(২৩) রুণীকে দেখতে যাবে। কোন মুসলমান ব্যক্তি পীড়িত হলে তাকে দেখতে যাবে ও তার শুশ্রূষা করবে। পীড়িত ব্যক্তির তত্ত্বাবধানের জন্য যে ব্যক্তি গমন করে, তার নিম্নোক্ত নিয়মগুলো পালন করতে হবে। পীড়িত ব্যক্তির নিকট অল্প সময় বসবে এবং তাকে অল্প কথা জিজ্ঞেস করবে। দরদী হৃদয় নিয়ে তার শরীর ও স্বাস্থ্যের কথা জিজ্ঞেস করবে এবং তার রোগ আরোগ্যের জন্য দোয়া করবে। তার গুপ্তাঙ্গের দিকে লক্ষ্য করবে না। অনুমতি গ্রহণ কালে দরজার সামনে দাঁড়াবে না। দয়ার্দ্র চিত্তে তার সাথে কথা বলবে। যখন সে তোমার পরিচয়। জিজ্ঞেস করবে, তুমি শুধু বলবে না যে, আমি; বরং তোমার পূর্ণ পরিচয় দান করবে। রুগীর নিকট থাকা কালে কালেমায় তাউহীদ এবং তাসবীহ পাঠ করবে।
হুযুরে পাক(দঃ) বলেছেন যে, রুগীর নিকট গিয়ে নিজের হস্ত তার ললাটে বা হস্তে স্থাপনপূর্বক রোগের অবস্থা বা স্বাস্থ্যের বিষয় জিজ্ঞেস করলে রুগীর সাথে সাক্ষাত করা সম্পূর্ণ হয়। আর যার সাথে সাক্ষাত হয়, তার সাথে মুসাফাহা করলে তোমার সম্ভাষণ বা অভ্যর্থনা সম্পূর্ণ হয়। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি রুগীদের সাথে সাক্ষাত করে, সে বেহেশতের পার্শ্বে উপবিষ্ট থাকে। অতঃপর যখন সে প্রত্যাবর্তন করে, তার জন্য সত্তর হাজার ফিরেশতা নিযুক্ত করা হয়। তারা সেদিন রাত পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। তিনি আরও বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি রুগীকে দেখতে যায়, সে আল্লাহর রহমতের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে। যখন সে রুগীর শয্যাপার্শ্বে বসে তখন এই অবস্থ্য তার জন্য স্থায়ী হয়। তিনি আরও বলেছেন, যখন কোন মুসলমান তার ভ্রাতা পীড়িত মুসলমানকে দেখতে যায়, তখন আল্লাহ বলেন, তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ। তোমার এ পদক্ষেপ অত্যুত্তম। তিনি আরও বলেছেন, যখন কোন বান্দা রোগাক্রান্ত হয়, আল্লাহতায়ালা তার নিকট দুজন ফিরেশতা পাঠিয়ে বলেন, সে ব্যক্তি রুগীর সাথে কি বলে দেখ। যখন সে রুগীর নিকট আসে, তখন সে যদি আল্লাহর তাহমীদ পাঠ করে, তা' আল্লাহর নিকট নিয়ে যায় এবং তার নিকট আরজ করে এ বিষয় আল্লাহ উত্তম জানেন। আল্লাহ বলেন, যদি আমি এই বান্দার মৃত্যু ঘটাই তবে একে আমি বোহেশতে প্রবেশ করাব। আর যদি তাকে আরোগ্য করি, তবে আমি তাকে এ মাংস হতে উত্তম মাংস এবং এ রক্ত হতে উত্তম রক্ত দেব। আর তার গুনাহ মার্জনা করব। হুযুরে পাক(দঃ) বলেছেন, আল্লাহ যে ব্যক্তির মঙ্গল কামনা করেন, তাকে তিনি রোগাক্রান্ত করেন। হাদীস শরীফে আছে, এক ব্যক্তি পীড়িত হলে জন্মকে পাক (দঃ) তাকে দেখতে এসে বললেন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীমি উত্তীন্দ্দুকা বিয়াতি লি আহাদিছ ছামাদিল্লাহী লাম ইয়ালিদ অলাম ইয়লান অলাম ইয়াকুল্লাহ কুফুওয়ান আহাদ মিন শাররি মা তাজিদু"। অর্থাৎ দয়ালু ও কৃপাময় আল্লাহর নামে যে মন্দ তুমি দেখতেও তা' দেখে তোমাকে আল্লাহর, আশ্রয়ে দিচ্ছি। তিনি এক, অভাব শূন্য। তার পিতা নেই, পুত্র নেই, তাঁর তুল্য অন্য কেউ নেই। হুযুরে পাক (দঃ) কয়েক বারই এ কালাম পাঠ করলেন।
একদা হুযুরে পাক (দঃ) হযরত আলীর (রাঃ) অসুখের সময়ে তাঁর নিকট তাশরীফ নিয়ে বললেন, বল, হে মাবুদ। আমি তোমার নিকট আমার দ্রুত আরোগ্য ও শাস্তি প্রার্থনা করছি এবং তোমার পরীক্ষার ধৈর্য, অথবা দুনিয়া থেকে রোখসত হয়ে তোমার রহমতের দিকে গমন প্রার্থনা করছি। তুমি আমাকে তন্মধ্যের একটি শীঘ্রই দান কর। নিম্নোক্ত দোয়াটি পীড়িতদের জন্য পাঠ করা মুস্তাহাব। যথা: "আউযু বি ইযযাতিল্লাহি অব্দরাতিহী মিন শাররি মা আজিদু অ উহাযিরু"। অর্থাৎ আমি যে কষ্ট দেখতেছি, তা' থেকে আল্লাহতায়ালার সম্মান ও ক্ষমতার আশ্রয় গ্রহণ করছি ও সতর্ক করছি। হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি তার উদরের বেদনা অনুভব করে, তখন স্বীয় স্ত্রীর মোহরানার অর্থ থেকে কিছু অর্থ দ্বারা মধু ক্রয় করে তা' বৃষ্টির পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে ঐ বেদনা আরোগ্য হয়। কেননা আল্লাহতায়ালা বৃষ্টির পানিকে পবিত্র, মধুকে আরোগ্যকারী এবং মোহরানার অর্থকে স্বাদযুক্ত করেছেন। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, হে আবু হোরায়রা। আমি কি তোমাকে এমন একটি সত্য বিষয়ের সংবাদ দেব না যা কোন ব্যক্তি তার রোগের প্রথম অবস্থায় পাঠ করলে আল্লাহ তাকে দোযখের অগ্নি থেকে মুক্তি দান করবেন। আমি বললাম, হাঁ ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)! তখন তিনি বললেন, এ দোয়াটি পাঠ করবে: "লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ইয়ুহয়ী অইয়ুমীতু অ হওয়া হাইয়্যু ব্লা ইয়ামৃত সুবহানাল্লাহি রাব্বুল ইবাদি অল বালাদ অলহামদু লিল্লাহি হামদান কাছীরান ত্বাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহি আলা কুল্লি হাল আল্লাহু আকবারু কাবীরান ইন্না কিবরি সায়া রাব্বিনা ওয়া জালালিহী ওয়া কুদরাতিহী বিকুল্লি মাকান- আল্লাহুম্মা ইন্না আনতা আমারাদ্বতানী লিতাকুয়িদ্বা রূহী ফী মারদ্বী হায। ফাজআল রূহী ফী আরওয়াহি মান সাবাক্বাত লাহুম মিনকাল হুসনা ওয়া বাইদনী মিনান্নারি কামা বাআদতা আউলিয়ায়াকাল্লাযীনা সাবাক্বাত মিনকাল হুসনা।" অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত উপাস্য নেই, তিনি জীবিত ও মৃত করেন। তিনি চিরঞ্জীব। তাঁর মৃত্যু নেই। আল্লাহ পবিত্র। তিনি বান্দার এবং শহরের প্রভু। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। অজস্র প্রশংসা পবিত্র ও সব অবস্থায়ই বরকত পূর্ণ। আল্লাহ গৌরবে সর্বশ্রেষ্ঠ। আমাদের প্রভুর গৌরব, মহত্ত্ব ও ক্ষমতা প্রত্যেক স্থানেই বিরাজমান। হে মাবুদ! যদি তুমি এই রোগ আমাকে আমার প্রাণ হরণের জন্য দিয়ে থাক, তাহলে আমার প্রাণকে ঐ ব্যক্তিদের রূহের অন্তর্ভুক্ত কর, যাদের নেকী তাদের অগ্রেই চলে গেছে এবং দোযখ থেকে আমাকে দূরবর্তী কর, মেস্তর্ণ তুমি তোমার বন্ধুদেরকে তা' থেকে দূরবর্তী করেছ, যাদের নেকী অগ্রেই চলে গেছে। হুযুরে পাক (দঃ) বলেছেন, তিনদিন পর রুগীকে দেখতে গেলে তার নিকট অল্প সময় থাকবে। হযরত তাউস (রহঃ) বলেছেন, রুগীর নিকট অল্প সময় অবস্থান করা উত্তম। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রুগীর সাথে এক বছরে একবার সক্ষাত করা সুন্নত। এর বেশী হলে তা' নফল। কোন এক বিজ্ঞ বুযর্গ বলেছেন, রুগীর সাথে তিনদিন পর সাক্ষাত করা নফল। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, রুগীকে একদিন পর একদিন দেখ এবং তার সাথে নম্র ব্যবহার করবে।
রুগী ব্যক্তি নিম্নোক্ত নিয়মগুলো পালন করবে। যেমন যথার্থরূপে ধৈর্য ধারণ করবে। কারও প্রতি অভিযোগ উত্থাপন করবে না। আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থনা করবে এবং ওষুধ সেবন করে রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধের স্রষ্টা আল্লাহর উপর ভরসা করবে।
0 Comments