ইসলামের দুশমন আবু জাহিলের শেষ পরিণতি কি হয়েছিল


        ইসলামের কঠোর শত্রু এবং মক্কায় অবস্থানের সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সবচেয়ে বেশী কষ্ট দিয়েছে আবু জাহিল- মদীনায় এ কথা এমনভাবে প্রচারিত হয়েছিল যে, মদীনার একজন মুসলিম শিশুও তার নাম জানতো। মদীনার আনসারদের দুই কিশোর সন্তান, হযরত মুয়াব্বিজ ও হযরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুম, তাঁরা ছিলেন আপন দুই ভাই। এই দুই ভাই প্রতীজ্ঞা করেছিল, রাসূলকে যে ব্যক্তি বেশী কষ্ট দিয়েছে, সেই আবু জাহিলকে তাঁরা হত্যা করবে আর না হয় তাঁরা শাহাদাতবরণ করবে। বোখারী হাদীসের কিতাবুল মাগাযীতে বদরের যুদ্ধের দিনের কথা এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেন, 'আমি এক সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার দুই পাশে ছিল কিশোর দুইটি ছেলে। আমার কেমন যেন বিব্রত বোধ হচ্ছিল, আমার দুই পাশে দুটি কিশোর ছেলে, বয়স্ক কোন বীর নেই। এক পাশের একজন আমার কানের কাছে মুখ এনে জানতে চাইলো, আবু জাহিল লোকটি কে। অপর পাশের কিশোরটিও আবু জাহিলের পরিচয় জানতে চাইলো। তখন আমার জড়তার ভাব কেটে গেল। আমার মনে হলো, আমি দুইজন বীরের মাঝেই দাঁড়িয়ে আছি।' হযরত আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেন, 'আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'আবু জাহিলকে তোমাদের কি প্রয়োজন?' তাঁরা জানালো, 'আমরা আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছি, আবু জাহিলকে হত্যা করবো অথবা শহাদাতবরণ করবো।' 

        এরপর হযরত আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু তাদের দুই ভাইকে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দিলেন আবু জাহিলকে। আবু জাহিলকে দেখার সাথে সাথে দুই ভাই তীর বেগে ছুটে গেল তার কাছে। তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়লো আল্লাহর শত্রুর ওপরে। আবু জাহিল মাটিতে পড়ে গেল। তাকে রক্ষার জন্য তার সন্তান দ্রুত এগিয়ে এসে তরবারীর আঘাত করলো। হযরত মায়াজ রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর বাম হাতটি এমনভাবে কেটে গেল যে, সে কাটা হাতটি কাঁধের সাথে ঝুলতে লাগলো। 

        এই ঝুলন্ত হাত নিয়ে কিশোর এই সাহাবী আবু জাহিলের সন্তানের সাথে যুদ্ধ করে তাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করলেন। ঝুলন্ত হাত যুদ্ধ করতে অসুবিধার সৃষ্টি করছিল। কিশোর সাহাবী হযরত মায়াজ রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু তাঁর ঝুলন্ত হাত পায়ের নীচে ফেলে আল্লাহু আকবার বলে গর্জন করে একটানে ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে স্বাচ্ছন্দে যুদ্ধ করতে থাকলেন। এই দুই সিংহ সাবক ছিলেন আফরা নামক এক বীরাঙ্গনা নারীর সন্তান।

        বদরের প্রান্তরে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলমানদেরকে বিজয়দান করার পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবায়ে কেরামকে বললেন, 'এমন কেউ আছে কি, যে ব্যক্তি আবু জাহিলের পরিণতি দেখে আসবে?'

        হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু দ্রুত ছুটে গেলেন যুদ্ধের ময়দানে। তিনি দেখলেন, মৃতদেহের মধ্যে আবু জাহিল মারাত্মক আহত অবস্থায় পড়ে আছে। ঘনঘন নিশ্বাস ছাড়ছে আল্লাহর এই দুশমন। বোখারী হাদীর বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু আবু জাহিলের দাড়ি ধরে জানতে চাইলেন, 'তুমিই কি আবু জাহিল?'

        আল্লাহর দুশমন জবাব দিল, 'সেই ব্যক্তির চেয়ে উত্তম আর কে আছে, যাকে তার বংশের লোকজন হত্যা করলো।' কোন একদিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুকে আবু জাহিল থাপ্পড় মেরেছিল। সে কথা হযরত আব্দুল্লাহর স্মরণে ছিল। তিনি আবু জাহিলের ঘাড়ে পা রাখলেন। আবু জাহিল বললো, 'এই ছাগলের রাখাল। দেখ তুই কোথায় তোর পা রেখেছিস?'

        এরপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু ইসলামের এই শত্রুর মাথা তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন। তারপর সে মাথা আল্লাহর রাসূলের সামনে এনেছিলেন। তিনি বলেন, 'আফরার দুই সন্তান আবু জাহিলকে মারাত্মকভাবে ত্যাহত করে ফেলে রেখেছিল। আমারও প্রতীজ্ঞা ছিল আমি তাকে হত্যা করবো। আমি তার মাথা কেটে আল্লাহর নবীর সামনে এনে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এটা আল্লাহর দুশমন আবু জাহিলের মাথা।'

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, 'সত্যই কি এটা আবু জাহিলের মাথা!' আমি বললাম, 'আল্লাহর কসম, এটা আবু জাহিলের মাথা।' এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর প্রশংসা করলেন। পরবর্তীতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশ নেতৃবৃন্দের লাশ কুয়ায় নিক্ষেপ করতে আদেশ করেছিলেন। তিনি গভীর রাতে সেই কুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে নিহত কাফির নেতৃবৃন্দের নাম ধরে ডেকে ডেকে বলছিলেন, 'আল্লাহ তোমাদের সাথে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা তোমরা যথাযথভাবে লাভ করেছে'। আমিও আমার রবের প্রতিশ্রুতি বাস্তবে লাভ করেছি।'

        সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, 'হে আল্লাহর রাসূল! আপনি মৃত ব্যক্তিদেরকে সম্মোধন করে বলছেন, তারা কি আপনার কথা শুনতে পাবে?' নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'তোমরা যেমন আমার কথা শুনতে পাচ্ছো, তারাও তেমনি আমার কথা শুনতে পাচ্ছে, কিন্তু কোন সাড়া দিতে পারছে না।'

        অনেকে আল্লাহর রাসূলের কথার ভুল অর্থ করেছেন যে, সমস্ত মৃত ব্যক্তি পৃথিবীর মানুষের কথা শুনতে পায় কিন্তু কোন জবাব দিতে পারে না। মাজার পূজারীরা ধারণা করে তাদের কথা মাজারে শায়িত ব্যক্তি শুনতে পায়। পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এ সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে, তাঁরা তোমাদের কোন লাভ ক্ষতি কিছুই করতে পারে না। তাদের পরিণতি কি হবে, এ কথা তাঁরা নিজেরাই জানে না।

        তবে মহান আল্লাহ যদি মৃত কোন মানুষকে কিছু শোনানোর ব্যবস্থা করেন, তাহলে সেটা ভিন্ন বিষয়। ইসলামের দুশমনদের লক্ষ্য করে আল্লাহর নবী যে কথা বলেছিলেন, সে কথাগুলো মহান আল্লাহ তাদেরকে শোনার মত ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এ কারণেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবায়ে কেরামকে বলেছিলেন, 'আমার কথা তোমরা যেমন শুনতে পাচ্ছো, ওরাও তেমনি আমার কথা শুনতে পারছে কিন্তু কোন জবাব দিতে পারছে না।

Post a Comment

0 Comments