বদর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ঘটনা

        মহান আল্লাহর বাণীঃ বদর যুদ্ধের দিন আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন, অথচ তখন তোমরা দুর্বল ছিলে, তাই আল্লাহকে ভয় কর যাতে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পার। যে সময় হে নবী করীম (সঃ)) আপনি মো'মেনদেরকে বলেছিলেন, তোমাদের জন্য এ কি যথেষ্ট নয় যে, মহান আল্লাহ তিন হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন।        (আলে ইমরান, আয়াত ১২৩-১২৭)

        আবদুল্লাহ ইবনে কা'ব (রাঃ) বলেন, তিনি তাঁর পিতা কা'ব ইবনে মালেক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যতগুলো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তার মধ্যে একমাত্র তাবুকের যুদ্ধ ছাড়া আর কোন যুদ্ধেই আমি পশ্চাদপসরণ করিনি। তবে বদর যুদ্ধেও আমি অংশগ্রহণ করিনি। আর বদর যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেনি, মহান আল্লাহ তাদেরকে ভর্ৎসনাও করেননি। কেননা প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কোরায়শদের ব্যবসায়ী কাফেলার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন, কিন্তু সময়ের পূর্বেই মহান আল্লাহ মুসলমানদের সাথে তাদের শত্রু কোরায়শদের মোকাবিলা করিয়ে ছিলেন।

        মহান আল্লাহর বাণী- স্মরণ কর সে সময়ের কথা, যখন তোমরা তোমাদের রবের কাছে ফরিয়াদ করেছিলে, তখন তোমাদের ফরিয়াদের জবাবে তিনি বললেন, আমি তোমাদের সাহায্যের জন্য পর পর এক হাজার ফেরেশতা পাঠাব। মহান আল্লাহ তোমাদেরকে এ জন্যই শুভ সংবাদ দিয়েছেন যাতে তোমাদের অন্তরে প্রশান্তি আসে। বস্তুতপক্ষে সাহায্য তো আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে; আল্লাহ অবশ্যই মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা আনফাল, আয়াত ৯-১৩)

        ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি মেকদাদ ইবনে আসওয়াদের এমন একটি বিষয় দেখতে পেয়েছি, যা আমার কাছে থাকলে যে কোন সমপর্যায়ের জিনিস থেকে তা অধিকতর প্রিয় মনে করতাম। তা হল- বদর যুদ্ধে এক সময় তিনি নবী করীম (সঃ)-এর কাছে গিয়ে দেখতে পেলেন, তিনি মুশরিকদের জন্য বদদোআ করছেন। তখন মেকদাদ ইবনুল আসওয়াদ বললেন, মূসা (আঃ)-এর কওম যেমন বলেছিল- "আপনি ও আপনার পালনকর্তা গিয়ে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করুন" (আমরা এখানে বসে রইলাম)। আমরা আপনাকে সেরূপ কিছু বলব না; বরং আমরা আপনার ডান দিকে, বাম দিকে এবং সম্মুখ ও পশ্চাতে দিকে থেকে যুদ্ধ করব। ইবনে মাসউদ বলেন, আমি দেখলাম, একথা শুনে নবী করীম (সঃ)-এর মুখমণ্ডল খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

        আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, বদর যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) দোআ করেন, হে আল্লাহ! "আমি তোমার ওয়াদা পূরণ করার জন্য প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! তুমি যদি ইচ্ছা কর, কাফেররা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করুক, তা হলে তোমার ইবাদত করার মত আর কোন লোক থাকবে না।" এ কথা বলার পর পরই হযরত আবূ বকর (রাঃ) রাসূল (সঃ)-এর হাত ধরে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সঃ)! আর নয়, যথেষ্ট হয়েছে। তখন তিনি উঠলেন এবং পাঠ করলেন | سيهزم الجمع ويولون الدير শত্রুদল অচিরেই পরাস্ত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে।

        কুরায়শদের সমস্ত গৌরব, অহঙ্কার ও শক্তির প্রধান কারণ ছিল শাম দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। তাই রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের এ দম্ভ ও অহঙ্কার স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য তাদের এ ব্যবসার সুযোগও বন্ধ করার প্রয়োজন ছিল। একবার কুরায়শদের এক বিরাট দল শাম দেশ থেকে আসছিল। হুযুর (সাঃ) এ খবর জানতে পারলেন। তাই দ্বিতীয় হিজরীর রমযান মাসের ১২ তারিখ ৩১৪ জন আনসার মুহাজির ও সাহাবীকে সাথে নিয়ে মুকাবিলার জন্য স্বয়ং গমন করলেন। রাওহা নামক জায়গায় পৌঁছে তাঁবু স্থাপন করা হল (রাওহা মদীনার দক্ষিণ দিকে ৪০ মাইল দূরে একটি জায়গার নাম)। এদিকে কুরায়শ দলের নেতা এ খবর পেয়ে ঐ রাস্তা ছেড়ে নদীর কিনারা দিয়ে দল নিয়ে চললেন এবং সাথে সাথে একজন আরোহীকে খবর সহ মক্কায় পাঠালেন যেন কুরায়শগণ সর্বশক্তি নিয়ে অতি শীঘ্র উক্ত জায়গায় পৌঁছে ও নিজেদের ব্যবসায়ী দলকে রক্ষা করে। কুরায়শগণ প্রথম হ'তেই মুসলমানদেরকে সমূলে ধ্বংস করার অভিসন্ধি করছিল। এ খবর মক্কায় পৌঁছার সাথে সাথে ১০০ অশ্বারোহী এবং ৭ শত উট সমন্বয়ে গঠিত ৯৫০ জন বীর যুবকের এক বিরাট দল হুযুর (সাঃ)-এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য রওয়ানা হল। এই দলে কুরায়শদের বড় বড় নেতা এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সবাই অংশগ্রহন করেছিল।

Post a Comment

0 Comments