাদ, ওয়ারাকা-বিন নওফেল এবং আরও অনেকে উপস্থিত থেকে শুভ-বিবাহ সুসম্পন্ন করলেন। বিবাহ মজলিসে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচা আবু তালিব একটি নাতিদীর্ঘ খুতবা অর্থাৎ ভাষণ দান করলেন। যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর বংশে জন্মগ্রহণের সৌভাগ্য দান করেছেন এবং পবিত্র কাবাগৃহের খিদমত করার গৌরব প্রদান করেছেন।

         আমার ভাতিজা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর্থিক অবস্থার দিক দিয়ে নিঃস্ব হলেও সে যে সর্বগুণে গুণান্বিত একথা বলতে সত্যই আমি গৌরব অনুভব করছি। আর আমার একথা যে বিন্দুমাত্রও অতিরঞ্জিত নয় আশা করি তা আরবের প্রতিটি ব্যক্তি একবাক্যে স্বীকার করবেন। খুওয়াইলিদের কন্যা খাদীজার সঙ্গে আপনাদের ও আমাদের সম্পর্ক নতুন নয়, তবুও নতুন করে তাঁর সঙ্গে একটা সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরে আমি আনন্দ অনুভব করছি। আমার ভাতিজা মুহাম্মদ তাঁর পাণিপ্রার্থী। আমি খাদীজার মোহরানা হিসেবে বিশটি উট খাদীজাকে দান করছি। যদিও এ সামান্য মোহরানা বিবি খাদীজার পক্ষে নিতান্তই অল্প। তবুও আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলতে পারি যে, বিবি খাদীজা এ বিবাহে স্বীকৃতি দিয়ে নিতান্ত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় প্রদান করেছেন; যেহেতু আমার ভাতিজা মুহাম্মদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আমি তাদের উভয়ের সুখী দাম্পত্য জীবন কামনা করছি।

        হযরত খাদীজার পক্ষে ওয়ারাকা বিন-নওফেল দাঁড়িয়ে আর একটি ভাষণ দান করলেন। যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদেরকে সমগ্র আরব দেশের মধ্যে অসীম সম্মানের অধিকারী করেছেন। বংশ গৌরবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং খাদীজা (রা) কেউ কারও চেয়ে কম নয়। আমাদের উভয় বংশের পুরুষগণ একই ছিলেন। আজ আবার একই বংশের এ দুটি শাখার মধ্যে নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরে আমরা সত্যই আনন্দিত।

         হাশেমী বংশের গৌরব যে আমাদের চেয়েও উর্ধ্বে, তা স্বীকার করতে আমার বিন্দুমাত্রও দ্বিধা নেই। সে হিসেবে খাদীজা মুহাম্মদকে পতিত্বে বরণ করে নিশ্চয়ই আমাদের গৌরব বৃদ্ধি করেছে। তাছাড়া মুহাম্মদের মত সচ্চরিত্র ও জ্ঞানী যুবক সমগ্র আরবে আর দ্বিতীয় নেই সেকথা শুধু আমি কেন, সকলে একবাক্যে স্বীকার করবে। সুতরাং তাঁর হাতে খাদীজাকে তুলে দিতে পেরে আমরা সত্যই সুখী হয়েছি। হে কুরাইশ ভদ্র মহোদয়গণ। আপনারা সাক্ষী থাকুন যে আমি খুওয়াইলিদের কন্যা খাদীজাকে নির্ধারিত মোহরের বিনিময়ে আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিণয়ে সমর্পণ করছি। এভাবে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের। ভিতর দিয়ে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে হযরত খাদীজার শুভ-বিবাহ সুসম্পন্ন হয়ে গেল। হযরত খাদীজা তাঁর কতিপয় অপ্রাপ্ত বয়সের বালিকা দাসীকে গীত বাদ্য ও নৃত্য করতে আদেশ করলেন। বালিকা দাসীগণ গীত-বাদ্য ও নৃত্য করে বিয়ে মজলিসটাকে আনন্দে মুখরিত করে তুলল। বলা বাহুল্য যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে হযরত খাদীজার এ বিবাহ আইয়ামে জাহেলীয়ায় (অন্ধকার যুগে) সম্পন্ন হয়েছিল। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখনও নবুয়ত লাভ করেননি, কাজেই ইসলামের কোন বিধি নিষেধ পালন করার কোন প্রশ্নই উঠে না। তৎকালীন আরবে চির প্রচলিত নিয়ম অনুসারেই এ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। কাজেই বিবাহ মজলিসে গীত-বাদ্য ও নৃত্য করা কোন দোষের কার্য বলে বিবেচিত হয়নি। হযরত খাদীজা (রা) হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডেকে বললেন, আপনার চাচাকে বলুন, তিনি আমার মোহরানা স্বরূপ যে উটগুলো প্রদান করেছেন তারই একটা জবেহ করে উপস্থিত মেহমানদের আহারের ব্যবস্থা করতে। আমি উপস্থিত মেহমানদের আহারের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় দ্রব্যই যোগাড় করে রেখেছি সেজন্য কোনই অসুবিধে হবে না। হযরত খাদীজার নির্দেশ অনুযায়ী আবু তালিব অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে একটি উট জবেহ করে দিলেন। তদ্বারা পরম ধূমধামে বিবাহ মজলিসে উপস্থিত উভয় পক্ষের আত্মীয়-স্বজন ও মেহমানেিদরকে আহার করান হল। বিবাহের পরে হযরত খাদীজা পিতৃগৃহেই রয়ে গেলেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপাতত এখানেই থাকলেন। আবু তালিব তাঁর আত্মীয়-স্বজনসহ গৃহে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে হযরত খাদীজা তাঁর কদমবুছি করে আশীর্বাদ চাইলে আবু তালিব তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে প্রাণভরে আশীর্বাদ করলেন। হযরত খাদীজা তাঁকে বহু টাকা-পয়সা নজরানা স্বরূপ প্রদান করলেন।

        বলা বাহুল্য হযরত খাদীজা আবু তালিবকে এত অর্থ নজরানা স্বরূপ প্রদান করেছিলেন যে অতঃপর আবু তালিবকে আর অর্থাভাবের জন্য কোনরূপ চিন্তা করতে হয়নি। হযরত খাদীজার স্বপ্ন, ওয়ারাকা বিন নওফেলের স্বপ্ন ব্যাখ্যা, আর খাদীজার মনের বাসনা আজ সফল হল। হযরত খাদীজার সঙ্গে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিবাহ সত্যই বড় মধুময় হয়েছিল। দাম্পত্য জীবনে তাঁদের মত সুখী আর কেউ হয় কিনা তা কঠিন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পতিত্বে বরণ করে একদিকে সমগ্র জগতে বিশেষ সুনাম ও সম্মানের অধিকারিণী হয়েছিলেন, অন্য দিকে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করে আখেরাতের পথ পরিষ্কার করেছিলেন।

        আরবের বহু সম্ভ্রান্ত, শিক্ষিত, ধনী, আমীর-ওমরাহ প্রমুখ হযরত খাদীজাকে বিবাহ করার জন্য নিতান্ত আগ্রহ প্রকাশ করে যথাসাধ্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। অবশেষে সেই খাদীজা যখন একজন নিস্ব, দরিদ্র ও অশিক্ষিত যুবককে পতিত্বে বরণ করলেন তখন তারা হিংসায় জ্বলে মরতে লাগল। বিবাহের অল্পকাল পরেই তারা হযরত খাদীজার বিরুদ্ধে নানারূপ প্রচারণা আরম্ভ করে দিল। তারা বলতে লাগল যে, খাদীজা মুহাম্মদের মত একজন দরিদ্র যুবককে বিবাহ করে আমাদের মান-সম্মানের মস্তকে পদাঘাত করেছে, কাজেই তার সাথে আমাদের কোনরূপ সম্পর্ক রাখা উচিত নয়। এ বিষয় নিয়ে তারা প্রায় সকলেই অনবরত যুক্তি পরামর্শ করে দল পাকাতে লাগল। অবশেষে তারা সকলে একমত হল যে, আজ হতে খাদীজার সাথে আমাদের খাওয়া-দাওয়া উঠা-বসা সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হল। তাঁকে আমরা এক ঘরে করে রাখলাম। হযরত খাদীজার কানে এ সংবাদ পৌছাতে বিলম্ব হল না। তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে লাগলেন। কি করা যায়।

        অবশেষে বহু চিন্তা-ভাবনা করে একদিন তিনি মক্কার সকল ধনী, শিক্ষিত ও সম্মানী লোকদেরকে তাঁর বাড়ি দাওয়াত করলেন। কেউ কেউ বলল তার বাড়িতে যাব না, আবার কেউ কেউ বলল একবার গিয়েই দেখা যাক তাঁর উদ্দেশ্যটা কি? হয়তো মুহাম্মদের রূপ দেখে ঝোকের মাথায় তাঁকে বিয়ে করে এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। তারই একটা প্রতিকারের পরামর্শ চাইবে আমাদের কাছে। এ বলে বুঝা পড়া করে সবাই উপস্থিত হল হযরত খাদীজার দাওয়াত রক্ষা করতে।

        হযরত খাদীজা পরম যত্ন সহকারে সকলকে আহার করালেন। তারপরে সকলকে সম্বোধন করে বললেন, ভদ্র মহোদয়গণ। আপনারা সবাই অবগত আছেন, আমি একজন অশিক্ষিত ও নিঃস্ব দরিদ্রকে পতিত্বে বরণ করেছি। তাঁর সাথে উঠ-বসা করায় আপনাদের সত্যিই সম্মানের হানি হয়। তাই এর একটা প্রতিকার করা প্রয়োজন মনে করেই আজ আমি আপনাদের সকলকে ডেকে এনে কষ্ট দিলাম। সকলে সমস্বরে বলে উঠল। হ্যাঁ-হ্যাঁ, আমরা তো তাই চাই। আপনার এ বিবাহের জন্য আমরা সবাই অত্যন্ত দুঃখিত ও লজ্জিত। আপনি এখন কি চান বলুন ? আমরা সর্ব প্রকারে আপনাকে সহযোগিতা প্রদান করতে প্রস্তুত আছি। হযরত খাদীজা বললেন, আপনারা সবাই সাক্ষী থাকুন। আজ হতে আমার যাবতীয় বিষয়-সম্পত্তি, ধন-দৌলত, বাড়ি-ঘর সবকিছুই সম্পূর্ণ বিনা শর্তে আমার স্বামীকে দান করলাম। এ সবের উপর আমার আর বিন্দুমাত্রও দাবি রইল না। আজ হতে আমার স্বামীই এ অতুল ঐশ্বর্যের একমাত্র মালিক হলেন। তিনি ইচ্ছামত তা যেকোন ভাবে খরচ করতে পারেন। তাতে আমার কোন ওজর আপত্তি নেই। তিনি যদি দয়া করে আমাকে তাঁর চরণ সেবার দাসী বলে তাঁর সেবা করার সুযোগটুকু প্রদান করেন, আমি তাতেই আমার জীবনকে ধন্য মনে করব। আজ হতে আমার স্বামী অতুল ঐশ্বর্যের অধিপতি হয়ে আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি বলে পরিগণিত হলেন। সুতরাং আমি আশা করি এখন আর তাঁর সাথে উঠা-বসা করতে আপনাদের সম্মানের কোন লাঘব হবে না। হযরত খাজীদার ভাষণ শুনে সভাস্থ সকলে বিস্মিত, স্তব্ধ ও লজ্জিত, কারও মুখে কোন কথা নেই। লজ্জায় তারা মাথা তুলতে পারছে না। তারা সবাই বিস্ময়ে স্তব্ধ। একি হল। আমরা আশা করেছিলাম কি, আর হল কি? 

        এরপর হতে তারা এ বিষয়ে আর কোনদিন কোনরূপ উচ্চবাচ্য ও সমালোচনা করতে সাহস পায়নি। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাদীজার ধন-দৌলত গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমার ধন-দৌলতের কোন প্রয়োজন নেই। ধন-দৌলত তোমারই থাকুক। আমি তাতেই খুশি, আমি শুধু আহারের জন্য দু'খানা রুটি আর পরনের জন্য দু'খানা বস্ত্র পেলেই সন্তুষ্ট। এর বেশী আমার প্রয়োজন নেই।

        হযরত খাদীজা বলেন, তা হয় না। টাকা পয়সার ব্যাপারে আপনি আমার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবেন এটা আমি চাই না, বরং আমি চাই যে আমিই আপনার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকি। যেহেতু আপনি আমার স্বামী আর আমি আপনার স্ত্রী। চির অধীনা দাসী। আমি নিজেই যখন আপনার, তখন আমার সব কিছুই আপনার। আমার যখন যা প্রয়োজন হয় আপনার নিকট থেকে চেয়ে নেব। এরপর হতে তিনি নিজের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে হযরত রাসূলে আকরাম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদমতে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন।

Post a Comment

0 Comments