আল্লাহ্ বলেনঃ
তুমি কি দেখ না যে, পাখীকুল আকাশে বিচরণ করে। এক আল্লাহ্ ছাড়া কেউ তাদেরকে আকাশে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না।'
(সূরা নাহল)
আল্লাহ্ পাখীগুলি সৃষ্টি করেছেন এবং সেগুলি এমন আকারে আর গঠনে পয়দা করেছেন, যা তার উড়বার পক্ষে সহায়ক হয়। তার ভিতরে কোন ভারী জিনিস পয়দা করেন নি যা তার উড়বার পক্ষে বাধা আর বিঘ্ন হয়। পাখীর জন্য যাহা দরকার তা আল্লাহ্ তাকে দান করেছেন। সেভাবেই তার দেহের কাঠামো তৈরী করেছেন। তার জন্য খাদ্য সৃষ্টি করেছেন, খাদ্য থেকে প্রত্যেকটি অংগের জন্য উপযোগী অংশ পৌঁছে থাকে। অংগের নরম, শুষ্ক আর শক্ত অংগের জন্য উপযোগী খাদ্য-সার সরবরাহ হয়ে থাকে, যাতে সে সব অংগে শক্তি সঞ্চারিত হয়।
পাখীকে আল্লাহ্ দিয়েছে দু'খানি পা। হাত দেওয়া হয় নি। পা দিয়ে সে মাটিতে চলাফেরা করতে পারে, গাছের ডালে বসতে পারে। উড়ার সময়ও পায়ের সাহায্য নেয়। পায়ের নীচের দিকে খানিক চওড়া, যাতে সে মাটির উপর ভালভাবে দাঁড়াতে পারে। অঙ্গুলীগুলির কতকাংশ খুব পাতলা চামড়া দ্বারা আবৃত যা নলার চামড়া থেকে একটু শক্ত। নলায় বেশ পুরু আর শক্ত। যাতে শীত গ্রীষ্মের প্রকোপ থেকে বাঁচতে পারে। পা পালক শূন্য হওয়ার মধ্যেও রয়েছে বিশেষ রহস্য। কেননা পাখীকে তার খাদ্য কুড়ানোর আর পানি পানের জন্য এমন সব জায়গায় বিচরণ করতে হয়, যেখানে পানি, কাঁদা বা ময়লা আবর্জনা থাকতে পারে। যদি পায়ের নলায় পালক থাকতো তবে পানি বা কাঁদায় ভিজে ভারী হয়ে পড়তো আর তার চলাফেরায় হতো ভারী অসুবিধা। এ কারণেই আল্লাহ্ পাখীর দেহে যেখানে পালকের প্রয়োজন নেই, সেখানে পালক দেননি, যাতে সে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে ফিরতে এবং উড়তে বাধা না পায়। পাখীগুলির পা খুব লম্বা লম্বা করে পয়দা করা হয়নি। বরং গলা অপেক্ষাকৃত লম্বা তৈরী করা হয়েছে, যাতে তার খাদ্য আহরণ আর দানা কুড়ানো সহজ হয়। যদি পা লম্বা লম্বা আর ঘাড় খুব ছোট হতো তবে বনে জঙ্গলে দানা কুড়ানো আর নদী-নালা থেকে পানি পান করা তার পক্ষে কষ্টকর হতো। সেরূপ হলে তার দানা কুড়ানো আর পানি পানের জন্য তাকে বুক নীচু করতে হতো। কোন কোন পাখীর ঠোঁট বেশ লম্বা। এটা তার খুব কাজে আসে। যদি গলাটা তার খুব লম্বা আর পা খুব ছোট হতো তবে ঘাড়টা তার কাছে খুব ভারী হয়ে পড়তো, ফলে তার খাদ্য আহরণ অনেকটা কষ্টকর হতো। পাখীর বুক আল্লাহ্ গোলাকৃত করে এমনভাবে বিন্যস্ত করেছেন, যাতে উড়ার সময় সে সহজে বায়ু কেটে এগিয়ে যেতে পারে। অনুরূপভাবে তার পাখাও এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে, যাতে তার পক্ষে উড়া সহজ হয়। তারপর পাখীগুলির শ্রেণীভেদে আর তাদের আহার গ্রহণের সুবিধার দিক লক্ষ্য রেখে তাদের কোনটির ঠোঁট লম্বা, ক্ষুদ্র, ধারালো, দৃঢ়, বক্র বা সোজা করে তৈরী করা হয়েছে, যাতে সে খুব শক্ত জিনিসটিও ছিঁড়তে এবং কাটতে পারে। কোন কোন পাখীর চষ্ণু এতো ধারালো আর মজবুত যে, অতি কঠিন দ্রব্যও ঠুকরিয়ে ভেঙ্গে ফেলতে পারে আর হাড় থেকে গোল্ড ছিড়ে আনতে পারে। কোন কোন পাখীর ঠোঁট চওড়া যাতে তার উপর খাদ্য-দানা প্রভৃতি রাখা যেতে পারে। আবার কতকগুলির ঠোঁট সোজা যাতে সে শাক- সজি, তরি-তরকারী খেতে পারে। কতকগুলি পাখীর ঘাড় বেশ লম্বা আর হাড়ের ন্যায় শক্ত কিন্তু ভিতরের দিকে নরম। তার দ্বারা হাড়ের কাজ হয়ে থাকে। পাখীর পালকগুলিকে খোদা লম্বা আর বাঁশের ন্যায় ফাঁপা করে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তার উড়া সহজ হয়। পাখীগুলির দণ্ড ডানার সাথে দৃঢ়ভাবে গ্রথিত হয়েছে, যাতে দিনরাত উড়লেও তা খারাপ না হয়। কেননা উড়ার সময় পাখার পালকগুলি খুব দ্রুত সঞ্চালন করতে হয়। এ কারণে পালকগুলি খুব মজবুত করে তৈরী করা হয়েছে। আবার সেগুলি শীত গ্রীষ্মে শরীর আচ্ছাদনেরও কাজ করে। পাখার সর্বাংগে পালকগুলি একদিকে যেমন তাকে শীত-গ্রীষ্ম থেকে বাঁচায়, অন্য দিকে তার সৌন্দর্যও বাড়ায়। আবার পালকগুলি এমন উপায়ে সৃষ্টি যে, ক্রমাগত ভিজলেও তা নষ্ট হয় না। বরং সামান্য ঝাপটা দিলেই পানি ছিটকে পড়ে যায়।
পাখীর পুচ্ছ এমনভাবে তৈরী, যাতে তার উড়ায় সাহায্য করে এবং বাতাসের বেগ তাকে একদিকে ঠেলে নিয়ে না যায়। যদি পুচ্ছ না হতো সে ইচ্ছানুযায়ী নির্দিষ্ট দিক উড়ে যেতে পারতো না। সুতরাং পুচ্ছ একাধারে নৌকার হালের মতো হাল আর পালের কাজ করে।
পাখীরা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বাস করায় অভ্যস্ত। এতে তাদের নিরাপত্তা রয়েছে।
পাখীরা চর্বণ ছাড়াই খাদ্য গিলে ফেলে। এ কারণে অনেক পাখীর ঠোঁট এত ধারালো যে, গোস্ত প্রভৃতি জাতীয় খাদ্য ঠোঁটের সাহায্যে কেটে টুকরো করে ফেলে, যাতে তা সহজে হজম হয়। পাখীর পাকস্থলীতে এমন হজমশক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে অতি কঠিন খাদ্যগুলি সহজে গলিয়ে হজম করে ফেলে। সুতরাং তার চর্বণ এবং দাঁতের প্রয়োজন হয় না। এর প্রমাণ এভাবে পাওয়া যেতে পারে যে, যদি পাখী ছাড়া অন্য কোন প্রাণীকে একটা আস্ত আংগুর খাইয় দেওয়া হয় তবে তা পায়খানার সাথে তেমনি আস্ত নির্গত হয়ে আসবে। আর যদি পাখীকে খাইয়ে দেওয়া হয় তবে তা পরিপাক হয়ে যাবে কেননা পাখীর পেটে যে হজম শক্তি আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন, অন্য কোনো প্রাণীর তা নেই।
পাখীরা ডিম দেয়। তারপর সে তা দিয়ে ডিম ফুটায়। পাখীকে এ শিক্ষা কে দিয়েছে যে নিজের মুখে দানা রেখে নরম হলে তার পর বাচ্চাকে আহার করায়। বাচ্চা যতদিন খাদ্য গ্রহণের উপযুক্ত না হয়, ততদিন শুধু বায়ু সেবন করিয়ে বাঁচিয়ে রাখে। দেখ। বনের পাখী তার বাচ্চাগুলির প্রতিপালনে কত কষ্ট ভোগ করে থাকে। অথচ মানুষের ন্যায় পাখীর জ্ঞান বুদ্ধি নাই, না আছে তার দূরদর্শিতা আর বুদ্ধি বিবেচনা। আর পাখীরা নিজ বাচ্চাদের দ্বারা মানুষের ন্যায় বংশ বৃদ্ধিরও আশা রাখে না। পাখীকুল এসব জ্ঞান-বুদ্ধি আর ভবিষ্যৎ ভরসা আর চিন্তাভাবনা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। এ সত্ত্বেও তার সন্তান প্রতিপালনে অশেষ যত্ন নিয়ে থাকে, নিঃসন্দেহে পাখীর অন্তরে খোদার দেওয়া প্রেরণাই এর কারণ।
আবার দেখ স্ত্রী পাখীর ডিম প্রসবের সময় হলে কি ভাবে টের পায়। ডিম পাড়ার এবং রক্ষা করার জন্যে সে কিভাবে খড়-কুটো সংগ্রহ করে বাসা তৈরী করে, যাতে সে ডিম প্রসব করে, তারপর বাচ্চা বের না হওয়া পর্যন্ত ডিমে তা দিতে থাকে। কবুতরের অবস্থা দেখ। যে বাইর থেকে ডিমের ভিতরের অবস্থা বুঝতে পারে এবং বাচ্চা পূর্ণ হলে তাকে ঠুকরিয়ে ডিমের ভিতর থেকে বের করে, যদি ডিম কোনভাবে নষ্ট হয়ে যায়, কবুতর তা বুঝতে পারে, সে ডিমে তা দেয়া ছেড়ে দেয়, এমনকি ডিমটি বাসা থেকে ঠুকরিয়ে বাইরে ফেলে দেয়।
বাচ্চা ডিম থেকে বের হয়ে আসার পর কবুতর তার বাচ্চাকে প্রথমে বাতাস সেবন করায়। তারপরে নরম খাদ্য এবং ক্রমান্বয়ে যখন সে অনুভব করে যে, তার পাকস্থলী খাদ্য পরিপাক করার শক্তি অর্জন করেছে, তখন সে তাকে দানা-পানি খেতে দেয়। যদি প্রথম থেকেই তাকে দানা খেতে দিত, তবে বাচ্চা তা হজম করতে অপারগ হতো। কবুতরের মধ্যে এই জ্ঞান বুদ্ধি কে দান করেছেন, যার ফলে সে বাচ্চার হজমশক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা করতে সক্ষম হয়েছে। মহাজ্ঞানী আর কৌশলী আল্লাহই তাকে এই জ্ঞান দান করেছেন। ডিম থেকে বাচ্চা বেরিযে আসার পর কবুতর তাকে নিজ পাখার নীচে আগলিয়ে রাখে, যাতে সে গরম থাকে। কেননা ডিমের গরম থেকে সদ্য বের হয়ে হঠাৎ ঠাণ্ডা লেগে মরে না যায়। এ কারণে বাচ্চাগুলি পাখার নীচে ঢেকে গরম রাখে।
সব পাখীই বাচ্চা দেবার বেলায় এক রকম নয়। তারা নানা শ্রেণীর! প্রত্যেক জাতের পাখীর বাচ্চা দেবার হেকমত আর কৌশল ভিন্ন রয়েছে- যেমন আল্লাহ্ ব্যবস্থা করেছেন। মুরগী দেখ! তার মধ্যে বাচ্চাগুলিকে আহার করাবার স্বভাব আল্লাহ্ দেন নি। এ কারণে মুরগীর বাচ্চা ডিম থেকে বের হয়ে এলেই নিজের খাদ্য সংগ্রহ করে খায়। দানা, খুদ ঠুকরিয়ে খেতে শুরু করে দেয়।
তারপর স্ত্রী ও পুরুষ জাতীয় পাখীর প্রতি লক্ষ্য করে দেখ। কিভাবে তারা নিজ বাচ্চা রক্ষায় সচেষ্ট হয়ে থাকে। তারা পরস্পরে বাচ্চাগুলিকে পাখার নীচে রেখে তাপ দেয়, যাতে ঠাণ্ডা লেগে মরে না যায়। আর ডিমও যাতে নষ্ট না হয়, ডিম আর বাচ্চাগুলিকে তাপ দেবার বেলায় তারা খুবই সচেতন। তারা ভাল করেই জানে যে, যদি পুরোপুরি তাপ দেওয়া না হয় তবে ডিম নষ্ট হয়ে যাবে। আর বাচ্চা মরে যাবে। ডিমের গঠন লক্ষ্য কর। তার উপাদানগুলি দেখ। তা' দুই প্রকার আর দুই রং-এর। এক হলো সাদা লাল-যা বাচ্চার খাদ্যের জন্য, আর দ্বিতীয় হলদে কুসুম যা বাচ্চার অবয়ব গঠনের জন্য রাখা হয়েছে। দেখ আল্লাহ্ বাচ্চার জন্মের পূর্বেই ডিমের মধ্যে তার খাদ্য সংরক্ষিত করেছেন।
দেখ, পাখীর থলের মধ্যে খাদ্য যাওয়ার রাস্তা কিভাবে সহজ করা হয়েছে। কেননা, একটি দানা থলিয়ায় পৌঁছা পর্যন্ত যদি দ্বিতীয় দানার জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাতে আহার করতে ঢের সময়ের প্রয়োজন হবে। পাখীদের সর্বদা শিকারীর ভয়। সামান্য শব্দ হলেই চমকে উঠে আর উড়ে পালায়। সুতরাং একটি একটি করে দানা গিলে খাবার মতো অবকাশ তার কোথায়? এ কারণে আল্লাহ্ তার থলেকে খাদ্য জমা রাখার ন্যায় একটি পাত্র করেছেন। পাখী সেখানে তাড়াতাড়ি টপাটপ খাদ্য জমা করে নেয়। পরে এক দানা পাকস্থলীতে নিয়ে হজম করে। অবশ্য সব পাখীর বেলায় একই অবস্থা নয়। বরং যে পাখী নিজ থলে থেকে খাদ্য বের করে নিজ বাচ্চাগুলিকে খাওয়ায় তাদের জন্য তলে থেকে দানা বের করা সহজ করা হয়েছে।
পাখীর পালকগুলির গঠন লক্ষ্য কর। পালকগুলি কাপড়ের সুতার ন্যায় সূক্ষ্ম তার দ্বারা পরস্পর জড়িত। কিছুটা শুষ্ক আর বেশ শক্তও। আবার এমন নরম যাতে চাপে ভেঙ্গে না যায়। পালকগুলি ভিতর থেকে খোক্কা আর খুব হালকা। আবার পালকগুলি পরস্পর জড়িত। যাতে ডানা বিস্তার করলে তার ভিতরে বায়ু প্রবেশ করে উড়া সম্ভব করে তুলে। পালকের মাঝে একটি মোটা শুষ্ক আর শক্ত দণ্ডের ন্যায় রয়েছে, যার কিনার দিয়ে পালকগুলি গজায়। এই দণ্ড পালকগুলিকে নিয়ন্ত্রিত আর সংরক্ষিত করে। এই দণ্ডটি ভিতর থেকে ফাঁপা যাতে হালকা হয়, তবে তাও বেশ শক্ত। পালকগুলির মধ্যে যদি এই দণ্ডটি না থাকতো তবে সেগুলিকে বায়ুর মুকাবিলায় টিকে থাকতে পারতো না। বরং বাতাসে পাখীর উড়াই অসম্ভব হতো।
লম্বা পা বিশিষ্ট পাখিগুলির প্রতি নজর কর। সাধারণত এগুলি খোলা জায়গায় অথবা জলাশয়ের ধারে আহার সন্ধান করে। মনে হয় যেন সে পানির নীচে তার লক্ষ্যবস্তুটি খোঁজ করে বেড়ায়। সন্ধান পাওয়া মাত্র দু' এক পা এগিয়ে গিয়ে সেটি শিকার করে। যদি তার পা ছোট হতো তবে বুক আর শরীরে পানিতে ডুবিয়ে ঢেউ তুলতো। ফলে সাড়া পেয়ে তার শিকারটি পালিয়ে যেত। সুতরাং তার পা লম্বা হওয়া তার জন্য খুবই বাঞ্ছনীয় আর যুক্তিযুক্ত হয়েছে।
ছোট চড়ুই পাখী দেখ। খুব ভোরে সে তার বাসা থেকে খাদ্যের খোঁজে বের হয়। আর এদিক সেদিক ঘুরে ফিরে নিজের আহার খোঁজ করে বেড়ায়। সন্ধ্যা বেলা পেট ভরে নিজ বাসায় ফিরে আসে। এদের জন্য এটাই খোদার বিধান। এদের খাদ্য এক স্থানে জমাকৃত অবস্থায় পাওয়া যায় না। যদি তাদের খাদ্যের খোঁজে দূরে দূরে যেতে না হতো আর এক স্থানে তাদের খাদ্য সঞ্চিত থাকত তবে লোভের বশে এত বেশী খেত যে, তার পক্ষে উড়াই সম্ভব হতো না আর হজম করাও অসম্ভব হতো। কোন কোন প্রাণী অধিক আহার করার পর বমি করে পেট হালকা করে। এ কারণে ছোট পাখীগুলি নিজ আহারের খোঁজে এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে অল্প আহার করার মধ্যে বিরাট রহস্য নিহিত রয়েছে। এভাবে তাদের খাদ্যও হজম হয়ে যায় আর উড়তেও কষ্ট হয় না।
মানুষের বেলায়ও এই রীতি। যদি বিনা পরিশ্রমে এক স্থানে বসে বসে খাদ্য লাভ করতো, তবে সে অচিরেই রুগ্ন হয়ে পড়তো।
এবার সেই পাখীগুলির প্রতি লক্ষ্য কর, যেগুলি রাত্রিতে বের হয় দিনের বেলায়। মোটেই উড়ে না। যেমন পেচক, আবাবীল, চামচিকা, বাদুড় প্রভৃতি। তারা মশা, পতঙ্গ প্রভৃতি খেয়ে জীবন ধারণ করে। তারা জমিনের কাছাকাছি থেকে খাদ্য আহরণ করে। এতে রয়েছে খোদার অশেষ হিকমত। হয়তো তাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি জমিন থেকে আহার খুঁজে নেওয়ার উপযোগী নয়। নিঃসন্দেহে এ পাখীগুলির দিনের বেলায় দৃষ্টিশক্তির অভাব। এ কারণে সূর্যের আলোতে এ সব পাখী বের হয় না। যেখানে সূর্যের আলো থাকে না অথবা সূর্য অস্ত যাওয়ার পর তারা বাইরে বের হয়। সুতরাং আল্লাহ্ তাদের আহার সংগ্রহের বিধি এভাবেই করেছেন।
চামচিকাকে আল্লাহ্ পালকহীন সৃষ্টি করেছেন। সেই হিসাবে তার অন্যান্য অংগ-প্রত্যংগও সৃষ্টি করা হয়েছে। তার মুখে দাঁত আছে। জমিনে বসবাসকারী অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় তার সব কিছুই আছে। সে বাচ্চা দান করে। এসব সত্ত্বেও আল্লাহ্ তাকে উড়বার শক্তি দিয়েছেন, যাতে প্রমাণ হয় যে, আল্লাহ্ প্রাণীর পালক ও পশম ব্যতীতও উড়াতে সক্ষম। আর পালক জাতীয় প্রাণী ছাড়া অন্য জাতীয় প্রাণীকে উড়বার শক্তি দান করতে পারেন। এভাবে এক জাতীয় প্রাণী মৎস্যও আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন, যেগুলি বেশ কিছুদূর উড়ে যেতে সক্ষম। তারপর আবার পানির মধ্যে চলে যায়।
কপোত আর কপোতীর পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতি লক্ষ্য কর। তারা কিভাবে ডিমে তা দেবার বেলায় একে অন্যের সাহায্য করে। যখন একটি খাদ্যের তালাশে চলে যায় তখন অন্যটি তার স্থানে ডিম তা দিয়ে বসে থাকে। এভাবে একটির অনুপস্থিতিতে ডিমে তা' দেবার ক্ষেত্রে ছেদ পড়ে না। আবার একটি দূরে গেলেও অধিক সময় দূরে থাকে না। প্রত্যেকেরই ডিমের চিন্তা থাকে। এমনকি মল ত্যাগের বেগ হলেও তা চেপে রাখে। পরে হঠাৎ এক সময় তারা মল ত্যাগ করে। তাও যখন আর বেগ ধারণ করা না যায়। কবুতর গিন্নী যখন ডিমবতী হয়, তখন পুরুষ কবুতর তার ভারী যত্ন নিয়ে থাকে। এমনি তাকে বাসা থেকে বের হতে দেয় না। এই আশংকায় যে অন্য কোথায় ডিম দেয়। আর ডিম নষ্ট হয়ে না যায়। ডিম থেকে বাচ্চা বের হবার পর কবুতর আর কবুতর গিন্নী উভয়ই বাচ্চাকে আহার করায়, তারা বাচ্চার প্রতি খুবই মমতা প্রদর্শন করে। যখন বাচ্চা বড়ো হয় আর অভ্যাস অনুযায়ী বাপ-মায়ের কাছে দানা পানি চায়, তখন তারা তাকে ঠুকরিয়ে নিজেদের থেকে পৃথক করে দেয়, যাতে সে নিজের আহার নিজেই যোগাড় করে নেয়।
আল্লাহ্ এদেরকে উড়বার কতো শক্তি দিয়েছেন। কেউ এদের ধরতে গেলে হাতে আসে না, হুট করে উড়ে পালায়। পাখীর পাঞ্জায় শক্তি, চঞ্চুতে ধার, আর অংগুলির মাথায় নখ রয়েছে। নখ দ্বারা ছুরির কাজ হয়। কখনও পাঞ্জায় গোস্ত লকিয়ে উড়িয়ে নিয়ে যায়। পানির পাখীগুলি পানিতেই জন্মলাভ করে। তাদের উড়ার শক্তি ছাড়াও পানিতে সাঁতার কাটার আর ডুব দেওয়ার শক্তি রয়েছে, যাতে সে গভীর পানিতে নিজের আহার সন্ধান করতে পারে।
0 Comments