হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, বহু কুরআন পাঠক আছে, কুরআন তাদেরকে অভিশাপ দেয়। হযরত মাইসারাহ (রহঃ) বলেন, গুনাহ-গারদের উদরে কুরআন অসহায় প্রবাসীর ন্যায়। আবু সোলায়মান দারানী (রহঃ) বলেন, যদি কুরআনের হাফেজ কুরআন পাঠের পর আল্লাহর সাথে নাফরমানী করে, তবে দোযখের ফিরেশতারা তাকে মূর্তিপূজক থেকেও আগে পাকড়াও করবে। কোন বিজ্ঞ আলিম বলেছেন, কুরআন পাঠ কালে যে ব্যক্তি অন্যকথা বলে, আবার কুরআন পাঠ করে, তাকে বলা হবে যে, ওহে। আমার কালামের সাথে তোমার কি সম্পর্ক? ইবনুর রেমাহ (রহঃ) বলেন, আমি কুরআনের কথা মনে করে পেরেশান হয়ে পড়ি এ কারণে যে, আমি জানতে পেরেছি, রোজ কিয়ামতে নবীদেরকে যে প্রশ্ন করা হবে, কুরআন তিলাওয়াত কারীদেরকেও সেই প্রশ্ন করা হবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, হাফেজে কুরআনের উচিত যে, যখন লোকজন ঘুমিয়ে যায়, তখন সে জেগে থাকে। যখন সব লোক অন্যায় অপরাধ এবং আমোদ-প্রমোদ করে, তখন সে দুঃখ-অনুতাপ করবে। সবাই যখন হাসে, তখন সে কাঁদবে, যখন মানুষ বেহুদা কথা বলে, তখন সে নীরব থাকবে। যখন লোকেরা অহংকার করে, তখন সে বিনয় প্রকাশ করবে। হাফেজে কুরআনের উচিত, সে স্বল্পভাষী, মৌন এবং বিনম্র হবে। রুক্ষ্ম ও কর্কশভাষী হবে না। তর্কবিতর্ককারী হবে না। ডাক চীৎকার করবে । নির্দয়-নিষ্ঠুর প্রকৃতির হবে না।
হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, কারীগণই এ উম্মতের মধ্যে অধিকাংশ মুনাফিক। তিনি আরও এরশাদ করেছেন, তোমরা কুরআন পাঠ করতে থাক, যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে কুরআন মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে। যদি কুরআন তিলাওয়াত তোমাদেরকে মন্দ কাজ থেকে বারণ না করে, তবে তা' তিলাওয়াতের মধ্যে গণ্য হয় না। হুযুর (দঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআনের হারামকে হালাল জানে, সে কুরআনের উপর বিশ্বাসী নয়। প্রাচীন যুগের কোন এক আলিম বলেছেন, কোন বান্দা যখন কোন একটি সূরা পাঠ শুরু করে তা' শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে ফিরেশতাগণ আশীর্বাদ করতে থাকে। আবার কোন বান্দা কোন সূরা পড়তে শুরু করে তা' শেষ না করা পর্যন্ত তাকে ফিরেশতাগণ অভিশাপ দিতে থাকে। লোকগণ তাঁকে জিজ্ঞেস করল, এ কিরূপ কথা? তিনি বললেন, যখন সে হালালকে হালাল জানে ও হারামকে হারাম জানে, তখন তাকে আশীর্বাদ করা হয় আর তার বিপরীত করা হলে তখন তাকে অভিশাপ দেয়া হয়। কোন আলিম বলেছেন যে, কোন বান্দা কুরআন পাঠ কালে নিজেকে সে নিজে অভিশাপ দেয়। অথচ সে তা' অবগত নয়। সে জানে যে, সে কুরআনের বাণী পাঠ করে। সর্তক হও, অত্যাচারীর উপর আল্লাহর অভিশাপ। যে নিজের আত্মার উপর অত্যাচার করে। সুতরাং মিথ্যেবাদীর উপর আল্লাহর অভিশাপ এবং সে তারই দলভুক্ত। হযরত হাসান বছরী (রহঃ) বলেন, তোমরা কুরআন তিলাওয়াতকে উটের বিশ্রামস্থল ধার্য করেছ। আর রাতকে উটরূপে গ্রহণ করেছ। তোমরা তার উপর সওয়ার হয়ে বিশ্রামস্থল অতিক্রম করেছ। আর তোমাদের পূর্ববর্তীগণ কুরআনকে নিজ প্রতিপালকের ফরমান মনে করত। রাতে তার অর্থ অন্বেষণ করত। আর দিনে তা' তামীল করত। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, কুরআন পাক মানুষের উপর আমল করার জন্য নাযিল হয়েছে; কিন্তু তোমাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি রয়েছে যে, কুরআনকে পড়া ও পড়ানোকেই আমল ধার্য করেছে। কেউ তা' শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করে, এমনকি তার একটি হরফও বাদ দেয় না। কিন্তু তদনুযায়ী সে আমল করে না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এবং জুনদব বলেন যে, আমরা আমাদের জীবনে দেখেছি, আমাদের মধ্যে কেউ কুরআনের পূর্বেই ঈমান লাভ করেছেন। তারপর যখন হুযুরে পাক (দঃ)- এর উপর কোন সূরা নাযিল হয়েছে, তখন সে হালাল, হারাম, আদেশ, নিষেধ এবং তা' পড়ার মধ্যে কোন স্থানে থামতে হবে, তা' সে জানতে পেরেছে। তারপর আবার আমরা এমন লোকও দেখেছি যে, ঈমান আনার পূর্বে তার কাছে কুরআন এসেছে। তারপর সে সূরা ফাতিহা থেকে শেষ পর্যন্ত তা' পাঠ করেছে কিন্তু তা' সত্ত্বেও সে তার আদেশ ও নিষেধের আয়াত বা সূরার কোথায় থামতে হয় তাও সে জানতে পারে নি। সে খেজুর ছুড়ে মারার মত করে এলো-মেলো ভাবে কুরআন পড়েছে। তাওরাত কিভাবে রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে আমার বান্দা। তুমি কি আমাকে লজ্জা কর না? তোমার পথ চলাকালে তুমি তোমার বন্ধুর প্রেরিত একখানি পত্র পেলে তক্ষুণি পথচলা বন্ধ করে রাস্তার পাশে গিয়ে বসে নিবিষ্ট মনে পত্রের প্রতিটি বাক্য, শব্দ এবং অক্ষর পর্যন্ত পড়ে ফেল। তারপর পত্রের মর্ম বিশেষ ভাবে হৃদয়ংগম করে নাও। এমন কি এ চিঠি প্রাপ্তির পর এখন তোমার কর্তব্য সম্পর্কিত চিন্তা-ভাবনা করাও বাকী থাকে না। কিন্তু আমি আমার এই কিতাব তোমার নিকট প্রেরণ করে লক্ষ্য করছি যে, কিরূপ মনোযোগের সাথে তুমি তা' পাঠ করছ, আর চিঠির আদেশ ও নিষেধ পালনেই বা তুমি কি করে চলছ! কিন্তু দেখছি, তুমি যে আমার কিতাব থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে রেখেছ। তবে কি হে বান্দা! তুমি আমাকে তোমার বন্ধু অপেক্ষা হেয় মনে করলে। তোমার কোন বন্ধু তোমার নিকট এলে তুমি তাকে শারীরিক মানসিক সব দিক দিয়ে সম্বর্ধনা ও অভ্যর্থনা করে তারপর তার কথাবার্তা অতীব মনোযোগের সাথে শ্রবণ করতে থাক। এসময় যদি কেউ কোন কথা বলে বা অন্য কোন ভাবে সামান্য বিঘ্নও সৃষ্টি করে, তবে তাতে তুমি অতি বিরক্ত হয়ে তাকে ইশারায় বারণ করে দাও। অথচ খুবই পরিতাপের বিষয়, আমি তোমার নিকট হাজির। তোমার সাথে কথা বলে চলেছি কিন্তু তুমি আমার কথা থেকে তোমার মনকে না জানি কোথায় ফিরিয়ে রেখেছ। তবে কি আমাকে তুমি তোমার এক পার্থিব বন্ধুর সমপর্যায়ের বলেও মনে করছ না?
0 Comments